বৃহস্পতিবার, ১২ নভেম্বর, ২০০৯

ব্যাবধান মাত্র ক'সেকেন্ড

০৭ ই মার্চ, ২০০৯ রাত ৮:৪১
প্রচন্ড বৃস্টির সাথে ঝড়ো বাতাস। গাড়ির হেড লাইট ও ফগ লাইটের তীব্র আলোতেও একমিটার দুরের কিছু ঠাহর হচ্ছেনা। আমরা দুবন্ধু পালাক্রমে গাড়ি চালাচ্ছি। একজন স্টিরিয়াং এ বসলে অন্যজন ডিরেকশন দিচ্ছে। কোন কোন সময় গাড়ি রাস্তার ডান না বাম ঘেষে চলছে সেইটেই বুঝতে পারছি না। গাড়ি চলছে সর্ব্বোচ্চ ২০ কি.মি. বেগে। ঝড় বৃস্টির প্রকোপ বাড়লে আরো কম। আমাদের যেন কোন অদ্ভুদ নেশায় পেয়ে বসেছে। যে করেই হোক সাত সকালে চাটগা গিয়ে পৌছুতে হবে। কোন বিশেষ প্রয়োজন বা কারন নেই -তবুও। এযেন জোড় করে মৃত্যুকে ডেকে আনা। ভাগ্যিস বিপরিত দিক থেকে এমন কারো খায়েস হয়নি। অন্য সব যানবাহন ইঞ্জিন বন্ধ করে রাস্তার পাশে গুটি সুটি মেরে বসে আছে। এদিকে হাওয়ার বেগ আর বর্ষন যেন বেড়েই চলেছে থামার কোন লক্ষন নেই। সঙ্গী বন্ধুটি ষ্টিয়ারিং হতে পেলে আমার থেকে উন্মত্ত্ব হয়ে উঠছে। সে আবার এমনিতেই চোখে একটু কম দেখে। চশমা আছে, কিন্তু সেটা এখন একটা বোঝার মত হয়ে গেছে! বাতাসে অতিরিক্ত আদ্রতার জন্য গাড়ির উইন্ডশীল্ড আর তার চশমার কাচ একই সাথে ঘোলা হয়ে যাচ্ছে। কোনটা ছেড়ে কোনটা মোছে সে আরেক সমস্যা।আমি অবশ্য যথাসাধ্য সাহায্যের চেস্টা করছি,এদিকে গাড়ির গরম হাওয়া ছেড়েছি সর্বোচ্চ গতিতে কিন্তু সেটায় কোন কাজ হচ্ছিল বলে মনে হয়না। দু-চারটে ট্রাক ড্রাইভার বৃস্টির প্রকোপ একটু কমলেই এডভেঞ্চারের চেস্টা করছে। তেমন ক’জনের ঘাড়ে পড়তে পড়তে বেচে গেলাম। ভোর চারটার দিকে বৃস্টির ধার অনেকখানি কমে গেল। বৃস্টির গতি যত কমে আসছে গাড়ির গতি তত বাড়ছে। বন্ধুর আশ্বাসে বাকিপথের দায়িত্ব ওর হাতে সপে দিয়ে সস্তির একটা হালকা শ্বাস ছেড়ে ক্লান্ত আমি ড্রাইভিং সিটের পাশেরটায় চোখ বুজলাম। ভেজা ঠান্ডা হাওয়া যেন ঘুমকে এককাঠি সরেস করল।হঠাৎ ওর জোড় ধাক্কায় বিরক্তিতে চোখ মেলে চাইলাম। সে আমাকে মুখে কিছু না বলে ইঙ্গিতে রাস্তার দিকে তাকাতে বলল। ওর মুখের ভয়ঙ্কর কঠিন ভাব দেখে আমি বিনাবাক্য ব্যায়ে সরাসরি রাস্তার দিকে তাকাতেই যেন ভুমিকম্পের প্রচন্ড দুলুনিতে কেঁপে উঠলাম।(ঘটনাটা অল্প কয়েক সেকেন্ডের) সবে ভোর হচ্ছে চারপাশে কুয়াশার একটা পাতলা আবরন ভেদ করেও অনেকটা দুর দেখা যাচ্ছে । মাত্র কয়েকশ মিটার দুরে রাস্তার দুপাশে অনেকগুলো লোক গায়ে চাদর মুড়ি দিয়ে জুবুথুবু হয়ে আড্ডাদিচ্ছে।হয়তো সেটা কোন বাজার হবে ক্রেতার আগমন বা বিক্রেতাদের তোড়জোড় এখনো শুরু হয়নি তাই পাইকাররা অতিপ্রত্যুষে রাস্তার ধারে বসে আড্ডা দিচ্ছে আর প্রতিক্ষা করছে সুর্যের ।তাদের ঠিক মধ্যিখানে রাস্তার ফাকা জায়গাটায় দুটো অল্পবয়েসি কিশোর বিশাল একটা ট্রাক কিংবা ট্রাকটররে টায়ার আতি ধীর মন্থর গতিতে গড়িয়ে গড়িয়ে একপাশ থেকে অন্য পাশে নিয়ে যাচ্ছিল। তাদের সমস্ত আগ্রহের কেন্দ্রবিন্দু সেই চাকাটা অন্যদিকে তাদের কোন ভ্রুক্ষেপ নেই! আমাদের গাড়ি চলছিল প্রায় একশ তরিশি কিলোমিটার বেগে। রাস্তা পিছল। এটুকু দুরত্ব থেকে হার্ড ব্রেক কষলে গাড়ি স্কিড করে পাশের খাদে পড়ার সম্ভাবনা বেশী তার মানে সেটা একপ্রকার আত্মহত্যাই।আর এগতিতে চাকায় মারলে সেই দু কিশোরের সাথে আমাদেরও মহাপ্রস্তানরে দারুন সম্ভাবনা। দুপাশে যেটুকু জায়গা আছে সে ফাক গলে বের হওয়া অসম্ভব!চারপাচটা লোককে মাড়িয়ে যেতে হবে। সেটা হবে মর্মন্তুদ! সঙ্গী চালক অনেক আগেই হর্নচেপে ধরে আছে কিন্তু সেটা দিয়ে কেন যেন ফাটা বাশির মত সুর বের হচ্ছে। যা ওদের কর্নকুহড়ে পৌছানোর কথা না । ব্যাবধান বড়জোর ২০০মিটার! আমাদের হাতে দুটো অপসন- মৃত্যু নাহলে হত্যা!! চাকাটি নিয়ে ছেলেদুটো মাঝ রাস্তা দিয়ে ঠালরে দকিে একটু এগিয়েছে কি হঠাৎ হর্ন বেজেউঠল বিকট আওয়াজে। ছেলেদুটো এদিকে একনজর তাকিয়েই ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে দুজন দুপাশে ছিটকে গেল। আশ্চর্য রাস্তার দুপাশের বাকি লোকগুলো একবার ফিরেও তাকাল না! হয়তোবা এ হর্নটা তাদের কাছে আর দশটা সাধারন হর্নের মতই মনে হয়েছে, তারা সরাক্ষন হাইড্রলকি হর্ন শুনে অভ্যাস্ত। ইয়া আল্লাহ! রাস্তার মাঝে যেন মৃত্যদুতের মত দাড়িয়ে আছে সেই বিশাল চাকাটি। দ্রুত সিদ্ধান্ত নিলাম একটু ডান ঘেষে যাব,ওখানে ফাকটা একটু যেন বেশী মনে হোল। শেষ দৃশ্যটা কেউই চেয়ে দেখতে চাইলাম না। শুধু একটা দড়াম করে শব্দ কানে এল সেই সঙ্গে প্রচন্ড একটা ঝাকুনি। আর কোন ওলট পালট নেই ! চোখ মেলে চাইতেই দেখি বৃস্টিতে ভেজা সেই পিচঢালা রাস্তা । ভোজবাজির মত যেন মিলিয়ে গেছে সেই ভয়াবহ দৃশ্য। আমরা একদম অক্ষত শুধু গাড়ির বামদিকের বনেটটের অনেক খানি দুমড়ে মুচড়ে গেছে, তাতে কি বেঁচে আছি এইতো ঢেড় !গভীর রাতে হাইওয়ে দিয়ে প্রচন্ড গতিতে গাড়ি চালাতে চালাতে ভাবি মৃত্যুটা কত সহজ। সামান্য একটা ভুল সামান্য অসচেনতা কিংবা মনোযোগ বিচ্যুতিতে ঘটে যেতে পারে জীবনের শেষ দুর্ঘটনা! পাশ কেটে যখন দৈত্যের মত অন্য গাড়িগুলো ডিপারের উজ্জ্ল আলোয় আমার চোখ ধাধিয়ে দিয়ে চোখের পলকে বের হয়ে যায় তখন তার ডিজেল বা পেট্রোলের পোড়া গন্ধ কিংবা হাওয়ার ঝাপটা আমাকে স্মরন করিয়ে দেয় তুই অল্পের জন্য বেচে গেলি । অনেক ট্রাক আবার রাতে এক চোখ বুজে চলেন , দুর থেকে মনে হয় টেম্পো বা স্কুটার, ঠিক যখন ঘাড়ের উপর নিঃশ্বাস ফেলেন তখন মালুম হয় ইনি তিনি নন। প্রতি মুহুর্তে মৃত্যু আমাদের দাবড়ে নিয়ে বেড়াচ্ছে এইভাবে । কখনো জানান দিয়ে কখনো নিভৃতে নিরবে সবার অগোচরে। জীবন আর মৃত্যুর মাঝে.. ব্যাবধান মাত্র ক’সেকেন্ডের । মানুষের জীবনের সমস্তটাকে যদি আবার রিপ্লে করে দেখানো যেত তাহলে অন্য অনেক ভুলে যাওয়া অজানা কাহিনীর সাথে সে দেখতে পেত তার অগোচরে কতবার কতভাবে মৃত্যু এসে হানা দিয়ে গেছে সে এতটুকু টের পায়নি !

বিশ্ব নারী দিবস (রুশীয় স্টাইল)

০৮ ই মার্চ, ২০০৯ রাত ৮:৫২
আজ বিশ্ব নারী দিবস। প্রায় সারা বিশ্বেই যথেষ্ট গুরুত্বের সাথে এদিনটি পালিত হয়।আগে নারী দিবস নামে কোন দিবস আছে সেটাই জানতামনা। জানলাম গিয়ে রাশিয়াতে।বিশ্ব নারী দিবস নিয়ে সম্ভবত সবচেয়ে বেশী মাতামাতি করে রুশীয়রা। এদিনটি তাদের সরকারী ছুটির দিন;সেইসঙ্গে সেখানে লক্ষ লক্ষ জুটি গড়া ও ভাঙ্গার দিন- এটা অবশ্য সরকারী নিয়মের মধ্যে পড়ে না।মেয়েরা তাদের প্রেমিক ও স্বামীকে যাচাই করে গিফটের বহর ও তাকে খুশী করার সবরকম অভিনয় দেখে!কিভাবে নিজের প্রিয় নারীকে খুশী করবে এই ভেবে পুরষদের মাস খানেক আগ থেকেই ঘুম হারাম হয়ে যায়। সে এক হুলস্থুল কান্ড! সারা দেশে বয়ে যায় মদ ফুল নাচ গানের বন্যা। এইদিনে ছোটখাট ইতরামী কিংবা বিতলামী করলে পথ চলতি বা পাবে,বারে,পার্কে কোন রমণীই বিশেষ রাগ করে না,এমনকি তাকে যদি পথে উটকো কেউ ভালবাসাও জানায়। অন্যান্য যেকোন উৎসবের চেয়ে তারা সবচেয়ে জাকজমক পূর্ন ভাবে এই দিনটি পালন করে শুধুমাত্র বড়দিন আর নিউইয়ার এদুটো বাদে। বিশেষ করে যুবতী মেয়েরা - তবে কিশোরী আর বৃদ্ধারাও কম যায়না,তারা যেন ছাগলের তিন নম্বর বাচ্চা!তখন (কম্যুউনিজমের সময়কাল) হয়তো এখনো -অন্য সব উন্নত দেশের মত বেশীর ভাগ রুশ পরিবারও একের অধিক সন্তান নিতে আগ্রহী ছিল না। সেটা ছেলেই হোক আর মেয়ে। তবে মেয়ে সন্তানের ব্যাপারেই হয়তো আগ্রহটা একটু বেশী ছিল। এর পিছনের কারনটা আমার মনে হয়, প্রথমত; ছেলে হলে যুদ্ধে পাঠাতে হবে এই ভয়ে। দ্বীতিয়ত; মেয়েরাও কামাই রোজগারে পুরুষদের থেকে কোন অংশে পিছিয়ে ছিল না-তাছাড়া মদ তাদের বিশেষ খেয়ে ফেলত না আর নিজের পরিবারের প্রতি তাদের ছিল অকৃত্বিম ভালবাসা। সাধারন দিনগুলোতে বটেই ওদের সব্বার ভীষন প্রিয় সময়টা যখন ওরা সব’চে বেশী রোমান্টিক মুডে থাকে সেই গ্রীস্মেও ওখানে দেখেছি বাজারের সবচেয়ে মুল্যবান আধুনিক ফ্যাশনের ভয়াবহ সেক্সি পোষাক পরে পালিশ বার্নিশ করে দুর্দান্ত কোন রুপসী সুবাস ছড়িয়ে হেলেদুলে রাস্তা দিয়ে হেটে যাচ্ছে,আর পুরুষরা যেন সব সাধু যোগী সেদিকে একবার তাকালেই যেন তার ধ্যান ভেঙ্গে যাবে। ভুল বললাম কি, হয়তো তাদের উদাসীন চোখের এ সৌন্দর্য উপভোগ করার মত ক্ষমতা ছিলনা।আমরা কোন পুরুষও সুন্দর পোষাক পরে রাস্তা দিয়ে হাটলে দুয়েকবার ঠারে ঠুরে দেখি। আর এমন অস্পরীর মত রুপসী! হায় খোদা! বাঙ্গালী ললনাদের যেন এদিন কোনদিন না আসে। কিন্তু আচমকা সব কিছুই ভোজবাজীর মত পাল্টে যেত এই জেন্সকাইয়া দ্জিন(বিশ্ব নারী দিবস) এলে। সেদিন নারীদের সেকি মুল্যায়ন!অবশ্য রুশরা যখন ভালবাসে বা ভালবাসার অভিনয় করে সেইটে হয় সেইরকম! সারাক্ষন বুকে করে জড়িয়ে চোখে চোখে রাখে যেন একটু বেখেয়াল হলেই হারিয়ে যেত পারে তার অমুল্য ধন!এদিনে সবচেয়ে দুঃখী হয়তো সেই মেয়ে যার কোন প্রেমিক বা স্বামী নেই।মেকি বিশ্ব ভালবাসা দিবসকে তারা বিশেষ মুল্যায়ন করে না। এদিনটিই যেনতাদের ভালবাসা দিবস। আমার অনেক বিদেশী বন্ধুরা(এরমধ্যে স্বদেশীও আছে) যার যেটুকু সামর্থ পকেটে পুরে বেরিয়ে পড়ত আনকোড়া প্রেমিকা বাগানোর ধান্ধায়।তারাই ফের সন্ধ্যেবেলা ফিরে আসত পকেট খালি করে মাতাল হয়ে ।তবে কেউ কেউ অবশ্য বগলদাবা করে আনত নতুন কাউকে।দু-য়েকজন হোস্টেলে ফিরে না আসলে উদ্বিগ্ন হতাম না। ভাবতাম হয়তো নব্য প্রেমিকার সাথে রাত কাটাচ্ছে তারই বাসায় -নয়ত হতাশ হয়ে পুরাতনের কাছেই ফিরে গেছে! এদিনটায় প্রায় প্রতিটা রুশ নারীমাত্রই আশা করে অনেক অনেক পুরুষ তাদের ফুল সহ অন্যান্য উপহার ও ভালবাসা দিয়ে শুভেচ্ছা জানাবে।-এদিন নাকি সাইবেরিয়ার ইয়াকোতিরিনবাগ শহরের পুলিশ ছোটখাটো নিয়ম ভঙ্গেও জন্য মহিলা গাড়ি চালকদের কোন জরিমানা করে না বরংচ তাদের ফুল ও পারফিউম দিয়ে শুভেচ্ছা জানায়। ইয়াকোতিরিনবাগ শহরের এটাই ঐতিহ্য।

সাবাকা 'জো'

২০ শে মার্চ, ২০০৯ সকাল ১০:৪৩
রুশ ভাষায় সাবাকা'র বাঙলা অর্থ কুকুর। সাবাকা 'জো' আমার ভীষন প্রিয় বন্ধু আনিসের অতি প্রিয় কুকুরের নাম। শিক্ষিত সেই কুকুরটা সারাজীবন ছিল বাধ্য হয়ে ব্রহ্মচারী(সে কোন নারী কুকুরের সান্নিধ্য পায়নি)। লেখার শেষ ভাগের কিছুটা অংশ প্রাপ্ত বয়স্কদের জন্য। লেখাটা আনিসের সেই কুকুরকে উৎস্বর্গীকৃত।}-
একরুমে থাকে ওরা গাদাগাদি করে সাত আটজন। গেস্ট আসলে কখনো সে সংখ্যা গিয়ে বেড়ে দাড়ায় বার কিংবা চৌদ্দজনে।কারোই তেমন কাজ কর্ম প্রায় নেই বলতে গেলে।সবাই তাদের দেশ থেকে পাঠানো টাকা কিংবা গচ্ছিত কিছু অর্থ বা অন্যের ঘাড়ে বসে খায়। বাড়িখানা অনেকটা বারোয়ারি হোস্টেলের মত।লতায় পাতায় পরিচিত মস্কো কিংবা মস্কোর বাইরের কেউ সমস্যায় পড়লেই কোন অগ্রিম তার বার্তা নাদিয়েই এখানে এসে দু চার পাচ দিন থেকে শুরু করে কয়েক মাস অব্দি থেকে যায়। কেউ আসে আড্ডার লোভে দুয়েকজন আসে অর্থাভাবে কেউ আসে ভিসার জন্য কেউ আসে প্রেমে ছ্যাকা খেয়ে আবার কেউবা আসে অসতর্ক মুহুর্তের সামান্য ভুলের জন্য অকালে সন্তানের দায়িত্ব থেকে পালিয়ে বাচার জন্য। সারাদিন কাটে তাস খেলে রকমারি রান্না করে টেলিফোনে গুজুর গুজুর ফুসুর ফুসুর করে- কখনো মদ খেয়ে মাতলামী হৈ চৈ হুল্লোড় আর কিঞ্চিৎ হাতাহাতি মান অভিমান বাদানুবাদ আর ভবিষ্যত পরিকল্পনায়।প্রতিদিন নতুন নতুন গেস্ট আসে আর আড্ডা জৌলুস বাড়ে।অতিথি যখন বিদেয় হয় তখন কখনো হাঁফ ছেড়ে বাচে কিংবা কষ্টের ছায়া নামে চোখে মুখে।সেখানে ঘুমোনো আর খাওয়া দাওয়ার পর্ব চলে ভীষন আগোছালো আর বিস্মৃঙ্খল ভাবে। যার যখন খুশি খাচ্ছে-যার ইচ্ছে দু দন্ড জিরিয়ে নিচ্ছে।এভাবে মোটামুটি উত্তাপবিহীন কিছুটা একঘেয়ে এই দিনগুলিতে বেশ অন্য রকম এক আমেজ আনল তাদের এক বন্ধুর বিয়ে। সে থাকে মস্কো থেকে বেশ ক’শ কিলমিটার দুরে। দেশ থেকে বহুদুর রুশ দেশে এই প্রথম কোন বন্ধুর বিয়ে তাই সবাই মিলে সিদ্ধান্ত নিল সদলবলে বিয়েতে যাবে।রুশ বিয়েতে মজা বলতে সারারাত পান উৎসব আর নাচের অছিলায় জড়াজড়ি লেপ্টলেপ্টি। কুকুরের প্রতি এমনিতে আনিসের তেমন আকর্ষন কখনোই ছিলনা।সদলবলে বাইরে ঘুরতে গিয়ে কোন এক সকালে সেই শহরেই রাস্তার ধারে বসে এক বৃদ্ধার কিছু কুকুর ছানা বিক্রি করতে দেখে কেন যেন ঝোকের মাথায় আগপিছু না ভেবে কিনে ফেলেছিল একখানা।বন্ধুরা তার এই পাগলামি দেখে ঠাট্টা মস্করা করেছিল খুব-যেখানে মানুষের থাকার জায়গারই অভাব সেখানে সে কুকুরছানা রাখবে কোথায়? আনিস হয়ত হয়ত সেই কুকুরছানাটাকে সেখানেরই ফেলে আসত কিংবা কারো উপহার দিয়ে দিত। কিন্তু ছোটবেলা থেকেই একগুয়ে একরোখা বন্ধু আমার বন্ধুদের ইয়ার্কি ঠাট্টার জবাব দিতে পণ করল সেটাকে নিজের কাছেই রাখবে।অবশেষে সেই কুকুরছানা দীর্ঘ পথ ট্রেনে চেপে মস্কোতে এল আনিসের সেই ডেরায়।কুকুরের বাচ্চা কোন নিয়ম নীতি মানেনা-এত ছোটযে সে কোন প্রশিক্ষন দেয়ার প্রশ্নই আসেনা। সারাদির ঘর জুড়ে ছুটোছুটি করে খাবার যতটুকু খায় ছড়ায় তার থেকে বেশী। যেখানে সেখানে ঘুমোয়-প্রাকৃতিক কর্ম গুলো লেপ কাথা কিংবা কার্পেটের উপরেই অবলীলায় সারে।সে এক বিচ্ছিরি ব্যাপার! সবাই দুদিনেই ত্যাক্ত বিরক্ত!ওদিকে সবার যন্ত্রনা আর বিরক্তি দেখে আনিসের আনন্দ যেন ধরে না। এতদিন পরে সে একটা মনের মত কাজ পেয়েছে যেন। কুকুরের প্রতি তার আদিখ্যেতা দেখে সবারই গা জ্বলে যায়।একঘেয়ে দিনগুলিতে সাঝে মধ্যে বৈচিত্র আনে মিলন ভাই।তিনি সবার বয়সে একটু বড়তো বটেই তারইপরে কিঞ্চৎ ধনবান। আসার পথে ব্যাগ ভর্তি করে খাবার আর মদ নিয়ে আসেন।বাসায় এলেই হুলস্থুল শুরু হয়ে যায় তাকে নিয়ে-সেই রাতটাতে সবাই মেতে ওঠে উৎসব আনন্দে।একটু ধার্মিক শ্রেনীর কয়েক জন কুকুরকে করেছে অস্পৃশ্য আর মদকে হারাম বলে ছুয়ে দেখেনা। কিন্তু উৎসবে তারাও শামিল হয়-উপভোগ করে সবার মত করেই।সেদিন গভীর রাত অব্দি চলল খানা পিনা আর গল্প গুজব-স্বভাবতই দুয়েকজন মাতাল তখন।স্পস্টভাষী রফিক(ছদ্মনাম)সেই তথাকতিথ ধার্মিক কুকুর বিরোধীদের প্ররোচনায় একটু বেশীই গিলেছিল সেদিন।আর মতাল হয়েই নেশার ঘোরে কখন কিভাবে যেন আনিসের সাথে শুরু হল তর্ক বিতর্ক-অনুঘটক সেই কুকুর ছানা!প্রথমে মৃদু উত্তেজনা-দুয়েকজনের উস্কানীতে লেগে গেল হাতা হাতি।এমন ঘটনা এখানে বিরল নয় কিন্তু। মাতাল হয়ে হাতাহাতি প্রায়শই-সবারই এটা গা সওয়া হয়ে গেছে। আচমকা ওরে বাবারে মারে বলে শহিদের বিকট চিৎকার।প্রথমে আঁতকে উঠল সবাই-কিন্তু পরক্ষনেই হাসাহাসি গড়াগড়ি। ঘটনাটা এমন;উত্তেজনার এক ক্ষনে আনিসের সাথে হাতাহাতি শুরু হতেই কোত্থেকে সেই কুকুর ছানা দৌড়ে এসে কামড়ে ধরেছে শহিদের অন্ডকোষ!শহিদ চিৎকার চেচামেচি করছে আর আর ঘরময় দৌড়াচ্ছে কিন্তু তখনো সেই পিচ্চি কুকুর সেইখানটায় কামড়ে ধরে ঝুলে আছে আর রাগে গড় গড় করছে।অবশেষে সবার অনুরোধে আনিস-ই গিয়ে ছাড়িয়ে আনল তাকে।সেই থেকে আনিস বা তার কুকুরকে কেউ কিছু বলে না ভয়ে।ওদিকে সেই কুকুরছানার প্রতি আনিসেরও আদর ভালবাসা আদিখ্যেতা উত্তর উত্তর বেড়েই চলছিল।ওদিকে জাতে জার্মানী শেফার্ট সেই কুকুর ছানাও তার আদরে আর প্রশ্রয়ে বেড়ে উঠছিল তরতর করে।আনিস কুকুরটাকে দুবেলা রান্না করে নিজের হাতে খাওয়ায়,নিজে হপ্তায় দু হপ্তায় একবার গোসল না করেলেও কুকুরটাকে মাঝ মেধ্যেই শ্যম্পু সাবান ডলে সাফসুরোত করে।রান্না ঘরে চলে কুকুরের রান্না নিয়ে এক্সপেরিমেন্ট।কুকুরের রান্নার জন্য বাসন কোসন আর রান্না ঘরের চুলার দখল থাকায় নিজেদের রান্না লাটে ওঠে। মাঝে মধ্যে গোসল খানায় কুকুরের পশমে সয়লাব আর সারা বাড়িতে তার ছড়ানো উচ্ছিষ্ট আর মল মুত্রের ছড়াছড়িতে বাকি সব হোস্ট গেষ্ট অল্প কদিনেই ত্যাক্ত বিরক্ত হয়ে উঠল। দুচারজন সকাল বিকেল ফন্দি আটে কি করে ওটাকে তাড়ানো যায়। তবে কেউ কেউ যে আদর করতনা তা কিন্তু নয়।আগেই বলেছি কিছুটা একঘেয়ে সেই প্রবাস জীবনে একটু অন্যরকম স্বাদ এনে দেবার জন্য তার হিতাকাঙ্খীও মিলে গেল দু’একটা।জর্মন শেফার্ড নাকি নেকড়ের বংশধর। পূর্ব পুরুষের জাত মান রাখতে সে দাত নখের ধার শানাতে গিয়ে কত জনের চামড়ার জুতো আর পশমী কোট যে ছিন্ন ভিন্ন করল তার ইয়ত্বা নেই।একটা জাত কুকুরকে কিভাবে ট্রেইন্ড করতে হয় সে বিদ্যে কারোই জানা ছিলনা। তবুও একে ওকে জিজ্ঞেস করে ঠেলা গুতো গাল মন্দ দিয়ে তাকে একটু লাইনে আনলেও-ওদের এই ছন্নছাড়া জীবনের সাথে তাল মিলাতে গিয়ে সেও মাঝে মধ্যে উদ্ভট আচরন করে।বেশ কদিন বে ওয়ারিস ঘুরে বেড়ানোর পরে অবশেষে কোন পূর্ব পুরুষের পদবি ছাড়াই তার একখানা নাম ঠিক হল ‘জো’। আমার ধারনা হয়তো চু চু শব্দ থেকেই জো নামের উৎপত্তি।সহজ নাম যখন তখন সবাই ডাকে। জো ও মহা উদ্যোমে এর ঘাড়ে ওর মুখে আচড় মেরে লাফ ঝাপ দিয়ে এলোমেল ছোটে। খাবারের প্লেট উন্মুক্ত থাকলেই চেটে পুটে স্বাদ নেয়-বেকুব কুত্তা তার উদরের ধারন ক্ষমতা আঁচ না করতে পেরে উল্টা পাল্টা খেয়ে অবশেষে বমিতে রুম ভাসায়।মাস ছয়েক বাদেই বেকার আনিস একখান চাকরি পেল বেশ লোভনীয় বেতনে। রুমমেটরা তখন তাকে ইর্ষা করে সাথে ভক্তিও। এতগুলো বেকারের মাঝে সকার একা সে –সবাই তাকে তোয়াজ করে।কুকুরছানাও তার মনিবের এহেন দৈব পরিবর্তন আচ করতে পেরে হয়ে উঠল আরো বেয়াড়া আর বেপরোয়া! তবে দুর্ভাঘ্য ‘জো’র বছর না ঘুরতেই সেই নিস্কর্মা ছেলেগুলো ধীরে ধীরে নির্মম বাস্তবতার চাপে রুটি রুজির তাগিদে চলে গেল ভিন দেশে কিংবা মস্কোর অন্য প্রান্তে। ভেঙ্গে গেল সেই মিলন মেলা।আমিও ফিরে এলাম দেশে।আমার ফিরে আসার কিছুদিন বাদে আনিসও দেশে আসল বেড়াতে মাস তিনেকের জন্য।আসার আগে ভীষন বিপদে পড়েছিল ‘জো’ কে নিয়ে। ওকে একলা রেখে যাবে কার কাছে?অবশেষে শুভাকাঙ্খীদের পরামর্শে ‘জো’কে ভর্তি করে দিয়ে এসেছিল মস্কোর নামকরা এর কুকুর প্রশিক্ষন বিদ্যালয়ে।আমার ধারনার মধ্যেও ছিলনা শারমেয়রাও ইন্টার কিংবা গ্রাজুয়েশন করে। একবার শুনেছিলাম শিকাগোতে নাকি কুকুরের হোটেল আছে! এইটুকুতেই বিস্মিত হয়েছিলাম। কিন্তু কুকুরের বিদ্যালয় কিংবা বিশ্ব-বিদ্যালয় আছে সেটা শুনে শুধু বিস্মিত হইনি শুধু-বিশ্বাসও করিনি।‘জো’অবশ্য অতটা শিক্ষিত হয়নি মাত্র ছ’মাসের ট্রেনিং এ সে উচ্চ বিদ্যালয় পাশ করেছিল মাত্র।তবে হিংস্রতার শিক্ষা মনে হয় আরেকটু উচু লেভেলে দেয়া হয় তাই সে বরাবরই ছিল একটু বোকা সোকা নরম মনের এক শিশু স্বভাবের কুকুর।মতভিন্নতা থাকতে পারে, তবে শুনেছি কুকুরের এক বছর নাকি মানুষের সাত কিংবা আট বছরের সমান। সেই হিসেবে ওদের ছমাসের নিবির ট্রেনিং মানুষের কয়েক বছরের শিক্ষা দীক্ষার সমান।দশ বছর একটা কুকুর বেচে থাকা মানে মানুষের সত্তুর কিংবা আশি বছরের জীবন পাওয়া।জো’র সাথে দ্বীতিয়বার দেখা আমার ওর পাচ বছর বয়সে।তখন সে দুপায়ে ভর করে খাড়া হয়ে দাড়ালে পৌনে ছ’ফুট মাথাও ছাড়িয়ে যায়।প্রথম দর্শনেই তার সেই বিশাল আকৃতি দেখে আমি ভড়কে গিয়েছিলাম।আর কি তার বন্য সৌন্দর্য! আঃ চোখ জুড়োল দেখে আমাদের সেই ছোট্ট জো কে। তখন তার পূর্ন যৌবন তার উপরে সবার যত্ন আত্মি- সময় মত শ্যাম্পু ডলে গোসল খাওয়া চুল আচড়ানো আর ট্রেকিং জগিং করে তেমনি রুপবান হয়েছে সে।তার চকচকে বাদামী আর কালো পশমের আড়ালে সবল পেশীর আভাস মেলে বহুদুর থেকে।ততদিন সে পুরোপুরি ট্রেইন্ড। সময় মত খায় ঘুমোয়। প্রাকৃতিক কাজকর্ম সারা আর ঘুরাঘুরি করারও সময় নির্ধারন করা আছে। একদিন একটু উল্টা পাল্টা হলেই সে অসুস্থ হয়ে পড়ে।ঝড় তুষারপাত কিংবা মুষলধারে বৃষ্টি হলেও জোকে নিয়ে প্রতি রাতে বাইরে বেরুতে হবেই।সেটা তার সাস্থ্যটাকে সুগঠিত করতে সেই সাথে প্রাকৃতিক কাজ সারতে।আনিস যত রাতেই বাসায় ফিরুক না কেন সারাদিনের ব্যাস্ততায় হয়তো সে ক্লান্তিতে নুয়ে পড়ছে কিংবা অতিরিক্ত পানে মাতাল হয়ে হাত পা টলছে তবুও সে দরজাটা খুলেই জলদ গম্ভীর কন্ঠে প্রথমেই জো’কে ডাকবে।‘জো’কে অবশ্য এমনিতে ডাকার প্রয়োজন পড়েনা- কেননা মনিবের পদশব্দেই সে আগে থেকেই লম্ফ ঝম্ফ শুরু করে- আনিস ঢোকামাত্রই সে তার চারদিকে ঘুরে ঘুরে ট্রাউজারের সাথে ঘাড় ঘষে আদর চায়। একটু খানি আদর পেলেই সে সারাদিনের একঘেয়েমী ভুলে নিজের বিশাল শরির নিয়ে ঝাপিয়ে পড়ে তার গায়ে। কখনো হাত চাটে কথনো ঘাড়ে আদর করে কখনো সারাটা মুখে নিজের লালা লেপ্টে দেয়। আনিসও দারুন উপভোগ করে তার সেই আদর।কখনো বিরক্তিতে জোঃ বলে একটা ধমকদিলে সে দুরে সরে গিয়ে অপরাধী চোখে তাকিয়ে থাকত কিছুক্ষন –আবার পরক্ষনেই চারিদিকে ঘুরে ঘুরে ঘাড় ঘষে আদর চাইত। পোষাক আশাক না খুলেই আনিস হাত বাড়াত ওর বেল্টের দিকে। সেও তার ঘাড়খানা এগিয়ে দিত শেকল পড়ানোর জন্য। মনিবের দাসত্বে তার কি আনন্দ তখন! অবশ্য আনিস বাইরে বেরুবার সময় নিজের খাবারের এন্তেজাম না করলেও কুকুরের রান্না ঠিকই চুলায় চাপিয়ে যেত।কমমতদিন গেছে কুকুরকে নিজের জন্য রাখা মাংসটুকু রান্না করে খাইয়ে নিজে একটু সব্জি দিয়ে ভাত খেয়েছে।সে ফিরে আসতে আসতেই রান্না শেষ।‘জো’ তখন একাহারি। নিয়ম করে একবেলাতেই খেতে হয় তার। সারাদিন সে একবারও ছোক ছোক করেনা।কেউ খাবার সাধলেও সে খেতে চায়না। কখনো হয়তো লোভে পড়ে একটু এগিয়ে এসে আনিসের দিকে আড় চেখে তাকিয়ে সম্মতি পাবার আশায় কিছুক্ষন অপেক্ষা করে আবার মুখ ফিরিয়ে নেয়। তবে আনিস একবার অনুমতি দিলে আর রক্ষে নেই! তখুনি সে খাবারের উপর ঝাপিয়ে পড়ে।বাইরে থেকে এসে আনিস পোষাক পাল্টে নিজের জন্য কিছু চুলোয় চাপিয়ে জো’কে খেতে ডাকে।জো’তো সারাদিন এই ডাকটার জন্যই অপেক্ষা করেছিল। সে কি খুশী তার।কালো টানা টানা চোখে সেই খুশীর ঝিলিক দেখে আমার কি যে ভাল লাগত।জো'কে দেখে আমি সবচে বেশী অবাক হয়েছিলাম তার স্মরন শক্তি দেখে।!এত্তটুকুন বয়সে সে দেখেছে আমায়।তবুও কিভাবে মনে রেখেছে। আমি প্রথমবার এ বাসায় আসলে সে একবারও ঘুউ ঘেউ করেনি। প্রথম দেখাতেই আমার গা ঘষে আদর চেয়েছে। কিন্তু নতুন কেউ আসলে সে ঘেউ ঘেউ করবেই।আদরতো চাওয়াতো দুরের কথা যতক্ষন পর্যন্ত সে কনফার্ম না হবে লোকটা আনিসের শুভাকাঙ্খী ততক্ষন পর্যন্ত তাকে শান্তিতে থাকতে দেবে না। আনিস নিষেধ করলে কিংবা ধমকালেও সে একটু দুরে সরে ঘর ঘর ঘর ঘর শব্দ করে তার বিরক্তি প্রকাশ করে দাত খিঁচাবে।আর মাঝে মধ্যে অতিথির পিলে চমকে দিয়ে বিকট শব্দে ঘেউ ঘেউ করে ডেকে উঠবে।বন্ধু আনিস বলত,একবার আগুন্তক তার প্রিয় কেউ জেনে গেলে তাকে আর সে কখনোই বিরক্ত করবে না। হোকনা তার সাথে দু-চার বছর পরে দেখা।কোনদিন আনিসের বাইরে থেকে ফিরতে দেরি হয়ে গেলে-সে চাপ সংবরন করতে না পেরে ঘরের এক কোনেই প্রাকৃতিক কাজ সেরে ফেলত। কিন্তু এই কুকর্মটি করে সেদিন তার সেকি অনুশুচোনা! কই যেত তার লম্ফ ঝম্ফ! আনিস ঘরে ফিরলেই সে এক কোনে গিয়ে লুকাতো।এতবড় শরিরটা পর্দার আড়ালে নিজেকে লুকানোর সংকোচিত করার ব্যার্থ ও হাস্যকর প্রয়াস করে দু থাবার আড়ালে মুখখানা লুকিয়ে থর থর করে কাঁপত। আনিস সেদিন বাসায় এসেই বুঝে যেত একটা অঘটন ঘটে গেছে।জানে সে ‘জো’ কে ধমক ধামক দিয়ে লাভ নেই তাই সে মুখ ভার করে রাগী রাগী মুখে বসে থাকত। ‘জো’ তখন তার থাবার আড়াল থেকে একটু খানি চোখ বের করে করুন দৃষ্টিতে চেয়ে থাকত অপলকে মনিবের দিকে। ভাব বোঝার চেষ্টা করত।আনিস তার দিকে তাকালেই সে সে ফের মুখ লুকাত। বহুক্ষন ধরে চলত এই খেলাটা। আবার কখনো অন্যদিকে মুখ ঘুরিয়ে আনিসের সামনে দিয়ে ত্রস্ত পায়ে হেটে গিয়ে ডাদিকের দেয়ালের পাশে লুকিয়ে একটু খানি মুখ বের করে নিবিড় পর্যবেক্ষন করত তার মেজাজ মর্জি।দুয়েক ঘন্টা বাদে আনিসের রাগ কমলে-সে আড়াল থেকে শরিরটা বের করে অপরাধী দৃষ্টি নিয়ে চারিদিকে মুখ চুন করে ঘুরে বেড়াত। সর্বন্তকরেন প্রতিক্ষা করত আনিসের একটা মধুর ডাকের। একবার ডাক দিলেই হল। নিজের শরিরের বিশালতা ভুলে দৌড়ে এসে ঝাপিয়ে পড়ত আনিসের গায়ে। তারপর বহুক্ষন ধরে চলত হুটোপুটি ভালবাসা আর আদর!রাশিয়ার সেই অস্থির সময়টাতে-জীবনের নিরাপত্তা নিশ্চয়তার খোজে মানুষ যখন দিশেহারা তখন এই বোকাসোকা জো কিন্তু দারুন বিশ্বস্ততায় সহচর বন্ধু কিংবা বডিগার্ডের দায়িত্ব নিয়ে সামলেছে তার মনিব কিংবা পালক পিতাকে।সে সর্বক্ষন চোখে চোখে রেখেছে তাকে।একটু সন্দেহ হলেই সে ঝাপিয়ে পড়েছে শত্রুভাবাপন্ন যে কারো উপরে।ডাকাবুকো তরতাজা যুবক জো’র একটা বান্ধবী জোটেনি তখনো।নিজের রিপুকে দমন করতে না পেরে মাঝে মধ্যে অবশ্য সে জাত পাত ভুলে কোন টেরিয়র কিংবা বুলডগ মাদি কুকুরের উপর ঝাপিয়ে পড়তে দ্বীধা করতনা।তাকে সামলাতে তখন আনিসের ভীষন বেগ পেতে হত।জীবনে দু চারটা চড় থাপ্পর খেয়েছে সে অবশ্য এই চরিত্রহীনতার দোষে।সবকিছু ঠিকঠাক সত্বেও আচমকা জো’র শরির ভেঙ্গে যেতে শুরু করল। সে সারাক্ষনই বিষন্ন থাকে। খাবারে একদম রুচি নেই। বাইরে ঘুরতেও চায়না বিশেষ।আনিস পড়ল মহা বিপদে। উপায়ন্তর না দেখে অবশেষে ডাক্তারের সরনাপন্ন হল সে।সব দেখে শুনে ডাক্তার বলল,ভরা যৌবনে যৌনাকাঙ্খা মেটাতে না পেরে জো’র এই দশা। হয় তাকে একটা বান্ধবী জুটিয়ে দিতে হবে নয়তো। হস্ত দ্বারা মৈথুন করে স্খলন করতে হবে। ওখানকার নিয়ম স্বজাতি কোন মাদী কুকুরের মনিব ইচ্ছাকৃত ভাবে এগিয়ে না এলে পুরুষ কুকুর সহবাস বিহিন জীবন কাটাতে বাধ্য হত।কুকুরের দেহ মিলনের জন্য তাদের দুপক্ষের মালিকেরই সম্মতির প্রয়োজন ছিল।এজন্য কেউ কেউ পত্রিকায় বিজ্ঞাপনও দিতে বাধ্য হত।বহু চেস্টা তদ্বির করে একটা স্বজাতি বান্ধবী জোগার করতে না পেরে অবশেষে বাধ্য হয়ে আনিস শেষোক্ত কঠিন কার্যটিই সম্পাদন করল। সেটা একটা দেখার মত দৃশ্য ছিল বটে। দু হাতে গ্লভস পড়ে বাথটাবে জো কে নিয়ে সে কি যুদ্ধটাই না করেছিল বেচারা!সপ্তায় দুচারবার হস্তমৈথুনের সুবাদে জো ঠিক আগের মতই তরতাজা হসি খুশি হয়ে উঠল।সেই সাথে বেড়ে চলল তার পাগলামী আর বোকামীটাও।আনিসের প্রিয় সেই প্রিয় সহচর বন্ধু কিংবা সন্তানটি বেচে ছিল দীর্ঘ ষোল বছর।দুটো দিন তাকে চোখের আড়াল করেও আনিস কখনো শান্তিতে ঘুমোতে পারেনি।দুজনেই দুজনার ছিল হরিহর আত্মা। আনিসের বউ সন্তান সবাই তাকে নিজের আপন আত্মীয়টির মত ভাল বাসত।শেষ বয়সে তার যখন গায়ের লোম খসে পড়তে শুরু করল তখনো কারো ভাল বাসা কমেনি এক রত্তি।শেষ কটা দিন ওর কষ্ট সহ্য করতে না পেরে অবশেষে সবাই সিদ্ধান্ত নিয়েছিল ইনজেকশন দিয়ে মেরে ফেলার। আনিস সামনে থেকে তার সন্তানের হত্যাদৃশ্য দেখতে চায়নি। সে জোর অগোচরে পালিয়ে এসেছিল বাংলাদেশে। সেই কটা দিন সারাক্ষনই অজানা আশঙকায় তার বুক কাপত মনে হত এই বুঝি পাবে জোর মৃত্য খবর। জোর মৃত্যুর আগের পুরো সময়টা দেখেছি ভয়ানক বিষন্ন তাকে। অবশেষে একদিন সেই চরম খবরটি এল – জো মরে গেছে কিংবা তাকে মেরে ফেলা হয়েছে। আনিস কখনোই স্বীকার করতে চায়নি বা চায়না সেই চরম সত্যটা। তার কাছে জো অমর। জোর স্মৃতি সারা জীবন সবার অলক্ষ্যে জুড়ে থাকবে তার হৃদয় জুড়ে।আর ক্ষত হয়ে রক্ত ঝড়াবে তার মৃত্যুটা।('জো' মারা গিয়েছিল ২০০৮ সালের ১০ই মার্চ। আনিস এখন সপরিবারে থাকে 'জো'র পূর্বপূরুষের ভুমি জার্মানীতে।)

সমকামী-২ (১৮+)

০২ রা এপ্রিল, ২০০৯ রাত ৯:৩৬
নিকেতন থেকে বের হয়ে মুল রাস্তায় আসলাম ট্যাক্সি কিংবা অটোরিক্সার খোজে। সন্ধ্যে সাতটা বাজেনি তখনো। কর্পোরেট অফিসগুলোতে ছুটি হচ্ছে-এখন ভাড়ায় গাড়ি পাওয়া বেশ কষ্টের। ট্যাক্সি চালকেরা তাদের প্রিয় গন্তব্যে পছন্দের যাত্রীকে নিয় ইচ্ছেমত ভাড়া হাকাতে ব্যাস্ত। দুয়েকটা খালি গাড়ি আসলেই ছুটো যাচ্ছে কয়েকজন-আর মওকা বুঝে চালকেরা ভাব নিচ্ছে। দুয়েকজন হা না বললেও বেশীরভাগই হয় মাথা ঝাকাচ্ছে নয়তো কিছু না বলেই আরো জোরে গাড়ি ছুটিয়ে চলে যাচ্ছে।ঢাকার রাস্তায় এই ট্যাক্সি চালকের দৌরাত্মে নিজেকে বেশ অসহায় মনে হয়।গাড়ি কেনাটা আর তখন বিলাসিতা মনে হয়না-সবচে জরুরি বিষয় বলেই ভাবতে ইচ্ছে করে।মৌলিক চাহিদা অন্ন বস্ত্র বাসস্থানের সাথে গাড়িটাকে জুড়ে দিতে ইচ্ছে করে।পাশের ব্যাংক থেকে এক রমণী অভদ্রের মত আমাকে টপকে সামনে গিয়ে উল্টোমুখে দাড়িয়ে মুঠোফোনে কথা বলতে বলতে বা হাতে আইডি কার্ডের ফিতেটা ঘুরিয়ে যেভাবে ঠ্যাং নাচাচ্ছিল তা দেখে মেজাজ বিগড়ে গেল।আমিও ইচ্ছে করলে তার সামনে গিয়ে দাড়াতে পারি কিন্তু সংস্কারে বাধে। নাহ্ এখানে এভাবে দাড়িয়ে থাকার কোন মানে হয়না।হাতে যখন সময় আছে এর থেকে রিক্সায় গুলশান একনম্বর গিয়ে বাসে করে যাই।সময় থাকলে এমনিতেই অনেক সময় বাসে চড়ি-সেখানে প্রতিমুহুর্তেই নতুন নতুন কাহিনীর জন্ম হয়-শুধু চোখ মেলে বসে কান পেতে শুনলেই হল।অফিস ছুটির সময় তাই স্বভাবতই এখন বাসে আরো বেশী ভীড়।সৌভাগ্যবশত সিট পেয়ে গেলাম। তিন সিটের দুপাশে দুজন বসে ছিল -মাঝেরটা খালি। বাম পাশের যাত্রীটা হাটু সরিয়ে আমাকে ভিতরে যাবার পথ করে দিলেন। দুজন যাত্রীর মাঝখানে বসাটা আমার বেশ অপছন্দের। একটু বিষন্ন মনে বললাম- ভাই মাঝখানেই পাঠালেন?লোকটা বেশ ভাল, অমায়িক হেসে বললেন, কেন আপনি সাইডে বসতে চাচ্ছেন?সমস্যা নেই,বসেস-বসেন। বলে তিনি সরে গেলেন।কি ভুল করলাম পরমুহুর্তেই বুঝলাম। পরের স্টপেজে হুড়মুড় করে বেশ কিছু যাত্রী উঠল। আমার পাশে এসে দাড়াল হাতে পোর্টফোলিও নিয়ে মার্জিত পোষাক পরা একহারা গড়নের লম্বা ফর্সা এক তরুন।বাসে তখনো গাদাগাদি ভীড় নেই পিছনে ফাকায় দাড়ানোর সুযোগ পেয়েও সে কেন দরজার কাছে আমার পাশেই এসে দাড়ালো বুঝলামনা।বাস ফের চলতে শুরু করল। আমি নিমগ্ন হলাম আমার ধ্যানে।খানিক বাদে একটু অস্বস্তি! ছেলেটা খুব বেশী ঘেষে আছে আমার বাহুর সাথে।বাসের ঝাকুনি ঢিমে তালে হলেও এস বেশ জোরে জোরে দুলছে। প্রথমে পাত্তা দেইনি ডান দিকে একটু চেপে বসলাম।পরের স্টপেজে আরো কিছু যাত্রী উঠল।এবার বাস ভরে গেছে-ছেলেটা কিন্তু কোথাও না সরে সেখানেই দাড়িয়ে রইল ঠায়। আবার চলতি বাসে তার ঘষাঘষিতে মালুম হল মামু অন্য কিসিমের!ডাইনে বায়ে সরলাম এদিক ওদিক ঘুরলাম কিন্তু সে তার লক্ষ্যে অনড়। এবার আবার নিজের ভুল ভেবে নিজের মধ্য ডুব দেবার চেষ্টা করলাম। ভেবে ওখানে এক রমনীই দাড়িয়ে আছে-কল্পনায় না হয় একটু আদিম সুখই অনুভব করলাম। কিন্তু না সপ্নের শুরুতেই হোচট খেলাম!কঠিন পুরুষাঙ্গের ঘর্ষন নারীর কোমলতার সাথে যে বড্ড বেমানান। মনে হল উঠে দাড়িয়ে জোরে এক থাপ্পর মারি-শালা বিতলামীর আর জায়গা পাওনা।উমহু ব্যাপারটা শোভন হবেনা-ফের সংস্কারের বাধা!ঘাড় ঘুরিয়ে ছেলেটার দিকে তাকালাম ভাল করে। ফর্সা র্সুদর্শন লো পাওয়ার্ড চশমা তাকে বেশ ইনোসেন্ট লাগছে।সবকিছু ভুলে বাইরে কিছু একটা আতিপাতি করে এমন ভাবে খুজছে যে নিন্মাঙ্গের কোন বার্তাই তার মগজে গিয়ে পৌছায়নি। দুটো মাথা দুই ভাবনায় ব্যাস্ত।তার উদ্দেশ্যে কয়েক ডজন গালি জিভের অগ্রভাগে এসে কিলবিল করল শুধু।আপনি কি জানেন কত শত পুরুষ শিশু কিশোর পুরুষদের দ্বারা ধর্ষিত হয় প্রতিবছর?আমি ব্যাক্তিগত ভাবে সমকামিতাকে ঘৃনা করি কিন্তু সমকামীকে নয়(অনেকটা পাপকে ঘৃনা কর পাপীকে নয়-এর মত),কেননা তারা কোনমতেই বিপরিদ লিঙ্গের প্রতি আকর্ষন অনুভব করেনা।এটাতো স্বীকৃত যে সমকামীতা একধরনের অসুস্থতা-প্রকৃতির এই নিষ্ঠুর খেলার কাছে তারা অসহায়!অতএব তাদের ঘৃনা করাটা বোধ হয় ঠিকনা।। কিন্তু সারা বিশ্বেই অন্য এক ধরনের সমকামী বা উভকামীর দেখা মিলবে। এদের কোন বাছ বিচার নেই। বিপরিদ লিঙ্গের কাউকে না পেলে এরা সমলিঙ্গের সাথেও দৈহিক মিলনে লিপ্ত হতে দ্বীধা করেনা। নিজের রিপুকে দমন করার জন্য এরা যে কোন পন্থা অবলম্বন করে।আমাদের দেশের মত ধর্মীয় কারনে বা সামাজিক ভাবে রক্ষনশীল দেশেই এদের আধিক্য। অবশ্য সবখানেই একঘেয়েমীতা বা রুচি পরিবর্তনের জন্য কিছু মানুষ সমকামীতায় আগ্রহী হয়।অল্প চেনা অতিচেনা কিংবা অচেনা কোন সবল পুরুষের কাছে একই বিছানায় যখন আমরা একটা কিশোরকে আমরা ঘুমোতে পাঠাই নিশ্চন্তে তখন কি একবারও ভাবি-কি ভয়াবহ একটা অভিজ্ঞতা অর্জন করতে পারে সেই একটা রাতে?সেই কিশোরটি কাউকে বলতে পারেনা-হয়তো কেউ বিশ্বাস করবে না ভেবে।কি নিদারুন ভয়ঙ্কর লজ্জা অপমান গ্লানীতে নীল হয়ে সে মুষড়ে থাকে-সারাটাজীবনই হয়তো সে মনের একান্ত গহীনে সে কষ্টটাকে বয়ে বেড়ায়।ঠিক তেমনি একটি ভয়ঙ্কর ধর্ষনের ঘটনার বর্ণনা করছি আমার এক অতি ঘনিষ্ঠ বন্ধুর নিজের জবানীতে;তখন বয়স ১১/১২ হবে।নারীদের প্রতি অল্প বিস্তর আকর্ষন বোধ করি, রুপ দেখে বিমোহিত হই, কল্পনায় সপ্ন গিজগিজ করে রুপকথার আদলে। সন্তান উৎপাদনের পুরোপুরি প্রক্রিয়া থকনো জানা হয়নি।যৌন বিষয়ক কথাবার্তা বহুবার পিউরিফাইড হয়ে কানে আসে।ভাবতাম যৌন সম্ভোগ শুধু খারাপ লোকেরাই করে।আমার পরিবার,পরিবেশ আর আশেপাশের কালচার এইভাবেই আমাদের শিখিয়েছিল।নিরাভরন নারিদেহ দেখার দুর্নিবার আকাঙ্খা থাকলেও সেইটে ছিল শুধু নিষিদ্ধ কোন কিছু চোখ দিয়ে স্পর্শের আকাঙ্খায়।ইন্টারনেট টিভির দৌরাত্ম আর খোলামেলা ছবির আগ্রাসনতো তখনো শুরু হয়নি-তাই এই প্রজন্মের থেকে অনেকখানি পিছিয়ে ছিলাম তখন।সমকামী ব্যাপারটা তখন ধারনার মধ্যেই ছিলনা।একসাথে গাদাগাদি লেপ্টালেপ্টি করে শত শত পুরুষ নারী শুয়ে থাকলেই কি-নির্জলা বন্ধুত্ব কিংবা আত্মিক সম্পর্ক ছাড়া তাদের মধ্যে অন্য কোন সম্পর্ক থাকতে পারে সেইটে কল্পনা থেকে বহু লক্ষ্য যোজন দুরে ছিল।সেই পুচকে বয়সে আমার দুই বোন আমাকে বডিগার্ড হিসেবে নিয়ে গেল বেড়াতে আমাদের দুরসম্পর্কের এক আত্মীয়ের বাড়িতে।সম্পর্ক দুরের হলেও তাদের আন্তরিকতাও আতিথিয়েতা ছিল দারুন।জোড়াজুড়িতে সেই রাতে সেখানে থেকে যেতে বাধ্য হলাম সবাই।মেয়েদর থাকার জায়গার ব্যাবস্থা হলেও আমাকে নিয়ে পড়ল ফ্যাসাদে!তখন না বড় না ছোটর দলে।অবশেষে আমার জায়গা হল তাদেরই ভাড়া দেয়া এক মেস বাড়িতে।মাঝারি একটা রুমে তিনখানা খাট। তিনজন বোর্ডার মাত্র। জায়গা হল তন্মধ্যে বেশ বড় একখান খাটে সজ্জন এক বোর্ডারের সাথে।তখনো হাফ প্যান্ট পরি। গায়ের জামাখানা খুলে রেখে বিছানায় শরির এলিয়ে দিলাম। এরকম পরিবেশ আমার জন্য একদম নতুন -অপরিচিত কারো সাথে ঘুমাইনি কখনো, তাই প্রথমে একটু অস্বস্তি লাগলেও জার্নি আর হুটোপাটার ধকলে ক্লান্ত আমি ঘুমিয়ে পরলাম পরক্ষনেই।গভীর রাত; ঘুম ভেঙ্গে গেল-দম আটকানো অস্বস্তি কর একটা চাপ অনুভব করছিলাম। ঘুম ঘোরে ভেবছিলাম সপ্ন দেখছি-পরমুহুর্তেই ফিরে এলাম বাস্তবে।ভীষন আতংকিত হয়ে লক্ষ্য করলাম আমার পাশে শুয়ে থাকা সবল রোমশ পুরুষটা আমাকে জোরে চেপে ধরে তার উত্তিথ পুরুষাঙ্গ দিয়ে আমার দুপায়ের ফাকে জোরে জোরে ঘষছে। সারা দেহ থরথর করে কেপে উঠল আমার ভীষন ভয় পেয়ে গেলাম।তবুও মনে ভীষন সাহস সঞ্চয় করে ঝাড়া দিয়ে উটে বসে আতংকিত কন্ঠে বললাম- এসব কি করছেন?লোকটা আচমকা আমার কাছ থেকে এমন প্রতিরোধ আশা করেনি- সেও ধড়মড় করে উঠে বসে-কাপা কাপা কন্ঠে এক্কেবারে কিস্যু জানেনা এমন ভঙ্গীতে বলল,কেন কি করেছি?-আমি আরো জোড়ে চেঁচিয়ে উঠলাম, মানে আপনে জানেননা কি করেছেন? আমি সবাইকে বলে দেব।তখুনি সে আমার মুখ চাপা দিয়ে হিস হিস করে উঠল, খবরদার কাউকে বলবা না তাইলে খুন করে ফেলব।‘পাছে ঘুমিয়ে পড়লে সে আমাকে মেরে ফেলে সেই ভয়ে আতংকে সারারাত আমি ঠায় বসে ছিলাম সেখানটায়। ভোরের দিকে হয়ত একটু তন্দ্রার মত এসেছিল-ফের চোখ মেলে চাইতেই দেখি বিছানা ছেড়ে পালিয়েছে সে- সকালের মিষ্টি রোদের আলো ভরে আছে সারা ঘর।ভোরের আলোর স্পর্শে হয়ত আমি ভয় মুক্ত হয়েছিলাম-তবু সেই রাতের স্মৃতি আমাকে তাড়িয়ে নিয়ে বেড়িয়েছে আরো বহু বছর।

সমকামী(১৮+)

০২ রা ফেব্রুয়ারি, ২০০৯ রাত ৮:৫৬
সারা পৃথিবীতে যখন সমকামীদের নিয়ে প্রচন্ড আলোড়ন- উন্নত বিশ্বর কোন কোন দেশে যখন সমকামীদের বৈবাহিক বৈধতা দেয়া হচ্ছে- ঠিক সে সময়টাতেও কিন্তু রাশিয়াতে সমকামীদের প্রচন্ড ঘৃনা করা হত! দুজন পুরুষ বা দুজন নারী এমনকি তারা যদি আপন ভাই কিংবা বোনও হয়-এক বিছানায় পাশাপাশি ঘুমোলে তাদেরকেও সন্দেহের চোখে দেখত। আমি দেখেছি দুবোন কিংবা দুভাই যদি একান্ত বাধ্য হত পাশাপাশি শুতে তাহলে একজন মাথা দিত উত্তরে একজন দক্ষিনে! প্রথমে বুঝিনি এমনতর শোয়ার গুঢ় রহস্য। পরে এক রুশভাই আমাকে ব্যাখ্যা করে দিলে আমি বাকহারা হয়েছিলাম বেশ কিছুক্ষন। আরো আশ্চর্যের কথা রুশ রমনীরা পারতপক্ষে মর্দ্দা কুকুর পোষেনা আর পুরুষরা তার উল্টেটা! ওখানে যখন দুজন পুরুষ বা নারী পাশাপাশি হাত ধরে হাটলেও অনেকে জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে আড়চোখে তাকায়-তখনো কিন্তু আমরা বাঙ্গালীরা উদাসীন। দুজনের বিছানায় ছজন লেপ্টালেপ্টি করে ঘুমাই । বন্ধুকে কদিন পরে দেখলেই আবেগের অতিশয্যে বুকে জড়িয়ে ধরি , আড্ডায় রাত জেগে কেউ ক্লান্ত হয়ে পড়লে পাশে বসা বন্ধুর ঘাড়ের উপর মাথা রেখে বিশ্রাম নেই। এসব দেখে ওরা চোখ বড় বড় করে ভাবে এরা কি গন সমকামী?কেউ একজন মুখ ফুটে বলে ফেললই একদিন ‘ তোমরা কি..? ’ শুনে আমরা হাসতে হাসতে মরি!কোন একদিন ছিল সমগ্র রাশিয়ায় পতিতালয় নেই বলে তারা গর্ব করত । কিন্তু এখন সেই দিন আর নেই । এখন এরা বড় বেশী সহজলভ্য হয়ে গেছে। ১৯৯৬ সাল মাত্র চারপাচ বছর আগে যেখানে রুশরা আমাদের বঙ্গের ( হকার্স মার্কেট)কেনা সস্তা জিনস দেখে ভিমড়ি খেত এখন তারাই ব্যাবহার করছে বিশ্ব বিখ্যাত ফ্যাশন হাউজের পোষাক। যা দেখে আমরা এখন ভিমড়ি খাই!বড় বড় কাচে ঘেরা জাকজমকপূর্ন এসব কোম্পানীর শোরুম দেখে সদ্য গ্রাম কিংবা মফস্বল তেকে আসা মেয়েরা ফ্যাল ফ্যাল করে এখনো চেয়ে থাকে । ভিতরে সাজানো এককটা পোষাক তাদের সপ্নে পাওয়া অর্থের থেকেও মুল্যবান। ভয়ে হাত দিয়ে ধরে দেখতে সাহস হয়না। কিন্তু সেই মেয়েটাই যখন দুদিন পরে তেমন একট পোষাক পরে আপনার নাকের ডগা দিয়ে পুরের সুবাস ছড়িয়ে গ্যাট গ্যাট করে হেটে যাবে তখন নিশ্চই দিনের বেলা খোলা চোখে সপ্ন দেখছেন ভেবে ডাক্তারের কাছে ছুটবেন ।এটা কি সম্ভব ? হ্যা সম্ভব! তবে কিভাবে। ওই পোষাকটা সেই মেয়েটার হয়তোবা একরাতের কামাই। আর ব্যাখ্যার প্রয়োজন নেই আশা করি। কাল রবিবার। ছুটির দিন। শীতের রাত। আটটাতেই রাস্তাঘাট ফাঁকা তবে পাব বার ডিসকো থেক আর ক্যাসিনোতে উপচে পরা লোকের ভীড়। রাত দশটার দিকে আমরা চার বন্ধু মিলে যাচ্ছিলাম অন্য এক বন্ধুর বাসায় সারারাত আড্ডা দেবার অভিপ্রায়। জাকির গাড়ি চালাচ্ছিল। ঐতিহাসিক রেড স্কোয়ারের পাশ দিয়ে একটু এগিয়ে যেতেই পিছনের সিটে আমার সাথে বসা সুদর্শন ও বাগ্মী নিঝুম জাকিরকে একটু গাড়ি স্লো করতে বলল। জাকির ঘাড় ঘুড়িয়ে হেসে বলর ‘কি ব্যাপার নিঝুম তোমার ধান্দা কি।’ তার চাহনী রহস্যজনক। কিন্তু মেলা দিন পরে এই শহরে আসা গেঁয়ো আমি বুঝতে পারলামনা এই কথা ও চাহনীর তাৎপর্য!নিঝুম চোখ মেরে বলল,‘ রাস্তার পাশ ঘেষে চালান। একটু ফাজলামী করি।’ ব্যাপারটা কি আমি উৎসুক চোখে তাকালাম রাস্তার পাশে আধো আলো অন্ধকারে প্রথমে ভাল করে বোঝা যায়নি ভাল করে লক্ষ করতেই বোঝা গেল বিশাল চওড়া কালচে পাথরের ফুটপাথ ঘেষে থাকা প্রতিটা ল্যাস্প পোস্ট গুলোর আড়ালে দাড়িয়ে আছে কোন নারী বা পুরুষ । কাড়িটা ফুটপাথ ঘেয়ে একটু স্লো হতেই ওদের কয়েকজন আড়াল ছেড়ে বেরিয়ে এল । ‘ওই মহিলার কাছে যান।’ একটু দুরে দাড়ানো এক মহিলাকে উদ্দেশ্য করে নিঝুম জাকিরকে বলল ।জাকির নির্দিস্ট স্থানে গাড়ি থামাতেই সেই ভদ্র মহিলা চারিদিকে ভাল করে নজর বুলিয়ে এগিয়ে এল । নিজুম ততক্ষনে পিছনের কাচ নামিয়ে ফেলেছে।মহিলা কাছে এসে মাথাটা ঝুকিয়ে চাপা কন্ঠে বলল ‘, শুভসন্ধ্যা ভদ্রগন। আপনাদের কি প্রয়োজন?’‘কি তোমার কাছে আছে?’ নিঝুমের সিরিযাস কন্ঠ শুনে আমি চমকে গেলাম।মহিলা একটু চুপ থেকে বলল ,’ যা চাও ।যেরকম চাও সবই আছে।’‘কি কেমন আছে একটু ব্যাখ্যা কর?’‘বারো থেকে শুরু করে বাহান্ন সবই আছে । লম্বা খাটো শুটকি মুটকি এমনকি সেরা অভিজাত বংশের রুশ সুন্দরীকেও পাবে।তবে খরচটা একটু বেশী।’নিঝুম মাথা নেড়ে বলল,‘ না চলবে না । আর কি আছে?’মহিলা পিছনের একটা বাসার দিকে ইঙিত দিয়ে বললেন ‘আমার সাথে নেমে গিয়ে ওই বাসাটাতে চল ওখানে সবই আছে তুমি দেখে পছন্দ করে নিও।’‘উহু ,তোমার ওখানে তো সব যুবতী আর নারী নাকি?’‘হ্যা । অবশ্যই ।’ মহিলা দৃঢ় কন্ঠে বলল ।’কিন্তু আমাদের যে দরকার অন্যকিছু ।’‘কি দরকার?’ মহিলার কন্ঠে বিস্ময় ।নিঝুম তাকে ইশারায় আরেকটু কাছে আসতে বলল । সে দুপাশে ঘাড় ঘুড়িয়ে ভাল করে লক্ষ্য করে মাথাটা আরেকটু কাছে নিয়ে এল॥ নিঝুম চাপা কন্ঠে বলল ,‘ আমাদের দরকার দুটো ছেলে। আছে তোমার কাছে ?’কথাটা মাটিতে পরার আগেই ‘ও বজ্বা মোই!(ও মাই গড) বলে চিৎকার করে মহিলা সভয়ে ছিটকে পিছিয়ে গেল অনেখখানি! আমরা ভিতরে বসা সবাই মিলে একসাথে হো হো করে হেসে উঠলাম। জাকির গাড়ি ছেড়ে দিল একটু এগিয়ে যেতেই পিছন ফিরে তাকিয়ে দেখি মহিলাটি হা হয়ে বিস্ফোরিত নেত্রে আমাদের গমন পথের দিকে চেয়ে আছে।সন্দেহ নেই তার এই জীবনে এমন ঘটনার সন্মুখিন হয়নি। তবে একটা ব্যাপার দিনের মত পরিস্কার হয়ে গেল যে এরা সমকামীদের এখনও যেথেস্ট ঘৃনা করে !

একটি রোমাঞ্চকর(!) গল্প- ১৮+

০৫ ই ফেব্রুয়ারি, ২০০৯ রাত ৯:১৮
রুশরা এমনিতেই শারিরিক ব্যাপারে একটু (একটু নয় অনেক খানিকটা)উদার (কাজাক¯থান, আজারবাইজান, উজবেকস্থান সহ কিছু প্রদেশ বাদে)। যুদ্ধ-বিগ্রহ বিদ্রোহ কিংবা অন্যান্য বিবিধ কারনে পুরুষের সংখ্যা আনুপাতিক হারে কমে গেছে।আর কিছু অংশ সহজলভ্য বিখ্যাত রুশ ভদকার অপার মহিমায় শৈর্য বির্যহীন হয়ে প্রায় ক্লিবের পর্যায়ে চলে গেছে। মেয়েদের উপর জুলুম অত্যাচার করবে যে পুরুষ তাদেরকেই যেন হারিকেন দিয়ে খুজতে হয়। সেখানে অবস্থাটা সহজেই অনুমেয় ।গ্রীস্মে ওদেশে দেখেছি বাজারের সবচেয়ে মুল্যবান আধুনিক ফ্যাশনের (চারিদিক দিয়ে উদার হস্তে ছেটে কেটে যথাস্মভব ছোট করা হয়েছে) পোষাক পরে যথাসম্ভব সাজগোজ করে দুর্দান্ত কোন রুপসী সুবাস ছড়িয়ে হেলেদুলে রাস্তা দিয়ে হেটে যাচ্ছে আর পুরুষরা যেন সব সাধু যোগী সেদিকে একবার তাকালেই যেন তার ধ্যান ভেঙ্গে যাবে। ভুল বললাম তাদের উদাসীন চোখের এ সৌন্দর্য উপভোগ করার মত ক্ষমতা ছিলনা।আমরা কোন সুবেশী সূদর্শন পুরুষকেও রাস্তা দিয়ে হাটলে দু’একবার ঠারে ঠুরে দেখি। আর এমন অস্পরীর মত রুপসী! হায় আল্লাহ! বাঙ্গালী ললনাদের যেন এদিন কোনদিন না আসে। তখন সমস্ত রাশিয়ায় ‘ধর্ষনের’ ঘটনা প্রায় ঘটতনা বললেই চলে। এটার পিছনে অবশ্য নারিদের আধিক্য পুরুষদের নিস্পৃহতাই মুল কারন নয় আরেকটা ব্যাপার হচ্ছে কম্যুনিজমের কড়া শাসন (সেটা অবশ্য সাধারনদের জন্য ‘যারা সমাজের উচুপদে আসীন তাদের ব্যাপার আলাদা। তাদের আরেকটা সুবিধা হোল তারা না চাইতেই অনেক বেশী পেয়ে যায় - অতএব ...প্রয়োজন পরেনা!)রুশরা নিজেদেরকেই ব্যাঙ্গ করে বলে,’ আছে কি তেমন নারী যে তার স্বামী যুদ্ধে গেলে পর পুরুষের সাথে ঘুমায়নি?!’এক রুশ সুন্দরী তার জীবনের সবচেয়ে রোমাঞ্চকর ঘটনার বর্ননা করেছিল এইভাবে;এক গ্রীস্মের ছুটিতে মস্কো থেকে কয়েকশ কিলোমিটার দুরে মফস্বলে খালার বাসায় বেড়াতে গেল। ছোট্ট ছিমছাম মফস্বল শহর। কিন্তু বেশীদিন থাকলে একঘেয়ে ও বিরক্তি লাগা স্বাভাবিক। সে গেলে আশেপাশের ছেলে মেয়েরা যেন একটু নতুনত্বের সন্ধান পেত।একেতো সুন্দরী তারপরে শহুরের মেয়ে সেজন্য সবাই তাকে একটু অন্যভাবে মুল্যায়ন করত। তার বয়েসীরা গভীর মনোযোগে লক্ষ্য করত তার হাটাচলা, পোষাক আশাক, কথাবার্তা ।দুচারটে বখাটে ছেলে(বয়সে তার থেকে একটু বড়) বাড়ির আশপাশ দিয়ে ঘুর ঘুর করত তার তীর্যক চাহনী আর বক্র হাসির লোভে। কেমনে যেন তাদের সাথে ভাব হয়ে গেল একদিন। বন্ধুত্বের সুত্র ধরে একদিন তাকে জোর করে(তার ভাষ্যমত-আমার বিশ্বাস হয়না)একটা পোড়োবাড়িতে নিয়ে গেল। সেখানে গিয়ে ওদের খায়েস হোল মেয়েটাকে ধর্ষন করবে। কিন্তু সমস্যা হোল এসব ব্যাপারে তাদের কোন পূর্ব অভিজ্ঞতা নেই! তাছাড়া শহুরে স্মার্ট মেয়ে পুলিশের কাছে গিয়ে বলে দিলে বিপদ! আবার নাবালিকা হওয়ার একটা সম্ভবনা থেকে যায়। সে-তো আর আমাদের দেশের মত তো নয় যে স’মবয়সী দুজন পালিয়ে গিয়ে কোর্ট ম্যারেজ করল। পরবর্তীতে বাদী পক্ষের (মেয়েপক্ষ) উকিল দলিলপত্র ঘেটে প্রমান করল মেয়ের বয়স চৌদ্দ আর ছেলের বত্রিশ।ক’বোতল ভদকা পেটে চালান করে দীর্ঘক্ষন গভীর আলোচনা শেষে তন্মধ্যে ষন্ডা টাইপের একজন ক্রুর ভীষন চক্ষে(!) সবিনয়ে নিবেদন করল , ‘ম্যাডাম আপনার সদয় অনুমতি নিয়ে আমরা কি আপনাকে ধর্ষন করতে পারি?’ সঙে সঙ্গে সে আঁতকে উঠে ছিটকে দাড়াল,’আ বলে কি? অসম্ভব!ছেড়ে দাও এক্ষুনি আমি পুলিশের কাছে যাব।’তার হম্বিতম্বিতে শেষমেষ ওই নব্যধর্ষনকারী(সবে আগ্রহী)রা চোখের জলে নাকের জলে পালানোর পথ দেখে না।এটুকু বলেই গর্বিত ভঙ্গীতে আমার দিকে তাকিয়ে হেসে ফেলল। আমি জিজ্ঞেস করলাম ,’তারপর।’প্রতিউত্তরে সে মুখমন্ডলে রক্তের গোলাপী আভাছড়িয়ে লাজুক হাসি হেসে মুখ নিচু করে বলল,’তারপর আর কি?ছেলেদের এমন বিপর্যস্ত অবস্থা দেখে মায়া হোল ! আর কাতর নয়নের আকুতি আমি উপেক্ষা করতে পারলাম না! শেষমেষ...(লেখাটা আমি প্রথমে প্রকাশ করতে চাইনি। মনে হচ্ছিল ধর্ষন-এর মত একটা ন্যক্কার জনক ব্যাপার তা সে যেমনই হোক, রসিয়ে উপস্থাপন করার কোন উপকরন হতে পারেনা। ঘটনাটা সত্যি-কাহিনীটা মজার ছিল, তাই একটু শেয়ার করতে চাইলাম।

রৌদ্রস্নান-১৮+

২৯ শে জানুয়ারি, ২০০৯ রাত ৮:২৩
মে’র শেষ দিকে শীত শেষ হতেনা হতেই চারিদিকে গ্রীস্মের ছুটির আমেজ।রুশীয়রা তাদের পরিবার পরিজন পোষা প্রানী আর লোটা কম্বল নিয়ে ছুটে যাচ্ছে গ্রাম সুমুদ্রতীরে বা পরবাসে।উদ্দেশ্য ছুটির পুরো সময়টা প্রকৃতির মাঝে নিজের মত করে উপভোগ করা।চারিদেকে লেগেছে উৎসবের রঙ। শুধু হোস্টেলে বসে স্মৃতির জাবর কেটে কার্ড খেলে অখন্ড অবসরে বিশ্রী একঘেয়ে নিরস দিনগুলো কোনরকমে অতিবাহিত করছি আমরা গুটিকতক প্রবাসী ছাত্র।হোস্টেলও পুরোটা খালি হয়ে গেছে-শুধুমাত্র যাদের কোন যাবার জায়গা নেই তারাই কোনমতে মুখ গুজে পড়ে আছে এই লোহা আর কংক্রিটের খাচার মধ্যে।এমন এক একঘেয়ে দুপুরে আমার রুমমেটের মঙ্গোলিয়ান বান্ধবী অনুরোধ করল নদীর ধারে রৌদ্রস্নানে যাবার জন্য। শুনেই আমি মুখ বিকৃত করলাম।এমনিতেই গায়ের যে রঙ তারপরে রৌদ্রস্নান করেলে দিনের আলোতেও কেউ খুজে পাবেনা।তারপরে সী বিচ হলেও কথা ছিল-ছ্যাঃ!নদীর পারে যাব সুর্যস্নান করতে?অন্য সবাই শুনেই পাগলের প্রলাপ বল পিঠটান দিল। ধরা খেলাম আমি। রুমমেটের অনুরোধ উপেক্ষা করলেও তার তামাটে বর্ণের রুপসী মঙ্গোলিয়ান বান্ধবীকে আর উপেক্ষা করতে পারলামনা -অনেক অনুরোধ উপরোধের পরে রাজী হলাম।ট্রাউজারের নীচে শর্টস আছে একখানা। উর্ধাঙ্গে টি শার্ট।রোদ্রে দগ্ধ না হলেও দু-য়েকটা ডুব দিয়ে নিতে ক্ষতি কি সেই ভেবে তোয়ালেটা নিয়ে নিলাম।মঙ্গোলীয়ান সেই মেয়ের লট বহর দেখে আমার চোখ চান্দিতে! আমি সেসব দেখেও না দেখার ভান করলাম। যাচ্ছি যে তাই ঢেড়-বোঝা টানতে রাজি নই। বিরস বদনে কিছুদুর ট্রামে ঠেঙ্গিয়ে বহুপথ হেটে নদীর তীরে পৌছুতেই আমার ভিমড়ি খাওয়ার দশা। এযে রুপকথার রাজ্যে এসে পড়লাম।ছোট্ট শীর্ন নদীর দুই তীরের সে দৃশ্য বর্ননা করার সাধ্যি আমার নেই। তবুও চেষ্টা করতে ক্ষতি তো নেই।সারা শহরের তাবৎ সুন্দরী ললনারা যে একানে এসে ভীড় করেছে। বরফে মোড়া সেই নদী এখন যেমন তার রুপ সৌন্দর্য বেহায়ার মত উন্মুক্ত করে দিয়ে মিষ্টি হেসে কুল কুল গুঞ্জন তুলে ধাবমান দুর সুমুদ্রে নিজেকে সমর্পন করার বাসনায়। ঠিক তেমনি এতদিন চামড়া ফার আর ভারি মোটা আচ্ছাদনের খোলস ছেড়ে বেরিয়ে এসে অতিক্ষুদ্র চোখ ধাধানো বহুরঙ্গা অর্ন্তবাস(যা আসলে সুইমিং কাস্ট্যুম নামে পরিচিত)পড়ে কেউ তার পশ্চাৎদেশ কেউ বক্ষদেশ উর্দ্ধমুখী করে অসীম নীল আকাশকে আহ্বান করছে তাদের তাদের সৌন্দর্য প্রানভরে অবলোকন করার জন্য। কেউ কেউ এত ক্ষুদ্রকায় বস্ত্রখন্ড পরিধান করিয়া নিজেকে সর্বসম্মুখে মেলিয়া ধরিয়াছে যে যাহা দেখিয়া আমার মত ভেতো নির্লজ্জ বাঙ্গালীরও চক্ষু অবনমিত করিতে বাধ্য হইল।কি করব ভাই টিভি সিনেমাতে দেখেছি মাঝে মধ্যে কিন্তু চর্ম চক্ষুতে তো এই প্রথমবার দেখা-তাছাড়া বয়েসও ছিল তখন নেহায়েত কম তাই একটু লজ্জা পেয়েছিলামআমার সেই বন্ধুর বান্ধবী আমাদের দুজনকে হাত ধরে হিড় হিড় করে টেনে নিয়ে চলল সেই ললনাদের পাশ ঘেষে এক্রোবেটিক স্টাইলে।কিছুদুর এগুতেই খালি একটা জায়গা পেয়েই ব্যাগ থেকে প্রমান সাইজের তোয়ালে বের করে বিছিয়ে দিল।পরক্ষনেই কোন কথা নেই বার্তা নেই ধুম করে উদোম করে ফেলল নিজেকে(আমি ভেবেছিলাম পোষাকটা সে এইখানেই পাল্টাবে কিন্তু আগেই বলেছি নাদান বুদ্ধু ছিলাম আমি তখন জানব কি করে ঘর থেকই এরা সুইমিং কাস্ট্যুম খানা ভিতরে পড়ে আসে)।আমি আড় চোখে এক লহমায় দেখে নিয়েছি চেঙ্গিস খান আর হালাকু খান এর বংশধর এই বাদামী রঙ্গের মেয়েটা চাবুকের মত দেহবল্লভী।রোদের আলো যেন পিছলে গেল তার মসৃন ত্বকে স্কিড করে।পরক্ষনেই তাকালাম আমার রুমমেটের দিকে- দেখি সে চোখে করুন আর্তনাদ! যৎ দেশ তদাচার অথবা তুমি যখন রোমে যাবে তখন চেস্টা করবে খাটি রোমান হতে।এইসব বাণীতো বহুবার শুনেছি কিন্তু আমার এই আধা কালা নধর কান্তি শরিরখানা ওদের সামনে উদোম করি কোন সাহসে।রুশ মেয়রা গড় পড়তা সবাই সুন্দরী-আর এদের ফিগার আঃ! এক নজরে ভীমরতি খেতে হয়। সবাই স্কেটিং আর ব্যালে নেচে পনের যেতে না যেতেই শরির করে,ছুরির ফলার মত সেকি তীক্ষ্ন ধার!অবশ্য ৩০ পেরুতে না পেরুতেই অধিকাংশ বুড়িয়ে কিংবা মুটিয়ে যায়।মেয়েদের কথা ছেড়েই দিলাম সংখ্যায় নগন্য হলেও পুরুষদের সংখ্যাও কম নয় এখানে। আঠারো বছর বয়সেই ওদের বাধ্যতামুলক আর্মি ট্রেনিং নিতে হয়। দু-বছর ট্রেনিং শেষে খালি গায়ে দাড়ালে মনে হবে প্রস্তর মুর্তি। এদের সামনে নিজের অসহায় লাগছে!এতগুলো শ্বেতশুভ্র ধবল বকের মাঝে আমরা দুই কানি বক অনেকেই আড় চোখে ঘুরে ফিরে আমাদেরকে দেখছে।নিজেকে আজব জন্তু মনে হচ্ছিল- ওরা গেয়ো ভাবতে পারে সেই ভেবে অবশেষে শুধু ট্রাউজারখানি খুলে ঠ্যাং দুখানি বের করেও শান্তি পেলামনা। শর্টস খানা এমনিতেই হাটু ছাড়িয়ে গেছে তার পরেও আরো নীচের দিকে টানছি।ভাগ্য ভাল যে রোদের তেজ তেমন ছিলনা-আকাশে আবার মেঘের আনাগোনা।লাজ শরম তখন ভেঙ্গেছে কিছুটা,.উপুড় হয়ে শুয়ে আড়চোখে ইতি উতি তাকাচ্ছি।বে আব্রু সৌন্দর্যে চোখ ধাঁধিয়ে যায়। বেশীক্ষন চাইতে পারিনা চোখ সরিয়ে নেই সম্মুখের বিবর্ন ঘাসের দিকে।এইতো ক’দিন আগে দেশে থাকত, কোন তরুনীর আধা ফর্সা পায়ের গোছা,উন্মুক্ত গ্রীবা কিংবা নগ্ন সুগোল বাহু দেখে যেই আমি আদিম রসের আস্বাদ নিতাম সেই আমি যে এমন রুপবতীদের অর্ধনগ্ন শরিরের তীক্ষ চাবুকের আঘাতে ধরাশায়ী হব তাতে আশ্চর্য হবার কি আছে!কিছু বাদে পরিবেশ যখন কিছুটা সহনীয় হয়ে এল-যুবকের চোখে তখন দুঃসাহসিক এডভেঞ্চারের সপ্ন। নদীটা চওড়া হবে সাকুল্যে শ’খানেক হাত।তেমন স্রোত নেই ঢেউতো নেই-ই।অতি শান্ত নদী। কিন্তু আশ্চর্য কাউকে দেখলাম না সেখানে ঝাঁপ দিয়ে দু চার ল্যাপ সাতরাতে।পদ্মার পাড়ের ছেলে আমি। ভাল করে হাটার আগে সাঁতার শিখেছি।ভাবলাম যাই ওদের একটু দেখিয়ে দেই-নদীতে কি করে সাঁতার কাটতে হয়। সবে মাত্র সামার এসেছে রোদের তেজ তেমন নেই তখন। উল্টো আকাশে মেঘের আনাগোনা-বাতাসে একটু শীতল অনুভুতি। তবুও ভাবতে ভাবতে নেমে পড়লাম পানিতে। ওরে বাব্বা! কি ঠান্ডরে বাবা! মনে হচ্ছে বরফ গলা জল। নেমে যখন পড়েছি ফেরার আর পথ নাই। হাটু পানিতে নামতেই টের পেলাম শরিরে সুক্ষ কাঁপনের ঢেউ। যা থাকে কপালে! দিলাম ঝাঁপ। কিন্তু একটু এগুতেই দেখি একি! আমার সমান্তরালে একজোড়া সুদৃঢ় সুগোল ফর্সা হাতের সঞ্চালন। ভাল করে নজর বুলিয়ে দেখি অতি রুপবতী এক রমণী। আমাকে দেখে তারও সাতারের খায়েস হয়েছে। ওকে দেখে আরো উৎসাহিত হলাম সাথে আতংকিতও। এমেয়েতো আমার পুকুর কিংবা ডোবাতে টুপ টুপ ডুপ ঢুপ করে পদ সঞ্চালন দ্বারা সাতরে বেড়ানো আমাদের অধিকাংশ বঙ্গ ললনার মত না। এ দেখি আমারই মত দীর্ঘ দু বাহু প্রসারিত করে প্রফেশনাল সাতারুর মত জল কেটে এগিয়ে যাচ্ছে। খেয়েছে রে! মেয়েদের কাছে সাতারে হার। আমার পদ্মার ইজ্জত যাবে যে! এতক্ষন ধীরালয়ে সাতরালেও এবার চোখ কান বুজে দিলাম জোর সাতার।ফিরতি পথে নিদারুন কষ্ট হলেও পদ্মার মান রেখেছিলাম। এপাড়ে দুয়েকজন হাত তালিও দিল।পাড় বেয়ে উঠে এগিয়ে গেলাম বেশ বড় একখান ছাতার নীচে গোলাকার বেঞ্চটা লক্ষ্য করে।একটু শীত শীত করছিল তখনো।শরিরে তির-তির করে মৃদু কাঁপন।বেঞ্চিতে বসতেই আচমকা ধেয়ে এল বৃষ্টি।আশে পাশে যারা ছিল সবাই তাদের বিছিয়ে রাখা তোয়ালে খানা কোনমতে নিম্নাংগেজড়িয়ে ধেয়ে এল আমার পানে মানে,আমি যেখানটায় আছি সেই ছাতার নীচে।কয়েকজন সিট পেয়েছে বাকি সবাই দাড়িয়ে। আমার চারপাশে গা ঘেষাঘেষি করে দাড়িয়ে আছে বেশ ক’জন রুশ ললনা। নাকের কাছে সৌন্দর্যের ঘ্রান।দ্বীধাহীন ভাবে বলতে হয় সেই আমার বয়সে তখন সেরকম শুধু কল্পনাতেই মানায় –বাস্তবে এমন হওয়া সম্ভব বলে মনে করিনি কখনো। কত সুখ কল্পনায় বেসে যাচ্চিলাম তখন।বিধাতা বড় নিঃরস! ভেজা গা তখনো শুকোয়নি। প্রথমে একটু একটু করে মিনিট খানেক যেতে না যেতেই শুরু হল কাঁপুনি। সেকি কাপুনি আর খিচুনি!চারিদিকে অন্ধকার দেখছি তখন-মনে হচ্ছে কেউ আমাকে বরফের গর্তে ঠেসে ধরেছে।আমার কাপুনি দেখে প্রথমে শুরু হল মৃদু গুঞ্জন পরক্ষনেই হট্ট্রগোল।শুনতে পেলাম বহু রমনী কন্ঠে -ও বজ্বা মোই!ও বজ্বা মোই!স্তো উসতাবোই?ও ঈশ্বর!ও ঈশ্বর আমার! কি হয়েছে তোমার?আমার দুবস্থা ঠাহর করতে পেরে তিন চারটে মেয়ে এক সাথে তাদের কটি থেকে একটানে তোয়ালে খুলে চেপে ধরল আমাকে। আর দু তিনজন আমার হাত পা ম্যাসেজ করতে শুরু করে দিল।মিনিট দশেক লাগল ধাতস্ত হতে। বিব্রত লাজুক চোখ মেলে চাইলাম আমি। সম্মুখ থেকে উধাও যৌন আবেদনময়ী অর্ধ উলংঙ্গ অতি সুন্দরীদের ক্ষীন কটিদেশ শ্বেতশুভ্র সুঠাম উরু।আমার সামনে যেন মমতাময়ীর স্নিগ্ধ দৃষ্টি নিয়ে দাড়িয়ে আছে অতিআপন কিছু প্রিয় মুখ।ছবি: সেই Tsna নদী তাম্বুভ,রাশিয়া।