বৃহস্পতিবার, ১২ নভেম্বর, ২০০৯

খুনি

১৬ ই মে, ২০০৯ রাত ৯:১২
বুথ থেকে টাকা তুলে উল্টো দিকের রাস্তায় এসে দাড়ালাম রিক্সায় করে ফের পল্লবীতে যাব বলে। এসময়টাতে খালি রিক্সা পাওয়া একটু কষ্টকর। আকাশ মেঘাচ্ছন্ন-গতকাল তুমুল ঝড়বৃষ্টি হওয়াতে হাওয়াটা বেশ ঠান্ডা। সে কারনেই এই ভর দুপুরে রাস্তায় দাড়িয়ে থাকতেও খারাপ লাগছিলনা।একটু বাদে, দুর থেকে খালি রিক্সা নজরে আসতেই হাত তুললাম।রিক্সাটা কাছাকাছি হতেই মনে হল চালকের মুখ আমার চেনা। সে আমাকে দেখেই তার পান খাওয়া কালচে লাল দাতগুলো বের করে বেশ একটা মোলায়েম হাসি দিল। কাছাকাছি এসে হার্ড ব্রেক কষে জিজ্ঞেস করল,'বস কই যাবেন?আমিও একটু হেসে বললাম, 'পল্লবী।-কেমন আছেন? ওঠেন।আমি রিক্সায় উঠতে উঠতে বললাম, 'এইতো। কি ব্যাপার তুমি বাস ছেড়ে রিক্সায় ক্যান?আবলুস কাঠের মত গায়ের রঙ্গের শক্তপোক্ত এই ছেলেটা একসময় আমি যেই বাসায় ভাড়া থাকতাম সেখানকার দারোয়ান ছিল।পরে বাড়িওয়ালার সাথে ঝগড়া করে চাকরি ছেড়ে দিয়ে বাসের হেল্পার হয়।বহুদিন দেখেছি বাসের রড় ধরে ঝুলতে ঝুলতে বাসের গায়ে থাপ্পর মেরে চিৎকার করে বলছে ‘এই ডাইরেক্ট গুলিস্থান-ডাইরেক্ট ডাইরেক্ট। যাওয়া আসার পথে চোখাচোখি হয়ে গেলে কিঞ্চিৎ লজ্জা পেয়ে সালাম দিয়ে বলত,ভাই ভাল আছেন?দারোয়ানের চাকরি ছেড়ে বাসের হেল্পারের চাকরি নেয়াটা যে স্ট্যাটাসের অবনমন এটা সে ভাল করেই জানত।তাই লজ্জায় সে বেশী কথা বাড়াত না।একদিন দেখলাম সে আস্ত বাসই চালাচ্ছে। ভাবলাম, যাক বেচারার একটা হিল্লে হল।কিন্তু একি এখন দেখি সে বাস ছেড়ে রিক্সায়! কাহিনী বুঝলাম না?সেজন্যই কৌতুহলী হয়ে তাকে প্রশ্নটা করা।সে পিছন ফিরে হেসে বলল, না ভাই বাস আমার ছুট করে না।-কেন? -ভাই বাস চালাইতে গিয়া দুই দুইখান মার্ডার করছি। ওর থেইক্যা কানে ধরছি আর বাস চালামু না।আমি ভীষন অবাক ও মর্মাহত হয়ে বললাম, 'দুই দুইখান মার্ডার মানে দুইজন লোককে মেরে ফেলেছ! কোথায় করেছ?-বাংলা কলেজের সামনে।-তার মানে কি- তারা বাংলা কলেজের ছাত্র ছিল?-একজন ছাত্রের থেইক্যা বড়- নেতা ছিল।-ধরা পর নাই?-পড়ছিলাম ট্যাক্সি ক্যাব ধাওয়া দিয়া আমারে ধইরছিল-মাইর খাও নাই?-দুই চাইরখান কিল ঘুষি দিছিল- এর মইধ্যে পুলিশ আইয়া গেল- পরে শুরু হইল ছাত্র পুলিশের মারামারি-এই ফাকে আমি পুলিশের ঠ্যাং এর ফাক দিয়া পালাইছিলাম।পরেরটা?-ওইডা গার্মেন্টস এর ছেমড়ি ছিল।(কথাটা এমন ভাবলেশহীন কন্ঠে তাচ্ছিল্যের সুরে বলল যে মনে হল কোন তেলাপোকা ছাড়পোকা মেরেছে!)-ওইবার ধরা খাও নাই।-নাহ- বাস যে টান দিছিলাম, মাথা টাথা পুরা আওলাইয়া গেছিল। আর কয়জনতো মইরতে মইরতে বাইচ্যা গ্যাছে!বস বাস চালাইলে পয়ষা থাকে না-পাচশ কামাইলে পাচশ’ই খরচ হইয়া যায়। আর এহন পত্যেকদিন তিন’শ মিনিমাম কামাই হয়। টাকা জমাইয়া দেশে জমি কিনছি…সে বলে যাচ্ছিল তার কথা আর আমি বিমর্ষ মনে ভাবছি অন্য কিছু;দুই দুইজন মানুষকে খুন করে সে কত অবলীলায় বলে যাচ্ছে তার বীরত্বের কাহিনী। আমি এই মূহুর্তে বসে আছি একজন খুনীর রিক্সায়। ভাগ্য ভাল যে সে এখন রিক্সা চালায় না হলে আর কত মায়ের বুক খালি হত কে জানে।গন্তব্য এসে গেলে রিক্সা থেকে নেমে ভাড়াটা দিতেই সে বেশ বিগলিত হাসি দিয়ে বলল, 'বস পারলে আমারে একখান চাকরি দিয়েন।'-এই না তুমি বললা, রিক্সা চালায় ভাল আছ-তাইলে আবার চাকরি ক্যান?ড়এই রোদে রিক্সা চালানো খুব কষ্ট। এমনিই কালা মানুষ- দেখেননা আরো কালা হইয়া গেছি।গালিটা গলার কাছে এসে আটকে গেল,’শালা রঙ নিয়ে তোর কত টেনশন আর দুই দুইজন মানুষরে খুন করলি সেই নিয়া তোর কোন টেনশন নাই!'

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন