বৃহস্পতিবার, ১২ নভেম্বর, ২০০৯

বিশ্ব নারী দিবস (রুশীয় স্টাইল)

০৮ ই মার্চ, ২০০৯ রাত ৮:৫২
আজ বিশ্ব নারী দিবস। প্রায় সারা বিশ্বেই যথেষ্ট গুরুত্বের সাথে এদিনটি পালিত হয়।আগে নারী দিবস নামে কোন দিবস আছে সেটাই জানতামনা। জানলাম গিয়ে রাশিয়াতে।বিশ্ব নারী দিবস নিয়ে সম্ভবত সবচেয়ে বেশী মাতামাতি করে রুশীয়রা। এদিনটি তাদের সরকারী ছুটির দিন;সেইসঙ্গে সেখানে লক্ষ লক্ষ জুটি গড়া ও ভাঙ্গার দিন- এটা অবশ্য সরকারী নিয়মের মধ্যে পড়ে না।মেয়েরা তাদের প্রেমিক ও স্বামীকে যাচাই করে গিফটের বহর ও তাকে খুশী করার সবরকম অভিনয় দেখে!কিভাবে নিজের প্রিয় নারীকে খুশী করবে এই ভেবে পুরষদের মাস খানেক আগ থেকেই ঘুম হারাম হয়ে যায়। সে এক হুলস্থুল কান্ড! সারা দেশে বয়ে যায় মদ ফুল নাচ গানের বন্যা। এইদিনে ছোটখাট ইতরামী কিংবা বিতলামী করলে পথ চলতি বা পাবে,বারে,পার্কে কোন রমণীই বিশেষ রাগ করে না,এমনকি তাকে যদি পথে উটকো কেউ ভালবাসাও জানায়। অন্যান্য যেকোন উৎসবের চেয়ে তারা সবচেয়ে জাকজমক পূর্ন ভাবে এই দিনটি পালন করে শুধুমাত্র বড়দিন আর নিউইয়ার এদুটো বাদে। বিশেষ করে যুবতী মেয়েরা - তবে কিশোরী আর বৃদ্ধারাও কম যায়না,তারা যেন ছাগলের তিন নম্বর বাচ্চা!তখন (কম্যুউনিজমের সময়কাল) হয়তো এখনো -অন্য সব উন্নত দেশের মত বেশীর ভাগ রুশ পরিবারও একের অধিক সন্তান নিতে আগ্রহী ছিল না। সেটা ছেলেই হোক আর মেয়ে। তবে মেয়ে সন্তানের ব্যাপারেই হয়তো আগ্রহটা একটু বেশী ছিল। এর পিছনের কারনটা আমার মনে হয়, প্রথমত; ছেলে হলে যুদ্ধে পাঠাতে হবে এই ভয়ে। দ্বীতিয়ত; মেয়েরাও কামাই রোজগারে পুরুষদের থেকে কোন অংশে পিছিয়ে ছিল না-তাছাড়া মদ তাদের বিশেষ খেয়ে ফেলত না আর নিজের পরিবারের প্রতি তাদের ছিল অকৃত্বিম ভালবাসা। সাধারন দিনগুলোতে বটেই ওদের সব্বার ভীষন প্রিয় সময়টা যখন ওরা সব’চে বেশী রোমান্টিক মুডে থাকে সেই গ্রীস্মেও ওখানে দেখেছি বাজারের সবচেয়ে মুল্যবান আধুনিক ফ্যাশনের ভয়াবহ সেক্সি পোষাক পরে পালিশ বার্নিশ করে দুর্দান্ত কোন রুপসী সুবাস ছড়িয়ে হেলেদুলে রাস্তা দিয়ে হেটে যাচ্ছে,আর পুরুষরা যেন সব সাধু যোগী সেদিকে একবার তাকালেই যেন তার ধ্যান ভেঙ্গে যাবে। ভুল বললাম কি, হয়তো তাদের উদাসীন চোখের এ সৌন্দর্য উপভোগ করার মত ক্ষমতা ছিলনা।আমরা কোন পুরুষও সুন্দর পোষাক পরে রাস্তা দিয়ে হাটলে দুয়েকবার ঠারে ঠুরে দেখি। আর এমন অস্পরীর মত রুপসী! হায় খোদা! বাঙ্গালী ললনাদের যেন এদিন কোনদিন না আসে। কিন্তু আচমকা সব কিছুই ভোজবাজীর মত পাল্টে যেত এই জেন্সকাইয়া দ্জিন(বিশ্ব নারী দিবস) এলে। সেদিন নারীদের সেকি মুল্যায়ন!অবশ্য রুশরা যখন ভালবাসে বা ভালবাসার অভিনয় করে সেইটে হয় সেইরকম! সারাক্ষন বুকে করে জড়িয়ে চোখে চোখে রাখে যেন একটু বেখেয়াল হলেই হারিয়ে যেত পারে তার অমুল্য ধন!এদিনে সবচেয়ে দুঃখী হয়তো সেই মেয়ে যার কোন প্রেমিক বা স্বামী নেই।মেকি বিশ্ব ভালবাসা দিবসকে তারা বিশেষ মুল্যায়ন করে না। এদিনটিই যেনতাদের ভালবাসা দিবস। আমার অনেক বিদেশী বন্ধুরা(এরমধ্যে স্বদেশীও আছে) যার যেটুকু সামর্থ পকেটে পুরে বেরিয়ে পড়ত আনকোড়া প্রেমিকা বাগানোর ধান্ধায়।তারাই ফের সন্ধ্যেবেলা ফিরে আসত পকেট খালি করে মাতাল হয়ে ।তবে কেউ কেউ অবশ্য বগলদাবা করে আনত নতুন কাউকে।দু-য়েকজন হোস্টেলে ফিরে না আসলে উদ্বিগ্ন হতাম না। ভাবতাম হয়তো নব্য প্রেমিকার সাথে রাত কাটাচ্ছে তারই বাসায় -নয়ত হতাশ হয়ে পুরাতনের কাছেই ফিরে গেছে! এদিনটায় প্রায় প্রতিটা রুশ নারীমাত্রই আশা করে অনেক অনেক পুরুষ তাদের ফুল সহ অন্যান্য উপহার ও ভালবাসা দিয়ে শুভেচ্ছা জানাবে।-এদিন নাকি সাইবেরিয়ার ইয়াকোতিরিনবাগ শহরের পুলিশ ছোটখাটো নিয়ম ভঙ্গেও জন্য মহিলা গাড়ি চালকদের কোন জরিমানা করে না বরংচ তাদের ফুল ও পারফিউম দিয়ে শুভেচ্ছা জানায়। ইয়াকোতিরিনবাগ শহরের এটাই ঐতিহ্য।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন