০৭ ই মার্চ, ২০০৯ রাত ৮:৪১
প্রচন্ড বৃস্টির সাথে ঝড়ো বাতাস। গাড়ির হেড লাইট ও ফগ লাইটের তীব্র আলোতেও একমিটার দুরের কিছু ঠাহর হচ্ছেনা। আমরা দুবন্ধু পালাক্রমে গাড়ি চালাচ্ছি। একজন স্টিরিয়াং এ বসলে অন্যজন ডিরেকশন দিচ্ছে। কোন কোন সময় গাড়ি রাস্তার ডান না বাম ঘেষে চলছে সেইটেই বুঝতে পারছি না। গাড়ি চলছে সর্ব্বোচ্চ ২০ কি.মি. বেগে। ঝড় বৃস্টির প্রকোপ বাড়লে আরো কম। আমাদের যেন কোন অদ্ভুদ নেশায় পেয়ে বসেছে। যে করেই হোক সাত সকালে চাটগা গিয়ে পৌছুতে হবে। কোন বিশেষ প্রয়োজন বা কারন নেই -তবুও। এযেন জোড় করে মৃত্যুকে ডেকে আনা। ভাগ্যিস বিপরিত দিক থেকে এমন কারো খায়েস হয়নি। অন্য সব যানবাহন ইঞ্জিন বন্ধ করে রাস্তার পাশে গুটি সুটি মেরে বসে আছে। এদিকে হাওয়ার বেগ আর বর্ষন যেন বেড়েই চলেছে থামার কোন লক্ষন নেই। সঙ্গী বন্ধুটি ষ্টিয়ারিং হতে পেলে আমার থেকে উন্মত্ত্ব হয়ে উঠছে। সে আবার এমনিতেই চোখে একটু কম দেখে। চশমা আছে, কিন্তু সেটা এখন একটা বোঝার মত হয়ে গেছে! বাতাসে অতিরিক্ত আদ্রতার জন্য গাড়ির উইন্ডশীল্ড আর তার চশমার কাচ একই সাথে ঘোলা হয়ে যাচ্ছে। কোনটা ছেড়ে কোনটা মোছে সে আরেক সমস্যা।আমি অবশ্য যথাসাধ্য সাহায্যের চেস্টা করছি,এদিকে গাড়ির গরম হাওয়া ছেড়েছি সর্বোচ্চ গতিতে কিন্তু সেটায় কোন কাজ হচ্ছিল বলে মনে হয়না। দু-চারটে ট্রাক ড্রাইভার বৃস্টির প্রকোপ একটু কমলেই এডভেঞ্চারের চেস্টা করছে। তেমন ক’জনের ঘাড়ে পড়তে পড়তে বেচে গেলাম। ভোর চারটার দিকে বৃস্টির ধার অনেকখানি কমে গেল। বৃস্টির গতি যত কমে আসছে গাড়ির গতি তত বাড়ছে। বন্ধুর আশ্বাসে বাকিপথের দায়িত্ব ওর হাতে সপে দিয়ে সস্তির একটা হালকা শ্বাস ছেড়ে ক্লান্ত আমি ড্রাইভিং সিটের পাশেরটায় চোখ বুজলাম। ভেজা ঠান্ডা হাওয়া যেন ঘুমকে এককাঠি সরেস করল।হঠাৎ ওর জোড় ধাক্কায় বিরক্তিতে চোখ মেলে চাইলাম। সে আমাকে মুখে কিছু না বলে ইঙ্গিতে রাস্তার দিকে তাকাতে বলল। ওর মুখের ভয়ঙ্কর কঠিন ভাব দেখে আমি বিনাবাক্য ব্যায়ে সরাসরি রাস্তার দিকে তাকাতেই যেন ভুমিকম্পের প্রচন্ড দুলুনিতে কেঁপে উঠলাম।(ঘটনাটা অল্প কয়েক সেকেন্ডের) সবে ভোর হচ্ছে চারপাশে কুয়াশার একটা পাতলা আবরন ভেদ করেও অনেকটা দুর দেখা যাচ্ছে । মাত্র কয়েকশ মিটার দুরে রাস্তার দুপাশে অনেকগুলো লোক গায়ে চাদর মুড়ি দিয়ে জুবুথুবু হয়ে আড্ডাদিচ্ছে।হয়তো সেটা কোন বাজার হবে ক্রেতার আগমন বা বিক্রেতাদের তোড়জোড় এখনো শুরু হয়নি তাই পাইকাররা অতিপ্রত্যুষে রাস্তার ধারে বসে আড্ডা দিচ্ছে আর প্রতিক্ষা করছে সুর্যের ।তাদের ঠিক মধ্যিখানে রাস্তার ফাকা জায়গাটায় দুটো অল্পবয়েসি কিশোর বিশাল একটা ট্রাক কিংবা ট্রাকটররে টায়ার আতি ধীর মন্থর গতিতে গড়িয়ে গড়িয়ে একপাশ থেকে অন্য পাশে নিয়ে যাচ্ছিল। তাদের সমস্ত আগ্রহের কেন্দ্রবিন্দু সেই চাকাটা অন্যদিকে তাদের কোন ভ্রুক্ষেপ নেই! আমাদের গাড়ি চলছিল প্রায় একশ তরিশি কিলোমিটার বেগে। রাস্তা পিছল। এটুকু দুরত্ব থেকে হার্ড ব্রেক কষলে গাড়ি স্কিড করে পাশের খাদে পড়ার সম্ভাবনা বেশী তার মানে সেটা একপ্রকার আত্মহত্যাই।আর এগতিতে চাকায় মারলে সেই দু কিশোরের সাথে আমাদেরও মহাপ্রস্তানরে দারুন সম্ভাবনা। দুপাশে যেটুকু জায়গা আছে সে ফাক গলে বের হওয়া অসম্ভব!চারপাচটা লোককে মাড়িয়ে যেতে হবে। সেটা হবে মর্মন্তুদ! সঙ্গী চালক অনেক আগেই হর্নচেপে ধরে আছে কিন্তু সেটা দিয়ে কেন যেন ফাটা বাশির মত সুর বের হচ্ছে। যা ওদের কর্নকুহড়ে পৌছানোর কথা না । ব্যাবধান বড়জোর ২০০মিটার! আমাদের হাতে দুটো অপসন- মৃত্যু নাহলে হত্যা!! চাকাটি নিয়ে ছেলেদুটো মাঝ রাস্তা দিয়ে ঠালরে দকিে একটু এগিয়েছে কি হঠাৎ হর্ন বেজেউঠল বিকট আওয়াজে। ছেলেদুটো এদিকে একনজর তাকিয়েই ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে দুজন দুপাশে ছিটকে গেল। আশ্চর্য রাস্তার দুপাশের বাকি লোকগুলো একবার ফিরেও তাকাল না! হয়তোবা এ হর্নটা তাদের কাছে আর দশটা সাধারন হর্নের মতই মনে হয়েছে, তারা সরাক্ষন হাইড্রলকি হর্ন শুনে অভ্যাস্ত। ইয়া আল্লাহ! রাস্তার মাঝে যেন মৃত্যদুতের মত দাড়িয়ে আছে সেই বিশাল চাকাটি। দ্রুত সিদ্ধান্ত নিলাম একটু ডান ঘেষে যাব,ওখানে ফাকটা একটু যেন বেশী মনে হোল। শেষ দৃশ্যটা কেউই চেয়ে দেখতে চাইলাম না। শুধু একটা দড়াম করে শব্দ কানে এল সেই সঙ্গে প্রচন্ড একটা ঝাকুনি। আর কোন ওলট পালট নেই ! চোখ মেলে চাইতেই দেখি বৃস্টিতে ভেজা সেই পিচঢালা রাস্তা । ভোজবাজির মত যেন মিলিয়ে গেছে সেই ভয়াবহ দৃশ্য। আমরা একদম অক্ষত শুধু গাড়ির বামদিকের বনেটটের অনেক খানি দুমড়ে মুচড়ে গেছে, তাতে কি বেঁচে আছি এইতো ঢেড় !গভীর রাতে হাইওয়ে দিয়ে প্রচন্ড গতিতে গাড়ি চালাতে চালাতে ভাবি মৃত্যুটা কত সহজ। সামান্য একটা ভুল সামান্য অসচেনতা কিংবা মনোযোগ বিচ্যুতিতে ঘটে যেতে পারে জীবনের শেষ দুর্ঘটনা! পাশ কেটে যখন দৈত্যের মত অন্য গাড়িগুলো ডিপারের উজ্জ্ল আলোয় আমার চোখ ধাধিয়ে দিয়ে চোখের পলকে বের হয়ে যায় তখন তার ডিজেল বা পেট্রোলের পোড়া গন্ধ কিংবা হাওয়ার ঝাপটা আমাকে স্মরন করিয়ে দেয় তুই অল্পের জন্য বেচে গেলি । অনেক ট্রাক আবার রাতে এক চোখ বুজে চলেন , দুর থেকে মনে হয় টেম্পো বা স্কুটার, ঠিক যখন ঘাড়ের উপর নিঃশ্বাস ফেলেন তখন মালুম হয় ইনি তিনি নন। প্রতি মুহুর্তে মৃত্যু আমাদের দাবড়ে নিয়ে বেড়াচ্ছে এইভাবে । কখনো জানান দিয়ে কখনো নিভৃতে নিরবে সবার অগোচরে। জীবন আর মৃত্যুর মাঝে.. ব্যাবধান মাত্র ক’সেকেন্ডের । মানুষের জীবনের সমস্তটাকে যদি আবার রিপ্লে করে দেখানো যেত তাহলে অন্য অনেক ভুলে যাওয়া অজানা কাহিনীর সাথে সে দেখতে পেত তার অগোচরে কতবার কতভাবে মৃত্যু এসে হানা দিয়ে গেছে সে এতটুকু টের পায়নি !
বৃহস্পতিবার, ১২ নভেম্বর, ২০০৯
বিশ্ব নারী দিবস (রুশীয় স্টাইল)
০৮ ই মার্চ, ২০০৯ রাত ৮:৫২
আজ বিশ্ব নারী দিবস। প্রায় সারা বিশ্বেই যথেষ্ট গুরুত্বের সাথে এদিনটি পালিত হয়।আগে নারী দিবস নামে কোন দিবস আছে সেটাই জানতামনা। জানলাম গিয়ে রাশিয়াতে।বিশ্ব নারী দিবস নিয়ে সম্ভবত সবচেয়ে বেশী মাতামাতি করে রুশীয়রা। এদিনটি তাদের সরকারী ছুটির দিন;সেইসঙ্গে সেখানে লক্ষ লক্ষ জুটি গড়া ও ভাঙ্গার দিন- এটা অবশ্য সরকারী নিয়মের মধ্যে পড়ে না।মেয়েরা তাদের প্রেমিক ও স্বামীকে যাচাই করে গিফটের বহর ও তাকে খুশী করার সবরকম অভিনয় দেখে!কিভাবে নিজের প্রিয় নারীকে খুশী করবে এই ভেবে পুরষদের মাস খানেক আগ থেকেই ঘুম হারাম হয়ে যায়। সে এক হুলস্থুল কান্ড! সারা দেশে বয়ে যায় মদ ফুল নাচ গানের বন্যা। এইদিনে ছোটখাট ইতরামী কিংবা বিতলামী করলে পথ চলতি বা পাবে,বারে,পার্কে কোন রমণীই বিশেষ রাগ করে না,এমনকি তাকে যদি পথে উটকো কেউ ভালবাসাও জানায়। অন্যান্য যেকোন উৎসবের চেয়ে তারা সবচেয়ে জাকজমক পূর্ন ভাবে এই দিনটি পালন করে শুধুমাত্র বড়দিন আর নিউইয়ার এদুটো বাদে। বিশেষ করে যুবতী মেয়েরা - তবে কিশোরী আর বৃদ্ধারাও কম যায়না,তারা যেন ছাগলের তিন নম্বর বাচ্চা!তখন (কম্যুউনিজমের সময়কাল) হয়তো এখনো -অন্য সব উন্নত দেশের মত বেশীর ভাগ রুশ পরিবারও একের অধিক সন্তান নিতে আগ্রহী ছিল না। সেটা ছেলেই হোক আর মেয়ে। তবে মেয়ে সন্তানের ব্যাপারেই হয়তো আগ্রহটা একটু বেশী ছিল। এর পিছনের কারনটা আমার মনে হয়, প্রথমত; ছেলে হলে যুদ্ধে পাঠাতে হবে এই ভয়ে। দ্বীতিয়ত; মেয়েরাও কামাই রোজগারে পুরুষদের থেকে কোন অংশে পিছিয়ে ছিল না-তাছাড়া মদ তাদের বিশেষ খেয়ে ফেলত না আর নিজের পরিবারের প্রতি তাদের ছিল অকৃত্বিম ভালবাসা। সাধারন দিনগুলোতে বটেই ওদের সব্বার ভীষন প্রিয় সময়টা যখন ওরা সব’চে বেশী রোমান্টিক মুডে থাকে সেই গ্রীস্মেও ওখানে দেখেছি বাজারের সবচেয়ে মুল্যবান আধুনিক ফ্যাশনের ভয়াবহ সেক্সি পোষাক পরে পালিশ বার্নিশ করে দুর্দান্ত কোন রুপসী সুবাস ছড়িয়ে হেলেদুলে রাস্তা দিয়ে হেটে যাচ্ছে,আর পুরুষরা যেন সব সাধু যোগী সেদিকে একবার তাকালেই যেন তার ধ্যান ভেঙ্গে যাবে। ভুল বললাম কি, হয়তো তাদের উদাসীন চোখের এ সৌন্দর্য উপভোগ করার মত ক্ষমতা ছিলনা।আমরা কোন পুরুষও সুন্দর পোষাক পরে রাস্তা দিয়ে হাটলে দুয়েকবার ঠারে ঠুরে দেখি। আর এমন অস্পরীর মত রুপসী! হায় খোদা! বাঙ্গালী ললনাদের যেন এদিন কোনদিন না আসে। কিন্তু আচমকা সব কিছুই ভোজবাজীর মত পাল্টে যেত এই জেন্সকাইয়া দ্জিন(বিশ্ব নারী দিবস) এলে। সেদিন নারীদের সেকি মুল্যায়ন!অবশ্য রুশরা যখন ভালবাসে বা ভালবাসার অভিনয় করে সেইটে হয় সেইরকম! সারাক্ষন বুকে করে জড়িয়ে চোখে চোখে রাখে যেন একটু বেখেয়াল হলেই হারিয়ে যেত পারে তার অমুল্য ধন!এদিনে সবচেয়ে দুঃখী হয়তো সেই মেয়ে যার কোন প্রেমিক বা স্বামী নেই।মেকি বিশ্ব ভালবাসা দিবসকে তারা বিশেষ মুল্যায়ন করে না। এদিনটিই যেনতাদের ভালবাসা দিবস। আমার অনেক বিদেশী বন্ধুরা(এরমধ্যে স্বদেশীও আছে) যার যেটুকু সামর্থ পকেটে পুরে বেরিয়ে পড়ত আনকোড়া প্রেমিকা বাগানোর ধান্ধায়।তারাই ফের সন্ধ্যেবেলা ফিরে আসত পকেট খালি করে মাতাল হয়ে ।তবে কেউ কেউ অবশ্য বগলদাবা করে আনত নতুন কাউকে।দু-য়েকজন হোস্টেলে ফিরে না আসলে উদ্বিগ্ন হতাম না। ভাবতাম হয়তো নব্য প্রেমিকার সাথে রাত কাটাচ্ছে তারই বাসায় -নয়ত হতাশ হয়ে পুরাতনের কাছেই ফিরে গেছে! এদিনটায় প্রায় প্রতিটা রুশ নারীমাত্রই আশা করে অনেক অনেক পুরুষ তাদের ফুল সহ অন্যান্য উপহার ও ভালবাসা দিয়ে শুভেচ্ছা জানাবে।-এদিন নাকি সাইবেরিয়ার ইয়াকোতিরিনবাগ শহরের পুলিশ ছোটখাটো নিয়ম ভঙ্গেও জন্য মহিলা গাড়ি চালকদের কোন জরিমানা করে না বরংচ তাদের ফুল ও পারফিউম দিয়ে শুভেচ্ছা জানায়। ইয়াকোতিরিনবাগ শহরের এটাই ঐতিহ্য।
আজ বিশ্ব নারী দিবস। প্রায় সারা বিশ্বেই যথেষ্ট গুরুত্বের সাথে এদিনটি পালিত হয়।আগে নারী দিবস নামে কোন দিবস আছে সেটাই জানতামনা। জানলাম গিয়ে রাশিয়াতে।বিশ্ব নারী দিবস নিয়ে সম্ভবত সবচেয়ে বেশী মাতামাতি করে রুশীয়রা। এদিনটি তাদের সরকারী ছুটির দিন;সেইসঙ্গে সেখানে লক্ষ লক্ষ জুটি গড়া ও ভাঙ্গার দিন- এটা অবশ্য সরকারী নিয়মের মধ্যে পড়ে না।মেয়েরা তাদের প্রেমিক ও স্বামীকে যাচাই করে গিফটের বহর ও তাকে খুশী করার সবরকম অভিনয় দেখে!কিভাবে নিজের প্রিয় নারীকে খুশী করবে এই ভেবে পুরষদের মাস খানেক আগ থেকেই ঘুম হারাম হয়ে যায়। সে এক হুলস্থুল কান্ড! সারা দেশে বয়ে যায় মদ ফুল নাচ গানের বন্যা। এইদিনে ছোটখাট ইতরামী কিংবা বিতলামী করলে পথ চলতি বা পাবে,বারে,পার্কে কোন রমণীই বিশেষ রাগ করে না,এমনকি তাকে যদি পথে উটকো কেউ ভালবাসাও জানায়। অন্যান্য যেকোন উৎসবের চেয়ে তারা সবচেয়ে জাকজমক পূর্ন ভাবে এই দিনটি পালন করে শুধুমাত্র বড়দিন আর নিউইয়ার এদুটো বাদে। বিশেষ করে যুবতী মেয়েরা - তবে কিশোরী আর বৃদ্ধারাও কম যায়না,তারা যেন ছাগলের তিন নম্বর বাচ্চা!তখন (কম্যুউনিজমের সময়কাল) হয়তো এখনো -অন্য সব উন্নত দেশের মত বেশীর ভাগ রুশ পরিবারও একের অধিক সন্তান নিতে আগ্রহী ছিল না। সেটা ছেলেই হোক আর মেয়ে। তবে মেয়ে সন্তানের ব্যাপারেই হয়তো আগ্রহটা একটু বেশী ছিল। এর পিছনের কারনটা আমার মনে হয়, প্রথমত; ছেলে হলে যুদ্ধে পাঠাতে হবে এই ভয়ে। দ্বীতিয়ত; মেয়েরাও কামাই রোজগারে পুরুষদের থেকে কোন অংশে পিছিয়ে ছিল না-তাছাড়া মদ তাদের বিশেষ খেয়ে ফেলত না আর নিজের পরিবারের প্রতি তাদের ছিল অকৃত্বিম ভালবাসা। সাধারন দিনগুলোতে বটেই ওদের সব্বার ভীষন প্রিয় সময়টা যখন ওরা সব’চে বেশী রোমান্টিক মুডে থাকে সেই গ্রীস্মেও ওখানে দেখেছি বাজারের সবচেয়ে মুল্যবান আধুনিক ফ্যাশনের ভয়াবহ সেক্সি পোষাক পরে পালিশ বার্নিশ করে দুর্দান্ত কোন রুপসী সুবাস ছড়িয়ে হেলেদুলে রাস্তা দিয়ে হেটে যাচ্ছে,আর পুরুষরা যেন সব সাধু যোগী সেদিকে একবার তাকালেই যেন তার ধ্যান ভেঙ্গে যাবে। ভুল বললাম কি, হয়তো তাদের উদাসীন চোখের এ সৌন্দর্য উপভোগ করার মত ক্ষমতা ছিলনা।আমরা কোন পুরুষও সুন্দর পোষাক পরে রাস্তা দিয়ে হাটলে দুয়েকবার ঠারে ঠুরে দেখি। আর এমন অস্পরীর মত রুপসী! হায় খোদা! বাঙ্গালী ললনাদের যেন এদিন কোনদিন না আসে। কিন্তু আচমকা সব কিছুই ভোজবাজীর মত পাল্টে যেত এই জেন্সকাইয়া দ্জিন(বিশ্ব নারী দিবস) এলে। সেদিন নারীদের সেকি মুল্যায়ন!অবশ্য রুশরা যখন ভালবাসে বা ভালবাসার অভিনয় করে সেইটে হয় সেইরকম! সারাক্ষন বুকে করে জড়িয়ে চোখে চোখে রাখে যেন একটু বেখেয়াল হলেই হারিয়ে যেত পারে তার অমুল্য ধন!এদিনে সবচেয়ে দুঃখী হয়তো সেই মেয়ে যার কোন প্রেমিক বা স্বামী নেই।মেকি বিশ্ব ভালবাসা দিবসকে তারা বিশেষ মুল্যায়ন করে না। এদিনটিই যেনতাদের ভালবাসা দিবস। আমার অনেক বিদেশী বন্ধুরা(এরমধ্যে স্বদেশীও আছে) যার যেটুকু সামর্থ পকেটে পুরে বেরিয়ে পড়ত আনকোড়া প্রেমিকা বাগানোর ধান্ধায়।তারাই ফের সন্ধ্যেবেলা ফিরে আসত পকেট খালি করে মাতাল হয়ে ।তবে কেউ কেউ অবশ্য বগলদাবা করে আনত নতুন কাউকে।দু-য়েকজন হোস্টেলে ফিরে না আসলে উদ্বিগ্ন হতাম না। ভাবতাম হয়তো নব্য প্রেমিকার সাথে রাত কাটাচ্ছে তারই বাসায় -নয়ত হতাশ হয়ে পুরাতনের কাছেই ফিরে গেছে! এদিনটায় প্রায় প্রতিটা রুশ নারীমাত্রই আশা করে অনেক অনেক পুরুষ তাদের ফুল সহ অন্যান্য উপহার ও ভালবাসা দিয়ে শুভেচ্ছা জানাবে।-এদিন নাকি সাইবেরিয়ার ইয়াকোতিরিনবাগ শহরের পুলিশ ছোটখাটো নিয়ম ভঙ্গেও জন্য মহিলা গাড়ি চালকদের কোন জরিমানা করে না বরংচ তাদের ফুল ও পারফিউম দিয়ে শুভেচ্ছা জানায়। ইয়াকোতিরিনবাগ শহরের এটাই ঐতিহ্য।
সাবাকা 'জো'
২০ শে মার্চ, ২০০৯ সকাল ১০:৪৩
রুশ ভাষায় সাবাকা'র বাঙলা অর্থ কুকুর। সাবাকা 'জো' আমার ভীষন প্রিয় বন্ধু আনিসের অতি প্রিয় কুকুরের নাম। শিক্ষিত সেই কুকুরটা সারাজীবন ছিল বাধ্য হয়ে ব্রহ্মচারী(সে কোন নারী কুকুরের সান্নিধ্য পায়নি)। লেখার শেষ ভাগের কিছুটা অংশ প্রাপ্ত বয়স্কদের জন্য। লেখাটা আনিসের সেই কুকুরকে উৎস্বর্গীকৃত।}-
একরুমে থাকে ওরা গাদাগাদি করে সাত আটজন। গেস্ট আসলে কখনো সে সংখ্যা গিয়ে বেড়ে দাড়ায় বার কিংবা চৌদ্দজনে।কারোই তেমন কাজ কর্ম প্রায় নেই বলতে গেলে।সবাই তাদের দেশ থেকে পাঠানো টাকা কিংবা গচ্ছিত কিছু অর্থ বা অন্যের ঘাড়ে বসে খায়। বাড়িখানা অনেকটা বারোয়ারি হোস্টেলের মত।লতায় পাতায় পরিচিত মস্কো কিংবা মস্কোর বাইরের কেউ সমস্যায় পড়লেই কোন অগ্রিম তার বার্তা নাদিয়েই এখানে এসে দু চার পাচ দিন থেকে শুরু করে কয়েক মাস অব্দি থেকে যায়। কেউ আসে আড্ডার লোভে দুয়েকজন আসে অর্থাভাবে কেউ আসে ভিসার জন্য কেউ আসে প্রেমে ছ্যাকা খেয়ে আবার কেউবা আসে অসতর্ক মুহুর্তের সামান্য ভুলের জন্য অকালে সন্তানের দায়িত্ব থেকে পালিয়ে বাচার জন্য। সারাদিন কাটে তাস খেলে রকমারি রান্না করে টেলিফোনে গুজুর গুজুর ফুসুর ফুসুর করে- কখনো মদ খেয়ে মাতলামী হৈ চৈ হুল্লোড় আর কিঞ্চিৎ হাতাহাতি মান অভিমান বাদানুবাদ আর ভবিষ্যত পরিকল্পনায়।প্রতিদিন নতুন নতুন গেস্ট আসে আর আড্ডা জৌলুস বাড়ে।অতিথি যখন বিদেয় হয় তখন কখনো হাঁফ ছেড়ে বাচে কিংবা কষ্টের ছায়া নামে চোখে মুখে।সেখানে ঘুমোনো আর খাওয়া দাওয়ার পর্ব চলে ভীষন আগোছালো আর বিস্মৃঙ্খল ভাবে। যার যখন খুশি খাচ্ছে-যার ইচ্ছে দু দন্ড জিরিয়ে নিচ্ছে।এভাবে মোটামুটি উত্তাপবিহীন কিছুটা একঘেয়ে এই দিনগুলিতে বেশ অন্য রকম এক আমেজ আনল তাদের এক বন্ধুর বিয়ে। সে থাকে মস্কো থেকে বেশ ক’শ কিলমিটার দুরে। দেশ থেকে বহুদুর রুশ দেশে এই প্রথম কোন বন্ধুর বিয়ে তাই সবাই মিলে সিদ্ধান্ত নিল সদলবলে বিয়েতে যাবে।রুশ বিয়েতে মজা বলতে সারারাত পান উৎসব আর নাচের অছিলায় জড়াজড়ি লেপ্টলেপ্টি। কুকুরের প্রতি এমনিতে আনিসের তেমন আকর্ষন কখনোই ছিলনা।সদলবলে বাইরে ঘুরতে গিয়ে কোন এক সকালে সেই শহরেই রাস্তার ধারে বসে এক বৃদ্ধার কিছু কুকুর ছানা বিক্রি করতে দেখে কেন যেন ঝোকের মাথায় আগপিছু না ভেবে কিনে ফেলেছিল একখানা।বন্ধুরা তার এই পাগলামি দেখে ঠাট্টা মস্করা করেছিল খুব-যেখানে মানুষের থাকার জায়গারই অভাব সেখানে সে কুকুরছানা রাখবে কোথায়? আনিস হয়ত হয়ত সেই কুকুরছানাটাকে সেখানেরই ফেলে আসত কিংবা কারো উপহার দিয়ে দিত। কিন্তু ছোটবেলা থেকেই একগুয়ে একরোখা বন্ধু আমার বন্ধুদের ইয়ার্কি ঠাট্টার জবাব দিতে পণ করল সেটাকে নিজের কাছেই রাখবে।অবশেষে সেই কুকুরছানা দীর্ঘ পথ ট্রেনে চেপে মস্কোতে এল আনিসের সেই ডেরায়।কুকুরের বাচ্চা কোন নিয়ম নীতি মানেনা-এত ছোটযে সে কোন প্রশিক্ষন দেয়ার প্রশ্নই আসেনা। সারাদির ঘর জুড়ে ছুটোছুটি করে খাবার যতটুকু খায় ছড়ায় তার থেকে বেশী। যেখানে সেখানে ঘুমোয়-প্রাকৃতিক কর্ম গুলো লেপ কাথা কিংবা কার্পেটের উপরেই অবলীলায় সারে।সে এক বিচ্ছিরি ব্যাপার! সবাই দুদিনেই ত্যাক্ত বিরক্ত!ওদিকে সবার যন্ত্রনা আর বিরক্তি দেখে আনিসের আনন্দ যেন ধরে না। এতদিন পরে সে একটা মনের মত কাজ পেয়েছে যেন। কুকুরের প্রতি তার আদিখ্যেতা দেখে সবারই গা জ্বলে যায়।একঘেয়ে দিনগুলিতে সাঝে মধ্যে বৈচিত্র আনে মিলন ভাই।তিনি সবার বয়সে একটু বড়তো বটেই তারইপরে কিঞ্চৎ ধনবান। আসার পথে ব্যাগ ভর্তি করে খাবার আর মদ নিয়ে আসেন।বাসায় এলেই হুলস্থুল শুরু হয়ে যায় তাকে নিয়ে-সেই রাতটাতে সবাই মেতে ওঠে উৎসব আনন্দে।একটু ধার্মিক শ্রেনীর কয়েক জন কুকুরকে করেছে অস্পৃশ্য আর মদকে হারাম বলে ছুয়ে দেখেনা। কিন্তু উৎসবে তারাও শামিল হয়-উপভোগ করে সবার মত করেই।সেদিন গভীর রাত অব্দি চলল খানা পিনা আর গল্প গুজব-স্বভাবতই দুয়েকজন মাতাল তখন।স্পস্টভাষী রফিক(ছদ্মনাম)সেই তথাকতিথ ধার্মিক কুকুর বিরোধীদের প্ররোচনায় একটু বেশীই গিলেছিল সেদিন।আর মতাল হয়েই নেশার ঘোরে কখন কিভাবে যেন আনিসের সাথে শুরু হল তর্ক বিতর্ক-অনুঘটক সেই কুকুর ছানা!প্রথমে মৃদু উত্তেজনা-দুয়েকজনের উস্কানীতে লেগে গেল হাতা হাতি।এমন ঘটনা এখানে বিরল নয় কিন্তু। মাতাল হয়ে হাতাহাতি প্রায়শই-সবারই এটা গা সওয়া হয়ে গেছে। আচমকা ওরে বাবারে মারে বলে শহিদের বিকট চিৎকার।প্রথমে আঁতকে উঠল সবাই-কিন্তু পরক্ষনেই হাসাহাসি গড়াগড়ি। ঘটনাটা এমন;উত্তেজনার এক ক্ষনে আনিসের সাথে হাতাহাতি শুরু হতেই কোত্থেকে সেই কুকুর ছানা দৌড়ে এসে কামড়ে ধরেছে শহিদের অন্ডকোষ!শহিদ চিৎকার চেচামেচি করছে আর আর ঘরময় দৌড়াচ্ছে কিন্তু তখনো সেই পিচ্চি কুকুর সেইখানটায় কামড়ে ধরে ঝুলে আছে আর রাগে গড় গড় করছে।অবশেষে সবার অনুরোধে আনিস-ই গিয়ে ছাড়িয়ে আনল তাকে।সেই থেকে আনিস বা তার কুকুরকে কেউ কিছু বলে না ভয়ে।ওদিকে সেই কুকুরছানার প্রতি আনিসেরও আদর ভালবাসা আদিখ্যেতা উত্তর উত্তর বেড়েই চলছিল।ওদিকে জাতে জার্মানী শেফার্ট সেই কুকুর ছানাও তার আদরে আর প্রশ্রয়ে বেড়ে উঠছিল তরতর করে।আনিস কুকুরটাকে দুবেলা রান্না করে নিজের হাতে খাওয়ায়,নিজে হপ্তায় দু হপ্তায় একবার গোসল না করেলেও কুকুরটাকে মাঝ মেধ্যেই শ্যম্পু সাবান ডলে সাফসুরোত করে।রান্না ঘরে চলে কুকুরের রান্না নিয়ে এক্সপেরিমেন্ট।কুকুরের রান্নার জন্য বাসন কোসন আর রান্না ঘরের চুলার দখল থাকায় নিজেদের রান্না লাটে ওঠে। মাঝে মধ্যে গোসল খানায় কুকুরের পশমে সয়লাব আর সারা বাড়িতে তার ছড়ানো উচ্ছিষ্ট আর মল মুত্রের ছড়াছড়িতে বাকি সব হোস্ট গেষ্ট অল্প কদিনেই ত্যাক্ত বিরক্ত হয়ে উঠল। দুচারজন সকাল বিকেল ফন্দি আটে কি করে ওটাকে তাড়ানো যায়। তবে কেউ কেউ যে আদর করতনা তা কিন্তু নয়।আগেই বলেছি কিছুটা একঘেয়ে সেই প্রবাস জীবনে একটু অন্যরকম স্বাদ এনে দেবার জন্য তার হিতাকাঙ্খীও মিলে গেল দু’একটা।জর্মন শেফার্ড নাকি নেকড়ের বংশধর। পূর্ব পুরুষের জাত মান রাখতে সে দাত নখের ধার শানাতে গিয়ে কত জনের চামড়ার জুতো আর পশমী কোট যে ছিন্ন ভিন্ন করল তার ইয়ত্বা নেই।একটা জাত কুকুরকে কিভাবে ট্রেইন্ড করতে হয় সে বিদ্যে কারোই জানা ছিলনা। তবুও একে ওকে জিজ্ঞেস করে ঠেলা গুতো গাল মন্দ দিয়ে তাকে একটু লাইনে আনলেও-ওদের এই ছন্নছাড়া জীবনের সাথে তাল মিলাতে গিয়ে সেও মাঝে মধ্যে উদ্ভট আচরন করে।বেশ কদিন বে ওয়ারিস ঘুরে বেড়ানোর পরে অবশেষে কোন পূর্ব পুরুষের পদবি ছাড়াই তার একখানা নাম ঠিক হল ‘জো’। আমার ধারনা হয়তো চু চু শব্দ থেকেই জো নামের উৎপত্তি।সহজ নাম যখন তখন সবাই ডাকে। জো ও মহা উদ্যোমে এর ঘাড়ে ওর মুখে আচড় মেরে লাফ ঝাপ দিয়ে এলোমেল ছোটে। খাবারের প্লেট উন্মুক্ত থাকলেই চেটে পুটে স্বাদ নেয়-বেকুব কুত্তা তার উদরের ধারন ক্ষমতা আঁচ না করতে পেরে উল্টা পাল্টা খেয়ে অবশেষে বমিতে রুম ভাসায়।মাস ছয়েক বাদেই বেকার আনিস একখান চাকরি পেল বেশ লোভনীয় বেতনে। রুমমেটরা তখন তাকে ইর্ষা করে সাথে ভক্তিও। এতগুলো বেকারের মাঝে সকার একা সে –সবাই তাকে তোয়াজ করে।কুকুরছানাও তার মনিবের এহেন দৈব পরিবর্তন আচ করতে পেরে হয়ে উঠল আরো বেয়াড়া আর বেপরোয়া! তবে দুর্ভাঘ্য ‘জো’র বছর না ঘুরতেই সেই নিস্কর্মা ছেলেগুলো ধীরে ধীরে নির্মম বাস্তবতার চাপে রুটি রুজির তাগিদে চলে গেল ভিন দেশে কিংবা মস্কোর অন্য প্রান্তে। ভেঙ্গে গেল সেই মিলন মেলা।আমিও ফিরে এলাম দেশে।আমার ফিরে আসার কিছুদিন বাদে আনিসও দেশে আসল বেড়াতে মাস তিনেকের জন্য।আসার আগে ভীষন বিপদে পড়েছিল ‘জো’ কে নিয়ে। ওকে একলা রেখে যাবে কার কাছে?অবশেষে শুভাকাঙ্খীদের পরামর্শে ‘জো’কে ভর্তি করে দিয়ে এসেছিল মস্কোর নামকরা এর কুকুর প্রশিক্ষন বিদ্যালয়ে।আমার ধারনার মধ্যেও ছিলনা শারমেয়রাও ইন্টার কিংবা গ্রাজুয়েশন করে। একবার শুনেছিলাম শিকাগোতে নাকি কুকুরের হোটেল আছে! এইটুকুতেই বিস্মিত হয়েছিলাম। কিন্তু কুকুরের বিদ্যালয় কিংবা বিশ্ব-বিদ্যালয় আছে সেটা শুনে শুধু বিস্মিত হইনি শুধু-বিশ্বাসও করিনি।‘জো’অবশ্য অতটা শিক্ষিত হয়নি মাত্র ছ’মাসের ট্রেনিং এ সে উচ্চ বিদ্যালয় পাশ করেছিল মাত্র।তবে হিংস্রতার শিক্ষা মনে হয় আরেকটু উচু লেভেলে দেয়া হয় তাই সে বরাবরই ছিল একটু বোকা সোকা নরম মনের এক শিশু স্বভাবের কুকুর।মতভিন্নতা থাকতে পারে, তবে শুনেছি কুকুরের এক বছর নাকি মানুষের সাত কিংবা আট বছরের সমান। সেই হিসেবে ওদের ছমাসের নিবির ট্রেনিং মানুষের কয়েক বছরের শিক্ষা দীক্ষার সমান।দশ বছর একটা কুকুর বেচে থাকা মানে মানুষের সত্তুর কিংবা আশি বছরের জীবন পাওয়া।জো’র সাথে দ্বীতিয়বার দেখা আমার ওর পাচ বছর বয়সে।তখন সে দুপায়ে ভর করে খাড়া হয়ে দাড়ালে পৌনে ছ’ফুট মাথাও ছাড়িয়ে যায়।প্রথম দর্শনেই তার সেই বিশাল আকৃতি দেখে আমি ভড়কে গিয়েছিলাম।আর কি তার বন্য সৌন্দর্য! আঃ চোখ জুড়োল দেখে আমাদের সেই ছোট্ট জো কে। তখন তার পূর্ন যৌবন তার উপরে সবার যত্ন আত্মি- সময় মত শ্যাম্পু ডলে গোসল খাওয়া চুল আচড়ানো আর ট্রেকিং জগিং করে তেমনি রুপবান হয়েছে সে।তার চকচকে বাদামী আর কালো পশমের আড়ালে সবল পেশীর আভাস মেলে বহুদুর থেকে।ততদিন সে পুরোপুরি ট্রেইন্ড। সময় মত খায় ঘুমোয়। প্রাকৃতিক কাজকর্ম সারা আর ঘুরাঘুরি করারও সময় নির্ধারন করা আছে। একদিন একটু উল্টা পাল্টা হলেই সে অসুস্থ হয়ে পড়ে।ঝড় তুষারপাত কিংবা মুষলধারে বৃষ্টি হলেও জোকে নিয়ে প্রতি রাতে বাইরে বেরুতে হবেই।সেটা তার সাস্থ্যটাকে সুগঠিত করতে সেই সাথে প্রাকৃতিক কাজ সারতে।আনিস যত রাতেই বাসায় ফিরুক না কেন সারাদিনের ব্যাস্ততায় হয়তো সে ক্লান্তিতে নুয়ে পড়ছে কিংবা অতিরিক্ত পানে মাতাল হয়ে হাত পা টলছে তবুও সে দরজাটা খুলেই জলদ গম্ভীর কন্ঠে প্রথমেই জো’কে ডাকবে।‘জো’কে অবশ্য এমনিতে ডাকার প্রয়োজন পড়েনা- কেননা মনিবের পদশব্দেই সে আগে থেকেই লম্ফ ঝম্ফ শুরু করে- আনিস ঢোকামাত্রই সে তার চারদিকে ঘুরে ঘুরে ট্রাউজারের সাথে ঘাড় ঘষে আদর চায়। একটু খানি আদর পেলেই সে সারাদিনের একঘেয়েমী ভুলে নিজের বিশাল শরির নিয়ে ঝাপিয়ে পড়ে তার গায়ে। কখনো হাত চাটে কথনো ঘাড়ে আদর করে কখনো সারাটা মুখে নিজের লালা লেপ্টে দেয়। আনিসও দারুন উপভোগ করে তার সেই আদর।কখনো বিরক্তিতে জোঃ বলে একটা ধমকদিলে সে দুরে সরে গিয়ে অপরাধী চোখে তাকিয়ে থাকত কিছুক্ষন –আবার পরক্ষনেই চারিদিকে ঘুরে ঘুরে ঘাড় ঘষে আদর চাইত। পোষাক আশাক না খুলেই আনিস হাত বাড়াত ওর বেল্টের দিকে। সেও তার ঘাড়খানা এগিয়ে দিত শেকল পড়ানোর জন্য। মনিবের দাসত্বে তার কি আনন্দ তখন! অবশ্য আনিস বাইরে বেরুবার সময় নিজের খাবারের এন্তেজাম না করলেও কুকুরের রান্না ঠিকই চুলায় চাপিয়ে যেত।কমমতদিন গেছে কুকুরকে নিজের জন্য রাখা মাংসটুকু রান্না করে খাইয়ে নিজে একটু সব্জি দিয়ে ভাত খেয়েছে।সে ফিরে আসতে আসতেই রান্না শেষ।‘জো’ তখন একাহারি। নিয়ম করে একবেলাতেই খেতে হয় তার। সারাদিন সে একবারও ছোক ছোক করেনা।কেউ খাবার সাধলেও সে খেতে চায়না। কখনো হয়তো লোভে পড়ে একটু এগিয়ে এসে আনিসের দিকে আড় চেখে তাকিয়ে সম্মতি পাবার আশায় কিছুক্ষন অপেক্ষা করে আবার মুখ ফিরিয়ে নেয়। তবে আনিস একবার অনুমতি দিলে আর রক্ষে নেই! তখুনি সে খাবারের উপর ঝাপিয়ে পড়ে।বাইরে থেকে এসে আনিস পোষাক পাল্টে নিজের জন্য কিছু চুলোয় চাপিয়ে জো’কে খেতে ডাকে।জো’তো সারাদিন এই ডাকটার জন্যই অপেক্ষা করেছিল। সে কি খুশী তার।কালো টানা টানা চোখে সেই খুশীর ঝিলিক দেখে আমার কি যে ভাল লাগত।জো'কে দেখে আমি সবচে বেশী অবাক হয়েছিলাম তার স্মরন শক্তি দেখে।!এত্তটুকুন বয়সে সে দেখেছে আমায়।তবুও কিভাবে মনে রেখেছে। আমি প্রথমবার এ বাসায় আসলে সে একবারও ঘুউ ঘেউ করেনি। প্রথম দেখাতেই আমার গা ঘষে আদর চেয়েছে। কিন্তু নতুন কেউ আসলে সে ঘেউ ঘেউ করবেই।আদরতো চাওয়াতো দুরের কথা যতক্ষন পর্যন্ত সে কনফার্ম না হবে লোকটা আনিসের শুভাকাঙ্খী ততক্ষন পর্যন্ত তাকে শান্তিতে থাকতে দেবে না। আনিস নিষেধ করলে কিংবা ধমকালেও সে একটু দুরে সরে ঘর ঘর ঘর ঘর শব্দ করে তার বিরক্তি প্রকাশ করে দাত খিঁচাবে।আর মাঝে মধ্যে অতিথির পিলে চমকে দিয়ে বিকট শব্দে ঘেউ ঘেউ করে ডেকে উঠবে।বন্ধু আনিস বলত,একবার আগুন্তক তার প্রিয় কেউ জেনে গেলে তাকে আর সে কখনোই বিরক্ত করবে না। হোকনা তার সাথে দু-চার বছর পরে দেখা।কোনদিন আনিসের বাইরে থেকে ফিরতে দেরি হয়ে গেলে-সে চাপ সংবরন করতে না পেরে ঘরের এক কোনেই প্রাকৃতিক কাজ সেরে ফেলত। কিন্তু এই কুকর্মটি করে সেদিন তার সেকি অনুশুচোনা! কই যেত তার লম্ফ ঝম্ফ! আনিস ঘরে ফিরলেই সে এক কোনে গিয়ে লুকাতো।এতবড় শরিরটা পর্দার আড়ালে নিজেকে লুকানোর সংকোচিত করার ব্যার্থ ও হাস্যকর প্রয়াস করে দু থাবার আড়ালে মুখখানা লুকিয়ে থর থর করে কাঁপত। আনিস সেদিন বাসায় এসেই বুঝে যেত একটা অঘটন ঘটে গেছে।জানে সে ‘জো’ কে ধমক ধামক দিয়ে লাভ নেই তাই সে মুখ ভার করে রাগী রাগী মুখে বসে থাকত। ‘জো’ তখন তার থাবার আড়াল থেকে একটু খানি চোখ বের করে করুন দৃষ্টিতে চেয়ে থাকত অপলকে মনিবের দিকে। ভাব বোঝার চেষ্টা করত।আনিস তার দিকে তাকালেই সে সে ফের মুখ লুকাত। বহুক্ষন ধরে চলত এই খেলাটা। আবার কখনো অন্যদিকে মুখ ঘুরিয়ে আনিসের সামনে দিয়ে ত্রস্ত পায়ে হেটে গিয়ে ডাদিকের দেয়ালের পাশে লুকিয়ে একটু খানি মুখ বের করে নিবিড় পর্যবেক্ষন করত তার মেজাজ মর্জি।দুয়েক ঘন্টা বাদে আনিসের রাগ কমলে-সে আড়াল থেকে শরিরটা বের করে অপরাধী দৃষ্টি নিয়ে চারিদিকে মুখ চুন করে ঘুরে বেড়াত। সর্বন্তকরেন প্রতিক্ষা করত আনিসের একটা মধুর ডাকের। একবার ডাক দিলেই হল। নিজের শরিরের বিশালতা ভুলে দৌড়ে এসে ঝাপিয়ে পড়ত আনিসের গায়ে। তারপর বহুক্ষন ধরে চলত হুটোপুটি ভালবাসা আর আদর!রাশিয়ার সেই অস্থির সময়টাতে-জীবনের নিরাপত্তা নিশ্চয়তার খোজে মানুষ যখন দিশেহারা তখন এই বোকাসোকা জো কিন্তু দারুন বিশ্বস্ততায় সহচর বন্ধু কিংবা বডিগার্ডের দায়িত্ব নিয়ে সামলেছে তার মনিব কিংবা পালক পিতাকে।সে সর্বক্ষন চোখে চোখে রেখেছে তাকে।একটু সন্দেহ হলেই সে ঝাপিয়ে পড়েছে শত্রুভাবাপন্ন যে কারো উপরে।ডাকাবুকো তরতাজা যুবক জো’র একটা বান্ধবী জোটেনি তখনো।নিজের রিপুকে দমন করতে না পেরে মাঝে মধ্যে অবশ্য সে জাত পাত ভুলে কোন টেরিয়র কিংবা বুলডগ মাদি কুকুরের উপর ঝাপিয়ে পড়তে দ্বীধা করতনা।তাকে সামলাতে তখন আনিসের ভীষন বেগ পেতে হত।জীবনে দু চারটা চড় থাপ্পর খেয়েছে সে অবশ্য এই চরিত্রহীনতার দোষে।সবকিছু ঠিকঠাক সত্বেও আচমকা জো’র শরির ভেঙ্গে যেতে শুরু করল। সে সারাক্ষনই বিষন্ন থাকে। খাবারে একদম রুচি নেই। বাইরে ঘুরতেও চায়না বিশেষ।আনিস পড়ল মহা বিপদে। উপায়ন্তর না দেখে অবশেষে ডাক্তারের সরনাপন্ন হল সে।সব দেখে শুনে ডাক্তার বলল,ভরা যৌবনে যৌনাকাঙ্খা মেটাতে না পেরে জো’র এই দশা। হয় তাকে একটা বান্ধবী জুটিয়ে দিতে হবে নয়তো। হস্ত দ্বারা মৈথুন করে স্খলন করতে হবে। ওখানকার নিয়ম স্বজাতি কোন মাদী কুকুরের মনিব ইচ্ছাকৃত ভাবে এগিয়ে না এলে পুরুষ কুকুর সহবাস বিহিন জীবন কাটাতে বাধ্য হত।কুকুরের দেহ মিলনের জন্য তাদের দুপক্ষের মালিকেরই সম্মতির প্রয়োজন ছিল।এজন্য কেউ কেউ পত্রিকায় বিজ্ঞাপনও দিতে বাধ্য হত।বহু চেস্টা তদ্বির করে একটা স্বজাতি বান্ধবী জোগার করতে না পেরে অবশেষে বাধ্য হয়ে আনিস শেষোক্ত কঠিন কার্যটিই সম্পাদন করল। সেটা একটা দেখার মত দৃশ্য ছিল বটে। দু হাতে গ্লভস পড়ে বাথটাবে জো কে নিয়ে সে কি যুদ্ধটাই না করেছিল বেচারা!সপ্তায় দুচারবার হস্তমৈথুনের সুবাদে জো ঠিক আগের মতই তরতাজা হসি খুশি হয়ে উঠল।সেই সাথে বেড়ে চলল তার পাগলামী আর বোকামীটাও।আনিসের প্রিয় সেই প্রিয় সহচর বন্ধু কিংবা সন্তানটি বেচে ছিল দীর্ঘ ষোল বছর।দুটো দিন তাকে চোখের আড়াল করেও আনিস কখনো শান্তিতে ঘুমোতে পারেনি।দুজনেই দুজনার ছিল হরিহর আত্মা। আনিসের বউ সন্তান সবাই তাকে নিজের আপন আত্মীয়টির মত ভাল বাসত।শেষ বয়সে তার যখন গায়ের লোম খসে পড়তে শুরু করল তখনো কারো ভাল বাসা কমেনি এক রত্তি।শেষ কটা দিন ওর কষ্ট সহ্য করতে না পেরে অবশেষে সবাই সিদ্ধান্ত নিয়েছিল ইনজেকশন দিয়ে মেরে ফেলার। আনিস সামনে থেকে তার সন্তানের হত্যাদৃশ্য দেখতে চায়নি। সে জোর অগোচরে পালিয়ে এসেছিল বাংলাদেশে। সেই কটা দিন সারাক্ষনই অজানা আশঙকায় তার বুক কাপত মনে হত এই বুঝি পাবে জোর মৃত্য খবর। জোর মৃত্যুর আগের পুরো সময়টা দেখেছি ভয়ানক বিষন্ন তাকে। অবশেষে একদিন সেই চরম খবরটি এল – জো মরে গেছে কিংবা তাকে মেরে ফেলা হয়েছে। আনিস কখনোই স্বীকার করতে চায়নি বা চায়না সেই চরম সত্যটা। তার কাছে জো অমর। জোর স্মৃতি সারা জীবন সবার অলক্ষ্যে জুড়ে থাকবে তার হৃদয় জুড়ে।আর ক্ষত হয়ে রক্ত ঝড়াবে তার মৃত্যুটা।('জো' মারা গিয়েছিল ২০০৮ সালের ১০ই মার্চ। আনিস এখন সপরিবারে থাকে 'জো'র পূর্বপূরুষের ভুমি জার্মানীতে।)
রুশ ভাষায় সাবাকা'র বাঙলা অর্থ কুকুর। সাবাকা 'জো' আমার ভীষন প্রিয় বন্ধু আনিসের অতি প্রিয় কুকুরের নাম। শিক্ষিত সেই কুকুরটা সারাজীবন ছিল বাধ্য হয়ে ব্রহ্মচারী(সে কোন নারী কুকুরের সান্নিধ্য পায়নি)। লেখার শেষ ভাগের কিছুটা অংশ প্রাপ্ত বয়স্কদের জন্য। লেখাটা আনিসের সেই কুকুরকে উৎস্বর্গীকৃত।}-
একরুমে থাকে ওরা গাদাগাদি করে সাত আটজন। গেস্ট আসলে কখনো সে সংখ্যা গিয়ে বেড়ে দাড়ায় বার কিংবা চৌদ্দজনে।কারোই তেমন কাজ কর্ম প্রায় নেই বলতে গেলে।সবাই তাদের দেশ থেকে পাঠানো টাকা কিংবা গচ্ছিত কিছু অর্থ বা অন্যের ঘাড়ে বসে খায়। বাড়িখানা অনেকটা বারোয়ারি হোস্টেলের মত।লতায় পাতায় পরিচিত মস্কো কিংবা মস্কোর বাইরের কেউ সমস্যায় পড়লেই কোন অগ্রিম তার বার্তা নাদিয়েই এখানে এসে দু চার পাচ দিন থেকে শুরু করে কয়েক মাস অব্দি থেকে যায়। কেউ আসে আড্ডার লোভে দুয়েকজন আসে অর্থাভাবে কেউ আসে ভিসার জন্য কেউ আসে প্রেমে ছ্যাকা খেয়ে আবার কেউবা আসে অসতর্ক মুহুর্তের সামান্য ভুলের জন্য অকালে সন্তানের দায়িত্ব থেকে পালিয়ে বাচার জন্য। সারাদিন কাটে তাস খেলে রকমারি রান্না করে টেলিফোনে গুজুর গুজুর ফুসুর ফুসুর করে- কখনো মদ খেয়ে মাতলামী হৈ চৈ হুল্লোড় আর কিঞ্চিৎ হাতাহাতি মান অভিমান বাদানুবাদ আর ভবিষ্যত পরিকল্পনায়।প্রতিদিন নতুন নতুন গেস্ট আসে আর আড্ডা জৌলুস বাড়ে।অতিথি যখন বিদেয় হয় তখন কখনো হাঁফ ছেড়ে বাচে কিংবা কষ্টের ছায়া নামে চোখে মুখে।সেখানে ঘুমোনো আর খাওয়া দাওয়ার পর্ব চলে ভীষন আগোছালো আর বিস্মৃঙ্খল ভাবে। যার যখন খুশি খাচ্ছে-যার ইচ্ছে দু দন্ড জিরিয়ে নিচ্ছে।এভাবে মোটামুটি উত্তাপবিহীন কিছুটা একঘেয়ে এই দিনগুলিতে বেশ অন্য রকম এক আমেজ আনল তাদের এক বন্ধুর বিয়ে। সে থাকে মস্কো থেকে বেশ ক’শ কিলমিটার দুরে। দেশ থেকে বহুদুর রুশ দেশে এই প্রথম কোন বন্ধুর বিয়ে তাই সবাই মিলে সিদ্ধান্ত নিল সদলবলে বিয়েতে যাবে।রুশ বিয়েতে মজা বলতে সারারাত পান উৎসব আর নাচের অছিলায় জড়াজড়ি লেপ্টলেপ্টি। কুকুরের প্রতি এমনিতে আনিসের তেমন আকর্ষন কখনোই ছিলনা।সদলবলে বাইরে ঘুরতে গিয়ে কোন এক সকালে সেই শহরেই রাস্তার ধারে বসে এক বৃদ্ধার কিছু কুকুর ছানা বিক্রি করতে দেখে কেন যেন ঝোকের মাথায় আগপিছু না ভেবে কিনে ফেলেছিল একখানা।বন্ধুরা তার এই পাগলামি দেখে ঠাট্টা মস্করা করেছিল খুব-যেখানে মানুষের থাকার জায়গারই অভাব সেখানে সে কুকুরছানা রাখবে কোথায়? আনিস হয়ত হয়ত সেই কুকুরছানাটাকে সেখানেরই ফেলে আসত কিংবা কারো উপহার দিয়ে দিত। কিন্তু ছোটবেলা থেকেই একগুয়ে একরোখা বন্ধু আমার বন্ধুদের ইয়ার্কি ঠাট্টার জবাব দিতে পণ করল সেটাকে নিজের কাছেই রাখবে।অবশেষে সেই কুকুরছানা দীর্ঘ পথ ট্রেনে চেপে মস্কোতে এল আনিসের সেই ডেরায়।কুকুরের বাচ্চা কোন নিয়ম নীতি মানেনা-এত ছোটযে সে কোন প্রশিক্ষন দেয়ার প্রশ্নই আসেনা। সারাদির ঘর জুড়ে ছুটোছুটি করে খাবার যতটুকু খায় ছড়ায় তার থেকে বেশী। যেখানে সেখানে ঘুমোয়-প্রাকৃতিক কর্ম গুলো লেপ কাথা কিংবা কার্পেটের উপরেই অবলীলায় সারে।সে এক বিচ্ছিরি ব্যাপার! সবাই দুদিনেই ত্যাক্ত বিরক্ত!ওদিকে সবার যন্ত্রনা আর বিরক্তি দেখে আনিসের আনন্দ যেন ধরে না। এতদিন পরে সে একটা মনের মত কাজ পেয়েছে যেন। কুকুরের প্রতি তার আদিখ্যেতা দেখে সবারই গা জ্বলে যায়।একঘেয়ে দিনগুলিতে সাঝে মধ্যে বৈচিত্র আনে মিলন ভাই।তিনি সবার বয়সে একটু বড়তো বটেই তারইপরে কিঞ্চৎ ধনবান। আসার পথে ব্যাগ ভর্তি করে খাবার আর মদ নিয়ে আসেন।বাসায় এলেই হুলস্থুল শুরু হয়ে যায় তাকে নিয়ে-সেই রাতটাতে সবাই মেতে ওঠে উৎসব আনন্দে।একটু ধার্মিক শ্রেনীর কয়েক জন কুকুরকে করেছে অস্পৃশ্য আর মদকে হারাম বলে ছুয়ে দেখেনা। কিন্তু উৎসবে তারাও শামিল হয়-উপভোগ করে সবার মত করেই।সেদিন গভীর রাত অব্দি চলল খানা পিনা আর গল্প গুজব-স্বভাবতই দুয়েকজন মাতাল তখন।স্পস্টভাষী রফিক(ছদ্মনাম)সেই তথাকতিথ ধার্মিক কুকুর বিরোধীদের প্ররোচনায় একটু বেশীই গিলেছিল সেদিন।আর মতাল হয়েই নেশার ঘোরে কখন কিভাবে যেন আনিসের সাথে শুরু হল তর্ক বিতর্ক-অনুঘটক সেই কুকুর ছানা!প্রথমে মৃদু উত্তেজনা-দুয়েকজনের উস্কানীতে লেগে গেল হাতা হাতি।এমন ঘটনা এখানে বিরল নয় কিন্তু। মাতাল হয়ে হাতাহাতি প্রায়শই-সবারই এটা গা সওয়া হয়ে গেছে। আচমকা ওরে বাবারে মারে বলে শহিদের বিকট চিৎকার।প্রথমে আঁতকে উঠল সবাই-কিন্তু পরক্ষনেই হাসাহাসি গড়াগড়ি। ঘটনাটা এমন;উত্তেজনার এক ক্ষনে আনিসের সাথে হাতাহাতি শুরু হতেই কোত্থেকে সেই কুকুর ছানা দৌড়ে এসে কামড়ে ধরেছে শহিদের অন্ডকোষ!শহিদ চিৎকার চেচামেচি করছে আর আর ঘরময় দৌড়াচ্ছে কিন্তু তখনো সেই পিচ্চি কুকুর সেইখানটায় কামড়ে ধরে ঝুলে আছে আর রাগে গড় গড় করছে।অবশেষে সবার অনুরোধে আনিস-ই গিয়ে ছাড়িয়ে আনল তাকে।সেই থেকে আনিস বা তার কুকুরকে কেউ কিছু বলে না ভয়ে।ওদিকে সেই কুকুরছানার প্রতি আনিসেরও আদর ভালবাসা আদিখ্যেতা উত্তর উত্তর বেড়েই চলছিল।ওদিকে জাতে জার্মানী শেফার্ট সেই কুকুর ছানাও তার আদরে আর প্রশ্রয়ে বেড়ে উঠছিল তরতর করে।আনিস কুকুরটাকে দুবেলা রান্না করে নিজের হাতে খাওয়ায়,নিজে হপ্তায় দু হপ্তায় একবার গোসল না করেলেও কুকুরটাকে মাঝ মেধ্যেই শ্যম্পু সাবান ডলে সাফসুরোত করে।রান্না ঘরে চলে কুকুরের রান্না নিয়ে এক্সপেরিমেন্ট।কুকুরের রান্নার জন্য বাসন কোসন আর রান্না ঘরের চুলার দখল থাকায় নিজেদের রান্না লাটে ওঠে। মাঝে মধ্যে গোসল খানায় কুকুরের পশমে সয়লাব আর সারা বাড়িতে তার ছড়ানো উচ্ছিষ্ট আর মল মুত্রের ছড়াছড়িতে বাকি সব হোস্ট গেষ্ট অল্প কদিনেই ত্যাক্ত বিরক্ত হয়ে উঠল। দুচারজন সকাল বিকেল ফন্দি আটে কি করে ওটাকে তাড়ানো যায়। তবে কেউ কেউ যে আদর করতনা তা কিন্তু নয়।আগেই বলেছি কিছুটা একঘেয়ে সেই প্রবাস জীবনে একটু অন্যরকম স্বাদ এনে দেবার জন্য তার হিতাকাঙ্খীও মিলে গেল দু’একটা।জর্মন শেফার্ড নাকি নেকড়ের বংশধর। পূর্ব পুরুষের জাত মান রাখতে সে দাত নখের ধার শানাতে গিয়ে কত জনের চামড়ার জুতো আর পশমী কোট যে ছিন্ন ভিন্ন করল তার ইয়ত্বা নেই।একটা জাত কুকুরকে কিভাবে ট্রেইন্ড করতে হয় সে বিদ্যে কারোই জানা ছিলনা। তবুও একে ওকে জিজ্ঞেস করে ঠেলা গুতো গাল মন্দ দিয়ে তাকে একটু লাইনে আনলেও-ওদের এই ছন্নছাড়া জীবনের সাথে তাল মিলাতে গিয়ে সেও মাঝে মধ্যে উদ্ভট আচরন করে।বেশ কদিন বে ওয়ারিস ঘুরে বেড়ানোর পরে অবশেষে কোন পূর্ব পুরুষের পদবি ছাড়াই তার একখানা নাম ঠিক হল ‘জো’। আমার ধারনা হয়তো চু চু শব্দ থেকেই জো নামের উৎপত্তি।সহজ নাম যখন তখন সবাই ডাকে। জো ও মহা উদ্যোমে এর ঘাড়ে ওর মুখে আচড় মেরে লাফ ঝাপ দিয়ে এলোমেল ছোটে। খাবারের প্লেট উন্মুক্ত থাকলেই চেটে পুটে স্বাদ নেয়-বেকুব কুত্তা তার উদরের ধারন ক্ষমতা আঁচ না করতে পেরে উল্টা পাল্টা খেয়ে অবশেষে বমিতে রুম ভাসায়।মাস ছয়েক বাদেই বেকার আনিস একখান চাকরি পেল বেশ লোভনীয় বেতনে। রুমমেটরা তখন তাকে ইর্ষা করে সাথে ভক্তিও। এতগুলো বেকারের মাঝে সকার একা সে –সবাই তাকে তোয়াজ করে।কুকুরছানাও তার মনিবের এহেন দৈব পরিবর্তন আচ করতে পেরে হয়ে উঠল আরো বেয়াড়া আর বেপরোয়া! তবে দুর্ভাঘ্য ‘জো’র বছর না ঘুরতেই সেই নিস্কর্মা ছেলেগুলো ধীরে ধীরে নির্মম বাস্তবতার চাপে রুটি রুজির তাগিদে চলে গেল ভিন দেশে কিংবা মস্কোর অন্য প্রান্তে। ভেঙ্গে গেল সেই মিলন মেলা।আমিও ফিরে এলাম দেশে।আমার ফিরে আসার কিছুদিন বাদে আনিসও দেশে আসল বেড়াতে মাস তিনেকের জন্য।আসার আগে ভীষন বিপদে পড়েছিল ‘জো’ কে নিয়ে। ওকে একলা রেখে যাবে কার কাছে?অবশেষে শুভাকাঙ্খীদের পরামর্শে ‘জো’কে ভর্তি করে দিয়ে এসেছিল মস্কোর নামকরা এর কুকুর প্রশিক্ষন বিদ্যালয়ে।আমার ধারনার মধ্যেও ছিলনা শারমেয়রাও ইন্টার কিংবা গ্রাজুয়েশন করে। একবার শুনেছিলাম শিকাগোতে নাকি কুকুরের হোটেল আছে! এইটুকুতেই বিস্মিত হয়েছিলাম। কিন্তু কুকুরের বিদ্যালয় কিংবা বিশ্ব-বিদ্যালয় আছে সেটা শুনে শুধু বিস্মিত হইনি শুধু-বিশ্বাসও করিনি।‘জো’অবশ্য অতটা শিক্ষিত হয়নি মাত্র ছ’মাসের ট্রেনিং এ সে উচ্চ বিদ্যালয় পাশ করেছিল মাত্র।তবে হিংস্রতার শিক্ষা মনে হয় আরেকটু উচু লেভেলে দেয়া হয় তাই সে বরাবরই ছিল একটু বোকা সোকা নরম মনের এক শিশু স্বভাবের কুকুর।মতভিন্নতা থাকতে পারে, তবে শুনেছি কুকুরের এক বছর নাকি মানুষের সাত কিংবা আট বছরের সমান। সেই হিসেবে ওদের ছমাসের নিবির ট্রেনিং মানুষের কয়েক বছরের শিক্ষা দীক্ষার সমান।দশ বছর একটা কুকুর বেচে থাকা মানে মানুষের সত্তুর কিংবা আশি বছরের জীবন পাওয়া।জো’র সাথে দ্বীতিয়বার দেখা আমার ওর পাচ বছর বয়সে।তখন সে দুপায়ে ভর করে খাড়া হয়ে দাড়ালে পৌনে ছ’ফুট মাথাও ছাড়িয়ে যায়।প্রথম দর্শনেই তার সেই বিশাল আকৃতি দেখে আমি ভড়কে গিয়েছিলাম।আর কি তার বন্য সৌন্দর্য! আঃ চোখ জুড়োল দেখে আমাদের সেই ছোট্ট জো কে। তখন তার পূর্ন যৌবন তার উপরে সবার যত্ন আত্মি- সময় মত শ্যাম্পু ডলে গোসল খাওয়া চুল আচড়ানো আর ট্রেকিং জগিং করে তেমনি রুপবান হয়েছে সে।তার চকচকে বাদামী আর কালো পশমের আড়ালে সবল পেশীর আভাস মেলে বহুদুর থেকে।ততদিন সে পুরোপুরি ট্রেইন্ড। সময় মত খায় ঘুমোয়। প্রাকৃতিক কাজকর্ম সারা আর ঘুরাঘুরি করারও সময় নির্ধারন করা আছে। একদিন একটু উল্টা পাল্টা হলেই সে অসুস্থ হয়ে পড়ে।ঝড় তুষারপাত কিংবা মুষলধারে বৃষ্টি হলেও জোকে নিয়ে প্রতি রাতে বাইরে বেরুতে হবেই।সেটা তার সাস্থ্যটাকে সুগঠিত করতে সেই সাথে প্রাকৃতিক কাজ সারতে।আনিস যত রাতেই বাসায় ফিরুক না কেন সারাদিনের ব্যাস্ততায় হয়তো সে ক্লান্তিতে নুয়ে পড়ছে কিংবা অতিরিক্ত পানে মাতাল হয়ে হাত পা টলছে তবুও সে দরজাটা খুলেই জলদ গম্ভীর কন্ঠে প্রথমেই জো’কে ডাকবে।‘জো’কে অবশ্য এমনিতে ডাকার প্রয়োজন পড়েনা- কেননা মনিবের পদশব্দেই সে আগে থেকেই লম্ফ ঝম্ফ শুরু করে- আনিস ঢোকামাত্রই সে তার চারদিকে ঘুরে ঘুরে ট্রাউজারের সাথে ঘাড় ঘষে আদর চায়। একটু খানি আদর পেলেই সে সারাদিনের একঘেয়েমী ভুলে নিজের বিশাল শরির নিয়ে ঝাপিয়ে পড়ে তার গায়ে। কখনো হাত চাটে কথনো ঘাড়ে আদর করে কখনো সারাটা মুখে নিজের লালা লেপ্টে দেয়। আনিসও দারুন উপভোগ করে তার সেই আদর।কখনো বিরক্তিতে জোঃ বলে একটা ধমকদিলে সে দুরে সরে গিয়ে অপরাধী চোখে তাকিয়ে থাকত কিছুক্ষন –আবার পরক্ষনেই চারিদিকে ঘুরে ঘুরে ঘাড় ঘষে আদর চাইত। পোষাক আশাক না খুলেই আনিস হাত বাড়াত ওর বেল্টের দিকে। সেও তার ঘাড়খানা এগিয়ে দিত শেকল পড়ানোর জন্য। মনিবের দাসত্বে তার কি আনন্দ তখন! অবশ্য আনিস বাইরে বেরুবার সময় নিজের খাবারের এন্তেজাম না করলেও কুকুরের রান্না ঠিকই চুলায় চাপিয়ে যেত।কমমতদিন গেছে কুকুরকে নিজের জন্য রাখা মাংসটুকু রান্না করে খাইয়ে নিজে একটু সব্জি দিয়ে ভাত খেয়েছে।সে ফিরে আসতে আসতেই রান্না শেষ।‘জো’ তখন একাহারি। নিয়ম করে একবেলাতেই খেতে হয় তার। সারাদিন সে একবারও ছোক ছোক করেনা।কেউ খাবার সাধলেও সে খেতে চায়না। কখনো হয়তো লোভে পড়ে একটু এগিয়ে এসে আনিসের দিকে আড় চেখে তাকিয়ে সম্মতি পাবার আশায় কিছুক্ষন অপেক্ষা করে আবার মুখ ফিরিয়ে নেয়। তবে আনিস একবার অনুমতি দিলে আর রক্ষে নেই! তখুনি সে খাবারের উপর ঝাপিয়ে পড়ে।বাইরে থেকে এসে আনিস পোষাক পাল্টে নিজের জন্য কিছু চুলোয় চাপিয়ে জো’কে খেতে ডাকে।জো’তো সারাদিন এই ডাকটার জন্যই অপেক্ষা করেছিল। সে কি খুশী তার।কালো টানা টানা চোখে সেই খুশীর ঝিলিক দেখে আমার কি যে ভাল লাগত।জো'কে দেখে আমি সবচে বেশী অবাক হয়েছিলাম তার স্মরন শক্তি দেখে।!এত্তটুকুন বয়সে সে দেখেছে আমায়।তবুও কিভাবে মনে রেখেছে। আমি প্রথমবার এ বাসায় আসলে সে একবারও ঘুউ ঘেউ করেনি। প্রথম দেখাতেই আমার গা ঘষে আদর চেয়েছে। কিন্তু নতুন কেউ আসলে সে ঘেউ ঘেউ করবেই।আদরতো চাওয়াতো দুরের কথা যতক্ষন পর্যন্ত সে কনফার্ম না হবে লোকটা আনিসের শুভাকাঙ্খী ততক্ষন পর্যন্ত তাকে শান্তিতে থাকতে দেবে না। আনিস নিষেধ করলে কিংবা ধমকালেও সে একটু দুরে সরে ঘর ঘর ঘর ঘর শব্দ করে তার বিরক্তি প্রকাশ করে দাত খিঁচাবে।আর মাঝে মধ্যে অতিথির পিলে চমকে দিয়ে বিকট শব্দে ঘেউ ঘেউ করে ডেকে উঠবে।বন্ধু আনিস বলত,একবার আগুন্তক তার প্রিয় কেউ জেনে গেলে তাকে আর সে কখনোই বিরক্ত করবে না। হোকনা তার সাথে দু-চার বছর পরে দেখা।কোনদিন আনিসের বাইরে থেকে ফিরতে দেরি হয়ে গেলে-সে চাপ সংবরন করতে না পেরে ঘরের এক কোনেই প্রাকৃতিক কাজ সেরে ফেলত। কিন্তু এই কুকর্মটি করে সেদিন তার সেকি অনুশুচোনা! কই যেত তার লম্ফ ঝম্ফ! আনিস ঘরে ফিরলেই সে এক কোনে গিয়ে লুকাতো।এতবড় শরিরটা পর্দার আড়ালে নিজেকে লুকানোর সংকোচিত করার ব্যার্থ ও হাস্যকর প্রয়াস করে দু থাবার আড়ালে মুখখানা লুকিয়ে থর থর করে কাঁপত। আনিস সেদিন বাসায় এসেই বুঝে যেত একটা অঘটন ঘটে গেছে।জানে সে ‘জো’ কে ধমক ধামক দিয়ে লাভ নেই তাই সে মুখ ভার করে রাগী রাগী মুখে বসে থাকত। ‘জো’ তখন তার থাবার আড়াল থেকে একটু খানি চোখ বের করে করুন দৃষ্টিতে চেয়ে থাকত অপলকে মনিবের দিকে। ভাব বোঝার চেষ্টা করত।আনিস তার দিকে তাকালেই সে সে ফের মুখ লুকাত। বহুক্ষন ধরে চলত এই খেলাটা। আবার কখনো অন্যদিকে মুখ ঘুরিয়ে আনিসের সামনে দিয়ে ত্রস্ত পায়ে হেটে গিয়ে ডাদিকের দেয়ালের পাশে লুকিয়ে একটু খানি মুখ বের করে নিবিড় পর্যবেক্ষন করত তার মেজাজ মর্জি।দুয়েক ঘন্টা বাদে আনিসের রাগ কমলে-সে আড়াল থেকে শরিরটা বের করে অপরাধী দৃষ্টি নিয়ে চারিদিকে মুখ চুন করে ঘুরে বেড়াত। সর্বন্তকরেন প্রতিক্ষা করত আনিসের একটা মধুর ডাকের। একবার ডাক দিলেই হল। নিজের শরিরের বিশালতা ভুলে দৌড়ে এসে ঝাপিয়ে পড়ত আনিসের গায়ে। তারপর বহুক্ষন ধরে চলত হুটোপুটি ভালবাসা আর আদর!রাশিয়ার সেই অস্থির সময়টাতে-জীবনের নিরাপত্তা নিশ্চয়তার খোজে মানুষ যখন দিশেহারা তখন এই বোকাসোকা জো কিন্তু দারুন বিশ্বস্ততায় সহচর বন্ধু কিংবা বডিগার্ডের দায়িত্ব নিয়ে সামলেছে তার মনিব কিংবা পালক পিতাকে।সে সর্বক্ষন চোখে চোখে রেখেছে তাকে।একটু সন্দেহ হলেই সে ঝাপিয়ে পড়েছে শত্রুভাবাপন্ন যে কারো উপরে।ডাকাবুকো তরতাজা যুবক জো’র একটা বান্ধবী জোটেনি তখনো।নিজের রিপুকে দমন করতে না পেরে মাঝে মধ্যে অবশ্য সে জাত পাত ভুলে কোন টেরিয়র কিংবা বুলডগ মাদি কুকুরের উপর ঝাপিয়ে পড়তে দ্বীধা করতনা।তাকে সামলাতে তখন আনিসের ভীষন বেগ পেতে হত।জীবনে দু চারটা চড় থাপ্পর খেয়েছে সে অবশ্য এই চরিত্রহীনতার দোষে।সবকিছু ঠিকঠাক সত্বেও আচমকা জো’র শরির ভেঙ্গে যেতে শুরু করল। সে সারাক্ষনই বিষন্ন থাকে। খাবারে একদম রুচি নেই। বাইরে ঘুরতেও চায়না বিশেষ।আনিস পড়ল মহা বিপদে। উপায়ন্তর না দেখে অবশেষে ডাক্তারের সরনাপন্ন হল সে।সব দেখে শুনে ডাক্তার বলল,ভরা যৌবনে যৌনাকাঙ্খা মেটাতে না পেরে জো’র এই দশা। হয় তাকে একটা বান্ধবী জুটিয়ে দিতে হবে নয়তো। হস্ত দ্বারা মৈথুন করে স্খলন করতে হবে। ওখানকার নিয়ম স্বজাতি কোন মাদী কুকুরের মনিব ইচ্ছাকৃত ভাবে এগিয়ে না এলে পুরুষ কুকুর সহবাস বিহিন জীবন কাটাতে বাধ্য হত।কুকুরের দেহ মিলনের জন্য তাদের দুপক্ষের মালিকেরই সম্মতির প্রয়োজন ছিল।এজন্য কেউ কেউ পত্রিকায় বিজ্ঞাপনও দিতে বাধ্য হত।বহু চেস্টা তদ্বির করে একটা স্বজাতি বান্ধবী জোগার করতে না পেরে অবশেষে বাধ্য হয়ে আনিস শেষোক্ত কঠিন কার্যটিই সম্পাদন করল। সেটা একটা দেখার মত দৃশ্য ছিল বটে। দু হাতে গ্লভস পড়ে বাথটাবে জো কে নিয়ে সে কি যুদ্ধটাই না করেছিল বেচারা!সপ্তায় দুচারবার হস্তমৈথুনের সুবাদে জো ঠিক আগের মতই তরতাজা হসি খুশি হয়ে উঠল।সেই সাথে বেড়ে চলল তার পাগলামী আর বোকামীটাও।আনিসের প্রিয় সেই প্রিয় সহচর বন্ধু কিংবা সন্তানটি বেচে ছিল দীর্ঘ ষোল বছর।দুটো দিন তাকে চোখের আড়াল করেও আনিস কখনো শান্তিতে ঘুমোতে পারেনি।দুজনেই দুজনার ছিল হরিহর আত্মা। আনিসের বউ সন্তান সবাই তাকে নিজের আপন আত্মীয়টির মত ভাল বাসত।শেষ বয়সে তার যখন গায়ের লোম খসে পড়তে শুরু করল তখনো কারো ভাল বাসা কমেনি এক রত্তি।শেষ কটা দিন ওর কষ্ট সহ্য করতে না পেরে অবশেষে সবাই সিদ্ধান্ত নিয়েছিল ইনজেকশন দিয়ে মেরে ফেলার। আনিস সামনে থেকে তার সন্তানের হত্যাদৃশ্য দেখতে চায়নি। সে জোর অগোচরে পালিয়ে এসেছিল বাংলাদেশে। সেই কটা দিন সারাক্ষনই অজানা আশঙকায় তার বুক কাপত মনে হত এই বুঝি পাবে জোর মৃত্য খবর। জোর মৃত্যুর আগের পুরো সময়টা দেখেছি ভয়ানক বিষন্ন তাকে। অবশেষে একদিন সেই চরম খবরটি এল – জো মরে গেছে কিংবা তাকে মেরে ফেলা হয়েছে। আনিস কখনোই স্বীকার করতে চায়নি বা চায়না সেই চরম সত্যটা। তার কাছে জো অমর। জোর স্মৃতি সারা জীবন সবার অলক্ষ্যে জুড়ে থাকবে তার হৃদয় জুড়ে।আর ক্ষত হয়ে রক্ত ঝড়াবে তার মৃত্যুটা।('জো' মারা গিয়েছিল ২০০৮ সালের ১০ই মার্চ। আনিস এখন সপরিবারে থাকে 'জো'র পূর্বপূরুষের ভুমি জার্মানীতে।)
সমকামী-২ (১৮+)
০২ রা এপ্রিল, ২০০৯ রাত ৯:৩৬
নিকেতন থেকে বের হয়ে মুল রাস্তায় আসলাম ট্যাক্সি কিংবা অটোরিক্সার খোজে। সন্ধ্যে সাতটা বাজেনি তখনো। কর্পোরেট অফিসগুলোতে ছুটি হচ্ছে-এখন ভাড়ায় গাড়ি পাওয়া বেশ কষ্টের। ট্যাক্সি চালকেরা তাদের প্রিয় গন্তব্যে পছন্দের যাত্রীকে নিয় ইচ্ছেমত ভাড়া হাকাতে ব্যাস্ত। দুয়েকটা খালি গাড়ি আসলেই ছুটো যাচ্ছে কয়েকজন-আর মওকা বুঝে চালকেরা ভাব নিচ্ছে। দুয়েকজন হা না বললেও বেশীরভাগই হয় মাথা ঝাকাচ্ছে নয়তো কিছু না বলেই আরো জোরে গাড়ি ছুটিয়ে চলে যাচ্ছে।ঢাকার রাস্তায় এই ট্যাক্সি চালকের দৌরাত্মে নিজেকে বেশ অসহায় মনে হয়।গাড়ি কেনাটা আর তখন বিলাসিতা মনে হয়না-সবচে জরুরি বিষয় বলেই ভাবতে ইচ্ছে করে।মৌলিক চাহিদা অন্ন বস্ত্র বাসস্থানের সাথে গাড়িটাকে জুড়ে দিতে ইচ্ছে করে।পাশের ব্যাংক থেকে এক রমণী অভদ্রের মত আমাকে টপকে সামনে গিয়ে উল্টোমুখে দাড়িয়ে মুঠোফোনে কথা বলতে বলতে বা হাতে আইডি কার্ডের ফিতেটা ঘুরিয়ে যেভাবে ঠ্যাং নাচাচ্ছিল তা দেখে মেজাজ বিগড়ে গেল।আমিও ইচ্ছে করলে তার সামনে গিয়ে দাড়াতে পারি কিন্তু সংস্কারে বাধে। নাহ্ এখানে এভাবে দাড়িয়ে থাকার কোন মানে হয়না।হাতে যখন সময় আছে এর থেকে রিক্সায় গুলশান একনম্বর গিয়ে বাসে করে যাই।সময় থাকলে এমনিতেই অনেক সময় বাসে চড়ি-সেখানে প্রতিমুহুর্তেই নতুন নতুন কাহিনীর জন্ম হয়-শুধু চোখ মেলে বসে কান পেতে শুনলেই হল।অফিস ছুটির সময় তাই স্বভাবতই এখন বাসে আরো বেশী ভীড়।সৌভাগ্যবশত সিট পেয়ে গেলাম। তিন সিটের দুপাশে দুজন বসে ছিল -মাঝেরটা খালি। বাম পাশের যাত্রীটা হাটু সরিয়ে আমাকে ভিতরে যাবার পথ করে দিলেন। দুজন যাত্রীর মাঝখানে বসাটা আমার বেশ অপছন্দের। একটু বিষন্ন মনে বললাম- ভাই মাঝখানেই পাঠালেন?লোকটা বেশ ভাল, অমায়িক হেসে বললেন, কেন আপনি সাইডে বসতে চাচ্ছেন?সমস্যা নেই,বসেস-বসেন। বলে তিনি সরে গেলেন।কি ভুল করলাম পরমুহুর্তেই বুঝলাম। পরের স্টপেজে হুড়মুড় করে বেশ কিছু যাত্রী উঠল। আমার পাশে এসে দাড়াল হাতে পোর্টফোলিও নিয়ে মার্জিত পোষাক পরা একহারা গড়নের লম্বা ফর্সা এক তরুন।বাসে তখনো গাদাগাদি ভীড় নেই পিছনে ফাকায় দাড়ানোর সুযোগ পেয়েও সে কেন দরজার কাছে আমার পাশেই এসে দাড়ালো বুঝলামনা।বাস ফের চলতে শুরু করল। আমি নিমগ্ন হলাম আমার ধ্যানে।খানিক বাদে একটু অস্বস্তি! ছেলেটা খুব বেশী ঘেষে আছে আমার বাহুর সাথে।বাসের ঝাকুনি ঢিমে তালে হলেও এস বেশ জোরে জোরে দুলছে। প্রথমে পাত্তা দেইনি ডান দিকে একটু চেপে বসলাম।পরের স্টপেজে আরো কিছু যাত্রী উঠল।এবার বাস ভরে গেছে-ছেলেটা কিন্তু কোথাও না সরে সেখানেই দাড়িয়ে রইল ঠায়। আবার চলতি বাসে তার ঘষাঘষিতে মালুম হল মামু অন্য কিসিমের!ডাইনে বায়ে সরলাম এদিক ওদিক ঘুরলাম কিন্তু সে তার লক্ষ্যে অনড়। এবার আবার নিজের ভুল ভেবে নিজের মধ্য ডুব দেবার চেষ্টা করলাম। ভেবে ওখানে এক রমনীই দাড়িয়ে আছে-কল্পনায় না হয় একটু আদিম সুখই অনুভব করলাম। কিন্তু না সপ্নের শুরুতেই হোচট খেলাম!কঠিন পুরুষাঙ্গের ঘর্ষন নারীর কোমলতার সাথে যে বড্ড বেমানান। মনে হল উঠে দাড়িয়ে জোরে এক থাপ্পর মারি-শালা বিতলামীর আর জায়গা পাওনা।উমহু ব্যাপারটা শোভন হবেনা-ফের সংস্কারের বাধা!ঘাড় ঘুরিয়ে ছেলেটার দিকে তাকালাম ভাল করে। ফর্সা র্সুদর্শন লো পাওয়ার্ড চশমা তাকে বেশ ইনোসেন্ট লাগছে।সবকিছু ভুলে বাইরে কিছু একটা আতিপাতি করে এমন ভাবে খুজছে যে নিন্মাঙ্গের কোন বার্তাই তার মগজে গিয়ে পৌছায়নি। দুটো মাথা দুই ভাবনায় ব্যাস্ত।তার উদ্দেশ্যে কয়েক ডজন গালি জিভের অগ্রভাগে এসে কিলবিল করল শুধু।আপনি কি জানেন কত শত পুরুষ শিশু কিশোর পুরুষদের দ্বারা ধর্ষিত হয় প্রতিবছর?আমি ব্যাক্তিগত ভাবে সমকামিতাকে ঘৃনা করি কিন্তু সমকামীকে নয়(অনেকটা পাপকে ঘৃনা কর পাপীকে নয়-এর মত),কেননা তারা কোনমতেই বিপরিদ লিঙ্গের প্রতি আকর্ষন অনুভব করেনা।এটাতো স্বীকৃত যে সমকামীতা একধরনের অসুস্থতা-প্রকৃতির এই নিষ্ঠুর খেলার কাছে তারা অসহায়!অতএব তাদের ঘৃনা করাটা বোধ হয় ঠিকনা।। কিন্তু সারা বিশ্বেই অন্য এক ধরনের সমকামী বা উভকামীর দেখা মিলবে। এদের কোন বাছ বিচার নেই। বিপরিদ লিঙ্গের কাউকে না পেলে এরা সমলিঙ্গের সাথেও দৈহিক মিলনে লিপ্ত হতে দ্বীধা করেনা। নিজের রিপুকে দমন করার জন্য এরা যে কোন পন্থা অবলম্বন করে।আমাদের দেশের মত ধর্মীয় কারনে বা সামাজিক ভাবে রক্ষনশীল দেশেই এদের আধিক্য। অবশ্য সবখানেই একঘেয়েমীতা বা রুচি পরিবর্তনের জন্য কিছু মানুষ সমকামীতায় আগ্রহী হয়।অল্প চেনা অতিচেনা কিংবা অচেনা কোন সবল পুরুষের কাছে একই বিছানায় যখন আমরা একটা কিশোরকে আমরা ঘুমোতে পাঠাই নিশ্চন্তে তখন কি একবারও ভাবি-কি ভয়াবহ একটা অভিজ্ঞতা অর্জন করতে পারে সেই একটা রাতে?সেই কিশোরটি কাউকে বলতে পারেনা-হয়তো কেউ বিশ্বাস করবে না ভেবে।কি নিদারুন ভয়ঙ্কর লজ্জা অপমান গ্লানীতে নীল হয়ে সে মুষড়ে থাকে-সারাটাজীবনই হয়তো সে মনের একান্ত গহীনে সে কষ্টটাকে বয়ে বেড়ায়।ঠিক তেমনি একটি ভয়ঙ্কর ধর্ষনের ঘটনার বর্ণনা করছি আমার এক অতি ঘনিষ্ঠ বন্ধুর নিজের জবানীতে;তখন বয়স ১১/১২ হবে।নারীদের প্রতি অল্প বিস্তর আকর্ষন বোধ করি, রুপ দেখে বিমোহিত হই, কল্পনায় সপ্ন গিজগিজ করে রুপকথার আদলে। সন্তান উৎপাদনের পুরোপুরি প্রক্রিয়া থকনো জানা হয়নি।যৌন বিষয়ক কথাবার্তা বহুবার পিউরিফাইড হয়ে কানে আসে।ভাবতাম যৌন সম্ভোগ শুধু খারাপ লোকেরাই করে।আমার পরিবার,পরিবেশ আর আশেপাশের কালচার এইভাবেই আমাদের শিখিয়েছিল।নিরাভরন নারিদেহ দেখার দুর্নিবার আকাঙ্খা থাকলেও সেইটে ছিল শুধু নিষিদ্ধ কোন কিছু চোখ দিয়ে স্পর্শের আকাঙ্খায়।ইন্টারনেট টিভির দৌরাত্ম আর খোলামেলা ছবির আগ্রাসনতো তখনো শুরু হয়নি-তাই এই প্রজন্মের থেকে অনেকখানি পিছিয়ে ছিলাম তখন।সমকামী ব্যাপারটা তখন ধারনার মধ্যেই ছিলনা।একসাথে গাদাগাদি লেপ্টালেপ্টি করে শত শত পুরুষ নারী শুয়ে থাকলেই কি-নির্জলা বন্ধুত্ব কিংবা আত্মিক সম্পর্ক ছাড়া তাদের মধ্যে অন্য কোন সম্পর্ক থাকতে পারে সেইটে কল্পনা থেকে বহু লক্ষ্য যোজন দুরে ছিল।সেই পুচকে বয়সে আমার দুই বোন আমাকে বডিগার্ড হিসেবে নিয়ে গেল বেড়াতে আমাদের দুরসম্পর্কের এক আত্মীয়ের বাড়িতে।সম্পর্ক দুরের হলেও তাদের আন্তরিকতাও আতিথিয়েতা ছিল দারুন।জোড়াজুড়িতে সেই রাতে সেখানে থেকে যেতে বাধ্য হলাম সবাই।মেয়েদর থাকার জায়গার ব্যাবস্থা হলেও আমাকে নিয়ে পড়ল ফ্যাসাদে!তখন না বড় না ছোটর দলে।অবশেষে আমার জায়গা হল তাদেরই ভাড়া দেয়া এক মেস বাড়িতে।মাঝারি একটা রুমে তিনখানা খাট। তিনজন বোর্ডার মাত্র। জায়গা হল তন্মধ্যে বেশ বড় একখান খাটে সজ্জন এক বোর্ডারের সাথে।তখনো হাফ প্যান্ট পরি। গায়ের জামাখানা খুলে রেখে বিছানায় শরির এলিয়ে দিলাম। এরকম পরিবেশ আমার জন্য একদম নতুন -অপরিচিত কারো সাথে ঘুমাইনি কখনো, তাই প্রথমে একটু অস্বস্তি লাগলেও জার্নি আর হুটোপাটার ধকলে ক্লান্ত আমি ঘুমিয়ে পরলাম পরক্ষনেই।গভীর রাত; ঘুম ভেঙ্গে গেল-দম আটকানো অস্বস্তি কর একটা চাপ অনুভব করছিলাম। ঘুম ঘোরে ভেবছিলাম সপ্ন দেখছি-পরমুহুর্তেই ফিরে এলাম বাস্তবে।ভীষন আতংকিত হয়ে লক্ষ্য করলাম আমার পাশে শুয়ে থাকা সবল রোমশ পুরুষটা আমাকে জোরে চেপে ধরে তার উত্তিথ পুরুষাঙ্গ দিয়ে আমার দুপায়ের ফাকে জোরে জোরে ঘষছে। সারা দেহ থরথর করে কেপে উঠল আমার ভীষন ভয় পেয়ে গেলাম।তবুও মনে ভীষন সাহস সঞ্চয় করে ঝাড়া দিয়ে উটে বসে আতংকিত কন্ঠে বললাম- এসব কি করছেন?লোকটা আচমকা আমার কাছ থেকে এমন প্রতিরোধ আশা করেনি- সেও ধড়মড় করে উঠে বসে-কাপা কাপা কন্ঠে এক্কেবারে কিস্যু জানেনা এমন ভঙ্গীতে বলল,কেন কি করেছি?-আমি আরো জোড়ে চেঁচিয়ে উঠলাম, মানে আপনে জানেননা কি করেছেন? আমি সবাইকে বলে দেব।তখুনি সে আমার মুখ চাপা দিয়ে হিস হিস করে উঠল, খবরদার কাউকে বলবা না তাইলে খুন করে ফেলব।‘পাছে ঘুমিয়ে পড়লে সে আমাকে মেরে ফেলে সেই ভয়ে আতংকে সারারাত আমি ঠায় বসে ছিলাম সেখানটায়। ভোরের দিকে হয়ত একটু তন্দ্রার মত এসেছিল-ফের চোখ মেলে চাইতেই দেখি বিছানা ছেড়ে পালিয়েছে সে- সকালের মিষ্টি রোদের আলো ভরে আছে সারা ঘর।ভোরের আলোর স্পর্শে হয়ত আমি ভয় মুক্ত হয়েছিলাম-তবু সেই রাতের স্মৃতি আমাকে তাড়িয়ে নিয়ে বেড়িয়েছে আরো বহু বছর।
নিকেতন থেকে বের হয়ে মুল রাস্তায় আসলাম ট্যাক্সি কিংবা অটোরিক্সার খোজে। সন্ধ্যে সাতটা বাজেনি তখনো। কর্পোরেট অফিসগুলোতে ছুটি হচ্ছে-এখন ভাড়ায় গাড়ি পাওয়া বেশ কষ্টের। ট্যাক্সি চালকেরা তাদের প্রিয় গন্তব্যে পছন্দের যাত্রীকে নিয় ইচ্ছেমত ভাড়া হাকাতে ব্যাস্ত। দুয়েকটা খালি গাড়ি আসলেই ছুটো যাচ্ছে কয়েকজন-আর মওকা বুঝে চালকেরা ভাব নিচ্ছে। দুয়েকজন হা না বললেও বেশীরভাগই হয় মাথা ঝাকাচ্ছে নয়তো কিছু না বলেই আরো জোরে গাড়ি ছুটিয়ে চলে যাচ্ছে।ঢাকার রাস্তায় এই ট্যাক্সি চালকের দৌরাত্মে নিজেকে বেশ অসহায় মনে হয়।গাড়ি কেনাটা আর তখন বিলাসিতা মনে হয়না-সবচে জরুরি বিষয় বলেই ভাবতে ইচ্ছে করে।মৌলিক চাহিদা অন্ন বস্ত্র বাসস্থানের সাথে গাড়িটাকে জুড়ে দিতে ইচ্ছে করে।পাশের ব্যাংক থেকে এক রমণী অভদ্রের মত আমাকে টপকে সামনে গিয়ে উল্টোমুখে দাড়িয়ে মুঠোফোনে কথা বলতে বলতে বা হাতে আইডি কার্ডের ফিতেটা ঘুরিয়ে যেভাবে ঠ্যাং নাচাচ্ছিল তা দেখে মেজাজ বিগড়ে গেল।আমিও ইচ্ছে করলে তার সামনে গিয়ে দাড়াতে পারি কিন্তু সংস্কারে বাধে। নাহ্ এখানে এভাবে দাড়িয়ে থাকার কোন মানে হয়না।হাতে যখন সময় আছে এর থেকে রিক্সায় গুলশান একনম্বর গিয়ে বাসে করে যাই।সময় থাকলে এমনিতেই অনেক সময় বাসে চড়ি-সেখানে প্রতিমুহুর্তেই নতুন নতুন কাহিনীর জন্ম হয়-শুধু চোখ মেলে বসে কান পেতে শুনলেই হল।অফিস ছুটির সময় তাই স্বভাবতই এখন বাসে আরো বেশী ভীড়।সৌভাগ্যবশত সিট পেয়ে গেলাম। তিন সিটের দুপাশে দুজন বসে ছিল -মাঝেরটা খালি। বাম পাশের যাত্রীটা হাটু সরিয়ে আমাকে ভিতরে যাবার পথ করে দিলেন। দুজন যাত্রীর মাঝখানে বসাটা আমার বেশ অপছন্দের। একটু বিষন্ন মনে বললাম- ভাই মাঝখানেই পাঠালেন?লোকটা বেশ ভাল, অমায়িক হেসে বললেন, কেন আপনি সাইডে বসতে চাচ্ছেন?সমস্যা নেই,বসেস-বসেন। বলে তিনি সরে গেলেন।কি ভুল করলাম পরমুহুর্তেই বুঝলাম। পরের স্টপেজে হুড়মুড় করে বেশ কিছু যাত্রী উঠল। আমার পাশে এসে দাড়াল হাতে পোর্টফোলিও নিয়ে মার্জিত পোষাক পরা একহারা গড়নের লম্বা ফর্সা এক তরুন।বাসে তখনো গাদাগাদি ভীড় নেই পিছনে ফাকায় দাড়ানোর সুযোগ পেয়েও সে কেন দরজার কাছে আমার পাশেই এসে দাড়ালো বুঝলামনা।বাস ফের চলতে শুরু করল। আমি নিমগ্ন হলাম আমার ধ্যানে।খানিক বাদে একটু অস্বস্তি! ছেলেটা খুব বেশী ঘেষে আছে আমার বাহুর সাথে।বাসের ঝাকুনি ঢিমে তালে হলেও এস বেশ জোরে জোরে দুলছে। প্রথমে পাত্তা দেইনি ডান দিকে একটু চেপে বসলাম।পরের স্টপেজে আরো কিছু যাত্রী উঠল।এবার বাস ভরে গেছে-ছেলেটা কিন্তু কোথাও না সরে সেখানেই দাড়িয়ে রইল ঠায়। আবার চলতি বাসে তার ঘষাঘষিতে মালুম হল মামু অন্য কিসিমের!ডাইনে বায়ে সরলাম এদিক ওদিক ঘুরলাম কিন্তু সে তার লক্ষ্যে অনড়। এবার আবার নিজের ভুল ভেবে নিজের মধ্য ডুব দেবার চেষ্টা করলাম। ভেবে ওখানে এক রমনীই দাড়িয়ে আছে-কল্পনায় না হয় একটু আদিম সুখই অনুভব করলাম। কিন্তু না সপ্নের শুরুতেই হোচট খেলাম!কঠিন পুরুষাঙ্গের ঘর্ষন নারীর কোমলতার সাথে যে বড্ড বেমানান। মনে হল উঠে দাড়িয়ে জোরে এক থাপ্পর মারি-শালা বিতলামীর আর জায়গা পাওনা।উমহু ব্যাপারটা শোভন হবেনা-ফের সংস্কারের বাধা!ঘাড় ঘুরিয়ে ছেলেটার দিকে তাকালাম ভাল করে। ফর্সা র্সুদর্শন লো পাওয়ার্ড চশমা তাকে বেশ ইনোসেন্ট লাগছে।সবকিছু ভুলে বাইরে কিছু একটা আতিপাতি করে এমন ভাবে খুজছে যে নিন্মাঙ্গের কোন বার্তাই তার মগজে গিয়ে পৌছায়নি। দুটো মাথা দুই ভাবনায় ব্যাস্ত।তার উদ্দেশ্যে কয়েক ডজন গালি জিভের অগ্রভাগে এসে কিলবিল করল শুধু।আপনি কি জানেন কত শত পুরুষ শিশু কিশোর পুরুষদের দ্বারা ধর্ষিত হয় প্রতিবছর?আমি ব্যাক্তিগত ভাবে সমকামিতাকে ঘৃনা করি কিন্তু সমকামীকে নয়(অনেকটা পাপকে ঘৃনা কর পাপীকে নয়-এর মত),কেননা তারা কোনমতেই বিপরিদ লিঙ্গের প্রতি আকর্ষন অনুভব করেনা।এটাতো স্বীকৃত যে সমকামীতা একধরনের অসুস্থতা-প্রকৃতির এই নিষ্ঠুর খেলার কাছে তারা অসহায়!অতএব তাদের ঘৃনা করাটা বোধ হয় ঠিকনা।। কিন্তু সারা বিশ্বেই অন্য এক ধরনের সমকামী বা উভকামীর দেখা মিলবে। এদের কোন বাছ বিচার নেই। বিপরিদ লিঙ্গের কাউকে না পেলে এরা সমলিঙ্গের সাথেও দৈহিক মিলনে লিপ্ত হতে দ্বীধা করেনা। নিজের রিপুকে দমন করার জন্য এরা যে কোন পন্থা অবলম্বন করে।আমাদের দেশের মত ধর্মীয় কারনে বা সামাজিক ভাবে রক্ষনশীল দেশেই এদের আধিক্য। অবশ্য সবখানেই একঘেয়েমীতা বা রুচি পরিবর্তনের জন্য কিছু মানুষ সমকামীতায় আগ্রহী হয়।অল্প চেনা অতিচেনা কিংবা অচেনা কোন সবল পুরুষের কাছে একই বিছানায় যখন আমরা একটা কিশোরকে আমরা ঘুমোতে পাঠাই নিশ্চন্তে তখন কি একবারও ভাবি-কি ভয়াবহ একটা অভিজ্ঞতা অর্জন করতে পারে সেই একটা রাতে?সেই কিশোরটি কাউকে বলতে পারেনা-হয়তো কেউ বিশ্বাস করবে না ভেবে।কি নিদারুন ভয়ঙ্কর লজ্জা অপমান গ্লানীতে নীল হয়ে সে মুষড়ে থাকে-সারাটাজীবনই হয়তো সে মনের একান্ত গহীনে সে কষ্টটাকে বয়ে বেড়ায়।ঠিক তেমনি একটি ভয়ঙ্কর ধর্ষনের ঘটনার বর্ণনা করছি আমার এক অতি ঘনিষ্ঠ বন্ধুর নিজের জবানীতে;তখন বয়স ১১/১২ হবে।নারীদের প্রতি অল্প বিস্তর আকর্ষন বোধ করি, রুপ দেখে বিমোহিত হই, কল্পনায় সপ্ন গিজগিজ করে রুপকথার আদলে। সন্তান উৎপাদনের পুরোপুরি প্রক্রিয়া থকনো জানা হয়নি।যৌন বিষয়ক কথাবার্তা বহুবার পিউরিফাইড হয়ে কানে আসে।ভাবতাম যৌন সম্ভোগ শুধু খারাপ লোকেরাই করে।আমার পরিবার,পরিবেশ আর আশেপাশের কালচার এইভাবেই আমাদের শিখিয়েছিল।নিরাভরন নারিদেহ দেখার দুর্নিবার আকাঙ্খা থাকলেও সেইটে ছিল শুধু নিষিদ্ধ কোন কিছু চোখ দিয়ে স্পর্শের আকাঙ্খায়।ইন্টারনেট টিভির দৌরাত্ম আর খোলামেলা ছবির আগ্রাসনতো তখনো শুরু হয়নি-তাই এই প্রজন্মের থেকে অনেকখানি পিছিয়ে ছিলাম তখন।সমকামী ব্যাপারটা তখন ধারনার মধ্যেই ছিলনা।একসাথে গাদাগাদি লেপ্টালেপ্টি করে শত শত পুরুষ নারী শুয়ে থাকলেই কি-নির্জলা বন্ধুত্ব কিংবা আত্মিক সম্পর্ক ছাড়া তাদের মধ্যে অন্য কোন সম্পর্ক থাকতে পারে সেইটে কল্পনা থেকে বহু লক্ষ্য যোজন দুরে ছিল।সেই পুচকে বয়সে আমার দুই বোন আমাকে বডিগার্ড হিসেবে নিয়ে গেল বেড়াতে আমাদের দুরসম্পর্কের এক আত্মীয়ের বাড়িতে।সম্পর্ক দুরের হলেও তাদের আন্তরিকতাও আতিথিয়েতা ছিল দারুন।জোড়াজুড়িতে সেই রাতে সেখানে থেকে যেতে বাধ্য হলাম সবাই।মেয়েদর থাকার জায়গার ব্যাবস্থা হলেও আমাকে নিয়ে পড়ল ফ্যাসাদে!তখন না বড় না ছোটর দলে।অবশেষে আমার জায়গা হল তাদেরই ভাড়া দেয়া এক মেস বাড়িতে।মাঝারি একটা রুমে তিনখানা খাট। তিনজন বোর্ডার মাত্র। জায়গা হল তন্মধ্যে বেশ বড় একখান খাটে সজ্জন এক বোর্ডারের সাথে।তখনো হাফ প্যান্ট পরি। গায়ের জামাখানা খুলে রেখে বিছানায় শরির এলিয়ে দিলাম। এরকম পরিবেশ আমার জন্য একদম নতুন -অপরিচিত কারো সাথে ঘুমাইনি কখনো, তাই প্রথমে একটু অস্বস্তি লাগলেও জার্নি আর হুটোপাটার ধকলে ক্লান্ত আমি ঘুমিয়ে পরলাম পরক্ষনেই।গভীর রাত; ঘুম ভেঙ্গে গেল-দম আটকানো অস্বস্তি কর একটা চাপ অনুভব করছিলাম। ঘুম ঘোরে ভেবছিলাম সপ্ন দেখছি-পরমুহুর্তেই ফিরে এলাম বাস্তবে।ভীষন আতংকিত হয়ে লক্ষ্য করলাম আমার পাশে শুয়ে থাকা সবল রোমশ পুরুষটা আমাকে জোরে চেপে ধরে তার উত্তিথ পুরুষাঙ্গ দিয়ে আমার দুপায়ের ফাকে জোরে জোরে ঘষছে। সারা দেহ থরথর করে কেপে উঠল আমার ভীষন ভয় পেয়ে গেলাম।তবুও মনে ভীষন সাহস সঞ্চয় করে ঝাড়া দিয়ে উটে বসে আতংকিত কন্ঠে বললাম- এসব কি করছেন?লোকটা আচমকা আমার কাছ থেকে এমন প্রতিরোধ আশা করেনি- সেও ধড়মড় করে উঠে বসে-কাপা কাপা কন্ঠে এক্কেবারে কিস্যু জানেনা এমন ভঙ্গীতে বলল,কেন কি করেছি?-আমি আরো জোড়ে চেঁচিয়ে উঠলাম, মানে আপনে জানেননা কি করেছেন? আমি সবাইকে বলে দেব।তখুনি সে আমার মুখ চাপা দিয়ে হিস হিস করে উঠল, খবরদার কাউকে বলবা না তাইলে খুন করে ফেলব।‘পাছে ঘুমিয়ে পড়লে সে আমাকে মেরে ফেলে সেই ভয়ে আতংকে সারারাত আমি ঠায় বসে ছিলাম সেখানটায়। ভোরের দিকে হয়ত একটু তন্দ্রার মত এসেছিল-ফের চোখ মেলে চাইতেই দেখি বিছানা ছেড়ে পালিয়েছে সে- সকালের মিষ্টি রোদের আলো ভরে আছে সারা ঘর।ভোরের আলোর স্পর্শে হয়ত আমি ভয় মুক্ত হয়েছিলাম-তবু সেই রাতের স্মৃতি আমাকে তাড়িয়ে নিয়ে বেড়িয়েছে আরো বহু বছর।
সমকামী(১৮+)
০২ রা ফেব্রুয়ারি, ২০০৯ রাত ৮:৫৬
সারা পৃথিবীতে যখন সমকামীদের নিয়ে প্রচন্ড আলোড়ন- উন্নত বিশ্বর কোন কোন দেশে যখন সমকামীদের বৈবাহিক বৈধতা দেয়া হচ্ছে- ঠিক সে সময়টাতেও কিন্তু রাশিয়াতে সমকামীদের প্রচন্ড ঘৃনা করা হত! দুজন পুরুষ বা দুজন নারী এমনকি তারা যদি আপন ভাই কিংবা বোনও হয়-এক বিছানায় পাশাপাশি ঘুমোলে তাদেরকেও সন্দেহের চোখে দেখত। আমি দেখেছি দুবোন কিংবা দুভাই যদি একান্ত বাধ্য হত পাশাপাশি শুতে তাহলে একজন মাথা দিত উত্তরে একজন দক্ষিনে! প্রথমে বুঝিনি এমনতর শোয়ার গুঢ় রহস্য। পরে এক রুশভাই আমাকে ব্যাখ্যা করে দিলে আমি বাকহারা হয়েছিলাম বেশ কিছুক্ষন। আরো আশ্চর্যের কথা রুশ রমনীরা পারতপক্ষে মর্দ্দা কুকুর পোষেনা আর পুরুষরা তার উল্টেটা! ওখানে যখন দুজন পুরুষ বা নারী পাশাপাশি হাত ধরে হাটলেও অনেকে জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে আড়চোখে তাকায়-তখনো কিন্তু আমরা বাঙ্গালীরা উদাসীন। দুজনের বিছানায় ছজন লেপ্টালেপ্টি করে ঘুমাই । বন্ধুকে কদিন পরে দেখলেই আবেগের অতিশয্যে বুকে জড়িয়ে ধরি , আড্ডায় রাত জেগে কেউ ক্লান্ত হয়ে পড়লে পাশে বসা বন্ধুর ঘাড়ের উপর মাথা রেখে বিশ্রাম নেই। এসব দেখে ওরা চোখ বড় বড় করে ভাবে এরা কি গন সমকামী?কেউ একজন মুখ ফুটে বলে ফেললই একদিন ‘ তোমরা কি..? ’ শুনে আমরা হাসতে হাসতে মরি!কোন একদিন ছিল সমগ্র রাশিয়ায় পতিতালয় নেই বলে তারা গর্ব করত । কিন্তু এখন সেই দিন আর নেই । এখন এরা বড় বেশী সহজলভ্য হয়ে গেছে। ১৯৯৬ সাল মাত্র চারপাচ বছর আগে যেখানে রুশরা আমাদের বঙ্গের ( হকার্স মার্কেট)কেনা সস্তা জিনস দেখে ভিমড়ি খেত এখন তারাই ব্যাবহার করছে বিশ্ব বিখ্যাত ফ্যাশন হাউজের পোষাক। যা দেখে আমরা এখন ভিমড়ি খাই!বড় বড় কাচে ঘেরা জাকজমকপূর্ন এসব কোম্পানীর শোরুম দেখে সদ্য গ্রাম কিংবা মফস্বল তেকে আসা মেয়েরা ফ্যাল ফ্যাল করে এখনো চেয়ে থাকে । ভিতরে সাজানো এককটা পোষাক তাদের সপ্নে পাওয়া অর্থের থেকেও মুল্যবান। ভয়ে হাত দিয়ে ধরে দেখতে সাহস হয়না। কিন্তু সেই মেয়েটাই যখন দুদিন পরে তেমন একট পোষাক পরে আপনার নাকের ডগা দিয়ে পুরের সুবাস ছড়িয়ে গ্যাট গ্যাট করে হেটে যাবে তখন নিশ্চই দিনের বেলা খোলা চোখে সপ্ন দেখছেন ভেবে ডাক্তারের কাছে ছুটবেন ।এটা কি সম্ভব ? হ্যা সম্ভব! তবে কিভাবে। ওই পোষাকটা সেই মেয়েটার হয়তোবা একরাতের কামাই। আর ব্যাখ্যার প্রয়োজন নেই আশা করি। কাল রবিবার। ছুটির দিন। শীতের রাত। আটটাতেই রাস্তাঘাট ফাঁকা তবে পাব বার ডিসকো থেক আর ক্যাসিনোতে উপচে পরা লোকের ভীড়। রাত দশটার দিকে আমরা চার বন্ধু মিলে যাচ্ছিলাম অন্য এক বন্ধুর বাসায় সারারাত আড্ডা দেবার অভিপ্রায়। জাকির গাড়ি চালাচ্ছিল। ঐতিহাসিক রেড স্কোয়ারের পাশ দিয়ে একটু এগিয়ে যেতেই পিছনের সিটে আমার সাথে বসা সুদর্শন ও বাগ্মী নিঝুম জাকিরকে একটু গাড়ি স্লো করতে বলল। জাকির ঘাড় ঘুড়িয়ে হেসে বলর ‘কি ব্যাপার নিঝুম তোমার ধান্দা কি।’ তার চাহনী রহস্যজনক। কিন্তু মেলা দিন পরে এই শহরে আসা গেঁয়ো আমি বুঝতে পারলামনা এই কথা ও চাহনীর তাৎপর্য!নিঝুম চোখ মেরে বলল,‘ রাস্তার পাশ ঘেষে চালান। একটু ফাজলামী করি।’ ব্যাপারটা কি আমি উৎসুক চোখে তাকালাম রাস্তার পাশে আধো আলো অন্ধকারে প্রথমে ভাল করে বোঝা যায়নি ভাল করে লক্ষ করতেই বোঝা গেল বিশাল চওড়া কালচে পাথরের ফুটপাথ ঘেষে থাকা প্রতিটা ল্যাস্প পোস্ট গুলোর আড়ালে দাড়িয়ে আছে কোন নারী বা পুরুষ । কাড়িটা ফুটপাথ ঘেয়ে একটু স্লো হতেই ওদের কয়েকজন আড়াল ছেড়ে বেরিয়ে এল । ‘ওই মহিলার কাছে যান।’ একটু দুরে দাড়ানো এক মহিলাকে উদ্দেশ্য করে নিঝুম জাকিরকে বলল ।জাকির নির্দিস্ট স্থানে গাড়ি থামাতেই সেই ভদ্র মহিলা চারিদিকে ভাল করে নজর বুলিয়ে এগিয়ে এল । নিজুম ততক্ষনে পিছনের কাচ নামিয়ে ফেলেছে।মহিলা কাছে এসে মাথাটা ঝুকিয়ে চাপা কন্ঠে বলল ‘, শুভসন্ধ্যা ভদ্রগন। আপনাদের কি প্রয়োজন?’‘কি তোমার কাছে আছে?’ নিঝুমের সিরিযাস কন্ঠ শুনে আমি চমকে গেলাম।মহিলা একটু চুপ থেকে বলল ,’ যা চাও ।যেরকম চাও সবই আছে।’‘কি কেমন আছে একটু ব্যাখ্যা কর?’‘বারো থেকে শুরু করে বাহান্ন সবই আছে । লম্বা খাটো শুটকি মুটকি এমনকি সেরা অভিজাত বংশের রুশ সুন্দরীকেও পাবে।তবে খরচটা একটু বেশী।’নিঝুম মাথা নেড়ে বলল,‘ না চলবে না । আর কি আছে?’মহিলা পিছনের একটা বাসার দিকে ইঙিত দিয়ে বললেন ‘আমার সাথে নেমে গিয়ে ওই বাসাটাতে চল ওখানে সবই আছে তুমি দেখে পছন্দ করে নিও।’‘উহু ,তোমার ওখানে তো সব যুবতী আর নারী নাকি?’‘হ্যা । অবশ্যই ।’ মহিলা দৃঢ় কন্ঠে বলল ।’কিন্তু আমাদের যে দরকার অন্যকিছু ।’‘কি দরকার?’ মহিলার কন্ঠে বিস্ময় ।নিঝুম তাকে ইশারায় আরেকটু কাছে আসতে বলল । সে দুপাশে ঘাড় ঘুড়িয়ে ভাল করে লক্ষ্য করে মাথাটা আরেকটু কাছে নিয়ে এল॥ নিঝুম চাপা কন্ঠে বলল ,‘ আমাদের দরকার দুটো ছেলে। আছে তোমার কাছে ?’কথাটা মাটিতে পরার আগেই ‘ও বজ্বা মোই!(ও মাই গড) বলে চিৎকার করে মহিলা সভয়ে ছিটকে পিছিয়ে গেল অনেখখানি! আমরা ভিতরে বসা সবাই মিলে একসাথে হো হো করে হেসে উঠলাম। জাকির গাড়ি ছেড়ে দিল একটু এগিয়ে যেতেই পিছন ফিরে তাকিয়ে দেখি মহিলাটি হা হয়ে বিস্ফোরিত নেত্রে আমাদের গমন পথের দিকে চেয়ে আছে।সন্দেহ নেই তার এই জীবনে এমন ঘটনার সন্মুখিন হয়নি। তবে একটা ব্যাপার দিনের মত পরিস্কার হয়ে গেল যে এরা সমকামীদের এখনও যেথেস্ট ঘৃনা করে !
সারা পৃথিবীতে যখন সমকামীদের নিয়ে প্রচন্ড আলোড়ন- উন্নত বিশ্বর কোন কোন দেশে যখন সমকামীদের বৈবাহিক বৈধতা দেয়া হচ্ছে- ঠিক সে সময়টাতেও কিন্তু রাশিয়াতে সমকামীদের প্রচন্ড ঘৃনা করা হত! দুজন পুরুষ বা দুজন নারী এমনকি তারা যদি আপন ভাই কিংবা বোনও হয়-এক বিছানায় পাশাপাশি ঘুমোলে তাদেরকেও সন্দেহের চোখে দেখত। আমি দেখেছি দুবোন কিংবা দুভাই যদি একান্ত বাধ্য হত পাশাপাশি শুতে তাহলে একজন মাথা দিত উত্তরে একজন দক্ষিনে! প্রথমে বুঝিনি এমনতর শোয়ার গুঢ় রহস্য। পরে এক রুশভাই আমাকে ব্যাখ্যা করে দিলে আমি বাকহারা হয়েছিলাম বেশ কিছুক্ষন। আরো আশ্চর্যের কথা রুশ রমনীরা পারতপক্ষে মর্দ্দা কুকুর পোষেনা আর পুরুষরা তার উল্টেটা! ওখানে যখন দুজন পুরুষ বা নারী পাশাপাশি হাত ধরে হাটলেও অনেকে জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে আড়চোখে তাকায়-তখনো কিন্তু আমরা বাঙ্গালীরা উদাসীন। দুজনের বিছানায় ছজন লেপ্টালেপ্টি করে ঘুমাই । বন্ধুকে কদিন পরে দেখলেই আবেগের অতিশয্যে বুকে জড়িয়ে ধরি , আড্ডায় রাত জেগে কেউ ক্লান্ত হয়ে পড়লে পাশে বসা বন্ধুর ঘাড়ের উপর মাথা রেখে বিশ্রাম নেই। এসব দেখে ওরা চোখ বড় বড় করে ভাবে এরা কি গন সমকামী?কেউ একজন মুখ ফুটে বলে ফেললই একদিন ‘ তোমরা কি..? ’ শুনে আমরা হাসতে হাসতে মরি!কোন একদিন ছিল সমগ্র রাশিয়ায় পতিতালয় নেই বলে তারা গর্ব করত । কিন্তু এখন সেই দিন আর নেই । এখন এরা বড় বেশী সহজলভ্য হয়ে গেছে। ১৯৯৬ সাল মাত্র চারপাচ বছর আগে যেখানে রুশরা আমাদের বঙ্গের ( হকার্স মার্কেট)কেনা সস্তা জিনস দেখে ভিমড়ি খেত এখন তারাই ব্যাবহার করছে বিশ্ব বিখ্যাত ফ্যাশন হাউজের পোষাক। যা দেখে আমরা এখন ভিমড়ি খাই!বড় বড় কাচে ঘেরা জাকজমকপূর্ন এসব কোম্পানীর শোরুম দেখে সদ্য গ্রাম কিংবা মফস্বল তেকে আসা মেয়েরা ফ্যাল ফ্যাল করে এখনো চেয়ে থাকে । ভিতরে সাজানো এককটা পোষাক তাদের সপ্নে পাওয়া অর্থের থেকেও মুল্যবান। ভয়ে হাত দিয়ে ধরে দেখতে সাহস হয়না। কিন্তু সেই মেয়েটাই যখন দুদিন পরে তেমন একট পোষাক পরে আপনার নাকের ডগা দিয়ে পুরের সুবাস ছড়িয়ে গ্যাট গ্যাট করে হেটে যাবে তখন নিশ্চই দিনের বেলা খোলা চোখে সপ্ন দেখছেন ভেবে ডাক্তারের কাছে ছুটবেন ।এটা কি সম্ভব ? হ্যা সম্ভব! তবে কিভাবে। ওই পোষাকটা সেই মেয়েটার হয়তোবা একরাতের কামাই। আর ব্যাখ্যার প্রয়োজন নেই আশা করি। কাল রবিবার। ছুটির দিন। শীতের রাত। আটটাতেই রাস্তাঘাট ফাঁকা তবে পাব বার ডিসকো থেক আর ক্যাসিনোতে উপচে পরা লোকের ভীড়। রাত দশটার দিকে আমরা চার বন্ধু মিলে যাচ্ছিলাম অন্য এক বন্ধুর বাসায় সারারাত আড্ডা দেবার অভিপ্রায়। জাকির গাড়ি চালাচ্ছিল। ঐতিহাসিক রেড স্কোয়ারের পাশ দিয়ে একটু এগিয়ে যেতেই পিছনের সিটে আমার সাথে বসা সুদর্শন ও বাগ্মী নিঝুম জাকিরকে একটু গাড়ি স্লো করতে বলল। জাকির ঘাড় ঘুড়িয়ে হেসে বলর ‘কি ব্যাপার নিঝুম তোমার ধান্দা কি।’ তার চাহনী রহস্যজনক। কিন্তু মেলা দিন পরে এই শহরে আসা গেঁয়ো আমি বুঝতে পারলামনা এই কথা ও চাহনীর তাৎপর্য!নিঝুম চোখ মেরে বলল,‘ রাস্তার পাশ ঘেষে চালান। একটু ফাজলামী করি।’ ব্যাপারটা কি আমি উৎসুক চোখে তাকালাম রাস্তার পাশে আধো আলো অন্ধকারে প্রথমে ভাল করে বোঝা যায়নি ভাল করে লক্ষ করতেই বোঝা গেল বিশাল চওড়া কালচে পাথরের ফুটপাথ ঘেষে থাকা প্রতিটা ল্যাস্প পোস্ট গুলোর আড়ালে দাড়িয়ে আছে কোন নারী বা পুরুষ । কাড়িটা ফুটপাথ ঘেয়ে একটু স্লো হতেই ওদের কয়েকজন আড়াল ছেড়ে বেরিয়ে এল । ‘ওই মহিলার কাছে যান।’ একটু দুরে দাড়ানো এক মহিলাকে উদ্দেশ্য করে নিঝুম জাকিরকে বলল ।জাকির নির্দিস্ট স্থানে গাড়ি থামাতেই সেই ভদ্র মহিলা চারিদিকে ভাল করে নজর বুলিয়ে এগিয়ে এল । নিজুম ততক্ষনে পিছনের কাচ নামিয়ে ফেলেছে।মহিলা কাছে এসে মাথাটা ঝুকিয়ে চাপা কন্ঠে বলল ‘, শুভসন্ধ্যা ভদ্রগন। আপনাদের কি প্রয়োজন?’‘কি তোমার কাছে আছে?’ নিঝুমের সিরিযাস কন্ঠ শুনে আমি চমকে গেলাম।মহিলা একটু চুপ থেকে বলল ,’ যা চাও ।যেরকম চাও সবই আছে।’‘কি কেমন আছে একটু ব্যাখ্যা কর?’‘বারো থেকে শুরু করে বাহান্ন সবই আছে । লম্বা খাটো শুটকি মুটকি এমনকি সেরা অভিজাত বংশের রুশ সুন্দরীকেও পাবে।তবে খরচটা একটু বেশী।’নিঝুম মাথা নেড়ে বলল,‘ না চলবে না । আর কি আছে?’মহিলা পিছনের একটা বাসার দিকে ইঙিত দিয়ে বললেন ‘আমার সাথে নেমে গিয়ে ওই বাসাটাতে চল ওখানে সবই আছে তুমি দেখে পছন্দ করে নিও।’‘উহু ,তোমার ওখানে তো সব যুবতী আর নারী নাকি?’‘হ্যা । অবশ্যই ।’ মহিলা দৃঢ় কন্ঠে বলল ।’কিন্তু আমাদের যে দরকার অন্যকিছু ।’‘কি দরকার?’ মহিলার কন্ঠে বিস্ময় ।নিঝুম তাকে ইশারায় আরেকটু কাছে আসতে বলল । সে দুপাশে ঘাড় ঘুড়িয়ে ভাল করে লক্ষ্য করে মাথাটা আরেকটু কাছে নিয়ে এল॥ নিঝুম চাপা কন্ঠে বলল ,‘ আমাদের দরকার দুটো ছেলে। আছে তোমার কাছে ?’কথাটা মাটিতে পরার আগেই ‘ও বজ্বা মোই!(ও মাই গড) বলে চিৎকার করে মহিলা সভয়ে ছিটকে পিছিয়ে গেল অনেখখানি! আমরা ভিতরে বসা সবাই মিলে একসাথে হো হো করে হেসে উঠলাম। জাকির গাড়ি ছেড়ে দিল একটু এগিয়ে যেতেই পিছন ফিরে তাকিয়ে দেখি মহিলাটি হা হয়ে বিস্ফোরিত নেত্রে আমাদের গমন পথের দিকে চেয়ে আছে।সন্দেহ নেই তার এই জীবনে এমন ঘটনার সন্মুখিন হয়নি। তবে একটা ব্যাপার দিনের মত পরিস্কার হয়ে গেল যে এরা সমকামীদের এখনও যেথেস্ট ঘৃনা করে !
একটি রোমাঞ্চকর(!) গল্প- ১৮+
০৫ ই ফেব্রুয়ারি, ২০০৯ রাত ৯:১৮
রুশরা এমনিতেই শারিরিক ব্যাপারে একটু (একটু নয় অনেক খানিকটা)উদার (কাজাক¯থান, আজারবাইজান, উজবেকস্থান সহ কিছু প্রদেশ বাদে)। যুদ্ধ-বিগ্রহ বিদ্রোহ কিংবা অন্যান্য বিবিধ কারনে পুরুষের সংখ্যা আনুপাতিক হারে কমে গেছে।আর কিছু অংশ সহজলভ্য বিখ্যাত রুশ ভদকার অপার মহিমায় শৈর্য বির্যহীন হয়ে প্রায় ক্লিবের পর্যায়ে চলে গেছে। মেয়েদের উপর জুলুম অত্যাচার করবে যে পুরুষ তাদেরকেই যেন হারিকেন দিয়ে খুজতে হয়। সেখানে অবস্থাটা সহজেই অনুমেয় ।গ্রীস্মে ওদেশে দেখেছি বাজারের সবচেয়ে মুল্যবান আধুনিক ফ্যাশনের (চারিদিক দিয়ে উদার হস্তে ছেটে কেটে যথাস্মভব ছোট করা হয়েছে) পোষাক পরে যথাসম্ভব সাজগোজ করে দুর্দান্ত কোন রুপসী সুবাস ছড়িয়ে হেলেদুলে রাস্তা দিয়ে হেটে যাচ্ছে আর পুরুষরা যেন সব সাধু যোগী সেদিকে একবার তাকালেই যেন তার ধ্যান ভেঙ্গে যাবে। ভুল বললাম তাদের উদাসীন চোখের এ সৌন্দর্য উপভোগ করার মত ক্ষমতা ছিলনা।আমরা কোন সুবেশী সূদর্শন পুরুষকেও রাস্তা দিয়ে হাটলে দু’একবার ঠারে ঠুরে দেখি। আর এমন অস্পরীর মত রুপসী! হায় আল্লাহ! বাঙ্গালী ললনাদের যেন এদিন কোনদিন না আসে। তখন সমস্ত রাশিয়ায় ‘ধর্ষনের’ ঘটনা প্রায় ঘটতনা বললেই চলে। এটার পিছনে অবশ্য নারিদের আধিক্য পুরুষদের নিস্পৃহতাই মুল কারন নয় আরেকটা ব্যাপার হচ্ছে কম্যুনিজমের কড়া শাসন (সেটা অবশ্য সাধারনদের জন্য ‘যারা সমাজের উচুপদে আসীন তাদের ব্যাপার আলাদা। তাদের আরেকটা সুবিধা হোল তারা না চাইতেই অনেক বেশী পেয়ে যায় - অতএব ...প্রয়োজন পরেনা!)রুশরা নিজেদেরকেই ব্যাঙ্গ করে বলে,’ আছে কি তেমন নারী যে তার স্বামী যুদ্ধে গেলে পর পুরুষের সাথে ঘুমায়নি?!’এক রুশ সুন্দরী তার জীবনের সবচেয়ে রোমাঞ্চকর ঘটনার বর্ননা করেছিল এইভাবে;এক গ্রীস্মের ছুটিতে মস্কো থেকে কয়েকশ কিলোমিটার দুরে মফস্বলে খালার বাসায় বেড়াতে গেল। ছোট্ট ছিমছাম মফস্বল শহর। কিন্তু বেশীদিন থাকলে একঘেয়ে ও বিরক্তি লাগা স্বাভাবিক। সে গেলে আশেপাশের ছেলে মেয়েরা যেন একটু নতুনত্বের সন্ধান পেত।একেতো সুন্দরী তারপরে শহুরের মেয়ে সেজন্য সবাই তাকে একটু অন্যভাবে মুল্যায়ন করত। তার বয়েসীরা গভীর মনোযোগে লক্ষ্য করত তার হাটাচলা, পোষাক আশাক, কথাবার্তা ।দুচারটে বখাটে ছেলে(বয়সে তার থেকে একটু বড়) বাড়ির আশপাশ দিয়ে ঘুর ঘুর করত তার তীর্যক চাহনী আর বক্র হাসির লোভে। কেমনে যেন তাদের সাথে ভাব হয়ে গেল একদিন। বন্ধুত্বের সুত্র ধরে একদিন তাকে জোর করে(তার ভাষ্যমত-আমার বিশ্বাস হয়না)একটা পোড়োবাড়িতে নিয়ে গেল। সেখানে গিয়ে ওদের খায়েস হোল মেয়েটাকে ধর্ষন করবে। কিন্তু সমস্যা হোল এসব ব্যাপারে তাদের কোন পূর্ব অভিজ্ঞতা নেই! তাছাড়া শহুরে স্মার্ট মেয়ে পুলিশের কাছে গিয়ে বলে দিলে বিপদ! আবার নাবালিকা হওয়ার একটা সম্ভবনা থেকে যায়। সে-তো আর আমাদের দেশের মত তো নয় যে স’মবয়সী দুজন পালিয়ে গিয়ে কোর্ট ম্যারেজ করল। পরবর্তীতে বাদী পক্ষের (মেয়েপক্ষ) উকিল দলিলপত্র ঘেটে প্রমান করল মেয়ের বয়স চৌদ্দ আর ছেলের বত্রিশ।ক’বোতল ভদকা পেটে চালান করে দীর্ঘক্ষন গভীর আলোচনা শেষে তন্মধ্যে ষন্ডা টাইপের একজন ক্রুর ভীষন চক্ষে(!) সবিনয়ে নিবেদন করল , ‘ম্যাডাম আপনার সদয় অনুমতি নিয়ে আমরা কি আপনাকে ধর্ষন করতে পারি?’ সঙে সঙ্গে সে আঁতকে উঠে ছিটকে দাড়াল,’আ বলে কি? অসম্ভব!ছেড়ে দাও এক্ষুনি আমি পুলিশের কাছে যাব।’তার হম্বিতম্বিতে শেষমেষ ওই নব্যধর্ষনকারী(সবে আগ্রহী)রা চোখের জলে নাকের জলে পালানোর পথ দেখে না।এটুকু বলেই গর্বিত ভঙ্গীতে আমার দিকে তাকিয়ে হেসে ফেলল। আমি জিজ্ঞেস করলাম ,’তারপর।’প্রতিউত্তরে সে মুখমন্ডলে রক্তের গোলাপী আভাছড়িয়ে লাজুক হাসি হেসে মুখ নিচু করে বলল,’তারপর আর কি?ছেলেদের এমন বিপর্যস্ত অবস্থা দেখে মায়া হোল ! আর কাতর নয়নের আকুতি আমি উপেক্ষা করতে পারলাম না! শেষমেষ...(লেখাটা আমি প্রথমে প্রকাশ করতে চাইনি। মনে হচ্ছিল ধর্ষন-এর মত একটা ন্যক্কার জনক ব্যাপার তা সে যেমনই হোক, রসিয়ে উপস্থাপন করার কোন উপকরন হতে পারেনা। ঘটনাটা সত্যি-কাহিনীটা মজার ছিল, তাই একটু শেয়ার করতে চাইলাম।
রুশরা এমনিতেই শারিরিক ব্যাপারে একটু (একটু নয় অনেক খানিকটা)উদার (কাজাক¯থান, আজারবাইজান, উজবেকস্থান সহ কিছু প্রদেশ বাদে)। যুদ্ধ-বিগ্রহ বিদ্রোহ কিংবা অন্যান্য বিবিধ কারনে পুরুষের সংখ্যা আনুপাতিক হারে কমে গেছে।আর কিছু অংশ সহজলভ্য বিখ্যাত রুশ ভদকার অপার মহিমায় শৈর্য বির্যহীন হয়ে প্রায় ক্লিবের পর্যায়ে চলে গেছে। মেয়েদের উপর জুলুম অত্যাচার করবে যে পুরুষ তাদেরকেই যেন হারিকেন দিয়ে খুজতে হয়। সেখানে অবস্থাটা সহজেই অনুমেয় ।গ্রীস্মে ওদেশে দেখেছি বাজারের সবচেয়ে মুল্যবান আধুনিক ফ্যাশনের (চারিদিক দিয়ে উদার হস্তে ছেটে কেটে যথাস্মভব ছোট করা হয়েছে) পোষাক পরে যথাসম্ভব সাজগোজ করে দুর্দান্ত কোন রুপসী সুবাস ছড়িয়ে হেলেদুলে রাস্তা দিয়ে হেটে যাচ্ছে আর পুরুষরা যেন সব সাধু যোগী সেদিকে একবার তাকালেই যেন তার ধ্যান ভেঙ্গে যাবে। ভুল বললাম তাদের উদাসীন চোখের এ সৌন্দর্য উপভোগ করার মত ক্ষমতা ছিলনা।আমরা কোন সুবেশী সূদর্শন পুরুষকেও রাস্তা দিয়ে হাটলে দু’একবার ঠারে ঠুরে দেখি। আর এমন অস্পরীর মত রুপসী! হায় আল্লাহ! বাঙ্গালী ললনাদের যেন এদিন কোনদিন না আসে। তখন সমস্ত রাশিয়ায় ‘ধর্ষনের’ ঘটনা প্রায় ঘটতনা বললেই চলে। এটার পিছনে অবশ্য নারিদের আধিক্য পুরুষদের নিস্পৃহতাই মুল কারন নয় আরেকটা ব্যাপার হচ্ছে কম্যুনিজমের কড়া শাসন (সেটা অবশ্য সাধারনদের জন্য ‘যারা সমাজের উচুপদে আসীন তাদের ব্যাপার আলাদা। তাদের আরেকটা সুবিধা হোল তারা না চাইতেই অনেক বেশী পেয়ে যায় - অতএব ...প্রয়োজন পরেনা!)রুশরা নিজেদেরকেই ব্যাঙ্গ করে বলে,’ আছে কি তেমন নারী যে তার স্বামী যুদ্ধে গেলে পর পুরুষের সাথে ঘুমায়নি?!’এক রুশ সুন্দরী তার জীবনের সবচেয়ে রোমাঞ্চকর ঘটনার বর্ননা করেছিল এইভাবে;এক গ্রীস্মের ছুটিতে মস্কো থেকে কয়েকশ কিলোমিটার দুরে মফস্বলে খালার বাসায় বেড়াতে গেল। ছোট্ট ছিমছাম মফস্বল শহর। কিন্তু বেশীদিন থাকলে একঘেয়ে ও বিরক্তি লাগা স্বাভাবিক। সে গেলে আশেপাশের ছেলে মেয়েরা যেন একটু নতুনত্বের সন্ধান পেত।একেতো সুন্দরী তারপরে শহুরের মেয়ে সেজন্য সবাই তাকে একটু অন্যভাবে মুল্যায়ন করত। তার বয়েসীরা গভীর মনোযোগে লক্ষ্য করত তার হাটাচলা, পোষাক আশাক, কথাবার্তা ।দুচারটে বখাটে ছেলে(বয়সে তার থেকে একটু বড়) বাড়ির আশপাশ দিয়ে ঘুর ঘুর করত তার তীর্যক চাহনী আর বক্র হাসির লোভে। কেমনে যেন তাদের সাথে ভাব হয়ে গেল একদিন। বন্ধুত্বের সুত্র ধরে একদিন তাকে জোর করে(তার ভাষ্যমত-আমার বিশ্বাস হয়না)একটা পোড়োবাড়িতে নিয়ে গেল। সেখানে গিয়ে ওদের খায়েস হোল মেয়েটাকে ধর্ষন করবে। কিন্তু সমস্যা হোল এসব ব্যাপারে তাদের কোন পূর্ব অভিজ্ঞতা নেই! তাছাড়া শহুরে স্মার্ট মেয়ে পুলিশের কাছে গিয়ে বলে দিলে বিপদ! আবার নাবালিকা হওয়ার একটা সম্ভবনা থেকে যায়। সে-তো আর আমাদের দেশের মত তো নয় যে স’মবয়সী দুজন পালিয়ে গিয়ে কোর্ট ম্যারেজ করল। পরবর্তীতে বাদী পক্ষের (মেয়েপক্ষ) উকিল দলিলপত্র ঘেটে প্রমান করল মেয়ের বয়স চৌদ্দ আর ছেলের বত্রিশ।ক’বোতল ভদকা পেটে চালান করে দীর্ঘক্ষন গভীর আলোচনা শেষে তন্মধ্যে ষন্ডা টাইপের একজন ক্রুর ভীষন চক্ষে(!) সবিনয়ে নিবেদন করল , ‘ম্যাডাম আপনার সদয় অনুমতি নিয়ে আমরা কি আপনাকে ধর্ষন করতে পারি?’ সঙে সঙ্গে সে আঁতকে উঠে ছিটকে দাড়াল,’আ বলে কি? অসম্ভব!ছেড়ে দাও এক্ষুনি আমি পুলিশের কাছে যাব।’তার হম্বিতম্বিতে শেষমেষ ওই নব্যধর্ষনকারী(সবে আগ্রহী)রা চোখের জলে নাকের জলে পালানোর পথ দেখে না।এটুকু বলেই গর্বিত ভঙ্গীতে আমার দিকে তাকিয়ে হেসে ফেলল। আমি জিজ্ঞেস করলাম ,’তারপর।’প্রতিউত্তরে সে মুখমন্ডলে রক্তের গোলাপী আভাছড়িয়ে লাজুক হাসি হেসে মুখ নিচু করে বলল,’তারপর আর কি?ছেলেদের এমন বিপর্যস্ত অবস্থা দেখে মায়া হোল ! আর কাতর নয়নের আকুতি আমি উপেক্ষা করতে পারলাম না! শেষমেষ...(লেখাটা আমি প্রথমে প্রকাশ করতে চাইনি। মনে হচ্ছিল ধর্ষন-এর মত একটা ন্যক্কার জনক ব্যাপার তা সে যেমনই হোক, রসিয়ে উপস্থাপন করার কোন উপকরন হতে পারেনা। ঘটনাটা সত্যি-কাহিনীটা মজার ছিল, তাই একটু শেয়ার করতে চাইলাম।
রৌদ্রস্নান-১৮+
২৯ শে জানুয়ারি, ২০০৯ রাত ৮:২৩
মে’র শেষ দিকে শীত শেষ হতেনা হতেই চারিদিকে গ্রীস্মের ছুটির আমেজ।রুশীয়রা তাদের পরিবার পরিজন পোষা প্রানী আর লোটা কম্বল নিয়ে ছুটে যাচ্ছে গ্রাম সুমুদ্রতীরে বা পরবাসে।উদ্দেশ্য ছুটির পুরো সময়টা প্রকৃতির মাঝে নিজের মত করে উপভোগ করা।চারিদেকে লেগেছে উৎসবের রঙ। শুধু হোস্টেলে বসে স্মৃতির জাবর কেটে কার্ড খেলে অখন্ড অবসরে বিশ্রী একঘেয়ে নিরস দিনগুলো কোনরকমে অতিবাহিত করছি আমরা গুটিকতক প্রবাসী ছাত্র।হোস্টেলও পুরোটা খালি হয়ে গেছে-শুধুমাত্র যাদের কোন যাবার জায়গা নেই তারাই কোনমতে মুখ গুজে পড়ে আছে এই লোহা আর কংক্রিটের খাচার মধ্যে।এমন এক একঘেয়ে দুপুরে আমার রুমমেটের মঙ্গোলিয়ান বান্ধবী অনুরোধ করল নদীর ধারে রৌদ্রস্নানে যাবার জন্য। শুনেই আমি মুখ বিকৃত করলাম।এমনিতেই গায়ের যে রঙ তারপরে রৌদ্রস্নান করেলে দিনের আলোতেও কেউ খুজে পাবেনা।তারপরে সী বিচ হলেও কথা ছিল-ছ্যাঃ!নদীর পারে যাব সুর্যস্নান করতে?অন্য সবাই শুনেই পাগলের প্রলাপ বল পিঠটান দিল। ধরা খেলাম আমি। রুমমেটের অনুরোধ উপেক্ষা করলেও তার তামাটে বর্ণের রুপসী মঙ্গোলিয়ান বান্ধবীকে আর উপেক্ষা করতে পারলামনা -অনেক অনুরোধ উপরোধের পরে রাজী হলাম।ট্রাউজারের নীচে শর্টস আছে একখানা। উর্ধাঙ্গে টি শার্ট।রোদ্রে দগ্ধ না হলেও দু-য়েকটা ডুব দিয়ে নিতে ক্ষতি কি সেই ভেবে তোয়ালেটা নিয়ে নিলাম।মঙ্গোলীয়ান সেই মেয়ের লট বহর দেখে আমার চোখ চান্দিতে! আমি সেসব দেখেও না দেখার ভান করলাম। যাচ্ছি যে তাই ঢেড়-বোঝা টানতে রাজি নই। বিরস বদনে কিছুদুর ট্রামে ঠেঙ্গিয়ে বহুপথ হেটে নদীর তীরে পৌছুতেই আমার ভিমড়ি খাওয়ার দশা। এযে রুপকথার রাজ্যে এসে পড়লাম।ছোট্ট শীর্ন নদীর দুই তীরের সে দৃশ্য বর্ননা করার সাধ্যি আমার নেই। তবুও চেষ্টা করতে ক্ষতি তো নেই।সারা শহরের তাবৎ সুন্দরী ললনারা যে একানে এসে ভীড় করেছে। বরফে মোড়া সেই নদী এখন যেমন তার রুপ সৌন্দর্য বেহায়ার মত উন্মুক্ত করে দিয়ে মিষ্টি হেসে কুল কুল গুঞ্জন তুলে ধাবমান দুর সুমুদ্রে নিজেকে সমর্পন করার বাসনায়। ঠিক তেমনি এতদিন চামড়া ফার আর ভারি মোটা আচ্ছাদনের খোলস ছেড়ে বেরিয়ে এসে অতিক্ষুদ্র চোখ ধাধানো বহুরঙ্গা অর্ন্তবাস(যা আসলে সুইমিং কাস্ট্যুম নামে পরিচিত)পড়ে কেউ তার পশ্চাৎদেশ কেউ বক্ষদেশ উর্দ্ধমুখী করে অসীম নীল আকাশকে আহ্বান করছে তাদের তাদের সৌন্দর্য প্রানভরে অবলোকন করার জন্য। কেউ কেউ এত ক্ষুদ্রকায় বস্ত্রখন্ড পরিধান করিয়া নিজেকে সর্বসম্মুখে মেলিয়া ধরিয়াছে যে যাহা দেখিয়া আমার মত ভেতো নির্লজ্জ বাঙ্গালীরও চক্ষু অবনমিত করিতে বাধ্য হইল।কি করব ভাই টিভি সিনেমাতে দেখেছি মাঝে মধ্যে কিন্তু চর্ম চক্ষুতে তো এই প্রথমবার দেখা-তাছাড়া বয়েসও ছিল তখন নেহায়েত কম তাই একটু লজ্জা পেয়েছিলামআমার সেই বন্ধুর বান্ধবী আমাদের দুজনকে হাত ধরে হিড় হিড় করে টেনে নিয়ে চলল সেই ললনাদের পাশ ঘেষে এক্রোবেটিক স্টাইলে।কিছুদুর এগুতেই খালি একটা জায়গা পেয়েই ব্যাগ থেকে প্রমান সাইজের তোয়ালে বের করে বিছিয়ে দিল।পরক্ষনেই কোন কথা নেই বার্তা নেই ধুম করে উদোম করে ফেলল নিজেকে(আমি ভেবেছিলাম পোষাকটা সে এইখানেই পাল্টাবে কিন্তু আগেই বলেছি নাদান বুদ্ধু ছিলাম আমি তখন জানব কি করে ঘর থেকই এরা সুইমিং কাস্ট্যুম খানা ভিতরে পড়ে আসে)।আমি আড় চোখে এক লহমায় দেখে নিয়েছি চেঙ্গিস খান আর হালাকু খান এর বংশধর এই বাদামী রঙ্গের মেয়েটা চাবুকের মত দেহবল্লভী।রোদের আলো যেন পিছলে গেল তার মসৃন ত্বকে স্কিড করে।পরক্ষনেই তাকালাম আমার রুমমেটের দিকে- দেখি সে চোখে করুন আর্তনাদ! যৎ দেশ তদাচার অথবা তুমি যখন রোমে যাবে তখন চেস্টা করবে খাটি রোমান হতে।এইসব বাণীতো বহুবার শুনেছি কিন্তু আমার এই আধা কালা নধর কান্তি শরিরখানা ওদের সামনে উদোম করি কোন সাহসে।রুশ মেয়রা গড় পড়তা সবাই সুন্দরী-আর এদের ফিগার আঃ! এক নজরে ভীমরতি খেতে হয়। সবাই স্কেটিং আর ব্যালে নেচে পনের যেতে না যেতেই শরির করে,ছুরির ফলার মত সেকি তীক্ষ্ন ধার!অবশ্য ৩০ পেরুতে না পেরুতেই অধিকাংশ বুড়িয়ে কিংবা মুটিয়ে যায়।মেয়েদের কথা ছেড়েই দিলাম সংখ্যায় নগন্য হলেও পুরুষদের সংখ্যাও কম নয় এখানে। আঠারো বছর বয়সেই ওদের বাধ্যতামুলক আর্মি ট্রেনিং নিতে হয়। দু-বছর ট্রেনিং শেষে খালি গায়ে দাড়ালে মনে হবে প্রস্তর মুর্তি। এদের সামনে নিজের অসহায় লাগছে!এতগুলো শ্বেতশুভ্র ধবল বকের মাঝে আমরা দুই কানি বক অনেকেই আড় চোখে ঘুরে ফিরে আমাদেরকে দেখছে।নিজেকে আজব জন্তু মনে হচ্ছিল- ওরা গেয়ো ভাবতে পারে সেই ভেবে অবশেষে শুধু ট্রাউজারখানি খুলে ঠ্যাং দুখানি বের করেও শান্তি পেলামনা। শর্টস খানা এমনিতেই হাটু ছাড়িয়ে গেছে তার পরেও আরো নীচের দিকে টানছি।ভাগ্য ভাল যে রোদের তেজ তেমন ছিলনা-আকাশে আবার মেঘের আনাগোনা।লাজ শরম তখন ভেঙ্গেছে কিছুটা,.উপুড় হয়ে শুয়ে আড়চোখে ইতি উতি তাকাচ্ছি।বে আব্রু সৌন্দর্যে চোখ ধাঁধিয়ে যায়। বেশীক্ষন চাইতে পারিনা চোখ সরিয়ে নেই সম্মুখের বিবর্ন ঘাসের দিকে।এইতো ক’দিন আগে দেশে থাকত, কোন তরুনীর আধা ফর্সা পায়ের গোছা,উন্মুক্ত গ্রীবা কিংবা নগ্ন সুগোল বাহু দেখে যেই আমি আদিম রসের আস্বাদ নিতাম সেই আমি যে এমন রুপবতীদের অর্ধনগ্ন শরিরের তীক্ষ চাবুকের আঘাতে ধরাশায়ী হব তাতে আশ্চর্য হবার কি আছে!কিছু বাদে পরিবেশ যখন কিছুটা সহনীয় হয়ে এল-যুবকের চোখে তখন দুঃসাহসিক এডভেঞ্চারের সপ্ন। নদীটা চওড়া হবে সাকুল্যে শ’খানেক হাত।তেমন স্রোত নেই ঢেউতো নেই-ই।অতি শান্ত নদী। কিন্তু আশ্চর্য কাউকে দেখলাম না সেখানে ঝাঁপ দিয়ে দু চার ল্যাপ সাতরাতে।পদ্মার পাড়ের ছেলে আমি। ভাল করে হাটার আগে সাঁতার শিখেছি।ভাবলাম যাই ওদের একটু দেখিয়ে দেই-নদীতে কি করে সাঁতার কাটতে হয়। সবে মাত্র সামার এসেছে রোদের তেজ তেমন নেই তখন। উল্টো আকাশে মেঘের আনাগোনা-বাতাসে একটু শীতল অনুভুতি। তবুও ভাবতে ভাবতে নেমে পড়লাম পানিতে। ওরে বাব্বা! কি ঠান্ডরে বাবা! মনে হচ্ছে বরফ গলা জল। নেমে যখন পড়েছি ফেরার আর পথ নাই। হাটু পানিতে নামতেই টের পেলাম শরিরে সুক্ষ কাঁপনের ঢেউ। যা থাকে কপালে! দিলাম ঝাঁপ। কিন্তু একটু এগুতেই দেখি একি! আমার সমান্তরালে একজোড়া সুদৃঢ় সুগোল ফর্সা হাতের সঞ্চালন। ভাল করে নজর বুলিয়ে দেখি অতি রুপবতী এক রমণী। আমাকে দেখে তারও সাতারের খায়েস হয়েছে। ওকে দেখে আরো উৎসাহিত হলাম সাথে আতংকিতও। এমেয়েতো আমার পুকুর কিংবা ডোবাতে টুপ টুপ ডুপ ঢুপ করে পদ সঞ্চালন দ্বারা সাতরে বেড়ানো আমাদের অধিকাংশ বঙ্গ ললনার মত না। এ দেখি আমারই মত দীর্ঘ দু বাহু প্রসারিত করে প্রফেশনাল সাতারুর মত জল কেটে এগিয়ে যাচ্ছে। খেয়েছে রে! মেয়েদের কাছে সাতারে হার। আমার পদ্মার ইজ্জত যাবে যে! এতক্ষন ধীরালয়ে সাতরালেও এবার চোখ কান বুজে দিলাম জোর সাতার।ফিরতি পথে নিদারুন কষ্ট হলেও পদ্মার মান রেখেছিলাম। এপাড়ে দুয়েকজন হাত তালিও দিল।পাড় বেয়ে উঠে এগিয়ে গেলাম বেশ বড় একখান ছাতার নীচে গোলাকার বেঞ্চটা লক্ষ্য করে।একটু শীত শীত করছিল তখনো।শরিরে তির-তির করে মৃদু কাঁপন।বেঞ্চিতে বসতেই আচমকা ধেয়ে এল বৃষ্টি।আশে পাশে যারা ছিল সবাই তাদের বিছিয়ে রাখা তোয়ালে খানা কোনমতে নিম্নাংগেজড়িয়ে ধেয়ে এল আমার পানে মানে,আমি যেখানটায় আছি সেই ছাতার নীচে।কয়েকজন সিট পেয়েছে বাকি সবাই দাড়িয়ে। আমার চারপাশে গা ঘেষাঘেষি করে দাড়িয়ে আছে বেশ ক’জন রুশ ললনা। নাকের কাছে সৌন্দর্যের ঘ্রান।দ্বীধাহীন ভাবে বলতে হয় সেই আমার বয়সে তখন সেরকম শুধু কল্পনাতেই মানায় –বাস্তবে এমন হওয়া সম্ভব বলে মনে করিনি কখনো। কত সুখ কল্পনায় বেসে যাচ্চিলাম তখন।বিধাতা বড় নিঃরস! ভেজা গা তখনো শুকোয়নি। প্রথমে একটু একটু করে মিনিট খানেক যেতে না যেতেই শুরু হল কাঁপুনি। সেকি কাপুনি আর খিচুনি!চারিদিকে অন্ধকার দেখছি তখন-মনে হচ্ছে কেউ আমাকে বরফের গর্তে ঠেসে ধরেছে।আমার কাপুনি দেখে প্রথমে শুরু হল মৃদু গুঞ্জন পরক্ষনেই হট্ট্রগোল।শুনতে পেলাম বহু রমনী কন্ঠে -ও বজ্বা মোই!ও বজ্বা মোই!স্তো উসতাবোই?ও ঈশ্বর!ও ঈশ্বর আমার! কি হয়েছে তোমার?আমার দুবস্থা ঠাহর করতে পেরে তিন চারটে মেয়ে এক সাথে তাদের কটি থেকে একটানে তোয়ালে খুলে চেপে ধরল আমাকে। আর দু তিনজন আমার হাত পা ম্যাসেজ করতে শুরু করে দিল।মিনিট দশেক লাগল ধাতস্ত হতে। বিব্রত লাজুক চোখ মেলে চাইলাম আমি। সম্মুখ থেকে উধাও যৌন আবেদনময়ী অর্ধ উলংঙ্গ অতি সুন্দরীদের ক্ষীন কটিদেশ শ্বেতশুভ্র সুঠাম উরু।আমার সামনে যেন মমতাময়ীর স্নিগ্ধ দৃষ্টি নিয়ে দাড়িয়ে আছে অতিআপন কিছু প্রিয় মুখ।ছবি: সেই Tsna নদী তাম্বুভ,রাশিয়া।
মে’র শেষ দিকে শীত শেষ হতেনা হতেই চারিদিকে গ্রীস্মের ছুটির আমেজ।রুশীয়রা তাদের পরিবার পরিজন পোষা প্রানী আর লোটা কম্বল নিয়ে ছুটে যাচ্ছে গ্রাম সুমুদ্রতীরে বা পরবাসে।উদ্দেশ্য ছুটির পুরো সময়টা প্রকৃতির মাঝে নিজের মত করে উপভোগ করা।চারিদেকে লেগেছে উৎসবের রঙ। শুধু হোস্টেলে বসে স্মৃতির জাবর কেটে কার্ড খেলে অখন্ড অবসরে বিশ্রী একঘেয়ে নিরস দিনগুলো কোনরকমে অতিবাহিত করছি আমরা গুটিকতক প্রবাসী ছাত্র।হোস্টেলও পুরোটা খালি হয়ে গেছে-শুধুমাত্র যাদের কোন যাবার জায়গা নেই তারাই কোনমতে মুখ গুজে পড়ে আছে এই লোহা আর কংক্রিটের খাচার মধ্যে।এমন এক একঘেয়ে দুপুরে আমার রুমমেটের মঙ্গোলিয়ান বান্ধবী অনুরোধ করল নদীর ধারে রৌদ্রস্নানে যাবার জন্য। শুনেই আমি মুখ বিকৃত করলাম।এমনিতেই গায়ের যে রঙ তারপরে রৌদ্রস্নান করেলে দিনের আলোতেও কেউ খুজে পাবেনা।তারপরে সী বিচ হলেও কথা ছিল-ছ্যাঃ!নদীর পারে যাব সুর্যস্নান করতে?অন্য সবাই শুনেই পাগলের প্রলাপ বল পিঠটান দিল। ধরা খেলাম আমি। রুমমেটের অনুরোধ উপেক্ষা করলেও তার তামাটে বর্ণের রুপসী মঙ্গোলিয়ান বান্ধবীকে আর উপেক্ষা করতে পারলামনা -অনেক অনুরোধ উপরোধের পরে রাজী হলাম।ট্রাউজারের নীচে শর্টস আছে একখানা। উর্ধাঙ্গে টি শার্ট।রোদ্রে দগ্ধ না হলেও দু-য়েকটা ডুব দিয়ে নিতে ক্ষতি কি সেই ভেবে তোয়ালেটা নিয়ে নিলাম।মঙ্গোলীয়ান সেই মেয়ের লট বহর দেখে আমার চোখ চান্দিতে! আমি সেসব দেখেও না দেখার ভান করলাম। যাচ্ছি যে তাই ঢেড়-বোঝা টানতে রাজি নই। বিরস বদনে কিছুদুর ট্রামে ঠেঙ্গিয়ে বহুপথ হেটে নদীর তীরে পৌছুতেই আমার ভিমড়ি খাওয়ার দশা। এযে রুপকথার রাজ্যে এসে পড়লাম।ছোট্ট শীর্ন নদীর দুই তীরের সে দৃশ্য বর্ননা করার সাধ্যি আমার নেই। তবুও চেষ্টা করতে ক্ষতি তো নেই।সারা শহরের তাবৎ সুন্দরী ললনারা যে একানে এসে ভীড় করেছে। বরফে মোড়া সেই নদী এখন যেমন তার রুপ সৌন্দর্য বেহায়ার মত উন্মুক্ত করে দিয়ে মিষ্টি হেসে কুল কুল গুঞ্জন তুলে ধাবমান দুর সুমুদ্রে নিজেকে সমর্পন করার বাসনায়। ঠিক তেমনি এতদিন চামড়া ফার আর ভারি মোটা আচ্ছাদনের খোলস ছেড়ে বেরিয়ে এসে অতিক্ষুদ্র চোখ ধাধানো বহুরঙ্গা অর্ন্তবাস(যা আসলে সুইমিং কাস্ট্যুম নামে পরিচিত)পড়ে কেউ তার পশ্চাৎদেশ কেউ বক্ষদেশ উর্দ্ধমুখী করে অসীম নীল আকাশকে আহ্বান করছে তাদের তাদের সৌন্দর্য প্রানভরে অবলোকন করার জন্য। কেউ কেউ এত ক্ষুদ্রকায় বস্ত্রখন্ড পরিধান করিয়া নিজেকে সর্বসম্মুখে মেলিয়া ধরিয়াছে যে যাহা দেখিয়া আমার মত ভেতো নির্লজ্জ বাঙ্গালীরও চক্ষু অবনমিত করিতে বাধ্য হইল।কি করব ভাই টিভি সিনেমাতে দেখেছি মাঝে মধ্যে কিন্তু চর্ম চক্ষুতে তো এই প্রথমবার দেখা-তাছাড়া বয়েসও ছিল তখন নেহায়েত কম তাই একটু লজ্জা পেয়েছিলামআমার সেই বন্ধুর বান্ধবী আমাদের দুজনকে হাত ধরে হিড় হিড় করে টেনে নিয়ে চলল সেই ললনাদের পাশ ঘেষে এক্রোবেটিক স্টাইলে।কিছুদুর এগুতেই খালি একটা জায়গা পেয়েই ব্যাগ থেকে প্রমান সাইজের তোয়ালে বের করে বিছিয়ে দিল।পরক্ষনেই কোন কথা নেই বার্তা নেই ধুম করে উদোম করে ফেলল নিজেকে(আমি ভেবেছিলাম পোষাকটা সে এইখানেই পাল্টাবে কিন্তু আগেই বলেছি নাদান বুদ্ধু ছিলাম আমি তখন জানব কি করে ঘর থেকই এরা সুইমিং কাস্ট্যুম খানা ভিতরে পড়ে আসে)।আমি আড় চোখে এক লহমায় দেখে নিয়েছি চেঙ্গিস খান আর হালাকু খান এর বংশধর এই বাদামী রঙ্গের মেয়েটা চাবুকের মত দেহবল্লভী।রোদের আলো যেন পিছলে গেল তার মসৃন ত্বকে স্কিড করে।পরক্ষনেই তাকালাম আমার রুমমেটের দিকে- দেখি সে চোখে করুন আর্তনাদ! যৎ দেশ তদাচার অথবা তুমি যখন রোমে যাবে তখন চেস্টা করবে খাটি রোমান হতে।এইসব বাণীতো বহুবার শুনেছি কিন্তু আমার এই আধা কালা নধর কান্তি শরিরখানা ওদের সামনে উদোম করি কোন সাহসে।রুশ মেয়রা গড় পড়তা সবাই সুন্দরী-আর এদের ফিগার আঃ! এক নজরে ভীমরতি খেতে হয়। সবাই স্কেটিং আর ব্যালে নেচে পনের যেতে না যেতেই শরির করে,ছুরির ফলার মত সেকি তীক্ষ্ন ধার!অবশ্য ৩০ পেরুতে না পেরুতেই অধিকাংশ বুড়িয়ে কিংবা মুটিয়ে যায়।মেয়েদের কথা ছেড়েই দিলাম সংখ্যায় নগন্য হলেও পুরুষদের সংখ্যাও কম নয় এখানে। আঠারো বছর বয়সেই ওদের বাধ্যতামুলক আর্মি ট্রেনিং নিতে হয়। দু-বছর ট্রেনিং শেষে খালি গায়ে দাড়ালে মনে হবে প্রস্তর মুর্তি। এদের সামনে নিজের অসহায় লাগছে!এতগুলো শ্বেতশুভ্র ধবল বকের মাঝে আমরা দুই কানি বক অনেকেই আড় চোখে ঘুরে ফিরে আমাদেরকে দেখছে।নিজেকে আজব জন্তু মনে হচ্ছিল- ওরা গেয়ো ভাবতে পারে সেই ভেবে অবশেষে শুধু ট্রাউজারখানি খুলে ঠ্যাং দুখানি বের করেও শান্তি পেলামনা। শর্টস খানা এমনিতেই হাটু ছাড়িয়ে গেছে তার পরেও আরো নীচের দিকে টানছি।ভাগ্য ভাল যে রোদের তেজ তেমন ছিলনা-আকাশে আবার মেঘের আনাগোনা।লাজ শরম তখন ভেঙ্গেছে কিছুটা,.উপুড় হয়ে শুয়ে আড়চোখে ইতি উতি তাকাচ্ছি।বে আব্রু সৌন্দর্যে চোখ ধাঁধিয়ে যায়। বেশীক্ষন চাইতে পারিনা চোখ সরিয়ে নেই সম্মুখের বিবর্ন ঘাসের দিকে।এইতো ক’দিন আগে দেশে থাকত, কোন তরুনীর আধা ফর্সা পায়ের গোছা,উন্মুক্ত গ্রীবা কিংবা নগ্ন সুগোল বাহু দেখে যেই আমি আদিম রসের আস্বাদ নিতাম সেই আমি যে এমন রুপবতীদের অর্ধনগ্ন শরিরের তীক্ষ চাবুকের আঘাতে ধরাশায়ী হব তাতে আশ্চর্য হবার কি আছে!কিছু বাদে পরিবেশ যখন কিছুটা সহনীয় হয়ে এল-যুবকের চোখে তখন দুঃসাহসিক এডভেঞ্চারের সপ্ন। নদীটা চওড়া হবে সাকুল্যে শ’খানেক হাত।তেমন স্রোত নেই ঢেউতো নেই-ই।অতি শান্ত নদী। কিন্তু আশ্চর্য কাউকে দেখলাম না সেখানে ঝাঁপ দিয়ে দু চার ল্যাপ সাতরাতে।পদ্মার পাড়ের ছেলে আমি। ভাল করে হাটার আগে সাঁতার শিখেছি।ভাবলাম যাই ওদের একটু দেখিয়ে দেই-নদীতে কি করে সাঁতার কাটতে হয়। সবে মাত্র সামার এসেছে রোদের তেজ তেমন নেই তখন। উল্টো আকাশে মেঘের আনাগোনা-বাতাসে একটু শীতল অনুভুতি। তবুও ভাবতে ভাবতে নেমে পড়লাম পানিতে। ওরে বাব্বা! কি ঠান্ডরে বাবা! মনে হচ্ছে বরফ গলা জল। নেমে যখন পড়েছি ফেরার আর পথ নাই। হাটু পানিতে নামতেই টের পেলাম শরিরে সুক্ষ কাঁপনের ঢেউ। যা থাকে কপালে! দিলাম ঝাঁপ। কিন্তু একটু এগুতেই দেখি একি! আমার সমান্তরালে একজোড়া সুদৃঢ় সুগোল ফর্সা হাতের সঞ্চালন। ভাল করে নজর বুলিয়ে দেখি অতি রুপবতী এক রমণী। আমাকে দেখে তারও সাতারের খায়েস হয়েছে। ওকে দেখে আরো উৎসাহিত হলাম সাথে আতংকিতও। এমেয়েতো আমার পুকুর কিংবা ডোবাতে টুপ টুপ ডুপ ঢুপ করে পদ সঞ্চালন দ্বারা সাতরে বেড়ানো আমাদের অধিকাংশ বঙ্গ ললনার মত না। এ দেখি আমারই মত দীর্ঘ দু বাহু প্রসারিত করে প্রফেশনাল সাতারুর মত জল কেটে এগিয়ে যাচ্ছে। খেয়েছে রে! মেয়েদের কাছে সাতারে হার। আমার পদ্মার ইজ্জত যাবে যে! এতক্ষন ধীরালয়ে সাতরালেও এবার চোখ কান বুজে দিলাম জোর সাতার।ফিরতি পথে নিদারুন কষ্ট হলেও পদ্মার মান রেখেছিলাম। এপাড়ে দুয়েকজন হাত তালিও দিল।পাড় বেয়ে উঠে এগিয়ে গেলাম বেশ বড় একখান ছাতার নীচে গোলাকার বেঞ্চটা লক্ষ্য করে।একটু শীত শীত করছিল তখনো।শরিরে তির-তির করে মৃদু কাঁপন।বেঞ্চিতে বসতেই আচমকা ধেয়ে এল বৃষ্টি।আশে পাশে যারা ছিল সবাই তাদের বিছিয়ে রাখা তোয়ালে খানা কোনমতে নিম্নাংগেজড়িয়ে ধেয়ে এল আমার পানে মানে,আমি যেখানটায় আছি সেই ছাতার নীচে।কয়েকজন সিট পেয়েছে বাকি সবাই দাড়িয়ে। আমার চারপাশে গা ঘেষাঘেষি করে দাড়িয়ে আছে বেশ ক’জন রুশ ললনা। নাকের কাছে সৌন্দর্যের ঘ্রান।দ্বীধাহীন ভাবে বলতে হয় সেই আমার বয়সে তখন সেরকম শুধু কল্পনাতেই মানায় –বাস্তবে এমন হওয়া সম্ভব বলে মনে করিনি কখনো। কত সুখ কল্পনায় বেসে যাচ্চিলাম তখন।বিধাতা বড় নিঃরস! ভেজা গা তখনো শুকোয়নি। প্রথমে একটু একটু করে মিনিট খানেক যেতে না যেতেই শুরু হল কাঁপুনি। সেকি কাপুনি আর খিচুনি!চারিদিকে অন্ধকার দেখছি তখন-মনে হচ্ছে কেউ আমাকে বরফের গর্তে ঠেসে ধরেছে।আমার কাপুনি দেখে প্রথমে শুরু হল মৃদু গুঞ্জন পরক্ষনেই হট্ট্রগোল।শুনতে পেলাম বহু রমনী কন্ঠে -ও বজ্বা মোই!ও বজ্বা মোই!স্তো উসতাবোই?ও ঈশ্বর!ও ঈশ্বর আমার! কি হয়েছে তোমার?আমার দুবস্থা ঠাহর করতে পেরে তিন চারটে মেয়ে এক সাথে তাদের কটি থেকে একটানে তোয়ালে খুলে চেপে ধরল আমাকে। আর দু তিনজন আমার হাত পা ম্যাসেজ করতে শুরু করে দিল।মিনিট দশেক লাগল ধাতস্ত হতে। বিব্রত লাজুক চোখ মেলে চাইলাম আমি। সম্মুখ থেকে উধাও যৌন আবেদনময়ী অর্ধ উলংঙ্গ অতি সুন্দরীদের ক্ষীন কটিদেশ শ্বেতশুভ্র সুঠাম উরু।আমার সামনে যেন মমতাময়ীর স্নিগ্ধ দৃষ্টি নিয়ে দাড়িয়ে আছে অতিআপন কিছু প্রিয় মুখ।ছবি: সেই Tsna নদী তাম্বুভ,রাশিয়া।
ভ্রমন পর্ব-১(কুয়ালালামপুর থেকে ঢাকা)
২৮ শে এপ্রিল, ২০০৯ দুপুর ২:২৭
শেষ থেকেই শুরুটা করছি।ফের এয়ার এশিয়ার বাজেট কেরিয়ারে করে মালয়েশিয়া থেকে বাংলাদেশে প্রত্যাবর্তন। মুলত কম ভাড়ার কারনে এই সব রুটে বিমানের সবগুলো আসন যে পূর্ন হবে তা আগে থেকেই ভেবেছিলাম।যাবার বেলায় ভীষন অবাক হয়েছিলাম প্রায় দুইশ সিটের এই মাঝারি বিমানের অর্ধেক সিট খালি দেখে।এদের সেই দূর্ভাগ্য অবশ্য আমার মত যাত্রীদের সৌভাগ্য বয়ে এনেছিল-হেসে খেলে হাত পা ছড়িয়ে মালয়েশিয়ার এল সি সি টি বন্দরে এসেছিলাম।এ সি সি টির অর্থ হচ্ছে লো কেরিয়ার কস্ট টার্মিনাল।মুলত মালয়েশিয়ান এয়ার লাইন্সের অল্প কিছু বাজেট কেরিয়ার কার্গো বিমান আর এয়ার এশিয়ার এইসব বিমানের অবতরন আর উড্ডয়নের জন্য শহর থেকে অনেক দুরের এই টার্মিনালটি ব্যাবহৃত হয়। ফেরার সময় অব্শ্য আমার ভাবনার সাথে সংগতি রেখে পুরো বিমানটাই কানায় কানায় পূর্ন হল।আমার ছোট ভাই দিনের বেলায় বিমানের জানালা দিয়ে এরিয়াল ফটগ্রাফি করার লোভে বোর্ডিং কার্ড নেবার সময় অনুরোধ করে ডানার সামনের দিকে জানালার কাছের একখানা সিট বাগিয়েছে।লাইনের একটু পিছনের থাকায় আমিও চলে গেলাম লেজের দিকে।আমি আর আমার ছোট ভাই বিমানের পেটে ঢুকলাম সবার শেষে-অভ্যার্থনার পরিবর্তে বিমান বালার আমসে মুখ দেখে দীর্ঘ চার ঘন্টার ক্লান্তিকর এই বিমান যাত্রার ভবিষ্যত ভেবে আঁতকে উঠলাম!ভিতরে ঢুকতেই দেখি সেই অতি পরিচিত দৃশ্য। সিট ছেড়ে দাড়িয়ে আছে অর্ধেক যাত্রী-ভাবখানা এমন যে বিমান ছাড়ার আগে তাদের বসতে নিষেধ করা হয়েছে। তাদের পাশ কেটে বেরিয়ে যাবার চেস্টারত অন্য যাত্রীদের জটলায় মানব জ্যাম।সেই সাথে চেচামেচী হৈ হল্লাতো আছেই।ধৈর্য ধরে অনেকক্ষনের চেষ্টায় নিজের সিটের কাছে গিয়ে দেখি সেই পুরনো চিত্র। আমার সিট দখল করে আছে অন্য এক বাঙালী ভাই সেই সাথে লাগেজ কেরিয়ার খানা কানায় কানায় পূর্ন।অগত্যা সামনের একখানা কেরিয়ারে হাতের ব্যাগটা ঠেসে ঠুসে সেধিয়ে দিয়ে- আমার সিটে বসা সহযাত্রীর দিকে তাকাতেই লজ্জায় তার মুখটা রাঙা হয়ে গেল।আমি মুখ খোলার আগেই সে আগ বাড়িয়ে বেশ কাচুমাচু হয়ে বলল,ভাই আসেন-এইটা মনে হয় আপনার সিট। আমি ওই পাশে বসছি।আমি হাত দিয়ে থামালাম তাকে,ঠিক আছে অসুবিধা নেই বসেন-আমি এই পাশেই বসছি।না না বসেন ভাই-আমি ওইখানেই বসছি।জানালার পাশে বসতে আমার ভাল লাগেনা। আপনি ওইখানে বসেন-এই পাশেই আমার সুবিধে।আমার কথায় তখন সে একটু ভরসা পেল মনে হয়,এবার একটা সরল হাসি দিয়ে বেশ বিগলিত কন্ঠে বলল, ধন্যবাদ,ভাই মাইন্ড করেন নাইতো?’আমার কিছু বলার আগেই, এবার মাঝে বসা লোকটা আচমকা বলে উঠল,আমরা সবাইতো একই দেশী-একটু মিলমিশ করে বসলেই হয়।আমি লোকটাকে এতক্ষন ভাল করে লক্ষ্য করিনি এবার পূর্ন চোখ মেলে তাকালাম তার দিকে।মুখ ভর্তি কাচা পাকা দাড়ি-চেহারা আর পোষাকে দৈন্যতা স্পস্ট।গায় ময়লা একটা শার্ট পরনে লাল সবুজ রঙ্গের অতি জীর্ন একটা স্পোর্টস ট্রাউজার, আর পায়ে ক্ষয়ে যাওয়া রাবারের সেন্ডেল। অবাক হলাম ভীষন!সত্যি কথা বলতে কি এই পোষাকের এটা লোককে বিমানের সিটে বসে থাকতে দেখব বলে ভাবিনি।আমি সিটে বসতে বসতে তাকে জিজ্ঞেস করলাম আপনার বাড়ি কোথায়,প্রতিউত্তরে সে বেশ নিরস কন্ঠে বলল,'টাঙ্গাইল।আর আমার সিটে বসা সেই ভদ্রলোককে প্রশ্নটা করতেই সোৎসাহের সাথে বলল, আমার বাড়ি ভাই কুমিল্লার চৌদ্দগ্রামে। আপনি কোথায় থাকেন।আমি তাকি ভাই ঢাকায়-মাঝবয়সী এই লোকটার ব্যাপারেই আমার জানার আগ্রহ বেশী।তাই তাকেই ফের প্রশ্ন করলাম, মালয়েশিয়া এসেছিলেন কেন?এবারও তেমন ধারা কাটা কাটা উত্তর, কাজ করতে।কদ্দিন আগে এসেছিলেন?উনিশ মাস আগে।এখন দেশে ফিরে যাচ্ছেন কেন।এবার একটু ঝাঁঝের সাথে বলল,কাম নাই তো কি করব। এক বছর কাজ কইরা বেতন পাই নাই।ব্রিজের নীচে ঘুমাইলাম চার মাস-এখন চল্লিশদিন জেল খাইটা দ্যাশে যাচ্ছি।গিয়েছিলেন কি, আদম ব্যাপারীর মাধ্যমে?হ্যা।পরিচিত?হ্যা।দেশে থাকতে কি করতেন?চাষ বাস করতাম।এইখানে এসেছেন কি জমি জমা বেচে।জমি জমা থাকলেতো বেচব। ধার দেনা কইরা আইছি।কত টাকা দিয়েছিলেন?দুই লাখ।দুই লাখতো অনেক টাকা নাকি?সে মাথা নিচু করে অস্পস্ট কন্ঠে বলল, হ্যা।দেশে এই টাকা দিয়ে ব্যাবসা করে কিংবা জমি জমা কিনে চাষাবাদ করে চলতে পারতেন না?হ পারতাম।ছেলে মেয়ে আছে?হ্যা মেয়ে আছে একটা-ক্লাস ফাইভে পড়ে।বয়স কত হয়েছে?চল্লিশ পঞ্চাশ (বাপরে বয়স সন্মন্ধে কি ধারনা!)এই বয়সে কেন বিদেশে আসলেন? প্রতি নিয়ত শুনছেন আদম ব্যাপারীদের খপ্পড়ে পড়ে সবাই সর্বশান্ত হচ্ছে। রেডিও টিভি পত্রিকায় প্রতিদিন কতশত নিউজ আসছে এই নিয় তারপরেও আপনারা ভুল করবেন।আমার সাথে তাল মেলাচ্ছিল তখন পাশের লোকটা-‘হ্যা ক্যান যে আপনারা এই ভুল করেন?এখন কি ধরাটাই খাইলেন।দ্যাশে গিয়া করবেন কি-টাকা শোধ করতেই তো জীবন যাবে।এবার আচমকা রেগে গেল মধ্য বয়েসী সেই লোকটা মাথা তুলো চকিতে আমার দিকে চেয়ে চিৎকার করে উঠল-হ্যা হ্যা ভাইজান, সব আমার দোষ। সব আমার ভুল। হাত জোর কইরা মাফ চাচ্ছি। আমারে মাফ কইরা দ্যান।আমি তার আচমকা এহেন ব্যাবহারে হকচকিয়ে গেলাম।সবাই ঘুরে ঘুরে তাকাচ্ছিল আমাদের দিকে-স্বভাবতই একটু অপমানিত বোধ করছিলাম।চুপ মেরে গেলাম কিছুক্ষনের জন্য। আমার সিটে বসা লোকটা তখন মুখ খুলল। ব্যাপারটা তার কাছেও বেশ খারাপ লেগেছে।সে আমার মুড ভাল করার জন্য হালকা কথাবার্তা চালাচ্ছিল।আমিও থেমে থেমে উত্তর দিচ্ছিলাম।ধীরে ধীরে পরিবেশ স্বাভাবিক হয়ে এল-মাঝখানের লোকটাকে আমরা বেমালুম ভুলে নিজের মধ্যে খুচরো কথাবার্তা চালাচালি করছিলাম।বিমান ততক্ষনে টেক অফ করেছে। পৌঢ় লোকটা গলা উচিয়ে বাইরের দৃশ্য দেখার খুব চেস্টা করছিল।আমি প্রথম যাত্রীকে অনুরোধ করে বললাম, আপনি যদি কিছু মনে না করেন তাহলে উনাকে একটু জানালার পাশে বসতে দিবেন।এ জীবনে তার হয়তো আর প্লেনে চড়ার সৌভাগ্য হবেনা। শেষ বারের মত বিমান থেকে বাইরের দৃশ্যগুলো দেখুক। সেও মনে হয় এমনই চাচ্ছিল। সানন্দে রাজি হয়ে গেল। আসেন চাচা এইখানে বসেন।আমি মাঝে বসি।অমন ব্যাবহারের পর আমাদের কাছ থেকে সে এমন মানবতা আশা করেনি।তাই চকিতে চেয়ে চোখের দৃষ্টিতে দুঃখ প্রকাশ করে ধন্যবাদ দিল।কথা বলছিলাম এই লোকটার সাথে। তিনিও এসেছেন উনিশ মাস আগে। চাকরি করেন-কে এফ সি তে সরবরাহ কারী একটা সসের ফ্যাক্টরিতে।পরিচিত কোন একটা এজেন্সির মাধ্যমে অল্প পয়সাতেই এসেছেন এইখানে। চুক্তি অনুযায়ী তিন বছরের আগে দেশে ফেরায় বাধা ছিল। কিন্তু চোখে ছানি পড়ায় সবাই পরামর্শ দিল দেশে গিয়ে অপসারন করতে। ভেবেছিলেন ছুটি পাবেন না –কিন্তু দরখাস্ত করতেই ছুটি মিলে গেল। মাসের মধ্যিখানে –হাতে কোন পয়সা কড়ি নেই। রুমমেটটা চাদা উঠিয়ে সিকিউরিটির টাকা আর বিমান ভাড়ার ব্যাবস্থা করেছে।কিছুই কেনাকাটা করতে পারেনি। শুধু ছেলের জন্য একটা সস্তা গাড়ি কিনেছে। সেইটে কোলের উপর অতি মমতায় ধরে রাখা-কেরিয়ারে রাখলে পাছে ভুলে যায় এই ভয়ে।অনাকাঙ্খিত ভাবে আচমকা দেশে যেতে পারছে এই খুশীতে তার মুখ উদ্ভাসিত। কথা বলার ফাকে ফাকে সারাক্ষনই হাসছিল।বুঝলেন ভাই দেশে ফিরতে পারলেই কোন চিন্তা নাই। আমার আটটা ভাই। সবাই খুব ভালবাসে আমারে।আমি ভাবছি দুজন মানুষ কতই না সুখ সপ্ন নিয়ে এসেছিল সবাইকে ছেড়ে এই বিদেশ বিভুইয়ে। একই সময়ের ব্যাবধানে তারা আজ ফিরে যাচ্ছে স্বদেশভুমে। খুশীতে একজন উড়ছে ফুরফুর করে প্রজাপ্রতির মত-তার সপ্ন গুলো এখনো বিবর্ণ হয়ে যায়নি-বরঙচ আরো বেশী রঙ্গিন হয়েছে। আর অন্যজনের কি ভয়ঙ্কর ভয়াবহতা অপেক্ষা করছে। কি নির্মমতা ডিজাস্টার তার দিকে নির্মম থাবা নিয়ে এগিয়ে আসছে সে জানেনা-ভাবতেও হয়ত চায়না। সে শুধু কিছুক্ষনের জন্য দেখতে চায় বিমানের ছোট্ট জানলায় চোখ ডুবিয়ে এই মহাবিশ্বের অতিক্ষুদ্র ছায়াপথের অতি নগন্য একটা সৌরজগতের মাঝারি মানের একটা নীল গ্রহকে। হয়ত তার ধারনা যেখানে রয়েছে শুধু হিংসা হানাহানি প্রতারনা দৈন্যতা আর সুন্দর সপ্নের নির্মম পরিনতি!এয়ার এশিয়ায় এক বুন্দ পানিও কিনে খেতে হয়।এদের বিমানে চড়ার পূর্ব অভিজ্ঞতা যাদের নেই স্বভাবতই ব্যাপারটা তাদের খটকা লাগবে। তবে দু-য়েকবার দেখলেই ব্যাপারটা স্বাভাবিক ঠেকবে। আকাশ পথে দাম যেখুব বেশী তা কিন্তু নয়।দেড় রিঙ্গিতের পানি মাত্র পাচ রিঙ্গিতে কিনতে হয়। ম্যাগাজিনের লোভনীয় খাবারের ছবি দেখে অর্ডার দিয়ে মাঝ মধ্যে মাথার চুল ছিড়তে হয় এই আর কি।মাগনা খাবার দিলে যাদের তিনবার খেলেও পেট ভরে না তারাই কিন্তু এখানা পান ভোজন না করে দিব্যি চার পাচ ঘন্টা কাটিয়ে দেয়। তবে তথাকতিথ মাগনা খাবার বাবদ অন্য বিমান সংস্থাগুলো যে পরিমান টাকা অগ্রিম নিয়ে নেয় তার তুলনায় এইটে অতি সস্তা!খাবারের ট্রলি নিয়ে এয়ার হোস্টেজদের এগিয়ে আসার শব্দে সে বাইরের পৃথিবী দেখার বাসনা আপাতত ক্ষান্ত দিয়ে উটের মত গলা উচু করে ক্লান্ত চোখ দুটো দিয়ে প্রচন্ড আকুতি নিয়ে অপেক্ষায় রইল কাছে আসার।ডানা থাকলে হয়তো সে তখুনি উড়ে গিয়ে ঝাপিয়ে পড়ত সেই ট্রলির উপরে ক্ষুধার্ত শকুনের মত।অবশেষে সেই ভয়ঙ্কর প্রতিক্ষার অবসান ঘটিয়ে ট্রলিটা এসে ভিড়ল আমাদের সিটের পাশে।সে সবার আগেই হাত বাড়াতে গিয়েই আবার কি ভেবে স সঙ্কোচে হাতখানা গুটিয়ে নিল।আমার পাশের যাত্রী ছোট্ট এক বোতল জুস নিয়ে টাকা বাড়িয়ে দিল দেখে তার সে কি বিস্ময়।লাজ লজ্জার মাথা খেয়ে করুন স্বরে বলেই ফেলল ভাই,এইখানে খাবার কি কিনে খাইতে হয়?দ্বীতিয় যাত্রী বেরসিক হাসি দিয়ে বলল,হ্য-আপনে জানেন না?দুঃখে হতাশায় ক্লান্তিতে লোকটার মুখাবয় ভেঙ্গে চুরে বিকৃত হয়ে গেল।...আদম ব্যাপারী তাকে ভুয়া ডাক্তারী সার্টিফিকেট দিয়ে মালয়েশিয়া পাঠিয়েছিল। এখানে এসে ফের ডাক্তারী পরিক্ষায় অনুত্তীর্ন হওয়ার কারনে মালিক তাকে কাজ দিতে রাজি হয়নি।সে বিক্রি হয়ে যায় অন্য এক মালিকের কাছে। সেখানকার কঠিন কাজের ধকল সহ্য করতে না পারায় সেই মালিক আবার বিক্রি করে দেয় আরেকজনের কাছে। এইভাবে সে হাত বদল হয় তিনবার। শেষ চাকরিটা জুটেছিল জনমানব শুন্য গহীন অরন্যে পাম ট্রি পরিচর্যার কাজে। জঙ্গল পরিস্কার,আগাছা সাফ,সার পানি দেয়া ছিল তার নিত্যদিনের কাজ।ছয়মাস হাড়ভাঙ্গা খাটুনির বিনিময়ে তার ভাগ্যে জুটেছিল দুইবেলা খাবার আর সাকুল্যে বার হাজার টাকা। নিজে কপর্দক শুন্য হয়ে সেই বার হাজার টাকা সে দেশে পাঠিয়ে দিয়েছিল।তার পর থেকে তাকে আর কোন বেতন দেয়া হয়নি। বেতনের জন্য বারংবার মালিকের দুয়ারে ধর্না দেয়ায় তার ভাগ্যে জুটেছিল নির্জন কারাবাস।দিনের পর দিন সেই অন্ধকার কুঠুরিতে মালিক তাকে আটকে রেখেছিল।সারাদিনে একবেলা খাবার তার ভাগ্যে জুটত।সে কি কঠিন জীবন-বলতে বলতে হাউমাউ করে কেদে ফেলল সে।অবশেষে একদিন ছাড়া পেল সে শুধুমাত্র পরনে থাকা সেই জরাজীর্ন পোষাকে।নিজের পোষাক-আষাকতো দুরের কথা পাসপোর্টটা পর্যন্ত দেয়া হয়নি তাকে।হাতের মুঠোয় ধরা ছিল শুধু একখানা সেলফোন তাও জিরো ক্রেডিটের। অভুক্ত জীর্ন ক্লান্ত বহু কষ্টে সে এসে পৌছেছিল কুয়ালালামপুরে।অবশেষে কোন এক বাঙ্গালী সহৃদের সহায়তায় সে গিয়ে পৌছায় বাংলাদেশ এম্বাসীতে।এম্বাসীর এক উর্দ্ধতন কর্মকর্তার পায়ের উপর আছড়ে পড়ল গিয়ে, ভাইজান আমারে বাচান। আমি আর এইদেশে এথাকবনা।আমারে দেশে পাঠায় দেন।তার সেই করুন আর্তির বিনিময়ে কোন সাহায্যতো পায়ইনি উল্টো খেতে হয়েছিল গলাধাক্কা!এম্বাসীর আশে পাশে তখন কয়েক'শ বাঙ্গালীর ভিড়। প্রায় অভুক্ত অর্ধ উলঙ্গ সব আদমেরই তখন একই দশা!পরিচয়পত্র বিহীন সব হারানো সেই মানুষগুলো মরে যাবার আগে একবার তাদের প্রিয়জনের সান্নিধ্য পেতে চায়-ফিরে যেতে চায় তার প্রিয় জন্মভুমিতে।পরের চার চারটা মাস সেই শ’চারেক মানুষ কি অবর্ননীয় দুঃখ কষ্ট কায়-ক্লেশে সেই এম্বাসীর সামনের একটা ব্রীজের নীচে দিন যাপন করেছে তার বর্ননা আর নাইবা করলাম।মফিজ নামের সেই অর্ধবয়সী সবহারানো সেই লোকটাও বলতে চায়না সেইসব দুঃখের দিনের কথা-শুধু বললেন ভাইরে এর থেকে অনেক আরামে ছিলাম সেই জেলখানায়। একবেলা খাবারতো পাইতাম। উপায়ান্তর না দেখে শেষ পর্যন্ত ভিক্ষা করছি।তবুও কিন্তু এতগুলো লোকের আহাজারী সেই সব অর্বাচীন কর্মকর্তাদের কর্ণকুহরে পৌছায়নি।তার ভাষায়;ক্ষুধার্থ পেটে ঘুম আসছিলনা।তন্দ্রাচ্ছন্ন হয়ে মরার মত নির্জিব হয়ে পড়ে ছিলাম সবাই। আচমকা শত শত গাড়ি আর সাইরেনের শব্দ।চোখ মেলে দেখি যেন সারা কুয়ালালামপুরের পুলিশ আমাদের ঘিরে ফেলেছে। এত হাজার পুলিশ আমি দেখি না কখনো। প্রতিটা লোকের জন্য কমপক্ষে তিন চারজন করে।পালানোর কোন সুযোগ ছিলনা।ফের জেলে। চল্লিশ দিন জেল খানায় ছিলাম। সেইখানেও জুটত মাত্র একবেলা খাবার।আমি জানিনা কে যেন আমার টিকিটখান কইরা দিছে।কালকে ওরা কইল আজকে আমারে দেশে পাঠায় দিবে। আজকে সকালে পুলিশের গাড়িতে করে এয়ারপোর্টে ইমিগ্রেশনের ঝামেলা মিটিয়ে তাকে প্লেনে তুলে দিয়ে হাতে একটা কাগজ ধরিয়ে দিয়ে গেছে। দলিলের মত বাঙলাদেশী এম্বাসি কতৃক প্রাপ্ত সেই কাগজখানা এখন তার একমাত্র সম্পত্তি।সেইটেই সে পরম যত্নে বুকে জড়িয়ে আছে। সামনের সিটের পকেট থেকে যাত্রীদের বমি করার একটা আনকোড়া প্যাকেট বের করে অনেক্ষন উল্টে পাল্টে দেখে অনুচ্চ কন্ঠে অনুমতি নেয়ার ভঙ্গীতে আমার দিকে চেয়ে বলল,ভাই আমি কি এই প্যাকেটটা নিতে পারি-এর মধ্যে এই কাগজ গুলা ঢুকাইতাম।ভাবখানা এমন যে আমিই এই প্যাকেটটার মালিক- আমার ইশারার উপরেই নির্ভর করছে এই মহামুল্যবান জিনিস হস্তগত করা না করা।আমি 'হ্যা' বলাতে সে ভীষন খুশি হয়ে কি পরম যত্নে সেই সেই কাগজগুলো ভাজ করে প্যাকেটটাতে রাখল। অতিতুচ্ছ বমির প্যাকেটের এমন সদগতি আর আর এইজন্মে মনে হয় কেউ দেখেনি। মালয়েশিয়ান পুলিশ তার মোবাইল ফোনখানা পর্যন্ত কেড়ে রেখে দিয়েছে।সেইটের অর্থনৈতিক মুল্য মনে হয় এই বমির প্যাকেটের থেকেও কম। কেননা ক্ষুধার তাড়নায় অনেকবারই সেই সেলফোন খানা বিকোতে চেয়েছে কেউ একবেলা খাবারের বিনিময়েও কিনতে চায়নি!আপনি এয়ারপোর্ট থেকে কোথায় যাবেন-বাড়িতে?না আগে সেই আদম ব্যাপারীর অফিসে যাব মতিঝিলে। তারে আমার চেহারাটা দেখাইতে হবে না?যাবার ভাড়া আছে?না।তাহলে যাবেন ক্যামনে?ভিক্ষা করার অভ্যাসতো আছেই। দেখি কারো হাতে পায় ধইরা বাসের ভাড়াটা জোগাড় করতে পারি কিনা।আমি আর কোন কথা বলিনি। আমার থেকে অবস্থা তখন তার বিশেষ ভাল না।তিনটে দেশ ঘুরে হাতে রাখা শেষ ডলারটাও খরচ করে এসেছি।ট্রাভেল আর ক্রেডিট কার্ডে কিছু টাকা পয়সা আছে -কিন্তু এই আকাশ পথে সেটা মুল্যহীন।ওয়ালেটের এককোনায় অবশ্য কিছু বাংলাদেশী মুদ্রা আছে -এয়াপোর্ট থেকে বাসায় ট্যাক্সি ভাড়ার জন্য রাখা।তবে আমার হাতে অনেক অপসন-ছোট ভাইয়ের কাছে কিছু টাকা আছে বলে মনে হয় না হলে বাসায় ফেরার পথে এটিএম বুথ থেকে টাকা তুলে নিতে পারি কিংবা ভাড়াটা বাসায় গিয়েও দিতে পারি।যাহোক বেশী নাটকীয়তা না করে চুপচাপ বসে রইলাম তখন।বিমান ল্যান্ড করার পরে সবাই যখন নামার জন্য হুড়োহুড়ি করছে সেই ফাকে সেই সামান্য কটা টাকা আর পার্সোনাল কার্ড অতি সংকোচে তার হাতে গুজে দিয়ে বললাম,-আপাতত সেই আদম ব্যাপারীরর অফিসে যান-সমস্যা হলে আমাকে ফোন দিয়েন, দেখি কিছু করতে পারি কি না।আমি ভেবেছিলাম ব্যাস্তার ভান করে কেটে পড়ব তখুনি। কিন্তু সে সুযোগ আমাকে না দিয়ে খপ করে হাত খানা ধরে হাউমাউ করে কেদে ফেলল-‘ভাইজান আমারে একখান চাকরি দিবেন?’ভীষন বিব্রত আমি প্রতিউত্তরে কিই বা বলার ছিল? শুধু সান্তনার স্বরে নিচু কন্ঠে বললাম,চেস্টা করব- আপনি আমার সাথে যোগাযোগ কইরেন।বিমান থেকে নামার পরে তাকে আর কোথাও খুজে পেলামনা। ভেবেছিলাম অর্থাভাবে যে ভিক্ষে করতে পারে নিঃস্ব সেই মানুষট খড়কুটো ধরে বাঁচবার তাগিদে অবশ্যই আমার কাছে ফোন করবে। ফেরার পথে ট্যাক্সিতে বসে তাকে এড়াব কিভাবে,কলুষিত আর সংকীর্ন মন আমার সেই ফন্দি আটছিল।তবে না,দারিদ্রতা মানুষকে সব সময় অভব্য কিংবা নির্লজ্জ করে না। দু সপ্তাহ হতে চলল সে আর আমার সাথে যোগাযোগ করেনি- কখনো করবে বলে মনে হয়না।
শেষ থেকেই শুরুটা করছি।ফের এয়ার এশিয়ার বাজেট কেরিয়ারে করে মালয়েশিয়া থেকে বাংলাদেশে প্রত্যাবর্তন। মুলত কম ভাড়ার কারনে এই সব রুটে বিমানের সবগুলো আসন যে পূর্ন হবে তা আগে থেকেই ভেবেছিলাম।যাবার বেলায় ভীষন অবাক হয়েছিলাম প্রায় দুইশ সিটের এই মাঝারি বিমানের অর্ধেক সিট খালি দেখে।এদের সেই দূর্ভাগ্য অবশ্য আমার মত যাত্রীদের সৌভাগ্য বয়ে এনেছিল-হেসে খেলে হাত পা ছড়িয়ে মালয়েশিয়ার এল সি সি টি বন্দরে এসেছিলাম।এ সি সি টির অর্থ হচ্ছে লো কেরিয়ার কস্ট টার্মিনাল।মুলত মালয়েশিয়ান এয়ার লাইন্সের অল্প কিছু বাজেট কেরিয়ার কার্গো বিমান আর এয়ার এশিয়ার এইসব বিমানের অবতরন আর উড্ডয়নের জন্য শহর থেকে অনেক দুরের এই টার্মিনালটি ব্যাবহৃত হয়। ফেরার সময় অব্শ্য আমার ভাবনার সাথে সংগতি রেখে পুরো বিমানটাই কানায় কানায় পূর্ন হল।আমার ছোট ভাই দিনের বেলায় বিমানের জানালা দিয়ে এরিয়াল ফটগ্রাফি করার লোভে বোর্ডিং কার্ড নেবার সময় অনুরোধ করে ডানার সামনের দিকে জানালার কাছের একখানা সিট বাগিয়েছে।লাইনের একটু পিছনের থাকায় আমিও চলে গেলাম লেজের দিকে।আমি আর আমার ছোট ভাই বিমানের পেটে ঢুকলাম সবার শেষে-অভ্যার্থনার পরিবর্তে বিমান বালার আমসে মুখ দেখে দীর্ঘ চার ঘন্টার ক্লান্তিকর এই বিমান যাত্রার ভবিষ্যত ভেবে আঁতকে উঠলাম!ভিতরে ঢুকতেই দেখি সেই অতি পরিচিত দৃশ্য। সিট ছেড়ে দাড়িয়ে আছে অর্ধেক যাত্রী-ভাবখানা এমন যে বিমান ছাড়ার আগে তাদের বসতে নিষেধ করা হয়েছে। তাদের পাশ কেটে বেরিয়ে যাবার চেস্টারত অন্য যাত্রীদের জটলায় মানব জ্যাম।সেই সাথে চেচামেচী হৈ হল্লাতো আছেই।ধৈর্য ধরে অনেকক্ষনের চেষ্টায় নিজের সিটের কাছে গিয়ে দেখি সেই পুরনো চিত্র। আমার সিট দখল করে আছে অন্য এক বাঙালী ভাই সেই সাথে লাগেজ কেরিয়ার খানা কানায় কানায় পূর্ন।অগত্যা সামনের একখানা কেরিয়ারে হাতের ব্যাগটা ঠেসে ঠুসে সেধিয়ে দিয়ে- আমার সিটে বসা সহযাত্রীর দিকে তাকাতেই লজ্জায় তার মুখটা রাঙা হয়ে গেল।আমি মুখ খোলার আগেই সে আগ বাড়িয়ে বেশ কাচুমাচু হয়ে বলল,ভাই আসেন-এইটা মনে হয় আপনার সিট। আমি ওই পাশে বসছি।আমি হাত দিয়ে থামালাম তাকে,ঠিক আছে অসুবিধা নেই বসেন-আমি এই পাশেই বসছি।না না বসেন ভাই-আমি ওইখানেই বসছি।জানালার পাশে বসতে আমার ভাল লাগেনা। আপনি ওইখানে বসেন-এই পাশেই আমার সুবিধে।আমার কথায় তখন সে একটু ভরসা পেল মনে হয়,এবার একটা সরল হাসি দিয়ে বেশ বিগলিত কন্ঠে বলল, ধন্যবাদ,ভাই মাইন্ড করেন নাইতো?’আমার কিছু বলার আগেই, এবার মাঝে বসা লোকটা আচমকা বলে উঠল,আমরা সবাইতো একই দেশী-একটু মিলমিশ করে বসলেই হয়।আমি লোকটাকে এতক্ষন ভাল করে লক্ষ্য করিনি এবার পূর্ন চোখ মেলে তাকালাম তার দিকে।মুখ ভর্তি কাচা পাকা দাড়ি-চেহারা আর পোষাকে দৈন্যতা স্পস্ট।গায় ময়লা একটা শার্ট পরনে লাল সবুজ রঙ্গের অতি জীর্ন একটা স্পোর্টস ট্রাউজার, আর পায়ে ক্ষয়ে যাওয়া রাবারের সেন্ডেল। অবাক হলাম ভীষন!সত্যি কথা বলতে কি এই পোষাকের এটা লোককে বিমানের সিটে বসে থাকতে দেখব বলে ভাবিনি।আমি সিটে বসতে বসতে তাকে জিজ্ঞেস করলাম আপনার বাড়ি কোথায়,প্রতিউত্তরে সে বেশ নিরস কন্ঠে বলল,'টাঙ্গাইল।আর আমার সিটে বসা সেই ভদ্রলোককে প্রশ্নটা করতেই সোৎসাহের সাথে বলল, আমার বাড়ি ভাই কুমিল্লার চৌদ্দগ্রামে। আপনি কোথায় থাকেন।আমি তাকি ভাই ঢাকায়-মাঝবয়সী এই লোকটার ব্যাপারেই আমার জানার আগ্রহ বেশী।তাই তাকেই ফের প্রশ্ন করলাম, মালয়েশিয়া এসেছিলেন কেন?এবারও তেমন ধারা কাটা কাটা উত্তর, কাজ করতে।কদ্দিন আগে এসেছিলেন?উনিশ মাস আগে।এখন দেশে ফিরে যাচ্ছেন কেন।এবার একটু ঝাঁঝের সাথে বলল,কাম নাই তো কি করব। এক বছর কাজ কইরা বেতন পাই নাই।ব্রিজের নীচে ঘুমাইলাম চার মাস-এখন চল্লিশদিন জেল খাইটা দ্যাশে যাচ্ছি।গিয়েছিলেন কি, আদম ব্যাপারীর মাধ্যমে?হ্যা।পরিচিত?হ্যা।দেশে থাকতে কি করতেন?চাষ বাস করতাম।এইখানে এসেছেন কি জমি জমা বেচে।জমি জমা থাকলেতো বেচব। ধার দেনা কইরা আইছি।কত টাকা দিয়েছিলেন?দুই লাখ।দুই লাখতো অনেক টাকা নাকি?সে মাথা নিচু করে অস্পস্ট কন্ঠে বলল, হ্যা।দেশে এই টাকা দিয়ে ব্যাবসা করে কিংবা জমি জমা কিনে চাষাবাদ করে চলতে পারতেন না?হ পারতাম।ছেলে মেয়ে আছে?হ্যা মেয়ে আছে একটা-ক্লাস ফাইভে পড়ে।বয়স কত হয়েছে?চল্লিশ পঞ্চাশ (বাপরে বয়স সন্মন্ধে কি ধারনা!)এই বয়সে কেন বিদেশে আসলেন? প্রতি নিয়ত শুনছেন আদম ব্যাপারীদের খপ্পড়ে পড়ে সবাই সর্বশান্ত হচ্ছে। রেডিও টিভি পত্রিকায় প্রতিদিন কতশত নিউজ আসছে এই নিয় তারপরেও আপনারা ভুল করবেন।আমার সাথে তাল মেলাচ্ছিল তখন পাশের লোকটা-‘হ্যা ক্যান যে আপনারা এই ভুল করেন?এখন কি ধরাটাই খাইলেন।দ্যাশে গিয়া করবেন কি-টাকা শোধ করতেই তো জীবন যাবে।এবার আচমকা রেগে গেল মধ্য বয়েসী সেই লোকটা মাথা তুলো চকিতে আমার দিকে চেয়ে চিৎকার করে উঠল-হ্যা হ্যা ভাইজান, সব আমার দোষ। সব আমার ভুল। হাত জোর কইরা মাফ চাচ্ছি। আমারে মাফ কইরা দ্যান।আমি তার আচমকা এহেন ব্যাবহারে হকচকিয়ে গেলাম।সবাই ঘুরে ঘুরে তাকাচ্ছিল আমাদের দিকে-স্বভাবতই একটু অপমানিত বোধ করছিলাম।চুপ মেরে গেলাম কিছুক্ষনের জন্য। আমার সিটে বসা লোকটা তখন মুখ খুলল। ব্যাপারটা তার কাছেও বেশ খারাপ লেগেছে।সে আমার মুড ভাল করার জন্য হালকা কথাবার্তা চালাচ্ছিল।আমিও থেমে থেমে উত্তর দিচ্ছিলাম।ধীরে ধীরে পরিবেশ স্বাভাবিক হয়ে এল-মাঝখানের লোকটাকে আমরা বেমালুম ভুলে নিজের মধ্যে খুচরো কথাবার্তা চালাচালি করছিলাম।বিমান ততক্ষনে টেক অফ করেছে। পৌঢ় লোকটা গলা উচিয়ে বাইরের দৃশ্য দেখার খুব চেস্টা করছিল।আমি প্রথম যাত্রীকে অনুরোধ করে বললাম, আপনি যদি কিছু মনে না করেন তাহলে উনাকে একটু জানালার পাশে বসতে দিবেন।এ জীবনে তার হয়তো আর প্লেনে চড়ার সৌভাগ্য হবেনা। শেষ বারের মত বিমান থেকে বাইরের দৃশ্যগুলো দেখুক। সেও মনে হয় এমনই চাচ্ছিল। সানন্দে রাজি হয়ে গেল। আসেন চাচা এইখানে বসেন।আমি মাঝে বসি।অমন ব্যাবহারের পর আমাদের কাছ থেকে সে এমন মানবতা আশা করেনি।তাই চকিতে চেয়ে চোখের দৃষ্টিতে দুঃখ প্রকাশ করে ধন্যবাদ দিল।কথা বলছিলাম এই লোকটার সাথে। তিনিও এসেছেন উনিশ মাস আগে। চাকরি করেন-কে এফ সি তে সরবরাহ কারী একটা সসের ফ্যাক্টরিতে।পরিচিত কোন একটা এজেন্সির মাধ্যমে অল্প পয়সাতেই এসেছেন এইখানে। চুক্তি অনুযায়ী তিন বছরের আগে দেশে ফেরায় বাধা ছিল। কিন্তু চোখে ছানি পড়ায় সবাই পরামর্শ দিল দেশে গিয়ে অপসারন করতে। ভেবেছিলেন ছুটি পাবেন না –কিন্তু দরখাস্ত করতেই ছুটি মিলে গেল। মাসের মধ্যিখানে –হাতে কোন পয়সা কড়ি নেই। রুমমেটটা চাদা উঠিয়ে সিকিউরিটির টাকা আর বিমান ভাড়ার ব্যাবস্থা করেছে।কিছুই কেনাকাটা করতে পারেনি। শুধু ছেলের জন্য একটা সস্তা গাড়ি কিনেছে। সেইটে কোলের উপর অতি মমতায় ধরে রাখা-কেরিয়ারে রাখলে পাছে ভুলে যায় এই ভয়ে।অনাকাঙ্খিত ভাবে আচমকা দেশে যেতে পারছে এই খুশীতে তার মুখ উদ্ভাসিত। কথা বলার ফাকে ফাকে সারাক্ষনই হাসছিল।বুঝলেন ভাই দেশে ফিরতে পারলেই কোন চিন্তা নাই। আমার আটটা ভাই। সবাই খুব ভালবাসে আমারে।আমি ভাবছি দুজন মানুষ কতই না সুখ সপ্ন নিয়ে এসেছিল সবাইকে ছেড়ে এই বিদেশ বিভুইয়ে। একই সময়ের ব্যাবধানে তারা আজ ফিরে যাচ্ছে স্বদেশভুমে। খুশীতে একজন উড়ছে ফুরফুর করে প্রজাপ্রতির মত-তার সপ্ন গুলো এখনো বিবর্ণ হয়ে যায়নি-বরঙচ আরো বেশী রঙ্গিন হয়েছে। আর অন্যজনের কি ভয়ঙ্কর ভয়াবহতা অপেক্ষা করছে। কি নির্মমতা ডিজাস্টার তার দিকে নির্মম থাবা নিয়ে এগিয়ে আসছে সে জানেনা-ভাবতেও হয়ত চায়না। সে শুধু কিছুক্ষনের জন্য দেখতে চায় বিমানের ছোট্ট জানলায় চোখ ডুবিয়ে এই মহাবিশ্বের অতিক্ষুদ্র ছায়াপথের অতি নগন্য একটা সৌরজগতের মাঝারি মানের একটা নীল গ্রহকে। হয়ত তার ধারনা যেখানে রয়েছে শুধু হিংসা হানাহানি প্রতারনা দৈন্যতা আর সুন্দর সপ্নের নির্মম পরিনতি!এয়ার এশিয়ায় এক বুন্দ পানিও কিনে খেতে হয়।এদের বিমানে চড়ার পূর্ব অভিজ্ঞতা যাদের নেই স্বভাবতই ব্যাপারটা তাদের খটকা লাগবে। তবে দু-য়েকবার দেখলেই ব্যাপারটা স্বাভাবিক ঠেকবে। আকাশ পথে দাম যেখুব বেশী তা কিন্তু নয়।দেড় রিঙ্গিতের পানি মাত্র পাচ রিঙ্গিতে কিনতে হয়। ম্যাগাজিনের লোভনীয় খাবারের ছবি দেখে অর্ডার দিয়ে মাঝ মধ্যে মাথার চুল ছিড়তে হয় এই আর কি।মাগনা খাবার দিলে যাদের তিনবার খেলেও পেট ভরে না তারাই কিন্তু এখানা পান ভোজন না করে দিব্যি চার পাচ ঘন্টা কাটিয়ে দেয়। তবে তথাকতিথ মাগনা খাবার বাবদ অন্য বিমান সংস্থাগুলো যে পরিমান টাকা অগ্রিম নিয়ে নেয় তার তুলনায় এইটে অতি সস্তা!খাবারের ট্রলি নিয়ে এয়ার হোস্টেজদের এগিয়ে আসার শব্দে সে বাইরের পৃথিবী দেখার বাসনা আপাতত ক্ষান্ত দিয়ে উটের মত গলা উচু করে ক্লান্ত চোখ দুটো দিয়ে প্রচন্ড আকুতি নিয়ে অপেক্ষায় রইল কাছে আসার।ডানা থাকলে হয়তো সে তখুনি উড়ে গিয়ে ঝাপিয়ে পড়ত সেই ট্রলির উপরে ক্ষুধার্ত শকুনের মত।অবশেষে সেই ভয়ঙ্কর প্রতিক্ষার অবসান ঘটিয়ে ট্রলিটা এসে ভিড়ল আমাদের সিটের পাশে।সে সবার আগেই হাত বাড়াতে গিয়েই আবার কি ভেবে স সঙ্কোচে হাতখানা গুটিয়ে নিল।আমার পাশের যাত্রী ছোট্ট এক বোতল জুস নিয়ে টাকা বাড়িয়ে দিল দেখে তার সে কি বিস্ময়।লাজ লজ্জার মাথা খেয়ে করুন স্বরে বলেই ফেলল ভাই,এইখানে খাবার কি কিনে খাইতে হয়?দ্বীতিয় যাত্রী বেরসিক হাসি দিয়ে বলল,হ্য-আপনে জানেন না?দুঃখে হতাশায় ক্লান্তিতে লোকটার মুখাবয় ভেঙ্গে চুরে বিকৃত হয়ে গেল।...আদম ব্যাপারী তাকে ভুয়া ডাক্তারী সার্টিফিকেট দিয়ে মালয়েশিয়া পাঠিয়েছিল। এখানে এসে ফের ডাক্তারী পরিক্ষায় অনুত্তীর্ন হওয়ার কারনে মালিক তাকে কাজ দিতে রাজি হয়নি।সে বিক্রি হয়ে যায় অন্য এক মালিকের কাছে। সেখানকার কঠিন কাজের ধকল সহ্য করতে না পারায় সেই মালিক আবার বিক্রি করে দেয় আরেকজনের কাছে। এইভাবে সে হাত বদল হয় তিনবার। শেষ চাকরিটা জুটেছিল জনমানব শুন্য গহীন অরন্যে পাম ট্রি পরিচর্যার কাজে। জঙ্গল পরিস্কার,আগাছা সাফ,সার পানি দেয়া ছিল তার নিত্যদিনের কাজ।ছয়মাস হাড়ভাঙ্গা খাটুনির বিনিময়ে তার ভাগ্যে জুটেছিল দুইবেলা খাবার আর সাকুল্যে বার হাজার টাকা। নিজে কপর্দক শুন্য হয়ে সেই বার হাজার টাকা সে দেশে পাঠিয়ে দিয়েছিল।তার পর থেকে তাকে আর কোন বেতন দেয়া হয়নি। বেতনের জন্য বারংবার মালিকের দুয়ারে ধর্না দেয়ায় তার ভাগ্যে জুটেছিল নির্জন কারাবাস।দিনের পর দিন সেই অন্ধকার কুঠুরিতে মালিক তাকে আটকে রেখেছিল।সারাদিনে একবেলা খাবার তার ভাগ্যে জুটত।সে কি কঠিন জীবন-বলতে বলতে হাউমাউ করে কেদে ফেলল সে।অবশেষে একদিন ছাড়া পেল সে শুধুমাত্র পরনে থাকা সেই জরাজীর্ন পোষাকে।নিজের পোষাক-আষাকতো দুরের কথা পাসপোর্টটা পর্যন্ত দেয়া হয়নি তাকে।হাতের মুঠোয় ধরা ছিল শুধু একখানা সেলফোন তাও জিরো ক্রেডিটের। অভুক্ত জীর্ন ক্লান্ত বহু কষ্টে সে এসে পৌছেছিল কুয়ালালামপুরে।অবশেষে কোন এক বাঙ্গালী সহৃদের সহায়তায় সে গিয়ে পৌছায় বাংলাদেশ এম্বাসীতে।এম্বাসীর এক উর্দ্ধতন কর্মকর্তার পায়ের উপর আছড়ে পড়ল গিয়ে, ভাইজান আমারে বাচান। আমি আর এইদেশে এথাকবনা।আমারে দেশে পাঠায় দেন।তার সেই করুন আর্তির বিনিময়ে কোন সাহায্যতো পায়ইনি উল্টো খেতে হয়েছিল গলাধাক্কা!এম্বাসীর আশে পাশে তখন কয়েক'শ বাঙ্গালীর ভিড়। প্রায় অভুক্ত অর্ধ উলঙ্গ সব আদমেরই তখন একই দশা!পরিচয়পত্র বিহীন সব হারানো সেই মানুষগুলো মরে যাবার আগে একবার তাদের প্রিয়জনের সান্নিধ্য পেতে চায়-ফিরে যেতে চায় তার প্রিয় জন্মভুমিতে।পরের চার চারটা মাস সেই শ’চারেক মানুষ কি অবর্ননীয় দুঃখ কষ্ট কায়-ক্লেশে সেই এম্বাসীর সামনের একটা ব্রীজের নীচে দিন যাপন করেছে তার বর্ননা আর নাইবা করলাম।মফিজ নামের সেই অর্ধবয়সী সবহারানো সেই লোকটাও বলতে চায়না সেইসব দুঃখের দিনের কথা-শুধু বললেন ভাইরে এর থেকে অনেক আরামে ছিলাম সেই জেলখানায়। একবেলা খাবারতো পাইতাম। উপায়ান্তর না দেখে শেষ পর্যন্ত ভিক্ষা করছি।তবুও কিন্তু এতগুলো লোকের আহাজারী সেই সব অর্বাচীন কর্মকর্তাদের কর্ণকুহরে পৌছায়নি।তার ভাষায়;ক্ষুধার্থ পেটে ঘুম আসছিলনা।তন্দ্রাচ্ছন্ন হয়ে মরার মত নির্জিব হয়ে পড়ে ছিলাম সবাই। আচমকা শত শত গাড়ি আর সাইরেনের শব্দ।চোখ মেলে দেখি যেন সারা কুয়ালালামপুরের পুলিশ আমাদের ঘিরে ফেলেছে। এত হাজার পুলিশ আমি দেখি না কখনো। প্রতিটা লোকের জন্য কমপক্ষে তিন চারজন করে।পালানোর কোন সুযোগ ছিলনা।ফের জেলে। চল্লিশ দিন জেল খানায় ছিলাম। সেইখানেও জুটত মাত্র একবেলা খাবার।আমি জানিনা কে যেন আমার টিকিটখান কইরা দিছে।কালকে ওরা কইল আজকে আমারে দেশে পাঠায় দিবে। আজকে সকালে পুলিশের গাড়িতে করে এয়ারপোর্টে ইমিগ্রেশনের ঝামেলা মিটিয়ে তাকে প্লেনে তুলে দিয়ে হাতে একটা কাগজ ধরিয়ে দিয়ে গেছে। দলিলের মত বাঙলাদেশী এম্বাসি কতৃক প্রাপ্ত সেই কাগজখানা এখন তার একমাত্র সম্পত্তি।সেইটেই সে পরম যত্নে বুকে জড়িয়ে আছে। সামনের সিটের পকেট থেকে যাত্রীদের বমি করার একটা আনকোড়া প্যাকেট বের করে অনেক্ষন উল্টে পাল্টে দেখে অনুচ্চ কন্ঠে অনুমতি নেয়ার ভঙ্গীতে আমার দিকে চেয়ে বলল,ভাই আমি কি এই প্যাকেটটা নিতে পারি-এর মধ্যে এই কাগজ গুলা ঢুকাইতাম।ভাবখানা এমন যে আমিই এই প্যাকেটটার মালিক- আমার ইশারার উপরেই নির্ভর করছে এই মহামুল্যবান জিনিস হস্তগত করা না করা।আমি 'হ্যা' বলাতে সে ভীষন খুশি হয়ে কি পরম যত্নে সেই সেই কাগজগুলো ভাজ করে প্যাকেটটাতে রাখল। অতিতুচ্ছ বমির প্যাকেটের এমন সদগতি আর আর এইজন্মে মনে হয় কেউ দেখেনি। মালয়েশিয়ান পুলিশ তার মোবাইল ফোনখানা পর্যন্ত কেড়ে রেখে দিয়েছে।সেইটের অর্থনৈতিক মুল্য মনে হয় এই বমির প্যাকেটের থেকেও কম। কেননা ক্ষুধার তাড়নায় অনেকবারই সেই সেলফোন খানা বিকোতে চেয়েছে কেউ একবেলা খাবারের বিনিময়েও কিনতে চায়নি!আপনি এয়ারপোর্ট থেকে কোথায় যাবেন-বাড়িতে?না আগে সেই আদম ব্যাপারীর অফিসে যাব মতিঝিলে। তারে আমার চেহারাটা দেখাইতে হবে না?যাবার ভাড়া আছে?না।তাহলে যাবেন ক্যামনে?ভিক্ষা করার অভ্যাসতো আছেই। দেখি কারো হাতে পায় ধইরা বাসের ভাড়াটা জোগাড় করতে পারি কিনা।আমি আর কোন কথা বলিনি। আমার থেকে অবস্থা তখন তার বিশেষ ভাল না।তিনটে দেশ ঘুরে হাতে রাখা শেষ ডলারটাও খরচ করে এসেছি।ট্রাভেল আর ক্রেডিট কার্ডে কিছু টাকা পয়সা আছে -কিন্তু এই আকাশ পথে সেটা মুল্যহীন।ওয়ালেটের এককোনায় অবশ্য কিছু বাংলাদেশী মুদ্রা আছে -এয়াপোর্ট থেকে বাসায় ট্যাক্সি ভাড়ার জন্য রাখা।তবে আমার হাতে অনেক অপসন-ছোট ভাইয়ের কাছে কিছু টাকা আছে বলে মনে হয় না হলে বাসায় ফেরার পথে এটিএম বুথ থেকে টাকা তুলে নিতে পারি কিংবা ভাড়াটা বাসায় গিয়েও দিতে পারি।যাহোক বেশী নাটকীয়তা না করে চুপচাপ বসে রইলাম তখন।বিমান ল্যান্ড করার পরে সবাই যখন নামার জন্য হুড়োহুড়ি করছে সেই ফাকে সেই সামান্য কটা টাকা আর পার্সোনাল কার্ড অতি সংকোচে তার হাতে গুজে দিয়ে বললাম,-আপাতত সেই আদম ব্যাপারীরর অফিসে যান-সমস্যা হলে আমাকে ফোন দিয়েন, দেখি কিছু করতে পারি কি না।আমি ভেবেছিলাম ব্যাস্তার ভান করে কেটে পড়ব তখুনি। কিন্তু সে সুযোগ আমাকে না দিয়ে খপ করে হাত খানা ধরে হাউমাউ করে কেদে ফেলল-‘ভাইজান আমারে একখান চাকরি দিবেন?’ভীষন বিব্রত আমি প্রতিউত্তরে কিই বা বলার ছিল? শুধু সান্তনার স্বরে নিচু কন্ঠে বললাম,চেস্টা করব- আপনি আমার সাথে যোগাযোগ কইরেন।বিমান থেকে নামার পরে তাকে আর কোথাও খুজে পেলামনা। ভেবেছিলাম অর্থাভাবে যে ভিক্ষে করতে পারে নিঃস্ব সেই মানুষট খড়কুটো ধরে বাঁচবার তাগিদে অবশ্যই আমার কাছে ফোন করবে। ফেরার পথে ট্যাক্সিতে বসে তাকে এড়াব কিভাবে,কলুষিত আর সংকীর্ন মন আমার সেই ফন্দি আটছিল।তবে না,দারিদ্রতা মানুষকে সব সময় অভব্য কিংবা নির্লজ্জ করে না। দু সপ্তাহ হতে চলল সে আর আমার সাথে যোগাযোগ করেনি- কখনো করবে বলে মনে হয়না।
খুনি
১৬ ই মে, ২০০৯ রাত ৯:১২
বুথ থেকে টাকা তুলে উল্টো দিকের রাস্তায় এসে দাড়ালাম রিক্সায় করে ফের পল্লবীতে যাব বলে। এসময়টাতে খালি রিক্সা পাওয়া একটু কষ্টকর। আকাশ মেঘাচ্ছন্ন-গতকাল তুমুল ঝড়বৃষ্টি হওয়াতে হাওয়াটা বেশ ঠান্ডা। সে কারনেই এই ভর দুপুরে রাস্তায় দাড়িয়ে থাকতেও খারাপ লাগছিলনা।একটু বাদে, দুর থেকে খালি রিক্সা নজরে আসতেই হাত তুললাম।রিক্সাটা কাছাকাছি হতেই মনে হল চালকের মুখ আমার চেনা। সে আমাকে দেখেই তার পান খাওয়া কালচে লাল দাতগুলো বের করে বেশ একটা মোলায়েম হাসি দিল। কাছাকাছি এসে হার্ড ব্রেক কষে জিজ্ঞেস করল,'বস কই যাবেন?আমিও একটু হেসে বললাম, 'পল্লবী।-কেমন আছেন? ওঠেন।আমি রিক্সায় উঠতে উঠতে বললাম, 'এইতো। কি ব্যাপার তুমি বাস ছেড়ে রিক্সায় ক্যান?আবলুস কাঠের মত গায়ের রঙ্গের শক্তপোক্ত এই ছেলেটা একসময় আমি যেই বাসায় ভাড়া থাকতাম সেখানকার দারোয়ান ছিল।পরে বাড়িওয়ালার সাথে ঝগড়া করে চাকরি ছেড়ে দিয়ে বাসের হেল্পার হয়।বহুদিন দেখেছি বাসের রড় ধরে ঝুলতে ঝুলতে বাসের গায়ে থাপ্পর মেরে চিৎকার করে বলছে ‘এই ডাইরেক্ট গুলিস্থান-ডাইরেক্ট ডাইরেক্ট। যাওয়া আসার পথে চোখাচোখি হয়ে গেলে কিঞ্চিৎ লজ্জা পেয়ে সালাম দিয়ে বলত,ভাই ভাল আছেন?দারোয়ানের চাকরি ছেড়ে বাসের হেল্পারের চাকরি নেয়াটা যে স্ট্যাটাসের অবনমন এটা সে ভাল করেই জানত।তাই লজ্জায় সে বেশী কথা বাড়াত না।একদিন দেখলাম সে আস্ত বাসই চালাচ্ছে। ভাবলাম, যাক বেচারার একটা হিল্লে হল।কিন্তু একি এখন দেখি সে বাস ছেড়ে রিক্সায়! কাহিনী বুঝলাম না?সেজন্যই কৌতুহলী হয়ে তাকে প্রশ্নটা করা।সে পিছন ফিরে হেসে বলল, না ভাই বাস আমার ছুট করে না।-কেন? -ভাই বাস চালাইতে গিয়া দুই দুইখান মার্ডার করছি। ওর থেইক্যা কানে ধরছি আর বাস চালামু না।আমি ভীষন অবাক ও মর্মাহত হয়ে বললাম, 'দুই দুইখান মার্ডার মানে দুইজন লোককে মেরে ফেলেছ! কোথায় করেছ?-বাংলা কলেজের সামনে।-তার মানে কি- তারা বাংলা কলেজের ছাত্র ছিল?-একজন ছাত্রের থেইক্যা বড়- নেতা ছিল।-ধরা পর নাই?-পড়ছিলাম ট্যাক্সি ক্যাব ধাওয়া দিয়া আমারে ধইরছিল-মাইর খাও নাই?-দুই চাইরখান কিল ঘুষি দিছিল- এর মইধ্যে পুলিশ আইয়া গেল- পরে শুরু হইল ছাত্র পুলিশের মারামারি-এই ফাকে আমি পুলিশের ঠ্যাং এর ফাক দিয়া পালাইছিলাম।পরেরটা?-ওইডা গার্মেন্টস এর ছেমড়ি ছিল।(কথাটা এমন ভাবলেশহীন কন্ঠে তাচ্ছিল্যের সুরে বলল যে মনে হল কোন তেলাপোকা ছাড়পোকা মেরেছে!)-ওইবার ধরা খাও নাই।-নাহ- বাস যে টান দিছিলাম, মাথা টাথা পুরা আওলাইয়া গেছিল। আর কয়জনতো মইরতে মইরতে বাইচ্যা গ্যাছে!বস বাস চালাইলে পয়ষা থাকে না-পাচশ কামাইলে পাচশ’ই খরচ হইয়া যায়। আর এহন পত্যেকদিন তিন’শ মিনিমাম কামাই হয়। টাকা জমাইয়া দেশে জমি কিনছি…সে বলে যাচ্ছিল তার কথা আর আমি বিমর্ষ মনে ভাবছি অন্য কিছু;দুই দুইজন মানুষকে খুন করে সে কত অবলীলায় বলে যাচ্ছে তার বীরত্বের কাহিনী। আমি এই মূহুর্তে বসে আছি একজন খুনীর রিক্সায়। ভাগ্য ভাল যে সে এখন রিক্সা চালায় না হলে আর কত মায়ের বুক খালি হত কে জানে।গন্তব্য এসে গেলে রিক্সা থেকে নেমে ভাড়াটা দিতেই সে বেশ বিগলিত হাসি দিয়ে বলল, 'বস পারলে আমারে একখান চাকরি দিয়েন।'-এই না তুমি বললা, রিক্সা চালায় ভাল আছ-তাইলে আবার চাকরি ক্যান?ড়এই রোদে রিক্সা চালানো খুব কষ্ট। এমনিই কালা মানুষ- দেখেননা আরো কালা হইয়া গেছি।গালিটা গলার কাছে এসে আটকে গেল,’শালা রঙ নিয়ে তোর কত টেনশন আর দুই দুইজন মানুষরে খুন করলি সেই নিয়া তোর কোন টেনশন নাই!'
বুথ থেকে টাকা তুলে উল্টো দিকের রাস্তায় এসে দাড়ালাম রিক্সায় করে ফের পল্লবীতে যাব বলে। এসময়টাতে খালি রিক্সা পাওয়া একটু কষ্টকর। আকাশ মেঘাচ্ছন্ন-গতকাল তুমুল ঝড়বৃষ্টি হওয়াতে হাওয়াটা বেশ ঠান্ডা। সে কারনেই এই ভর দুপুরে রাস্তায় দাড়িয়ে থাকতেও খারাপ লাগছিলনা।একটু বাদে, দুর থেকে খালি রিক্সা নজরে আসতেই হাত তুললাম।রিক্সাটা কাছাকাছি হতেই মনে হল চালকের মুখ আমার চেনা। সে আমাকে দেখেই তার পান খাওয়া কালচে লাল দাতগুলো বের করে বেশ একটা মোলায়েম হাসি দিল। কাছাকাছি এসে হার্ড ব্রেক কষে জিজ্ঞেস করল,'বস কই যাবেন?আমিও একটু হেসে বললাম, 'পল্লবী।-কেমন আছেন? ওঠেন।আমি রিক্সায় উঠতে উঠতে বললাম, 'এইতো। কি ব্যাপার তুমি বাস ছেড়ে রিক্সায় ক্যান?আবলুস কাঠের মত গায়ের রঙ্গের শক্তপোক্ত এই ছেলেটা একসময় আমি যেই বাসায় ভাড়া থাকতাম সেখানকার দারোয়ান ছিল।পরে বাড়িওয়ালার সাথে ঝগড়া করে চাকরি ছেড়ে দিয়ে বাসের হেল্পার হয়।বহুদিন দেখেছি বাসের রড় ধরে ঝুলতে ঝুলতে বাসের গায়ে থাপ্পর মেরে চিৎকার করে বলছে ‘এই ডাইরেক্ট গুলিস্থান-ডাইরেক্ট ডাইরেক্ট। যাওয়া আসার পথে চোখাচোখি হয়ে গেলে কিঞ্চিৎ লজ্জা পেয়ে সালাম দিয়ে বলত,ভাই ভাল আছেন?দারোয়ানের চাকরি ছেড়ে বাসের হেল্পারের চাকরি নেয়াটা যে স্ট্যাটাসের অবনমন এটা সে ভাল করেই জানত।তাই লজ্জায় সে বেশী কথা বাড়াত না।একদিন দেখলাম সে আস্ত বাসই চালাচ্ছে। ভাবলাম, যাক বেচারার একটা হিল্লে হল।কিন্তু একি এখন দেখি সে বাস ছেড়ে রিক্সায়! কাহিনী বুঝলাম না?সেজন্যই কৌতুহলী হয়ে তাকে প্রশ্নটা করা।সে পিছন ফিরে হেসে বলল, না ভাই বাস আমার ছুট করে না।-কেন? -ভাই বাস চালাইতে গিয়া দুই দুইখান মার্ডার করছি। ওর থেইক্যা কানে ধরছি আর বাস চালামু না।আমি ভীষন অবাক ও মর্মাহত হয়ে বললাম, 'দুই দুইখান মার্ডার মানে দুইজন লোককে মেরে ফেলেছ! কোথায় করেছ?-বাংলা কলেজের সামনে।-তার মানে কি- তারা বাংলা কলেজের ছাত্র ছিল?-একজন ছাত্রের থেইক্যা বড়- নেতা ছিল।-ধরা পর নাই?-পড়ছিলাম ট্যাক্সি ক্যাব ধাওয়া দিয়া আমারে ধইরছিল-মাইর খাও নাই?-দুই চাইরখান কিল ঘুষি দিছিল- এর মইধ্যে পুলিশ আইয়া গেল- পরে শুরু হইল ছাত্র পুলিশের মারামারি-এই ফাকে আমি পুলিশের ঠ্যাং এর ফাক দিয়া পালাইছিলাম।পরেরটা?-ওইডা গার্মেন্টস এর ছেমড়ি ছিল।(কথাটা এমন ভাবলেশহীন কন্ঠে তাচ্ছিল্যের সুরে বলল যে মনে হল কোন তেলাপোকা ছাড়পোকা মেরেছে!)-ওইবার ধরা খাও নাই।-নাহ- বাস যে টান দিছিলাম, মাথা টাথা পুরা আওলাইয়া গেছিল। আর কয়জনতো মইরতে মইরতে বাইচ্যা গ্যাছে!বস বাস চালাইলে পয়ষা থাকে না-পাচশ কামাইলে পাচশ’ই খরচ হইয়া যায়। আর এহন পত্যেকদিন তিন’শ মিনিমাম কামাই হয়। টাকা জমাইয়া দেশে জমি কিনছি…সে বলে যাচ্ছিল তার কথা আর আমি বিমর্ষ মনে ভাবছি অন্য কিছু;দুই দুইজন মানুষকে খুন করে সে কত অবলীলায় বলে যাচ্ছে তার বীরত্বের কাহিনী। আমি এই মূহুর্তে বসে আছি একজন খুনীর রিক্সায়। ভাগ্য ভাল যে সে এখন রিক্সা চালায় না হলে আর কত মায়ের বুক খালি হত কে জানে।গন্তব্য এসে গেলে রিক্সা থেকে নেমে ভাড়াটা দিতেই সে বেশ বিগলিত হাসি দিয়ে বলল, 'বস পারলে আমারে একখান চাকরি দিয়েন।'-এই না তুমি বললা, রিক্সা চালায় ভাল আছ-তাইলে আবার চাকরি ক্যান?ড়এই রোদে রিক্সা চালানো খুব কষ্ট। এমনিই কালা মানুষ- দেখেননা আরো কালা হইয়া গেছি।গালিটা গলার কাছে এসে আটকে গেল,’শালা রঙ নিয়ে তোর কত টেনশন আর দুই দুইজন মানুষরে খুন করলি সেই নিয়া তোর কোন টেনশন নাই!'
ফলের স্বাদে রুশ চুম্বন
২১ শে মে, ২০০৯ সকাল ১০:৪৮
আপু দ্যাখ দ্যাখ চেরী- ওমা এখানে চেরী পাওয়া যায়! আরে আপু দ্য--খ কি-উই ও আছে এখানে!! সদ্য উদ্ভোধন হওয়া আগোরায় ঘুরতে গিয়ে বিদেশী ফল দেখে মেয়ে দুটোর এমন আহ্লাদী আর ন্যাকা কথা শুনে গা জ্বলে গেল।অতি সযতনে থরে থরে সাজানো বিদেশী ফলের পাশে আমাদের আমাদের আতা কলা আনারস চালতা যেন লজ্জায় কুকড়ে আছে।আমদানী করা মহার্ঘ সেই ফলের দাম আর দাপটের কাছে এরা যেন অসহায়।আম কলা আনারসের মত ফল অনেক দেশেই মেলে তবে প্রবাসের বাজারে এইসব ফলের দেখা পেলে এখনো নিকটজনের দেখা পাওয়ার মত উৎফুল্ল হই। দেড় যুগ আগের কথা বলছি-রুশীয় গ্রীস্মে চেরী তখন যেন আমাদের বড়ই এর মত সহজলভ্য। রাস্তা দিয়ে যেতে যেতে দু-চার থোকা পাকা চেরী ছিড়ে নিলেও কেউ ফিরে তাকাত না।বহু কিসিমের আপেল আঙ্গুর নাশপাতি আর মাল্টা সারা বছরই মিলত- কখনো টাটকা কখনো শুকনো কিংবা কাচের জারে প্রিজার্ভ করা। অন্য কোন ফল তখন নজরে পড়ত না খুব একটা। আমার শহরের সবচে বড় সপিং মলটায় এক সুদৃশ্য কাচের বাক্সে একবার একখানা মাত্র নিঃসঙ্গ আনারস যেটাকে এদের ভাষায় বলে আনানাস সেইটে দেখে চমকে উঠেছিলাম। বাপরে আনারসের কি সৌভাগ্য! বাইরে লেখা ছিল বিক্রির জন্য নহে। তারমানে শুধু প্রদর্শনের এত আয়োজন! বেশীরভাগ রুশরাই তখনো হয়ত শুধু বইয়ের পাতায় আনারসের ছবি দেখেছে।তাজা একখান আনারস দেখার লোভ সংবরন করতে না পেরে সেই কাচের ঘরের উপর অনেকেই হুমড়ি খেয়ে পড়ত। এমনি করে মাস গেল- রুপের জেল্লাও তার গেল কমে। পুরোপুরি সম্মান হানির পূর্বেই কোন সহৃদয় হয়তো তাকে ভক্ষন করে বহুদিনের পূষে রাখা খায়েস মিটিয়েছিল। তবুও মাসখানেক তার কদর দেখে আমি ভীষন উৎফুল্ল হয়েছিলাম- মনে হচ্ছিল সে যেন আমারই স্বজাতি।বছর দুই বাদে মস্কোর বাজারে প্রথম দেখা মিলল রসালো মোলায়েম কাচা হলুদ আর মাখনের রঙ্গে রাঙ্গানো দামী স্টিকার সাটানো সেই দেশে অতি দুস্প্রাপ্য সাগর কলা! ভীষন পরিচিত সেই ফল আমার দারুন সেজেগুজে দোকানীর কোলের কাছের ডালাটায় এমন ভঙ্গীতে বসে আছে যে তার কাছে যেতে বড় সঙ্কোচ আর দ্বীধা ছিল মনে।তবুও গেলাম।পুরোনো প্রেয়সীকে নবরুপে দেখে তার রস আস্বাদনের বড় স্বাধ হল। কিন্তু দাম শুনে এমন ছ্যাকা লাগল যে তার কাদির প্রান্ত ধরার সাহস হলনা।আসলে সস্তা খেতে খেতে আমার মনটাই ততদিনে ছোট হয়ে গেছে-একটাকার বিনিময় মুল্য দশ রুবল হলেও সেই দশটা রুবল আমার কাছে দশটা স্বর্ণ মুদ্রার মতই মহার্ঘ!ছুতে না পারি কিংবা খেতে না পারি তবুও দুর থেকে রুপ সুধা ভোগ করতে তো বাধা নেই।নব্য এক প্রেমিক যুগল হাত ধরাধরি করে ঢলে ঢলে গলে গলে আসছিল ও পথ ধরেই –কাছে এসে কলার দ্যুতিময় রুপ দেখে থমকে গেল প্রেমিকা। প্রেমিকের কানের কাছে মুখ নিয়ে বিগলিত হেসে অতি আহ্লাদী কন্ঠে কি যেন বলল। প্রেমিক তার স্ত্রস্ত পায়ে দু’কদম এগিয়ে কলার মুল্য জিজ্ঞেস করেই যেন আতকে উঠল। ভীষন বিব্রতকর তার চেহারা দেখে আমার মত কৃপনেরও মনে চাইল দশটা রুবল দিয়ে ওকে সাহায্য করতে।প্রেমিকার আব্দার বলে কথা- অবশেষে এ পকেট থেকে খুচরো পয়সা ও পকেট থেকে দু-চারখানা আধ ময়লা নোট বের করে বহুক্ষন হিসেব মিলিয়ে সাকুল্যে একখানা কলা কিনল।কলার অবগুন্ঠন উন্মোচনের বাসনায় তাদের যেন তর সইছিল না। সামান্য দুরে গিয়েই আসন পেতে বসে পড়ল। তারপর … আমার দেশের সেই অতি তুচ্ছ কলার শত সহস্র বর্ষের জনম যেন সার্থক হল। ছেলেটা কি মোলায়েম ভঙ্গীতে যেন ব্যাথা না লাগে কলাটার মাথা থেকে একটু খানি ছিলে আলতো করে মেয়েটার ঠোটের ফাকে গুজে ধরল। মেয়েটার লোভাতুর চোখ তখন খুশীতে জ্বলজ্বল করছিল। তবুও তার কামড় দিতে সংকোচ হল। একটু খানি চুষে ফিরিয়ে দিল ছেলেটাকে-ছেলেটাও ফের একটু চুষে বাড়িয়ে ধরল তার ঠোটের খাজে। চলল তাদের রোমান্সের নতুন পর্ব। উদ্দেশ্য যেন কলা ভক্ষন নয়- রুশ প্রেমের প্রথম দিনেই যে চুম্বন এলেবেলে কিংবা পানসে হয়ে যায় সেইটের আবার নতুন আমেজে আস্বাদ গ্রহন।
আপু দ্যাখ দ্যাখ চেরী- ওমা এখানে চেরী পাওয়া যায়! আরে আপু দ্য--খ কি-উই ও আছে এখানে!! সদ্য উদ্ভোধন হওয়া আগোরায় ঘুরতে গিয়ে বিদেশী ফল দেখে মেয়ে দুটোর এমন আহ্লাদী আর ন্যাকা কথা শুনে গা জ্বলে গেল।অতি সযতনে থরে থরে সাজানো বিদেশী ফলের পাশে আমাদের আমাদের আতা কলা আনারস চালতা যেন লজ্জায় কুকড়ে আছে।আমদানী করা মহার্ঘ সেই ফলের দাম আর দাপটের কাছে এরা যেন অসহায়।আম কলা আনারসের মত ফল অনেক দেশেই মেলে তবে প্রবাসের বাজারে এইসব ফলের দেখা পেলে এখনো নিকটজনের দেখা পাওয়ার মত উৎফুল্ল হই। দেড় যুগ আগের কথা বলছি-রুশীয় গ্রীস্মে চেরী তখন যেন আমাদের বড়ই এর মত সহজলভ্য। রাস্তা দিয়ে যেতে যেতে দু-চার থোকা পাকা চেরী ছিড়ে নিলেও কেউ ফিরে তাকাত না।বহু কিসিমের আপেল আঙ্গুর নাশপাতি আর মাল্টা সারা বছরই মিলত- কখনো টাটকা কখনো শুকনো কিংবা কাচের জারে প্রিজার্ভ করা। অন্য কোন ফল তখন নজরে পড়ত না খুব একটা। আমার শহরের সবচে বড় সপিং মলটায় এক সুদৃশ্য কাচের বাক্সে একবার একখানা মাত্র নিঃসঙ্গ আনারস যেটাকে এদের ভাষায় বলে আনানাস সেইটে দেখে চমকে উঠেছিলাম। বাপরে আনারসের কি সৌভাগ্য! বাইরে লেখা ছিল বিক্রির জন্য নহে। তারমানে শুধু প্রদর্শনের এত আয়োজন! বেশীরভাগ রুশরাই তখনো হয়ত শুধু বইয়ের পাতায় আনারসের ছবি দেখেছে।তাজা একখান আনারস দেখার লোভ সংবরন করতে না পেরে সেই কাচের ঘরের উপর অনেকেই হুমড়ি খেয়ে পড়ত। এমনি করে মাস গেল- রুপের জেল্লাও তার গেল কমে। পুরোপুরি সম্মান হানির পূর্বেই কোন সহৃদয় হয়তো তাকে ভক্ষন করে বহুদিনের পূষে রাখা খায়েস মিটিয়েছিল। তবুও মাসখানেক তার কদর দেখে আমি ভীষন উৎফুল্ল হয়েছিলাম- মনে হচ্ছিল সে যেন আমারই স্বজাতি।বছর দুই বাদে মস্কোর বাজারে প্রথম দেখা মিলল রসালো মোলায়েম কাচা হলুদ আর মাখনের রঙ্গে রাঙ্গানো দামী স্টিকার সাটানো সেই দেশে অতি দুস্প্রাপ্য সাগর কলা! ভীষন পরিচিত সেই ফল আমার দারুন সেজেগুজে দোকানীর কোলের কাছের ডালাটায় এমন ভঙ্গীতে বসে আছে যে তার কাছে যেতে বড় সঙ্কোচ আর দ্বীধা ছিল মনে।তবুও গেলাম।পুরোনো প্রেয়সীকে নবরুপে দেখে তার রস আস্বাদনের বড় স্বাধ হল। কিন্তু দাম শুনে এমন ছ্যাকা লাগল যে তার কাদির প্রান্ত ধরার সাহস হলনা।আসলে সস্তা খেতে খেতে আমার মনটাই ততদিনে ছোট হয়ে গেছে-একটাকার বিনিময় মুল্য দশ রুবল হলেও সেই দশটা রুবল আমার কাছে দশটা স্বর্ণ মুদ্রার মতই মহার্ঘ!ছুতে না পারি কিংবা খেতে না পারি তবুও দুর থেকে রুপ সুধা ভোগ করতে তো বাধা নেই।নব্য এক প্রেমিক যুগল হাত ধরাধরি করে ঢলে ঢলে গলে গলে আসছিল ও পথ ধরেই –কাছে এসে কলার দ্যুতিময় রুপ দেখে থমকে গেল প্রেমিকা। প্রেমিকের কানের কাছে মুখ নিয়ে বিগলিত হেসে অতি আহ্লাদী কন্ঠে কি যেন বলল। প্রেমিক তার স্ত্রস্ত পায়ে দু’কদম এগিয়ে কলার মুল্য জিজ্ঞেস করেই যেন আতকে উঠল। ভীষন বিব্রতকর তার চেহারা দেখে আমার মত কৃপনেরও মনে চাইল দশটা রুবল দিয়ে ওকে সাহায্য করতে।প্রেমিকার আব্দার বলে কথা- অবশেষে এ পকেট থেকে খুচরো পয়সা ও পকেট থেকে দু-চারখানা আধ ময়লা নোট বের করে বহুক্ষন হিসেব মিলিয়ে সাকুল্যে একখানা কলা কিনল।কলার অবগুন্ঠন উন্মোচনের বাসনায় তাদের যেন তর সইছিল না। সামান্য দুরে গিয়েই আসন পেতে বসে পড়ল। তারপর … আমার দেশের সেই অতি তুচ্ছ কলার শত সহস্র বর্ষের জনম যেন সার্থক হল। ছেলেটা কি মোলায়েম ভঙ্গীতে যেন ব্যাথা না লাগে কলাটার মাথা থেকে একটু খানি ছিলে আলতো করে মেয়েটার ঠোটের ফাকে গুজে ধরল। মেয়েটার লোভাতুর চোখ তখন খুশীতে জ্বলজ্বল করছিল। তবুও তার কামড় দিতে সংকোচ হল। একটু খানি চুষে ফিরিয়ে দিল ছেলেটাকে-ছেলেটাও ফের একটু চুষে বাড়িয়ে ধরল তার ঠোটের খাজে। চলল তাদের রোমান্সের নতুন পর্ব। উদ্দেশ্য যেন কলা ভক্ষন নয়- রুশ প্রেমের প্রথম দিনেই যে চুম্বন এলেবেলে কিংবা পানসে হয়ে যায় সেইটের আবার নতুন আমেজে আস্বাদ গ্রহন।
বিয়ের পয়লা রাতে বিড়াল মারা বা মার্জার নিধন কাব্য:
২৬ শে মে, ২০০৯ দুপুর ১:১৪
সৈয়দ মুজতবা আলীর লেখা থেকে সংগ্রহকৃত-(পুরাটা না পড়লেও শেষটুকু পইড়েন)
অনেকেই বিয়ের পয়লা রাতে বিড়াল মারার বিষয়টি কি জানতে চায় বিজ্ঞজনের কাছে। বিজ্ঞরাও বেশ ভেবে চিন্তে একটা আগোছালো উত্তর দেয়। প্রশ্নকর্তা অবশ্য বেশীরভাগ ক্ষেত্রেই সেই উত্তর শুনে হতাশ হন!
ব্লগের পাঠকদের কেউ কেউ হয়ত জানতে পারেন এর সঠিক উত্তর কিন্তু এ অব্দি আমি এর সত্যিকারের কাহিনীটা শুনিনি। গদ্য সাহিত্য পাঠের সময় আমি সাধারনত প্রমান সাইজের কঠিন কঠিন কবিতাগুলোকে পাশ কাটিয়ে যাই। কিন্তু সেদিন মুজতবা আলী সমগ্রে ফের চোখ বুলাতে গিয়ে কি ভেবে ‘গরবে কুশ শব-ই আওয়াল’ বা মার্জার নিধন কাব্যটি পড়তে গিয়ে যেন অন্য রকম কিছু একটা আবিস্কার করলাম। আরে এইটেইতো খুজছিলাম মনে মনে বহুদিন ধরে।অধমের স্পর্ধা হল মুল কাব্যের সাথে গদ্যের মিশেলে আদি গল্পটি না জানা এই কবিতাটি না পড়া পাঠকদের সামনে তুলে ধরতে।ভুলভ্রান্তি হয়ে থাকলে পাঠকেরা ক্ষমাসুন্দর দৃস্টিতে দেখবেন বলে আশা করি।-কাব্যের শুরুতে বিস্তর দৃস্টি আকর্ষন পূর্বক কবি বলেছেন;পুরানা যদিও কেচ্ছা তবু হর্বকৎসমঝাইয়া দিবে নয়া হাল হকিকত।গল্পটা ইরানের দুর্দান্ত সুন্দরী দুই যমজ বোনকে নিয়ে। তাদের রুপের বর্ননা কবি এইভাবে করেছেন;ইরান দেশেতে ছিল যমজ তরুণী।ইয়া রঙ ইয়া ঠঙ, নানা গুনে গুণী।কোথায় লায়লী লাগে কোথায় শিরীনচোখেতে বিজলী খেলে ঠোঁটে বাজে বীণ।ওড়না দুলায়ে যবে দুই বোন যায়কলিজা আছাড় খায় জোড়া রাঙা পায়।তাদের দেখে নাকি রাস্তার ফকিরেরও মনে প্রমের দোলা লাগে। আর সেই রুপের তারিফ করতে গিয়ে সারা দেশের লোকই যেন জ্ঞান হারায়। রুপতো আছেই তার উপরে এতিম সেই কন্যাদ্বয় প্রচুর ধন সম্পদের মালিক।রুপ আর সেই অর্থ প্রাচূর্যের অহংকারে তাদের যেন মাটিতে পা পড়ে না।তাই দুই নারী চায় থাকিতে আজাদকলঙ্কের ভয়ে শুধু বিয়ে হৈল সাধতবে বিয়ে করার পরে কিভাবে স্বমীকে তাদের আজ্ঞাবহ দাস করে রাখা যায়?অনেক ভেবে চিন্তে তার একটা উপায় বের করল। তারা বিয়ে করবে শুধু এই শর্তে যে তাদের স্বামীদ্বয়কে প্রতিদিন সকালে পঞ্চাশ ঘা করে জুতার বাড়ি খেতে হবে!স্বভাবতই তাদের সেই শর্তের কথা শুনে সবাই হকচকিয়ে গেল!এইটে কোন কথা হল?কোন পুরুষের সাধ হবে আপন স্ত্রীর হাতে পঞ্চাশ ঘা করে জুতার বাড়ি খাওয়ার।সেই শহরে শত সহস্র বিবাহযোগ্য সুদশর্ন পুরুষ থাকা সত্বেও এমন অপমান জনক শর্তের কারনে কেউ এগিয়ে এলনা।এভাবেই কেটে গেল মাস বছর কিন্তু তারা থেকে গেল অনুঢ়া।সেই শহরেরই দুই আপন ভাই ফিরোজ আর মতিন। ভীষন দরিদ্র ছিল তারা।সারাদিন পেটের ধান্দায় ঘুরে বেড়ায়।খেটে খুটে চেয়ে চিন্তে কোনমতে অন্ন সংস্থায় হয়। এত কষ্ট যেন তাদের আর সহ্য হয়না।অবশেষে মতিন একদিন ফিরোজের কাছে প্রস্তার রাখল সেই দুই কন্যাকে বিয়ে করার। না হয় চোখ মুখ বুজে পঞ্চাশ ঘা জুতার বাড়িই সহ্য করলাম কিন্তু থাকতে পারবতো আরাম আয়েসে। ফিরোজের মনে দ্বীধা ছিল একটু তবুও ভাইয়ের প্ররোচনায় সে রাজী হল।বিশাল আয়োজন করে তাদের বিয়ে হল-তারপর…চলি গেল দুই ভাই ভিন্ন হাবেলিতেমগ্ন হইল মত্ত হইল রস কেলিতে।…. তিন মাস পরে বিঝ খুদার কুদ্রতেআচম্বিতে দু ভায়ের দেখা হল পথে।কোলাকুলি গলাগলি সিনা কলিজায়মরি মরি মেলা মেলি করে দুজনায়।ফিরোজের মাথায় বিশাল এক টাক দেখে তাজ্জব বনে গেল মতিন-একি অবস্থা মতিন?-কেন এইটেই তো হওয়া স্বাভাবিক আমি আশ্চর্য হচ্ছি এই দেখে তোমার মাথার চুল দেখি আগের মতই আছে একটাও পড়েনি বা পাকেনি। তোমার সাস্হ্য দেখি আগের থেকে অনেক ভাল হয়েছে,চেহারায়ও এসেছে চিকনাই। ব্যাপারকি বলতো ভাই?-আগে বল ব্যাপার কি তোর এই দুরবস্থা কেন?দেখেতো মনে হচ্ছে আগের থেকে খুব একটা ভাল অবস্থায় নেই। তাহলে এই সাদি করে লাভ কি হল?প্রতিউত্তরে বেশ কাচুমাচু হয়ে লজ্জায় মাথা নিচু করে ফিরোজ বলল,-প্রতিদিন সকালে জুতার মার খেতে হবে এই চিন্তায় রাতে ঘুম হয়না। খাবারেও রুচী নেই খেতে মন চায়না।কিন্তু তুমিতো দেখছি মার ধোর খেয় বেশ বহাল তবিয়তে আছ।-কি বলিস-কে মারবে আমায়! হায় হায় তোকে বুঝি এখনো জুতার বাড়ি খেতে হয়।ভীষন অবাক হল ফিরোজ, তার মানে?-আমার তো চুল ধরে পেটাতে পেটাতে মাথায় টাক পড়ে গেছে!-তাই নাকি? আমাকে পেটানোর দুঃসাহস ওর আছে নাকি! প্রথম রাতেই যে ধ্যাতানি দিয়েছি।-তাই নাকি ক্যামনে-ক্যামনে?-শোন তাহলে বলছি। আমি আগে থেকেই জানতাম আমার বিবির খুব পেয়ারের একটা বেড়াল আছে- তাই নতুন একটা বুদ্ধি করে বাসর ঘরে ঢোকার আগেই সাথে করে নিয়ে গিয়েছিলাম একখানা ধারালো তলোয়ার।বিবি যখন নিজ হাতে করে পোলাও কোর্মা মুর্গী কালিয়া তুন্দুরী বাখরখানি নিয়ে যখন আমার কামরায় ঢুকল তার পেছন পেছন আসল সেই অতি আদরের বেড়াল। রসালো খাবারের গন্ধ পেয়ে যেই বিড়ালটা 'মিয়াউ' করেছে অমনি খাপ থেকে তলোয়ার বের করে দিলাম এক কোপ!এই দেখে বিবি আমার প্রায় মূর্ছা যায় আরকি! ভয়ে তা আতঙ্কে তার চেহারা ফ্যাকাসে হয়ে গেল।আমি সাহস পেয়ে হুঙ্কার দিলাম- দ্যাখ বিবি এমনিতেই আমার মেজাজ বহুৎ কড়া। কোন রকম টু ফ্যা করবাতো তোমারও দশা হবে এই বিড়ালের মতন।-এর পর সব জলের মত পরিস্কার। এখন বিবি আমার স্বামী অন্ত প্রান! স্বামীর মুখের উপর কথা বলবে সেই দুঃসাহস তার নাই।বাঘিনীরে একবার বেড়ি পরায় দিলে কই যায় তার তেজ!এর পরের অংশ আর গদ্যে নয় শুনুন কবির জবানীতে; ক্যাবাৎ” (ক্যায়া বাত)ক্যাবাৎ” বলি হাওয়া করি ভরচলিলা ফিরোজ মিঞা পৌছি গেল ঘর।মিলেছে দাওয়াই আর আন্দেশা তো নাইখুদার কুদ্রতে ছিল তালেবর ভাই।তারপর শোন কেচ্ছা শোন সাধুজনঠাস্যা দিল সেই দাওয়া পুলকিত মন।সে রাতে খানার ওক্তে খুল্যা তলোয়ার কাইট্যা না ফ্যালাইলো মিঞা কল্লা বিল্লিডারচক্ষু দুটি রাঙ্গা কইরা হুঙ্কারিয়া কয়“তবিয়ৎ আমার বুরা গর্বড়(গড়বড়) না সয়।হুঁশিয়ার হয়ে থেকো নয় সর্বনাশ।“সিতু মিয়া শুনে কয় সাবাশ শাবাশ!হায়রে বিধির লেখা, হায়রে কিস্মৎজহর হইয়া গেল যা ছিল শর্বৎ।ভোর না হইতেই বিবি লইয়ে পয়জারমিঞার বুকেতে চড়ি কানে ধরি তার।দমাদম মারে জুতা দাড়ি ছিঁড়ে কয়তবিয়ৎ তুমার বুরা বরদাস্ত না হয়?মেজাজ চড়েছে তব হয়েছ বজ্জাৎ?শাবুদ করিব তোমা শুনে লও বাৎআজ হইতে বেড়ে গেল রেশন তোমারপঞ্চাশ হইতে হৈল একশ’ পয়জারএত বলি মারে কিল মারে কানে টানইয়াল্লা ফুকারে সিতু,ভাগ্যে পুন্যবান।কোথায় পাগড়ী গেল কোথায় পজামাহোঁচট খাইয়া পড়ে কভু দেয় হামা।খুন ঝরে সর্ব অঙ্গে ছিড়ে গেছে দাড়িফিরোজ পৌছিল শেষে মতিনের বাড়ি।কাদিয়া কহিল’ ভাইয়া কি দিলি দাওয়াইলাগানু কামে এবে জান যায় তাই।‘বর্ণিল তাবৎ বাৎ, মতিন শুনিলআদর করিয়অ ভায়ে কোলে তুলি নিল।বুলাইয়া হাত মাথে বুলাইয়া দেহ‘বিড়াল মেরেছ’ কয় নাই সন্দেহ।ব্যাকারনে তবু দাদা, কৈরলা ভুল খাটি।বিলকুল বরবাদ সব গুড় মাটি।আসলে এলেমে তুমি করনি খেয়ালশাদির পয়লা রাতে বধিবে বিড়াল।শেষ কথা: সাতচল্লিশ কিংবা একাত্তর সব সময়ের জন্য এ কাব্য;স্বরাজ লাভের সাথে কালোবাজারীরে (কিংবা রাজাকারীরে)মারনি এখন তাই হাত হানো শিরে।শাদীর পয়লা রাতে মারিবে বিড়ালনা হলে বর্বাদ সব, তাবৎ পয়মাল।
সৈয়দ মুজতবা আলীর লেখা থেকে সংগ্রহকৃত-(পুরাটা না পড়লেও শেষটুকু পইড়েন)
অনেকেই বিয়ের পয়লা রাতে বিড়াল মারার বিষয়টি কি জানতে চায় বিজ্ঞজনের কাছে। বিজ্ঞরাও বেশ ভেবে চিন্তে একটা আগোছালো উত্তর দেয়। প্রশ্নকর্তা অবশ্য বেশীরভাগ ক্ষেত্রেই সেই উত্তর শুনে হতাশ হন!
ব্লগের পাঠকদের কেউ কেউ হয়ত জানতে পারেন এর সঠিক উত্তর কিন্তু এ অব্দি আমি এর সত্যিকারের কাহিনীটা শুনিনি। গদ্য সাহিত্য পাঠের সময় আমি সাধারনত প্রমান সাইজের কঠিন কঠিন কবিতাগুলোকে পাশ কাটিয়ে যাই। কিন্তু সেদিন মুজতবা আলী সমগ্রে ফের চোখ বুলাতে গিয়ে কি ভেবে ‘গরবে কুশ শব-ই আওয়াল’ বা মার্জার নিধন কাব্যটি পড়তে গিয়ে যেন অন্য রকম কিছু একটা আবিস্কার করলাম। আরে এইটেইতো খুজছিলাম মনে মনে বহুদিন ধরে।অধমের স্পর্ধা হল মুল কাব্যের সাথে গদ্যের মিশেলে আদি গল্পটি না জানা এই কবিতাটি না পড়া পাঠকদের সামনে তুলে ধরতে।ভুলভ্রান্তি হয়ে থাকলে পাঠকেরা ক্ষমাসুন্দর দৃস্টিতে দেখবেন বলে আশা করি।-কাব্যের শুরুতে বিস্তর দৃস্টি আকর্ষন পূর্বক কবি বলেছেন;পুরানা যদিও কেচ্ছা তবু হর্বকৎসমঝাইয়া দিবে নয়া হাল হকিকত।গল্পটা ইরানের দুর্দান্ত সুন্দরী দুই যমজ বোনকে নিয়ে। তাদের রুপের বর্ননা কবি এইভাবে করেছেন;ইরান দেশেতে ছিল যমজ তরুণী।ইয়া রঙ ইয়া ঠঙ, নানা গুনে গুণী।কোথায় লায়লী লাগে কোথায় শিরীনচোখেতে বিজলী খেলে ঠোঁটে বাজে বীণ।ওড়না দুলায়ে যবে দুই বোন যায়কলিজা আছাড় খায় জোড়া রাঙা পায়।তাদের দেখে নাকি রাস্তার ফকিরেরও মনে প্রমের দোলা লাগে। আর সেই রুপের তারিফ করতে গিয়ে সারা দেশের লোকই যেন জ্ঞান হারায়। রুপতো আছেই তার উপরে এতিম সেই কন্যাদ্বয় প্রচুর ধন সম্পদের মালিক।রুপ আর সেই অর্থ প্রাচূর্যের অহংকারে তাদের যেন মাটিতে পা পড়ে না।তাই দুই নারী চায় থাকিতে আজাদকলঙ্কের ভয়ে শুধু বিয়ে হৈল সাধতবে বিয়ে করার পরে কিভাবে স্বমীকে তাদের আজ্ঞাবহ দাস করে রাখা যায়?অনেক ভেবে চিন্তে তার একটা উপায় বের করল। তারা বিয়ে করবে শুধু এই শর্তে যে তাদের স্বামীদ্বয়কে প্রতিদিন সকালে পঞ্চাশ ঘা করে জুতার বাড়ি খেতে হবে!স্বভাবতই তাদের সেই শর্তের কথা শুনে সবাই হকচকিয়ে গেল!এইটে কোন কথা হল?কোন পুরুষের সাধ হবে আপন স্ত্রীর হাতে পঞ্চাশ ঘা করে জুতার বাড়ি খাওয়ার।সেই শহরে শত সহস্র বিবাহযোগ্য সুদশর্ন পুরুষ থাকা সত্বেও এমন অপমান জনক শর্তের কারনে কেউ এগিয়ে এলনা।এভাবেই কেটে গেল মাস বছর কিন্তু তারা থেকে গেল অনুঢ়া।সেই শহরেরই দুই আপন ভাই ফিরোজ আর মতিন। ভীষন দরিদ্র ছিল তারা।সারাদিন পেটের ধান্দায় ঘুরে বেড়ায়।খেটে খুটে চেয়ে চিন্তে কোনমতে অন্ন সংস্থায় হয়। এত কষ্ট যেন তাদের আর সহ্য হয়না।অবশেষে মতিন একদিন ফিরোজের কাছে প্রস্তার রাখল সেই দুই কন্যাকে বিয়ে করার। না হয় চোখ মুখ বুজে পঞ্চাশ ঘা জুতার বাড়িই সহ্য করলাম কিন্তু থাকতে পারবতো আরাম আয়েসে। ফিরোজের মনে দ্বীধা ছিল একটু তবুও ভাইয়ের প্ররোচনায় সে রাজী হল।বিশাল আয়োজন করে তাদের বিয়ে হল-তারপর…চলি গেল দুই ভাই ভিন্ন হাবেলিতেমগ্ন হইল মত্ত হইল রস কেলিতে।…. তিন মাস পরে বিঝ খুদার কুদ্রতেআচম্বিতে দু ভায়ের দেখা হল পথে।কোলাকুলি গলাগলি সিনা কলিজায়মরি মরি মেলা মেলি করে দুজনায়।ফিরোজের মাথায় বিশাল এক টাক দেখে তাজ্জব বনে গেল মতিন-একি অবস্থা মতিন?-কেন এইটেই তো হওয়া স্বাভাবিক আমি আশ্চর্য হচ্ছি এই দেখে তোমার মাথার চুল দেখি আগের মতই আছে একটাও পড়েনি বা পাকেনি। তোমার সাস্হ্য দেখি আগের থেকে অনেক ভাল হয়েছে,চেহারায়ও এসেছে চিকনাই। ব্যাপারকি বলতো ভাই?-আগে বল ব্যাপার কি তোর এই দুরবস্থা কেন?দেখেতো মনে হচ্ছে আগের থেকে খুব একটা ভাল অবস্থায় নেই। তাহলে এই সাদি করে লাভ কি হল?প্রতিউত্তরে বেশ কাচুমাচু হয়ে লজ্জায় মাথা নিচু করে ফিরোজ বলল,-প্রতিদিন সকালে জুতার মার খেতে হবে এই চিন্তায় রাতে ঘুম হয়না। খাবারেও রুচী নেই খেতে মন চায়না।কিন্তু তুমিতো দেখছি মার ধোর খেয় বেশ বহাল তবিয়তে আছ।-কি বলিস-কে মারবে আমায়! হায় হায় তোকে বুঝি এখনো জুতার বাড়ি খেতে হয়।ভীষন অবাক হল ফিরোজ, তার মানে?-আমার তো চুল ধরে পেটাতে পেটাতে মাথায় টাক পড়ে গেছে!-তাই নাকি? আমাকে পেটানোর দুঃসাহস ওর আছে নাকি! প্রথম রাতেই যে ধ্যাতানি দিয়েছি।-তাই নাকি ক্যামনে-ক্যামনে?-শোন তাহলে বলছি। আমি আগে থেকেই জানতাম আমার বিবির খুব পেয়ারের একটা বেড়াল আছে- তাই নতুন একটা বুদ্ধি করে বাসর ঘরে ঢোকার আগেই সাথে করে নিয়ে গিয়েছিলাম একখানা ধারালো তলোয়ার।বিবি যখন নিজ হাতে করে পোলাও কোর্মা মুর্গী কালিয়া তুন্দুরী বাখরখানি নিয়ে যখন আমার কামরায় ঢুকল তার পেছন পেছন আসল সেই অতি আদরের বেড়াল। রসালো খাবারের গন্ধ পেয়ে যেই বিড়ালটা 'মিয়াউ' করেছে অমনি খাপ থেকে তলোয়ার বের করে দিলাম এক কোপ!এই দেখে বিবি আমার প্রায় মূর্ছা যায় আরকি! ভয়ে তা আতঙ্কে তার চেহারা ফ্যাকাসে হয়ে গেল।আমি সাহস পেয়ে হুঙ্কার দিলাম- দ্যাখ বিবি এমনিতেই আমার মেজাজ বহুৎ কড়া। কোন রকম টু ফ্যা করবাতো তোমারও দশা হবে এই বিড়ালের মতন।-এর পর সব জলের মত পরিস্কার। এখন বিবি আমার স্বামী অন্ত প্রান! স্বামীর মুখের উপর কথা বলবে সেই দুঃসাহস তার নাই।বাঘিনীরে একবার বেড়ি পরায় দিলে কই যায় তার তেজ!এর পরের অংশ আর গদ্যে নয় শুনুন কবির জবানীতে; ক্যাবাৎ” (ক্যায়া বাত)ক্যাবাৎ” বলি হাওয়া করি ভরচলিলা ফিরোজ মিঞা পৌছি গেল ঘর।মিলেছে দাওয়াই আর আন্দেশা তো নাইখুদার কুদ্রতে ছিল তালেবর ভাই।তারপর শোন কেচ্ছা শোন সাধুজনঠাস্যা দিল সেই দাওয়া পুলকিত মন।সে রাতে খানার ওক্তে খুল্যা তলোয়ার কাইট্যা না ফ্যালাইলো মিঞা কল্লা বিল্লিডারচক্ষু দুটি রাঙ্গা কইরা হুঙ্কারিয়া কয়“তবিয়ৎ আমার বুরা গর্বড়(গড়বড়) না সয়।হুঁশিয়ার হয়ে থেকো নয় সর্বনাশ।“সিতু মিয়া শুনে কয় সাবাশ শাবাশ!হায়রে বিধির লেখা, হায়রে কিস্মৎজহর হইয়া গেল যা ছিল শর্বৎ।ভোর না হইতেই বিবি লইয়ে পয়জারমিঞার বুকেতে চড়ি কানে ধরি তার।দমাদম মারে জুতা দাড়ি ছিঁড়ে কয়তবিয়ৎ তুমার বুরা বরদাস্ত না হয়?মেজাজ চড়েছে তব হয়েছ বজ্জাৎ?শাবুদ করিব তোমা শুনে লও বাৎআজ হইতে বেড়ে গেল রেশন তোমারপঞ্চাশ হইতে হৈল একশ’ পয়জারএত বলি মারে কিল মারে কানে টানইয়াল্লা ফুকারে সিতু,ভাগ্যে পুন্যবান।কোথায় পাগড়ী গেল কোথায় পজামাহোঁচট খাইয়া পড়ে কভু দেয় হামা।খুন ঝরে সর্ব অঙ্গে ছিড়ে গেছে দাড়িফিরোজ পৌছিল শেষে মতিনের বাড়ি।কাদিয়া কহিল’ ভাইয়া কি দিলি দাওয়াইলাগানু কামে এবে জান যায় তাই।‘বর্ণিল তাবৎ বাৎ, মতিন শুনিলআদর করিয়অ ভায়ে কোলে তুলি নিল।বুলাইয়া হাত মাথে বুলাইয়া দেহ‘বিড়াল মেরেছ’ কয় নাই সন্দেহ।ব্যাকারনে তবু দাদা, কৈরলা ভুল খাটি।বিলকুল বরবাদ সব গুড় মাটি।আসলে এলেমে তুমি করনি খেয়ালশাদির পয়লা রাতে বধিবে বিড়াল।শেষ কথা: সাতচল্লিশ কিংবা একাত্তর সব সময়ের জন্য এ কাব্য;স্বরাজ লাভের সাথে কালোবাজারীরে (কিংবা রাজাকারীরে)মারনি এখন তাই হাত হানো শিরে।শাদীর পয়লা রাতে মারিবে বিড়ালনা হলে বর্বাদ সব, তাবৎ পয়মাল।
মদন বাবুর্চি
২৮ শে মে, ২০০৯ দুপুর ১:৫৫
সাড়ে ছ’ফুটের বেশী লম্বা বিশাল দেহি দৈতাকৃতির বিড়াল চোখ বা ক্যাটস্ আই এর লাল সোনালীতে মেশানো বিরল কেশী আমাদের ক্যান্টিনের সেই রুশ 'প্রোভর' যার বাংলা অর্থ দাড়ায় পাচক বা বাবুর্চি- নাম ছিল ইগর।প্রথম প্রথম এমন দৈত্যের আশেপাশ দিয়ে হাটতেও ভয় পেতাম!খেতে বসলে মাঝে মধ্যে মোলায়েম ভঙ্গীতে হেলে দুলে টেবিলের কাছে এসে সহাস্যে রান্নার তারিফ শুনতে চাইলে আমরা তার সেই অখাদ্য গলধঃকরন বিমর্ষ কন্ঠে ক্লিষ্ট হেসে বলতাম 'খাসা' যার একটাই রুশ প্রতিশব্দ জানতাম তখন -খারাশো’।সেই শুনে তার কি খুশি! চোখ পিট পিট করে সারা কপোলে লাল আভা ছড়িয়ে ফিচ ফিচ করে হাসত।ওদিকে আমাদের রাগে পিত্তি জ্বলত! মনে মনে বলতাম,শালা খাচ্চর কি রেধেছিস! এই গু মুত মানুষ খায়?’অবশ্য এক পক্ষ না যেতেই বুঝে গেলাম দেখতে দৈত্যের মত হলেও সে একদম সহজ সরল সাধা সিদে মাটির মানুষ। আমরাতো সব বঙ্গ দেশীয় হনুমান। বুঝতে পেরেই কাধে উঠে তার কানমলা শুরু করলাম।দুদিনেই তার নতুন নামকরন হয়ে গেল ‘মদন’।মানে জিজ্ঞেস করতেই বললাম, আমাদের দেশে খুব ভাল 'প্রোভর'কে মদন বলি। এই শুনে সেকি খুশী! দন্তপাটি বের করে যেন কান পর্যন্ত হাসতে লাগল।ক্যান্টিনে গিয়েই হাঁক ছাড়তাম ‘মদন’। সাদা এপ্রোন পরা 'ইগর' তখুনি সব কাজ ফেলে পোষা কুকুরের মত ল্যাজ নাড়তে নাড়তে এসে হাজির! -কি খাবি তোরা?আমাদের তখন একেক জনের একেক আব্দার। ফরমায়েসের ঠেলায় তার জিভ বেরিয়ে যাবার যোগাড়!তবে সে কি রান্নার ছিরি। এত বলে কয়ে পরামর্শ আদেশ অনুরোধের বিনিময়ে যে হস্তিডিম্ব সে প্রসব করত তা গিলতে গেলে খাবার ইচ্ছে লোপ পেত।সেই বেচারারই বা দোষ কি-যা পারবে তাইতো করবে। তবে আগ্রহ আর চেস্টা কমতি ছিলনা তার। ওর এই কষ্ট দেখে( আসলে ওর কষ্ট-ফষ্ট আমরা ভাবতাম না। রান্না ঘরে অল্প বয়েসী তরুনীরা রান্না শিখতে আসতে, তাদের একটু ঘনিষ্ঠ হওয়ার আশায়) আমরা কয়েক সহৃদবান(!)যারা হেঁসেলের আশেপাশে উঁকি ঝুকি দিয়ে মা খালার রান্না দেখেছি তারাই এগিয়ে গেলাম তাকে সাহায্য করতে। সেখানে গিয়ে নতুন করে তাকে রান্না শেখাতে লাগলাম। প্রথম ক'দিন মহা উদ্যোমে সে বাংলাদেশের বিকৃত রান্না শিখেছে । কিন্তু আমাদের জালায় ত্যাক্ত বিরক্ত হয়ে ক'দিন যেতই পুরো রান্না ঘরের ভার আমাদের হাতে ছেড়ে দিয়ে পালাল।রুশ ছাত্ররা লাঞ্চ সেরে নিত সাড়ে বারটা থেকে দেড়টার মধ্যে! তার পরে আমাদের পালা। তখন পুরো রান্না ঘর আর ডাইনিং আমাদের কব্জায়। মদন রান্নার সরঞ্জাম আর উপকরন দিয়ে রাধুনীদের সাথে গল্প জুড়ে দিত। অবশ্য রান্না শেষে পরিচ্ছন্ন ঘরের নোঙরা আর বেহাল দশা দেখে ভিমড়ি খেত! তবুও তার কোনদিন ম্লান মুখ দেখিনি। হেসেছে সে প্রান খুলে। সবাই যেন আমরা তার দুরন্ত অবুঝ সন্তান।একদিন যথাসময়ে ক্যান্টিনে গিয়ে দেখি অবাক কান্ড! আগে থেকেই থালাবাটি সাজিয়ে বসে আছে ইগর। মুখে তার ফিচেল হাসি। কি ব্যাপার?ভীষন লাজুক হেসে সে গড়বড় করে যা বলল, তার অর্ধেকও বুঝিনি। তবে এইটুকু বুঝলাম। সে নতুন রান্না শিখেছে, যাকে বলে উজবুকি পোলফ। এ ধরনের খাবার নাকি এশিয়ানরা বেশ পছন্দ করে।তাই আমাদের জন্য এক হাড়ি রেধেছে।-যাও ভাই তাহলে নিয়ে আস তোমার সেই উজবুকি পোলফ।গরম গরম গাজরের পেস্ট দিয়ে তৈরি খিচুরি টাইপের পোলফ(পোলাও) আর মাখন দিয়ে ভাজা মুরগি খেতে মন্দ ছিলনা। খেলামও পেটপুরে।আর খাবার শেষে প্রসংশার বন্যায় হাসতে হাসতে মদনের চোখ ভিজে গেল। কিন্তু হোস্টেলে যেতেই বাধল বিপত্তি! গুরু ভোজন কিংবা অন্য কোন কারনে টয়লেটে চুটোছুটি শুরু হয়ে গেল দু-চারজনের। বাকি হনুমানগুলো এই দেখে শুরু করল লাফঝাপ। ক্লাস ফাকি দেবার সুযোগ একটা পাওয়া গেছে-রে! আমরা সবাই কাল সকালে ডায়রিয়ায়(!)আক্রান্ত হয়ে শয্যাশায়ী হব।সকালের ক্লাসে সব বিদেশী ছাত্র অনুপস্থিত! ভয়াবহ ব্যাপার! এমনতো কখনো হয়নি। হোস্টেলের বুড়ি গার্ড মহিলার কাছে ফোন করলে খবর গেল অসুস্থ সবাই। ভীষন আতঙ্কিত হয়ে ছুটে আসল একজোট হয়ে সব টিচার থেকে শুরু করে ডিন পর্যন্ত! ওদের দেখে আমাদের অসুস্থতা বেড়ে গেল কয়েকগুল!লেপ কাথা মুড়ি দিয়ে কোকাচ্ছি-আর টলতে টলতে এক এক করে বাথরুমে ছুটছি।একি কান্ড! পুরো হোস্টেল জুড়ে ডায়রিয়া! ক্যামনে সম্ভব? সবার ধারনা হল এটার পিছনের একমাত্র কারন ফুড পয়জনিং। শুরু হল তদন্ত।অবশেষে সব দোষ গিয়ে পড়ল মদনের সেই পোলাওয়ের ঘাড়ে। মদনকে দাড় করানো হল আসামীর কাঠগড়ায়। চাকরিটা তখনকার মত টিকে গেলেও তাকে প্রবাসীদের হেঁসেল ঘরের দায়িত্ব থেকে অব্যহতি দেয়া হল।আর আমাদের খাবারের ব্যাবস্থা হল ইউনিভার্সিটির সরাসরি তত্বাবধানে হোস্টেলের নীচের তলায় অবস্থিত অন্য এক ক্যান্টিনে-যেখানকার খাবার বরাদ্দ ছিল শুধুমাত্র অসুস্থ ছাত্রদের জন্য। যেই ক্যান্টিনের রান্নার খুশবু যাওয়া আসার পথে আমাদের খিদেকে কয়েকগুন বেশী উসকে দিতে সাহায্য করত।(এখানকার রান্নার তারিফ অন্য একদিন করব)...মদন বা ইগরের সাথর আর একবারমাত্র দেখা হয়েছিল পুরোনো সেই ক্যান্টিনে। মদন বলে ডাকতেই সে চকিতে ঘাড় ঘুরিয়ে চোখাচোখি হতেই দৃস্টি সরিয়ে নিল। ঠোটের কোনে নেই তার সেই সরল শিশুসুলভ হাসি। আগের থেকে যেন রোগা হয়ে গেছে। সেই লালচে সোনালী চুলের বোকা চেহারার বিশাল মানুষটার দুচোখ জুড়ে শুধু ভয়ানক বিষন্নতা।
সাড়ে ছ’ফুটের বেশী লম্বা বিশাল দেহি দৈতাকৃতির বিড়াল চোখ বা ক্যাটস্ আই এর লাল সোনালীতে মেশানো বিরল কেশী আমাদের ক্যান্টিনের সেই রুশ 'প্রোভর' যার বাংলা অর্থ দাড়ায় পাচক বা বাবুর্চি- নাম ছিল ইগর।প্রথম প্রথম এমন দৈত্যের আশেপাশ দিয়ে হাটতেও ভয় পেতাম!খেতে বসলে মাঝে মধ্যে মোলায়েম ভঙ্গীতে হেলে দুলে টেবিলের কাছে এসে সহাস্যে রান্নার তারিফ শুনতে চাইলে আমরা তার সেই অখাদ্য গলধঃকরন বিমর্ষ কন্ঠে ক্লিষ্ট হেসে বলতাম 'খাসা' যার একটাই রুশ প্রতিশব্দ জানতাম তখন -খারাশো’।সেই শুনে তার কি খুশি! চোখ পিট পিট করে সারা কপোলে লাল আভা ছড়িয়ে ফিচ ফিচ করে হাসত।ওদিকে আমাদের রাগে পিত্তি জ্বলত! মনে মনে বলতাম,শালা খাচ্চর কি রেধেছিস! এই গু মুত মানুষ খায়?’অবশ্য এক পক্ষ না যেতেই বুঝে গেলাম দেখতে দৈত্যের মত হলেও সে একদম সহজ সরল সাধা সিদে মাটির মানুষ। আমরাতো সব বঙ্গ দেশীয় হনুমান। বুঝতে পেরেই কাধে উঠে তার কানমলা শুরু করলাম।দুদিনেই তার নতুন নামকরন হয়ে গেল ‘মদন’।মানে জিজ্ঞেস করতেই বললাম, আমাদের দেশে খুব ভাল 'প্রোভর'কে মদন বলি। এই শুনে সেকি খুশী! দন্তপাটি বের করে যেন কান পর্যন্ত হাসতে লাগল।ক্যান্টিনে গিয়েই হাঁক ছাড়তাম ‘মদন’। সাদা এপ্রোন পরা 'ইগর' তখুনি সব কাজ ফেলে পোষা কুকুরের মত ল্যাজ নাড়তে নাড়তে এসে হাজির! -কি খাবি তোরা?আমাদের তখন একেক জনের একেক আব্দার। ফরমায়েসের ঠেলায় তার জিভ বেরিয়ে যাবার যোগাড়!তবে সে কি রান্নার ছিরি। এত বলে কয়ে পরামর্শ আদেশ অনুরোধের বিনিময়ে যে হস্তিডিম্ব সে প্রসব করত তা গিলতে গেলে খাবার ইচ্ছে লোপ পেত।সেই বেচারারই বা দোষ কি-যা পারবে তাইতো করবে। তবে আগ্রহ আর চেস্টা কমতি ছিলনা তার। ওর এই কষ্ট দেখে( আসলে ওর কষ্ট-ফষ্ট আমরা ভাবতাম না। রান্না ঘরে অল্প বয়েসী তরুনীরা রান্না শিখতে আসতে, তাদের একটু ঘনিষ্ঠ হওয়ার আশায়) আমরা কয়েক সহৃদবান(!)যারা হেঁসেলের আশেপাশে উঁকি ঝুকি দিয়ে মা খালার রান্না দেখেছি তারাই এগিয়ে গেলাম তাকে সাহায্য করতে। সেখানে গিয়ে নতুন করে তাকে রান্না শেখাতে লাগলাম। প্রথম ক'দিন মহা উদ্যোমে সে বাংলাদেশের বিকৃত রান্না শিখেছে । কিন্তু আমাদের জালায় ত্যাক্ত বিরক্ত হয়ে ক'দিন যেতই পুরো রান্না ঘরের ভার আমাদের হাতে ছেড়ে দিয়ে পালাল।রুশ ছাত্ররা লাঞ্চ সেরে নিত সাড়ে বারটা থেকে দেড়টার মধ্যে! তার পরে আমাদের পালা। তখন পুরো রান্না ঘর আর ডাইনিং আমাদের কব্জায়। মদন রান্নার সরঞ্জাম আর উপকরন দিয়ে রাধুনীদের সাথে গল্প জুড়ে দিত। অবশ্য রান্না শেষে পরিচ্ছন্ন ঘরের নোঙরা আর বেহাল দশা দেখে ভিমড়ি খেত! তবুও তার কোনদিন ম্লান মুখ দেখিনি। হেসেছে সে প্রান খুলে। সবাই যেন আমরা তার দুরন্ত অবুঝ সন্তান।একদিন যথাসময়ে ক্যান্টিনে গিয়ে দেখি অবাক কান্ড! আগে থেকেই থালাবাটি সাজিয়ে বসে আছে ইগর। মুখে তার ফিচেল হাসি। কি ব্যাপার?ভীষন লাজুক হেসে সে গড়বড় করে যা বলল, তার অর্ধেকও বুঝিনি। তবে এইটুকু বুঝলাম। সে নতুন রান্না শিখেছে, যাকে বলে উজবুকি পোলফ। এ ধরনের খাবার নাকি এশিয়ানরা বেশ পছন্দ করে।তাই আমাদের জন্য এক হাড়ি রেধেছে।-যাও ভাই তাহলে নিয়ে আস তোমার সেই উজবুকি পোলফ।গরম গরম গাজরের পেস্ট দিয়ে তৈরি খিচুরি টাইপের পোলফ(পোলাও) আর মাখন দিয়ে ভাজা মুরগি খেতে মন্দ ছিলনা। খেলামও পেটপুরে।আর খাবার শেষে প্রসংশার বন্যায় হাসতে হাসতে মদনের চোখ ভিজে গেল। কিন্তু হোস্টেলে যেতেই বাধল বিপত্তি! গুরু ভোজন কিংবা অন্য কোন কারনে টয়লেটে চুটোছুটি শুরু হয়ে গেল দু-চারজনের। বাকি হনুমানগুলো এই দেখে শুরু করল লাফঝাপ। ক্লাস ফাকি দেবার সুযোগ একটা পাওয়া গেছে-রে! আমরা সবাই কাল সকালে ডায়রিয়ায়(!)আক্রান্ত হয়ে শয্যাশায়ী হব।সকালের ক্লাসে সব বিদেশী ছাত্র অনুপস্থিত! ভয়াবহ ব্যাপার! এমনতো কখনো হয়নি। হোস্টেলের বুড়ি গার্ড মহিলার কাছে ফোন করলে খবর গেল অসুস্থ সবাই। ভীষন আতঙ্কিত হয়ে ছুটে আসল একজোট হয়ে সব টিচার থেকে শুরু করে ডিন পর্যন্ত! ওদের দেখে আমাদের অসুস্থতা বেড়ে গেল কয়েকগুল!লেপ কাথা মুড়ি দিয়ে কোকাচ্ছি-আর টলতে টলতে এক এক করে বাথরুমে ছুটছি।একি কান্ড! পুরো হোস্টেল জুড়ে ডায়রিয়া! ক্যামনে সম্ভব? সবার ধারনা হল এটার পিছনের একমাত্র কারন ফুড পয়জনিং। শুরু হল তদন্ত।অবশেষে সব দোষ গিয়ে পড়ল মদনের সেই পোলাওয়ের ঘাড়ে। মদনকে দাড় করানো হল আসামীর কাঠগড়ায়। চাকরিটা তখনকার মত টিকে গেলেও তাকে প্রবাসীদের হেঁসেল ঘরের দায়িত্ব থেকে অব্যহতি দেয়া হল।আর আমাদের খাবারের ব্যাবস্থা হল ইউনিভার্সিটির সরাসরি তত্বাবধানে হোস্টেলের নীচের তলায় অবস্থিত অন্য এক ক্যান্টিনে-যেখানকার খাবার বরাদ্দ ছিল শুধুমাত্র অসুস্থ ছাত্রদের জন্য। যেই ক্যান্টিনের রান্নার খুশবু যাওয়া আসার পথে আমাদের খিদেকে কয়েকগুন বেশী উসকে দিতে সাহায্য করত।(এখানকার রান্নার তারিফ অন্য একদিন করব)...মদন বা ইগরের সাথর আর একবারমাত্র দেখা হয়েছিল পুরোনো সেই ক্যান্টিনে। মদন বলে ডাকতেই সে চকিতে ঘাড় ঘুরিয়ে চোখাচোখি হতেই দৃস্টি সরিয়ে নিল। ঠোটের কোনে নেই তার সেই সরল শিশুসুলভ হাসি। আগের থেকে যেন রোগা হয়ে গেছে। সেই লালচে সোনালী চুলের বোকা চেহারার বিশাল মানুষটার দুচোখ জুড়ে শুধু ভয়ানক বিষন্নতা।
ভন্ডের সত্য বয়ান!
১০ ই জুন, ২০০৯ সকাল ১০:১৫
তের কেজি ইলিশতের কেজি ওজনের ইলিশ!! অসম্ভব হতেই পারেনা-আমি দেখা-শোনাতো দুরের কথা কোন বইতেও পড়ি নাই।-হ্যা-রে ভাই, আমি নিজের চোখে দেখছি।…হাটখোলায় এক জাইল্যা পাইছিল- পত্রিকাতে আসছিল আপনে দ্যাখেন নাই?-নারে ভাই বিশ্বাস হয়না।তার কথায় আমার এক আত্মীয়া সমর্থন করায় আমি মানতে বাধ্য হলাম। মনে মনে ভাবছিলাম-তের কেজি ওজনের ইলিশ -এতো বড় সড় পাঙ্গাস মাছের সমান!কিভাবে সম্ভব?আমি পদ্মার পাড়ের ছেলে হয়ে বড়জোর আড়াই তিন কেজি ওজনের ইলিশ দেখেছি, ব্যাতিক্রম হলে হয়তো পাচ ছয় কেজি হতে পারে,তাই বলে তের কেজি!-জানেন সেইদিন আব্বার এক মুরিদ আসছিল কুয়াকাটা থেইক্যা। একদম তাজা চকচকা আধামন ইলিশ আনছিল- একেকটা কমপক্ষে দুই আড়াই কেজি।-কি কও মিয়া! তোমার বাড়ির পাশে আমি থাকি আর তুমি দুই একখান ইলিশ আমারে পাঠাইলা না। বাজারে যখন এই সাইজ ইলিশ দেখি ১৮০০-২০০০ টাকায় তখন ভাবি একদিন একখান কিনে সাজগোজ কইরা ছবি টবি তুইলা খাব!-হাঃ হাঃ আমি ভাবছিলাম আপনার কথা। কিন্তু আপনে যে ব্যাস্ত মানুষ আপনারে পাব কি এই ভাইবা আর দেই নাই।ওই ইলিশ দেইখ্যা আব্বা আমার ভাবিরে কইল, আম্মা কাচা মিরচ পেয়াজ দিয়া ভাল কইরা ঝোল কর।ভাবি কইল, আব্বা এত রাইতে ইলিশ মাছ রাধার দরকার নাই- সকালে রাধি?আব্বা শুইনা কইল কি জানেন, -‘মারে,বুড়া হইয়া গেছি-মরন কখন আসে বলা যায়না-আইজ রাইতে এই ইলিশ না খাইয়া যদি মইরা যাই তাইলে বেহেশতে গিয়াও শান্তি পাবনা।ইলিশের প্রসঙ্গ আসলেই আমার সৈ.মু. আলীর সেই বিখ্যাত উক্তিটির কথা মনে পড়ে, -আবার ইলিশ। সুশীল পাঠক আমাকে ক্ষমা করো।ঐ বস্তুটির প্রতি আমার মারাত্মক দুর্বলতা আছে-বেহেশতের বর্ণনাতে ইলিশের উল্লেখ নেই বলে পাচ-বখৎ নামাজ পড়ে সেথায় যাবার বাসনা আমার নেই।‘কিংবা বাদশা সালামৎ এর সেই মাছ খেয়ে শহিদ হওয়ার গল্প;-‘আমার মনে প্রশ্ন জাগল বাদশা সালামৎ কি মাছ খেয়ে শহিদ হলেন?’শান ই শাহ বাদশা সালামৎ মুহম্মদ তুঘলক শাহ ইলিশে চড়েই স্বর্গে গিয়েছেন। স্বর্গে যাবেননাতে কোথায় যাবেন?ইলিশ খেয়ে যে প্রান দেয় সে তো শহীদ!সেদিন মুর্শিদাবাদ থেকে আসা আমার এক ভারতীয় বন্ধু বাসায় সর্ষে ইলিশ খেয়ে তৃপ্তির ঢেকুর তুলে বলল,-তোমরা কি তাজা ইলিশ খাও?-তাজা ইলিশ বলতে কি জ্যান্ত নড়াচড়া করছে এইরকম ইলিশের কথা বলছ?সে বেকুবের মত তাকিয়ে বলল, আমি জানি ইলিশ ধরার পরেই মারা যায়। বলতে চাচ্ছিলাম বরফ ছাড়া ইলিশ খেয়েছ নাকি?-ঢাকায়তো বরফ ছাড়া ইলিশ পাওয়া যায়না। ইলিশের সিজনে দেশে গেলে খাই।-তাই নাকি?খেতে কেমন?-সেইরকম-স্বাদ।তাজা ইলিশ জেলেরা যখন ডালাতে সাজিয়ে রাখে-রুপ দেখে প্রান জুড়ায়।চকচকে ইলিশের দেহ জুড়ে যেন রংধনুর সাতরং এর বাহার। বরফ দিলে মাছ সোজা হয়ে যায় কিন্তু তাজা ইলিশ বাকা থাকে ঠিক পানসি নৌকার মত। বন্ধু আমার ইলিশ সন্মন্ধে আমার এই বিশাল গিয়ানি বক্তব্যে টাসকি খাইল!আর আমি মনে মনে আমি ফিচিক ফিচিক করে হাসলাম। তাজা ইলিশ খাওয়া যে এতবড় সৌভাগ্যের ব্যাপার এই প্রথম জানলাম।এইটুকুতেই ও টাসকি খাইছে! যদি আমি এই তের কেজি ইলিশের কথা বলতাম তাহলে নিঃসন্দেহে হার্টফেল করত। বাদশা সালামৎ তাও ইলিশ খেয়ে শহিদ হয়েছেন আর ও শুনেই শহিদ হত!যাহোক ইলিশ নিয়ে বহুৎ প্যাচাল হইল-এইবার পূর্ব প্রসঙ্গে ফিরে যাই;ওর কথা বলার ধরন দেখে আমরা হাসতে হাসতে ঢলে পড়ি। কোনটা চাপা আর কোনটা সত্যি বোঝা দায়- তবুও এই মুখ ভর্তি চাপ দাড়ি জোব্বা পড়া অনেকের প্রিয় তাফসির বিদ আমার ছোট ভাইয়ের মত এক কালের দুর্দান্ত ফাজিল আর দুরন্ত সুদর্শন আলমের কথা অবিশ্বাস করতে মন চায়না। গল্প যেটাই হোক ওর বলার ভঙ্গী দেখে হাসতে বাধ্য। সেও উৎসাহ পেয়ে সমান তালে বলে যাচ্ছে।দক্ষিন বঙ্গের বিখ্যাত তাফসিরবিদের ছেলে সে। ছোটবেলায় ওর আব্বার ওয়াজ শুনে বিমোহিত হয়ে যেতাম। দারুন সুললিত কন্ঠের অধিকারি আমার আব্বার বন্ধু স্থানীয় সেই ভদ্রলোকের ওয়াজ শুনে মোহিত হয়ে শত শত মুসুল্লীরা কখনো জোর গলায় হেসে উঠত কখনো হাউ মাউ করে কাদত। আলেম ফাজেল পাশ করে ঢাকা ভার্সিটি থেকে মাস্টার্স কমপ্লিট করা বাগ্মী এই ছোট ছেলে বাবার পেশাটাকেই বেছে নিয়েছে।তার বৃদ্ধ বাবার মুরিদরাই এখন তাকে যথেষ্ট মান্য-গন্য করে ছোট হুজুর বলে ডাকে। ওর বড় ভাই আমার ক্লাস মেট ছিল। ক্লাসের ফাজিল গ্রুপের অন্যতম প্রতিনিধি ছিল সে। আমরা আড়ালে তাকে বলতাম আলেমের ঘরের জালেম।বাপকে ভীষন হতাশ করে মেট্রিকের গন্ডি পার হতে না পেরে সে এখন এক মসজিদের ইমামতি করে তবে মুল পেশা তার বিয়ে পড়ানো(যাকে বলে কাজি)। চাপা বেচে যুৎ করতে না পেরে সাথে ঝাড় ফুক দিয়ে ভালই কামায়।ঝাড় ফুকের আধুনিকি করন আমার সেই স্কুল ফ্রেন্ডের কথা কথা জিজ্ঞেস করতেই আলম হেসে ফেলল।-আরে ও এখনো সেই আদ্যি কালের ঝাড় ফুক নিয়ে আছে। আমি কইলাম, ভাইজান, লোকজন আর এই সবে বিশ্বাস করে না-তোমারে আরেকটু মর্ডান হইতে হবে।ক্যামনে?ওরে কইলাম,-পায়জামা ছাইড়া সেলাই ছাড়া সাদা লুঙ্গি পর। মাথায় একখান পাগড়ি পইরা চোখে কড়া কইরা সুরমা লাগাও। মুরিদ বা রোগী আইলে কথা কইবা কম-খালি মুখের দিকে তাকাইয়া মিটি মিটি হাসবা। ভাবখানা এমন যে তুমি তার মনের কথা পুরাডা পইড়া ফ্যালাইতেছ। শক্তি আর হামদর্দ থেইক্যা কিছু সালসা আইনা লেবেল উঠাইয়া তাক ভইরা সাজায় রাখ। রোগী আইলে রোগ বুইঝা এক বোতল সালসায় ভাল মত ঝাড় ফুক দিয়া ধরায় দিবা, বলবা অজু কইরা আইসা ডান হাতে নেন। অপবিত্র শরিরে এই বোতল ধরবেন না তাইলে অসুখ সরবে না। দেখবা রোগও সারবে তোমার দামও বাড়বে।-আর কি কইলা?-আরো কইলাম কিছু কিছু শিকড় বাকড় দিয়া বয়াম ভর্তি কইরা রাখ। তাবিজ পার্টি আইলে(যদি মহিলা হয় আরো ভাল) এই যেইরকম ধর বাজা, স্বামীর সাথে গন্ডগোল, সতিনের সাথে ঝামেলা এই গুলারে তাবিজ দিবা।পুরা বয়াম অনেক কইরা খুইজা একদম নীচ থেইক্যা একখান শিকড় বাইর কইরা মিটিমিটি হাসবা কিছুক্ষন। ভাবখান যে আসল জিনিস পাইয়া গেছ-এইটা ভীষন জটিল গাছের শিকড়। তার থেইকা একটু খানি কাইট্যা তাবিজে ভইরা ফু দিয়া বলবা ফজরের আজানের আগে সাফ সুরত হইয়া কোমড়ে ধারন করতে।আমি হাসতে হাসতে জিজ্ঞস করি,-শুনে তোমার ভাই কি কইল?কথা মনে হয় ওর মনে ধরছিল। হাসতে হাসতে আমারে কিছুক্ষন গালিগালাজ করল।মোবাইল কাহন:আমার মত একনিষ্ঠ শ্রোতা পেয়ে তাকে তখন কথার নেশায় পেয়ে বসেছে।ওর সাথে রাস্তা ঘাটে যখনই দেখা হয় সুযোগ পেলেই গল্পের ঝাপি খুলে বসে। আজকে রাস্তায় দেখা হলে জোর করে বাসায় ধরে নিয়ে আসলাম। আমার পাশাপাশি আরো দুয়েকজন অতি পরিচিত শ্রোতা পেয়ে সে যেন ছেলেমানুষ হয়ে গেছে।প্রসঙ্গ পাল্টাচ্ছে দ্রুত।আচমকা আমার সেল ফোনখানা হাতে নিয়ে একটু উল্টে পাল্টে দেখে বলল, এইটা আবার কবে কিনলেন?আপনে সব সময় উরা-ধুরা সেট কিনেন!-এইতো মাস দুয়েক আগে- এইটা তের নম্বর।-ভাইরে আমি কয়দিন আগে স্যামসং এর নতুন মডেলের একখান সেট কিনছিলাম।বাজা থেইকা আসার সময় হারায় গ্যাছে।কি যে খারাপ লাগছিল।-আর পাও নাই?-নাঃ সেইটা আরেক কাহিনী।বাসায় আইসা ফোন দিলাম। ধরল এক মহিলা-জিগাইলাম, আপা এই সেটটা কি আপনার?-মহিলা কয়-না, কুড়ায় পাইছি।-কই পাইছেন?-রিক্সার পাদানিতে।-আপা এই সেটটাতো আমার।-তাতে কি হইছে?-আমার সেট আপনে ফিরায় দিবেননা?-না- সেটটা আমার বড় পছন্দ হইছে।জিনিস দেখে মনে হয় আপনি বেশ পয়সা কড়ির মালিক। আরেকখান কিনে নিয়েন।-কি মাইয়া মানুষ চিন্তা করেন?আমি কইলাম,কি কন-তার মানে আপনি সেট দিবেননা?-না।-এই শুইনা আমার মেজাজ গরম হইয়া গেল। ভাবেন কি খাচ্চর মহিলা!তারপরেও আমি হাসতে হাসতে কইলাম,-আপা আপন জানেননা আমি কোন এলাকার মানুষ। আমরা যখন খারাপ হই তখন কিন্তু ইবলিসও ভয় পায়।-তো আমারে ভয় দেখান নাকি? আপনার সেট দিব না- যা পারেন কইরেন।আমি বুইঝা গেলাম এই সেট আর পাওয়া যাবে না। মাথায় তখন রক্ত চইড়া গেছে। টুপি খান মাথা থেইকা খুইলা-ওর চৌদ্দ গুস্টিরে ফানা ফানা কইরা এমন গালি দিলাম রে ভাই -আপনাদের সামনে কওয়া যাবে না। সেই মহিলা এই যে ফোন বন্ধ করছে আর খোলে নাই। ফোনের হারানোর কষ্ট গালি দিয়া উশুল করলাম।দূর্নীতিবাজ এক বন্ধুর কথা:-আপনার মামুনের কথা মনে আছেতো?-হ্যা মনে থাকবেনা কেন-ও তো আমাদের দিব্য স্যারের ছেলে, আমার ক্লাস মেট।-ও আবার চাকির ফিরা পাইছে।-কি কও- এত বছর বাদে!-হ্যা- তবে আমি বলছিলাম ওই চাকরিতে ফিরা না যাইতে। এখন যেইখানে আছে ভাল আছে মাসে প্রায় পয়ত্রিশ চল্লিশ হাজার বেতন পায়।ফ্যাক্টিরর মালিক ওর কলিগ ছিল। দুই জনই বড় চোর। চোরে চোরে ভালই ছিল।-হুমম এখন ফের সেই এস আই পদেইতো যোগ দিবে নাকি? ওর অন্য কলিগরাতো অনেক আগায় গেছে। তাদেরইতো এখন স্যার বলতে হবে!-তাতো কইতে হবেই। তবে পাচ সাত বছরে যে কামান কামাইছিল-ওই লোভেই যাইতে চায়। তারপরে সরকারি চাকরি। ভাবেন,'বসুন্ধরায় ছয় কাঠা জমি তারপরে দেশের বাড়িতে শ’খানেক বিঘা এরপর ব্যাংক ব্যালেন্স,হ্যাচারি এইসবতো আছেই।'-চাকরি গেছিলতো ঘুষ খাইতে গিয়া ধরা পইড়া নাকি?-হ্যা ***র কুখ্যাত এক সন্ত্রাসীর কেসে। ওর তখন ***য় পোস্টিং।-কার কাছ থেকে ঘুষ খাচ্ছিল?-সেই সন্ত্রাসীর এক সহযোগীরে খুনের চার্জশিট থেইকা নাম কাটানোর জন্য।-ক্যামনে ধরা পড়ল?-বউ বাচ্চা নিয়া এক চাইনিজ রেস্টুরেন্টে। ভাবখান এমন নিছিল যে, খালি চাইনিজ খাওয়ার জণ্য গেছে। সাংবাদিকরা পুরা হাতে নাতে প্রমান সহ ছবি ছাপায় দিছিল।-তাই নাকি?-ওতো কয় তারে ফাসায় দিছে। বুঝলেন তপন ভাই- এই পুলিশ জাতটাই শালার হারামী(কথাটা লেখকের না)। আমি যে বাড়ি বানাইতেছি- ওইখানে পুলিশ উকিল রাজনীতিবিদ আর মোল্লাদের ভাড়া দেব না। ওই শালারা(!) কয়দিন পরে নিজের বাড়ি বানায় নিবে।-তুমি না মোল্লা তাইলে মোল্লাগের উপরে ক্ষাপা ক্যান?-আমি মোল্লা দেইখাইতো মোল্লাগো ভাল কইরা চিনি।দাবা ভোট ও ঝাড় ফুকের কেচ্ছা:-ইলেকশনে দেশে গেছিলেন?-না- আমিতো ঢাকার ভোটার।-মাসুদরে চেনেন?-কোন মাসুদ?-ওই যে লাটা মাসুদ। সামছু কাকার ছেলে।-মনে পড়ছে না-দেখলে মনে হয় চিনব।-পৌনে দুই হাত লম্বা মানুষ-ওই ব্যাটা ওইবার ইলেকশনে দাড়াইছিল।ওরে কে ভোট দিবে কন? আমার আব্বা জিগাইল, ও মাসুদ-তুমি যে খাড়াইলা ভোট পাবাতো?মাসুদ কয় কি জানেন, কাকা চিন্তা কইরেন না আমার সব দাবা ভোট।-দাবা ভোট মানে?-মানে দাইবা আছে-চিল্লা ফিল্লা করতেছে না। সময় মত ঠিকই ভোট দিবেনে।-দেইখ বাবা দাবা ভোট যেন আবার ভোটের দিনও দাইবা না থাকে!-মাসুদ পরে কয়খান ভোট পাইছে জানেন?-কয়খান?-মোট চৌদ্দখান। সেই নিয়া বেচারার বিরাট টেনশন!-ক্যান?-ওর ধারনা ছিল ও ভোট পাবে তেরখান। কারন ওর জ্ঞাতি গুস্টি তেরজনের বেশী ভোটার ছিলনা। বাকি একজন দয়াবান কে ছিল-তারে মাস খানেক খুজছে।কথা বলেতে বলতে আচমকা গরম কফির কাপটা ওর ধবধবে সাদা পায়জামার উপর পড়ে গেল।গায়ে ছ্যাকা লাগতেই ওরে মা বইল্যা চিৎকার।কিংকর্তব্যবিমুঢ় আমি তাকে টেনে হেচড়ে বাথরুমে নিয়ে গেলাম। বেশ কিছুক্ষন পানি ঢালার পর জ্বলুনি কমলে মুছে একটু বার্নল লাগিয়ে দিলাম।সেতো অবাক! -‘ভাই এইটা কি লাগাইলেন? আমার পা-তো বরফের মত ঠান্ডা হইয়া গেল!এখনতো ভীষন আরাম লাগতেছে!-তাই নাকি! আমি হেসে বললাম,’তা তোমার ঝাড় ফুকের থেকে উপকারী নাকি?’কথা শুনে সেও হেসে ফেলল,-আরে ওইগুলাতো ভুয়ামী। কি করব কন-বেশীরভাগ মানুষ এইসব ভুয়ামীই পছন্দ করে! আমি না করলে অন্য কেউ করবে। (লেখাটা শুধুমাত্র দু'জনের ব্যাক্তিগত আলাপচারিতার অংশ। কাউকে হেয় করার উদ্দেশ্যে নয়।স্থান কাল ও ব্যক্তি নাম তাদের পেশার স্বার্থে গোপন রাখা হয়েছে)
তের কেজি ইলিশতের কেজি ওজনের ইলিশ!! অসম্ভব হতেই পারেনা-আমি দেখা-শোনাতো দুরের কথা কোন বইতেও পড়ি নাই।-হ্যা-রে ভাই, আমি নিজের চোখে দেখছি।…হাটখোলায় এক জাইল্যা পাইছিল- পত্রিকাতে আসছিল আপনে দ্যাখেন নাই?-নারে ভাই বিশ্বাস হয়না।তার কথায় আমার এক আত্মীয়া সমর্থন করায় আমি মানতে বাধ্য হলাম। মনে মনে ভাবছিলাম-তের কেজি ওজনের ইলিশ -এতো বড় সড় পাঙ্গাস মাছের সমান!কিভাবে সম্ভব?আমি পদ্মার পাড়ের ছেলে হয়ে বড়জোর আড়াই তিন কেজি ওজনের ইলিশ দেখেছি, ব্যাতিক্রম হলে হয়তো পাচ ছয় কেজি হতে পারে,তাই বলে তের কেজি!-জানেন সেইদিন আব্বার এক মুরিদ আসছিল কুয়াকাটা থেইক্যা। একদম তাজা চকচকা আধামন ইলিশ আনছিল- একেকটা কমপক্ষে দুই আড়াই কেজি।-কি কও মিয়া! তোমার বাড়ির পাশে আমি থাকি আর তুমি দুই একখান ইলিশ আমারে পাঠাইলা না। বাজারে যখন এই সাইজ ইলিশ দেখি ১৮০০-২০০০ টাকায় তখন ভাবি একদিন একখান কিনে সাজগোজ কইরা ছবি টবি তুইলা খাব!-হাঃ হাঃ আমি ভাবছিলাম আপনার কথা। কিন্তু আপনে যে ব্যাস্ত মানুষ আপনারে পাব কি এই ভাইবা আর দেই নাই।ওই ইলিশ দেইখ্যা আব্বা আমার ভাবিরে কইল, আম্মা কাচা মিরচ পেয়াজ দিয়া ভাল কইরা ঝোল কর।ভাবি কইল, আব্বা এত রাইতে ইলিশ মাছ রাধার দরকার নাই- সকালে রাধি?আব্বা শুইনা কইল কি জানেন, -‘মারে,বুড়া হইয়া গেছি-মরন কখন আসে বলা যায়না-আইজ রাইতে এই ইলিশ না খাইয়া যদি মইরা যাই তাইলে বেহেশতে গিয়াও শান্তি পাবনা।ইলিশের প্রসঙ্গ আসলেই আমার সৈ.মু. আলীর সেই বিখ্যাত উক্তিটির কথা মনে পড়ে, -আবার ইলিশ। সুশীল পাঠক আমাকে ক্ষমা করো।ঐ বস্তুটির প্রতি আমার মারাত্মক দুর্বলতা আছে-বেহেশতের বর্ণনাতে ইলিশের উল্লেখ নেই বলে পাচ-বখৎ নামাজ পড়ে সেথায় যাবার বাসনা আমার নেই।‘কিংবা বাদশা সালামৎ এর সেই মাছ খেয়ে শহিদ হওয়ার গল্প;-‘আমার মনে প্রশ্ন জাগল বাদশা সালামৎ কি মাছ খেয়ে শহিদ হলেন?’শান ই শাহ বাদশা সালামৎ মুহম্মদ তুঘলক শাহ ইলিশে চড়েই স্বর্গে গিয়েছেন। স্বর্গে যাবেননাতে কোথায় যাবেন?ইলিশ খেয়ে যে প্রান দেয় সে তো শহীদ!সেদিন মুর্শিদাবাদ থেকে আসা আমার এক ভারতীয় বন্ধু বাসায় সর্ষে ইলিশ খেয়ে তৃপ্তির ঢেকুর তুলে বলল,-তোমরা কি তাজা ইলিশ খাও?-তাজা ইলিশ বলতে কি জ্যান্ত নড়াচড়া করছে এইরকম ইলিশের কথা বলছ?সে বেকুবের মত তাকিয়ে বলল, আমি জানি ইলিশ ধরার পরেই মারা যায়। বলতে চাচ্ছিলাম বরফ ছাড়া ইলিশ খেয়েছ নাকি?-ঢাকায়তো বরফ ছাড়া ইলিশ পাওয়া যায়না। ইলিশের সিজনে দেশে গেলে খাই।-তাই নাকি?খেতে কেমন?-সেইরকম-স্বাদ।তাজা ইলিশ জেলেরা যখন ডালাতে সাজিয়ে রাখে-রুপ দেখে প্রান জুড়ায়।চকচকে ইলিশের দেহ জুড়ে যেন রংধনুর সাতরং এর বাহার। বরফ দিলে মাছ সোজা হয়ে যায় কিন্তু তাজা ইলিশ বাকা থাকে ঠিক পানসি নৌকার মত। বন্ধু আমার ইলিশ সন্মন্ধে আমার এই বিশাল গিয়ানি বক্তব্যে টাসকি খাইল!আর আমি মনে মনে আমি ফিচিক ফিচিক করে হাসলাম। তাজা ইলিশ খাওয়া যে এতবড় সৌভাগ্যের ব্যাপার এই প্রথম জানলাম।এইটুকুতেই ও টাসকি খাইছে! যদি আমি এই তের কেজি ইলিশের কথা বলতাম তাহলে নিঃসন্দেহে হার্টফেল করত। বাদশা সালামৎ তাও ইলিশ খেয়ে শহিদ হয়েছেন আর ও শুনেই শহিদ হত!যাহোক ইলিশ নিয়ে বহুৎ প্যাচাল হইল-এইবার পূর্ব প্রসঙ্গে ফিরে যাই;ওর কথা বলার ধরন দেখে আমরা হাসতে হাসতে ঢলে পড়ি। কোনটা চাপা আর কোনটা সত্যি বোঝা দায়- তবুও এই মুখ ভর্তি চাপ দাড়ি জোব্বা পড়া অনেকের প্রিয় তাফসির বিদ আমার ছোট ভাইয়ের মত এক কালের দুর্দান্ত ফাজিল আর দুরন্ত সুদর্শন আলমের কথা অবিশ্বাস করতে মন চায়না। গল্প যেটাই হোক ওর বলার ভঙ্গী দেখে হাসতে বাধ্য। সেও উৎসাহ পেয়ে সমান তালে বলে যাচ্ছে।দক্ষিন বঙ্গের বিখ্যাত তাফসিরবিদের ছেলে সে। ছোটবেলায় ওর আব্বার ওয়াজ শুনে বিমোহিত হয়ে যেতাম। দারুন সুললিত কন্ঠের অধিকারি আমার আব্বার বন্ধু স্থানীয় সেই ভদ্রলোকের ওয়াজ শুনে মোহিত হয়ে শত শত মুসুল্লীরা কখনো জোর গলায় হেসে উঠত কখনো হাউ মাউ করে কাদত। আলেম ফাজেল পাশ করে ঢাকা ভার্সিটি থেকে মাস্টার্স কমপ্লিট করা বাগ্মী এই ছোট ছেলে বাবার পেশাটাকেই বেছে নিয়েছে।তার বৃদ্ধ বাবার মুরিদরাই এখন তাকে যথেষ্ট মান্য-গন্য করে ছোট হুজুর বলে ডাকে। ওর বড় ভাই আমার ক্লাস মেট ছিল। ক্লাসের ফাজিল গ্রুপের অন্যতম প্রতিনিধি ছিল সে। আমরা আড়ালে তাকে বলতাম আলেমের ঘরের জালেম।বাপকে ভীষন হতাশ করে মেট্রিকের গন্ডি পার হতে না পেরে সে এখন এক মসজিদের ইমামতি করে তবে মুল পেশা তার বিয়ে পড়ানো(যাকে বলে কাজি)। চাপা বেচে যুৎ করতে না পেরে সাথে ঝাড় ফুক দিয়ে ভালই কামায়।ঝাড় ফুকের আধুনিকি করন আমার সেই স্কুল ফ্রেন্ডের কথা কথা জিজ্ঞেস করতেই আলম হেসে ফেলল।-আরে ও এখনো সেই আদ্যি কালের ঝাড় ফুক নিয়ে আছে। আমি কইলাম, ভাইজান, লোকজন আর এই সবে বিশ্বাস করে না-তোমারে আরেকটু মর্ডান হইতে হবে।ক্যামনে?ওরে কইলাম,-পায়জামা ছাইড়া সেলাই ছাড়া সাদা লুঙ্গি পর। মাথায় একখান পাগড়ি পইরা চোখে কড়া কইরা সুরমা লাগাও। মুরিদ বা রোগী আইলে কথা কইবা কম-খালি মুখের দিকে তাকাইয়া মিটি মিটি হাসবা। ভাবখানা এমন যে তুমি তার মনের কথা পুরাডা পইড়া ফ্যালাইতেছ। শক্তি আর হামদর্দ থেইক্যা কিছু সালসা আইনা লেবেল উঠাইয়া তাক ভইরা সাজায় রাখ। রোগী আইলে রোগ বুইঝা এক বোতল সালসায় ভাল মত ঝাড় ফুক দিয়া ধরায় দিবা, বলবা অজু কইরা আইসা ডান হাতে নেন। অপবিত্র শরিরে এই বোতল ধরবেন না তাইলে অসুখ সরবে না। দেখবা রোগও সারবে তোমার দামও বাড়বে।-আর কি কইলা?-আরো কইলাম কিছু কিছু শিকড় বাকড় দিয়া বয়াম ভর্তি কইরা রাখ। তাবিজ পার্টি আইলে(যদি মহিলা হয় আরো ভাল) এই যেইরকম ধর বাজা, স্বামীর সাথে গন্ডগোল, সতিনের সাথে ঝামেলা এই গুলারে তাবিজ দিবা।পুরা বয়াম অনেক কইরা খুইজা একদম নীচ থেইক্যা একখান শিকড় বাইর কইরা মিটিমিটি হাসবা কিছুক্ষন। ভাবখান যে আসল জিনিস পাইয়া গেছ-এইটা ভীষন জটিল গাছের শিকড়। তার থেইকা একটু খানি কাইট্যা তাবিজে ভইরা ফু দিয়া বলবা ফজরের আজানের আগে সাফ সুরত হইয়া কোমড়ে ধারন করতে।আমি হাসতে হাসতে জিজ্ঞস করি,-শুনে তোমার ভাই কি কইল?কথা মনে হয় ওর মনে ধরছিল। হাসতে হাসতে আমারে কিছুক্ষন গালিগালাজ করল।মোবাইল কাহন:আমার মত একনিষ্ঠ শ্রোতা পেয়ে তাকে তখন কথার নেশায় পেয়ে বসেছে।ওর সাথে রাস্তা ঘাটে যখনই দেখা হয় সুযোগ পেলেই গল্পের ঝাপি খুলে বসে। আজকে রাস্তায় দেখা হলে জোর করে বাসায় ধরে নিয়ে আসলাম। আমার পাশাপাশি আরো দুয়েকজন অতি পরিচিত শ্রোতা পেয়ে সে যেন ছেলেমানুষ হয়ে গেছে।প্রসঙ্গ পাল্টাচ্ছে দ্রুত।আচমকা আমার সেল ফোনখানা হাতে নিয়ে একটু উল্টে পাল্টে দেখে বলল, এইটা আবার কবে কিনলেন?আপনে সব সময় উরা-ধুরা সেট কিনেন!-এইতো মাস দুয়েক আগে- এইটা তের নম্বর।-ভাইরে আমি কয়দিন আগে স্যামসং এর নতুন মডেলের একখান সেট কিনছিলাম।বাজা থেইকা আসার সময় হারায় গ্যাছে।কি যে খারাপ লাগছিল।-আর পাও নাই?-নাঃ সেইটা আরেক কাহিনী।বাসায় আইসা ফোন দিলাম। ধরল এক মহিলা-জিগাইলাম, আপা এই সেটটা কি আপনার?-মহিলা কয়-না, কুড়ায় পাইছি।-কই পাইছেন?-রিক্সার পাদানিতে।-আপা এই সেটটাতো আমার।-তাতে কি হইছে?-আমার সেট আপনে ফিরায় দিবেননা?-না- সেটটা আমার বড় পছন্দ হইছে।জিনিস দেখে মনে হয় আপনি বেশ পয়সা কড়ির মালিক। আরেকখান কিনে নিয়েন।-কি মাইয়া মানুষ চিন্তা করেন?আমি কইলাম,কি কন-তার মানে আপনি সেট দিবেননা?-না।-এই শুইনা আমার মেজাজ গরম হইয়া গেল। ভাবেন কি খাচ্চর মহিলা!তারপরেও আমি হাসতে হাসতে কইলাম,-আপা আপন জানেননা আমি কোন এলাকার মানুষ। আমরা যখন খারাপ হই তখন কিন্তু ইবলিসও ভয় পায়।-তো আমারে ভয় দেখান নাকি? আপনার সেট দিব না- যা পারেন কইরেন।আমি বুইঝা গেলাম এই সেট আর পাওয়া যাবে না। মাথায় তখন রক্ত চইড়া গেছে। টুপি খান মাথা থেইকা খুইলা-ওর চৌদ্দ গুস্টিরে ফানা ফানা কইরা এমন গালি দিলাম রে ভাই -আপনাদের সামনে কওয়া যাবে না। সেই মহিলা এই যে ফোন বন্ধ করছে আর খোলে নাই। ফোনের হারানোর কষ্ট গালি দিয়া উশুল করলাম।দূর্নীতিবাজ এক বন্ধুর কথা:-আপনার মামুনের কথা মনে আছেতো?-হ্যা মনে থাকবেনা কেন-ও তো আমাদের দিব্য স্যারের ছেলে, আমার ক্লাস মেট।-ও আবার চাকির ফিরা পাইছে।-কি কও- এত বছর বাদে!-হ্যা- তবে আমি বলছিলাম ওই চাকরিতে ফিরা না যাইতে। এখন যেইখানে আছে ভাল আছে মাসে প্রায় পয়ত্রিশ চল্লিশ হাজার বেতন পায়।ফ্যাক্টিরর মালিক ওর কলিগ ছিল। দুই জনই বড় চোর। চোরে চোরে ভালই ছিল।-হুমম এখন ফের সেই এস আই পদেইতো যোগ দিবে নাকি? ওর অন্য কলিগরাতো অনেক আগায় গেছে। তাদেরইতো এখন স্যার বলতে হবে!-তাতো কইতে হবেই। তবে পাচ সাত বছরে যে কামান কামাইছিল-ওই লোভেই যাইতে চায়। তারপরে সরকারি চাকরি। ভাবেন,'বসুন্ধরায় ছয় কাঠা জমি তারপরে দেশের বাড়িতে শ’খানেক বিঘা এরপর ব্যাংক ব্যালেন্স,হ্যাচারি এইসবতো আছেই।'-চাকরি গেছিলতো ঘুষ খাইতে গিয়া ধরা পইড়া নাকি?-হ্যা ***র কুখ্যাত এক সন্ত্রাসীর কেসে। ওর তখন ***য় পোস্টিং।-কার কাছ থেকে ঘুষ খাচ্ছিল?-সেই সন্ত্রাসীর এক সহযোগীরে খুনের চার্জশিট থেইকা নাম কাটানোর জন্য।-ক্যামনে ধরা পড়ল?-বউ বাচ্চা নিয়া এক চাইনিজ রেস্টুরেন্টে। ভাবখান এমন নিছিল যে, খালি চাইনিজ খাওয়ার জণ্য গেছে। সাংবাদিকরা পুরা হাতে নাতে প্রমান সহ ছবি ছাপায় দিছিল।-তাই নাকি?-ওতো কয় তারে ফাসায় দিছে। বুঝলেন তপন ভাই- এই পুলিশ জাতটাই শালার হারামী(কথাটা লেখকের না)। আমি যে বাড়ি বানাইতেছি- ওইখানে পুলিশ উকিল রাজনীতিবিদ আর মোল্লাদের ভাড়া দেব না। ওই শালারা(!) কয়দিন পরে নিজের বাড়ি বানায় নিবে।-তুমি না মোল্লা তাইলে মোল্লাগের উপরে ক্ষাপা ক্যান?-আমি মোল্লা দেইখাইতো মোল্লাগো ভাল কইরা চিনি।দাবা ভোট ও ঝাড় ফুকের কেচ্ছা:-ইলেকশনে দেশে গেছিলেন?-না- আমিতো ঢাকার ভোটার।-মাসুদরে চেনেন?-কোন মাসুদ?-ওই যে লাটা মাসুদ। সামছু কাকার ছেলে।-মনে পড়ছে না-দেখলে মনে হয় চিনব।-পৌনে দুই হাত লম্বা মানুষ-ওই ব্যাটা ওইবার ইলেকশনে দাড়াইছিল।ওরে কে ভোট দিবে কন? আমার আব্বা জিগাইল, ও মাসুদ-তুমি যে খাড়াইলা ভোট পাবাতো?মাসুদ কয় কি জানেন, কাকা চিন্তা কইরেন না আমার সব দাবা ভোট।-দাবা ভোট মানে?-মানে দাইবা আছে-চিল্লা ফিল্লা করতেছে না। সময় মত ঠিকই ভোট দিবেনে।-দেইখ বাবা দাবা ভোট যেন আবার ভোটের দিনও দাইবা না থাকে!-মাসুদ পরে কয়খান ভোট পাইছে জানেন?-কয়খান?-মোট চৌদ্দখান। সেই নিয়া বেচারার বিরাট টেনশন!-ক্যান?-ওর ধারনা ছিল ও ভোট পাবে তেরখান। কারন ওর জ্ঞাতি গুস্টি তেরজনের বেশী ভোটার ছিলনা। বাকি একজন দয়াবান কে ছিল-তারে মাস খানেক খুজছে।কথা বলেতে বলতে আচমকা গরম কফির কাপটা ওর ধবধবে সাদা পায়জামার উপর পড়ে গেল।গায়ে ছ্যাকা লাগতেই ওরে মা বইল্যা চিৎকার।কিংকর্তব্যবিমুঢ় আমি তাকে টেনে হেচড়ে বাথরুমে নিয়ে গেলাম। বেশ কিছুক্ষন পানি ঢালার পর জ্বলুনি কমলে মুছে একটু বার্নল লাগিয়ে দিলাম।সেতো অবাক! -‘ভাই এইটা কি লাগাইলেন? আমার পা-তো বরফের মত ঠান্ডা হইয়া গেল!এখনতো ভীষন আরাম লাগতেছে!-তাই নাকি! আমি হেসে বললাম,’তা তোমার ঝাড় ফুকের থেকে উপকারী নাকি?’কথা শুনে সেও হেসে ফেলল,-আরে ওইগুলাতো ভুয়ামী। কি করব কন-বেশীরভাগ মানুষ এইসব ভুয়ামীই পছন্দ করে! আমি না করলে অন্য কেউ করবে। (লেখাটা শুধুমাত্র দু'জনের ব্যাক্তিগত আলাপচারিতার অংশ। কাউকে হেয় করার উদ্দেশ্যে নয়।স্থান কাল ও ব্যক্তি নাম তাদের পেশার স্বার্থে গোপন রাখা হয়েছে)
ঘাটের ভাষা!
১২ ই জুলাই, ২০০৯ সকাল ১১:৫০
ওই কাইল্যা শোন, স্টিশনে গিয়া কুলি নিয়া আয়।মুলায় নিস। পোকরে কইছি হাইত্যা ফুটি নিবে-আরচ্যা ফুটির বেশী দিবি না।দুজন হোটেলের কর্মচারির কথপোকথন। আপনি কি পুরোপুরি বুঝেছেন ওরা নিজেদের মধ্যে কি কথা বলা বলি করছে? সম্ভবত বেশীর ভাগ লোকই বুঝতে পারবেনা এই ভাষা। এটা ওদের নিজেদের উদ্ভাবিত।সবাই প্রায় মুখ্য সুখ্য ওরা, বেশিরভাগই নিজের নামটাও লিখতে পারেনা। একশ টাকাকে গোনে পাচ কুড়ি ভাগ করে।বখে যাওয়া,অবিভাবকহীন,ঘর পালানো ছেলেগুলো ভাগ্যান্বেষনে ঘুরতে ঘুরতে এই ঘাটে এসে বসতি গড়ে। কারো হয়তো খোজ নেবার কেউ নেই- কেউ হয়তো ইচ্ছে করে নাম পরিচিতি ভাড়ায়। মাছ অথবা সব্জি বোঝাই ট্রাকের তাবুর উপর চড়ে কেউবা বাসের ছাদের রেলিং আকড়ে দুয়েকজন হেল্পার ড্রাইভারের হাতে পায় ধরে গলা ধাক্কা খেয়ে কিংবা ফুট ফরমায়েশ খেটে বিনে পয়সায় এখানে এসে জুটেছে।প্রথম কদিন ছন্নের মত এদিক ওদিক ঘুরে চেয়ে চিন্তে এক আধ পেট খেয়ে ফেরির পল্টুনে স্টেশনে কিংবা সিরিয়ালে থাকা ট্রাকের পেটের নীচে রাত কাটায়। দু’দিনেই ফন্দি ফিকির ছোট খাট চুরি চামারি বাটপারি শিখে যায়। এদের মধ্যে বোকা-সোকার সংখ্যা নগন্য।বেশীর ভাগই দুরন্ত ও বুদ্ধিমান!দুয়েকজন ঘাটের দালালদের হেল্পার হয় প্রথমে। চাপাবাজি আর ভুজুং ভাজং এর যোগ্যতা থাকলে দু-য়েক বছরেই পুরোদস্তুর দালাল হয়।দু-য়েকজন হয় মলম বা গাছ গাছড়া বিক্রেতা কেউবা গাট কাটে বা মুট বয় কেউ হয় হোটেলের বয় বেয়ারা।ঘাট বড় খারাপ জায়গারে বাপ! বারোয়াড়ি বাটপারের আড্ডা ওখানটায়। ছোট খাট ছল চাতুরি তো আছেই একটু বেতাল হলেই সর্বশান্ত হওয়া বিচিত্র নয়। যাত্রীরা তাই ভয়ে ভয়ে থাকে। দালালদের শত প্রলোভন এড়িয়ে চলে। তবুও অনেক চতুর যাত্রীও ধরা খায় হর হামেশাই।পেশা ভিন্ন হলেও জোটবদ্ধ ওরা সবাই-বিচিত্র ভাষায় কথা বলে।একদম নিরীহ চেহারার আড়ালেও একটু শয়তানী লুকিয়ে থাকে।তবে ওদের বন্ধু হল মাস্টার,সারেঙ, সুকানী,বাস-ট্রাক ড্রাইভার, ঘাটের সুপারভাইজার,পুলিশ আর পতিতা। এদের সাথে ছল চাতুরি প্রায় করেনা বললেই চলে।তবে দুয়েকজন থাকে ছন্ন ছাড়া।তাদের অপরাধের কোন বাপ মা নাই। সুযোগ পেলেই ব্যাস-তাই ঘাড়ানি কিংবা নলী ছোটা (মাইরের রকমফের) ওদের ভাগ্যেই জোটে বেশী।(শুনেছি ওরা নাকি পুলিশ জি আর পি’র ও পকেট কাটত!)আর নামের কি ছিড়ি ওদের! বাপ দাদার আকিকা দেওয়া নামের উপর অনেক পুরু ময়লা জমে কেউ হয় কাইল্যা কেউ ট্যাবলেট কেউ নুনজান কিংবা মাইনক্যা আর বুলেট বন্দুক টায়ার টিউব তো আছেই।সিনিয়র কিংবা পালের গোদাদের নামের আগে পরে গুরু কমন।খিস্তি খেউড় ওদের মুখে খইয়ের মত ফোটে।একসময়ের বিখ্যাত রেল ও স্টিমার ঘাট পরবর্তীতে স্টিমার বিলুপ্ত হয়ে ফেরি লঞ্চঘাট।সেই গোয়ালন্দী জাহাজের কথা কত বিখ্যাত লেখকের লেখাতেই না পাওয়া যায়। এখান থেকে ট্রেন যেত সরাসরি পশ্চিম বঙ্গের শিলিগুড়িতে। সেই শিলিগুরি ট্রেন তার পুরোনো নাম নিয়ে এই সেদিনও টিকে ছিল।যদিও তার চলার পথে প্রতিবন্ধকতা সৃস্ট হয়েছিল অনেক আগেই।সেদিনের সেই দুরন্ত কৃর্তিনাশা পদ্মা নাব্যতা হারানোয় বিখ্যাত সেই ঘাটও উজান বেয়ে চলে এসেছে দৌলতদিয়ায়। ঘাট তার রুপ লাবন্য আদি ঠিকানা হারিয়েছে সেই সাথে দালালরা হারিয়েছে তাদের স্বকীয়তা। আমি বলছি সেই আশির দশকের কথা।বহু পথ জার্নি করে আসা যাত্রীরা জাহাজ ফেরি কিংবা লঞ্চ থেকে নেমে যখন ছুটছে স্টেশনের পানে ট্রেন ধরার উদ্দেশ্যে-অনেকেই জানেনা ট্রেন কখন ছাড়বে। স্টেশনও সবাই চিনতনা- আনাড়ির মত দিকভ্রান্ত হয়ে এদিক ওদিক ছুটোছুটি করত আর একে তাকে ধরে জিজ্ঞেস করত ট্রেন কখন আসবে? সেই সযোগে কুলিরা ট্রেন এখুনি ছাড়বে বলে তাড়াহুড়ো করে মুটে নিয়ে কয়েকগুন পয়সা কামিয়ে নিত। সামনে কুলির মাথায় মাল দিয়ে যখন মিয়া বিবি পরিজন নিয়ে উর্ধশ্বাসে ছুটছে তখনি পথ রোধ করে দাড়াত হোটেলের দালালরা। কুলির সাথে কথা হত সেই সাঙ্কতিক ভাষায়-যত্রীর পথ আটকে বলত কই দৌড়ায় যান ছার- টেরেনতো এহনো আসে নাই। যাত্রীরা থমকে গিয়ে হতভম্ব হয়ে জিজ্ঞস করত ‘তার মানে?’মানে ওইটা হইল মাল গাড়ির ইঞ্জিনের হুইসেল! ওই ব্যাটা ভাবছিল আপনার টেরেনের!কুলি তখন কাচুমাচু হয়ে দুঃখ প্রকাশ করত। কিন্তু ভাড়ায় ছাড় দিতনা এক পয়সা।হোটেলের সেই দালাল তাদের হোটেলের গুন কীর্তন করে কোনক্রমে ভিতরে সেধিয়ে বেয়ারার হাতে বুঝিয়ে দিয়েই আরেকজন ধুর পোক ধরার উদ্দশ্যে বেরিয়ে পড়ত। ট্রেনের হুইসেলেরও রকমফের আছে। ইঞ্জিন সানটিঙ(ট্রেনের বগি পরিবর্তন কিংবা ইঞ্জিনের দিক পরিবর্তন)এর হুইসেল একরকম ট্রেন ছাড়ার হুইসেল অন্যরকম। ট্রেন ছাড়ার আগে ফলস্ হুইসেল বাজে যা যাত্রীদের সতর্ক করে বা সংকেত দেয় ট্রেন ছাড়ার সময় হয়ে এসেছে।ওদিকে সিগন্যালে আটকে গেলে( স্থানীয় লোকদের মুখে এই শব্দটা কখনো আমি শুদ্ধ ভাষায় শুনিনি-কেউ বলে সিনগেল কেউবা সিংগ্যাল বলে। ছোট বেলায় এই ধরনের অশুদ্ধ শব্দ শুনতে শুনতে আমারও ধারনা হয়েছিল এইটে সিনগেলই হবে)হুইসেলের ধ্বনি পাল্টে যায়অনেকটা টেলিগ্রামের টরে টক্কা টক টক টক্কার মত যা আমাদের মত অজ্ঞদের কানে একই রকম ধ্বনি মনে হলেও অভিজ্ঞরা এ ধ্বনির মর্ম বোঝেন।আবার চলন্ত পথে চালক বিপদের আভাস পেলে অন্যস্বরে হুইসেল বাজায়-ট্রেন লাইনচ্যুত হলেও হুইসেল বাজে আর্ত কন্ঠে , আমাকে বাচাও বাচাও বলে!রেল স্টেশনের অদুরে আমার বাড়ি থাকায় ছোট বেলা থেকেই এমন ধারার ভিন্ন ভিন্ন ধারায় হুইসেলের শব্দ শুনেই চোখ বুজে বলে দিতে পারতাম রেল গাড়ির হাল হকিকত।কোথাও যেতে হলে ট্রেনের সেই সানটিঙ এর হুইসেল শুনে বাড়ি থেকে বের হতাম।ক্লান্ত ক্ষুধার্ত যাত্রী যখন ট্রেন ছাড়তে দেরী হবে ভেবে আয়েস করে হাত মুখ ধুয়ে বহুদিন বাদে পদ্মার টাটকা ইলিশের স্বাদ নেবে বলে খেতে বসে গরম গরম ঝোল সবে পাতে ঢেলেছে ঠিক তখুনি বেজে উঠল হুইসেল- আর বেয়ারার তখুনি তারস্বরে চিৎকার ছার টেরেন ছাইড়া গেল! হায় হায় একি অলুক্ষনে কথা? শালার ট্রেন ছাড়ার আর সময় পেলনা। টাটকা ইলিশের গরম ঝোলের স্বাদ ভুলে যাত্রীরা তখন লাফিয়ে উঠে হুমড়ি খেয়ে এদিক ওদিক ছোটাছুটি করত। হাত ধুবে না ব্যাগ গোছাবে নাকি সব ফেলে ট্রেন ধরতে ছুটবে এই নিয়ে দিশেহারা!কিন্তু বিপত্তি বাধত অন্যখানে- বেরুনোর মুখেই বেয়ারা গিয়ে পথ আগলে দাড়াত।ছার খাওনের টাকা?যাত্রী তখন ভুলে গেছে কি খেয়েছে কি খায়নি!বড় নোট দিলে ভাংতি নাই ছোট নোট গুনতে গেলে ট্রেন হারানোর ভয়।বিলের টাকা কোন মতে তার হাতে গুজে দিয়ে পড়ি মড়ি করে স্টেশনে গিয়ে দেখে ট্রেন নেই।হায় হায় এখন কি হবে? হতাশ ক্লান্ত দিশেহারা যাত্রীরা তখন হাতের কাছে যাকে পায় তাকেই ধরে বলে ভাইজান ট্রেন কি চলে গেছে। পুংটা কেউ হলে তাকে আরো ঘাবড়ে দেয়। কিন্তু সহৃদজন হাসতে হাসতে বলে, নারে ভাই ট্রেন ছাড়তে এখনো অনেক দেরি- কেবল সানটিঙ করতেছে।যাত্রীদের তখন ঘাম দিয়ে জ্বর ছাড়ত-ভাবত বেয়ারা হয়তো ভুল করেছে।এমনি কত ধরনের জোচ্চুরি বাটপারি জালিয়াতি হত প্রতি দিন।সব হোটেল মালিক আর সব বয় বেয়ারা দালালরা যে খারাপ ছিল তা কিন্তু নয়। দু-চারজনতো অবশ্যই ভাল ছিল।বলছিলাম এদের ভাষা নিয়ে। সেই ভাগ্যান্বষনে বের হওয়া মুখ্য সুখ্য পোড় খাওয়া মানুষগুলো নিজেদের মধ্যে তথ্য আদান প্রদান করার জন্য উদ্ভাবন করেছিল নতুন এক আঞ্চলিক ভাষার। এমন কিছু শব্দ তারা ব্যাবহার করত যা বোঝার সাধ্যি বাইরের কারো ছিলনা- শুধু তাইনা এর পরিবর্তন হত দ্রুত। একই শব্দ বেশীদিন ব্যাবহারের ফলে এর গুঢ় অর্থ বুঝে ফেলা ধুর্তদের অসম্ভব নয়। অনেকেই যাত্রীদের কৃপাদৃষ্টি লাভের আশায় কিংবা হৃদ্যতা গড়ে তোলার বাসনায় গোমড় ফাঁস করে দিত।ছোটবেলায় শোনা সেই ভাষার অনেকটাই ভুলে গেছি আজ। মনে আছে অল্প কিছু শব্দ।ভুলভ্রান্তি হতেই পারে-তাই ত্রুটি মাজনীয়। আম দালালেরা ব্যাবহার করত প্রচলিত কিছু শব্দ! যেমন ‘পুরুষ যাত্রী’কে বলত-পোক, মেয়ে যাত্রীকে-ভাতি, টাকাকে-ফুটি। কেউ সর্বস্বান্ত হলে বলত- ‘মালে হুপড়ি খাইছে’ এমনি আরো কত-শত শব্দ ছিল তাদের অভিধানে। দুই টাকাকে বলত দয়লা ফুটি, চারকে আইরচ্য, পাচকে হাইত্যা।তবে বুদ্ধিমান বা চাল্লু ভাষাবিদ দালালেরা ছিল এক কাঠি সরেস। তারা কথা বলত কখনো ভাষাকে উল্টে পাল্টে আন্ধা কুন্দা ব্যাবচ্ছেদ করে, যেমন ‘উইতু ওইকো এছিল্যগ্যা?’ এমন কথা শুনে মনে হত বিজাতীয় ভাষা। প্রথমে খটকা লাগলেও একটু বুদ্ধি খাটালে মর্মদ্ধার করা সম্ভব-মুল শব্দ গুলোকে উল্টে ফেলে স্বর বর্ণের কিছু অতিরিক্ত ব্যাবহার হয়েছে! উইতু-তুই –বাকি শব্দ গুলো আলাদা করে কয়েকবার উচ্চারন করলেই আসল কথা বেরিয়ে আসবে! কিন্তু মুল ব্যাপার হচ্ছে এর অতিদ্রুত ব্যাবহার আর বোঝার ক্ষমতা। সেইখানেই ছিল ওদের এক্সট্রা অর্ডিনারি বুদ্ধিমত্বা!এত দ্রুত ওরা এই ভাষায় কথা গুলো বলত যে অতি বুদ্ধিমানরাও হকচকিয়ে যেত! পাঠক তুমি এইটে বুঝে ফেললে কি হবে ওদের ঝুলিতে আরো অনেক কারিশমা ছিল। একই সাথে দুজনের কথপোকথন হত এই ভাবে,‘আলেরমা আথেসা আতিভাডা ওসজো’এর উত্তরে ‘স্লেইরম, ইলামার ল্লোল প্লড়তেছে।‘‘শব্দার্থ শোভন নয় তাই পাঠকের হাতে ছেড়ে দিলাম এর মর্ম উদ্ধারের ভার।সেই আগের দিন আর নেই।ঘাট মরে গেছে। সড়ক যোগাযোগ ব্যাবস্থা হয়েছে অনেক উন্নত- সেই সাথে মান নেমে গেছে আমাদের বি আর বা বাংলাদেশ রেলওয়ের।এখন আর কেউ পঞ্চাশ মাইল পথ পেরুতে দিন কাবার করেনা।নদীগুলো শুকিয়ে গেছে-কিংবা এর দু পারের দৈর্ঘ্য কমে গেছে। ব্রিজ হয়ে গেছে অনেকখানেই বাকিগুলো হবে হবে করছে। ব্যাবসার এই আকালে দালারেরা ভিন্ন পেশায় চলে গেছে।তবু প্রমত্ত পদ্মা পাড়ের ক্লান্ত বিধ্বস্ত রুগ্ন সেই ঘাটের বাতাসে এখনো ভেসে বেড়ায় দেশের সুদুর প্রান্ত থেকে ভাগ্যান্বেষনে আসা ঘর পালানো একগুয়ে চতুর চঞ্চল সদাহাস্য একদল তরুনদের উদ্ভাবিত ভাষার টুকরো শব্দগুলি।
ওই কাইল্যা শোন, স্টিশনে গিয়া কুলি নিয়া আয়।মুলায় নিস। পোকরে কইছি হাইত্যা ফুটি নিবে-আরচ্যা ফুটির বেশী দিবি না।দুজন হোটেলের কর্মচারির কথপোকথন। আপনি কি পুরোপুরি বুঝেছেন ওরা নিজেদের মধ্যে কি কথা বলা বলি করছে? সম্ভবত বেশীর ভাগ লোকই বুঝতে পারবেনা এই ভাষা। এটা ওদের নিজেদের উদ্ভাবিত।সবাই প্রায় মুখ্য সুখ্য ওরা, বেশিরভাগই নিজের নামটাও লিখতে পারেনা। একশ টাকাকে গোনে পাচ কুড়ি ভাগ করে।বখে যাওয়া,অবিভাবকহীন,ঘর পালানো ছেলেগুলো ভাগ্যান্বেষনে ঘুরতে ঘুরতে এই ঘাটে এসে বসতি গড়ে। কারো হয়তো খোজ নেবার কেউ নেই- কেউ হয়তো ইচ্ছে করে নাম পরিচিতি ভাড়ায়। মাছ অথবা সব্জি বোঝাই ট্রাকের তাবুর উপর চড়ে কেউবা বাসের ছাদের রেলিং আকড়ে দুয়েকজন হেল্পার ড্রাইভারের হাতে পায় ধরে গলা ধাক্কা খেয়ে কিংবা ফুট ফরমায়েশ খেটে বিনে পয়সায় এখানে এসে জুটেছে।প্রথম কদিন ছন্নের মত এদিক ওদিক ঘুরে চেয়ে চিন্তে এক আধ পেট খেয়ে ফেরির পল্টুনে স্টেশনে কিংবা সিরিয়ালে থাকা ট্রাকের পেটের নীচে রাত কাটায়। দু’দিনেই ফন্দি ফিকির ছোট খাট চুরি চামারি বাটপারি শিখে যায়। এদের মধ্যে বোকা-সোকার সংখ্যা নগন্য।বেশীর ভাগই দুরন্ত ও বুদ্ধিমান!দুয়েকজন ঘাটের দালালদের হেল্পার হয় প্রথমে। চাপাবাজি আর ভুজুং ভাজং এর যোগ্যতা থাকলে দু-য়েক বছরেই পুরোদস্তুর দালাল হয়।দু-য়েকজন হয় মলম বা গাছ গাছড়া বিক্রেতা কেউবা গাট কাটে বা মুট বয় কেউ হয় হোটেলের বয় বেয়ারা।ঘাট বড় খারাপ জায়গারে বাপ! বারোয়াড়ি বাটপারের আড্ডা ওখানটায়। ছোট খাট ছল চাতুরি তো আছেই একটু বেতাল হলেই সর্বশান্ত হওয়া বিচিত্র নয়। যাত্রীরা তাই ভয়ে ভয়ে থাকে। দালালদের শত প্রলোভন এড়িয়ে চলে। তবুও অনেক চতুর যাত্রীও ধরা খায় হর হামেশাই।পেশা ভিন্ন হলেও জোটবদ্ধ ওরা সবাই-বিচিত্র ভাষায় কথা বলে।একদম নিরীহ চেহারার আড়ালেও একটু শয়তানী লুকিয়ে থাকে।তবে ওদের বন্ধু হল মাস্টার,সারেঙ, সুকানী,বাস-ট্রাক ড্রাইভার, ঘাটের সুপারভাইজার,পুলিশ আর পতিতা। এদের সাথে ছল চাতুরি প্রায় করেনা বললেই চলে।তবে দুয়েকজন থাকে ছন্ন ছাড়া।তাদের অপরাধের কোন বাপ মা নাই। সুযোগ পেলেই ব্যাস-তাই ঘাড়ানি কিংবা নলী ছোটা (মাইরের রকমফের) ওদের ভাগ্যেই জোটে বেশী।(শুনেছি ওরা নাকি পুলিশ জি আর পি’র ও পকেট কাটত!)আর নামের কি ছিড়ি ওদের! বাপ দাদার আকিকা দেওয়া নামের উপর অনেক পুরু ময়লা জমে কেউ হয় কাইল্যা কেউ ট্যাবলেট কেউ নুনজান কিংবা মাইনক্যা আর বুলেট বন্দুক টায়ার টিউব তো আছেই।সিনিয়র কিংবা পালের গোদাদের নামের আগে পরে গুরু কমন।খিস্তি খেউড় ওদের মুখে খইয়ের মত ফোটে।একসময়ের বিখ্যাত রেল ও স্টিমার ঘাট পরবর্তীতে স্টিমার বিলুপ্ত হয়ে ফেরি লঞ্চঘাট।সেই গোয়ালন্দী জাহাজের কথা কত বিখ্যাত লেখকের লেখাতেই না পাওয়া যায়। এখান থেকে ট্রেন যেত সরাসরি পশ্চিম বঙ্গের শিলিগুড়িতে। সেই শিলিগুরি ট্রেন তার পুরোনো নাম নিয়ে এই সেদিনও টিকে ছিল।যদিও তার চলার পথে প্রতিবন্ধকতা সৃস্ট হয়েছিল অনেক আগেই।সেদিনের সেই দুরন্ত কৃর্তিনাশা পদ্মা নাব্যতা হারানোয় বিখ্যাত সেই ঘাটও উজান বেয়ে চলে এসেছে দৌলতদিয়ায়। ঘাট তার রুপ লাবন্য আদি ঠিকানা হারিয়েছে সেই সাথে দালালরা হারিয়েছে তাদের স্বকীয়তা। আমি বলছি সেই আশির দশকের কথা।বহু পথ জার্নি করে আসা যাত্রীরা জাহাজ ফেরি কিংবা লঞ্চ থেকে নেমে যখন ছুটছে স্টেশনের পানে ট্রেন ধরার উদ্দেশ্যে-অনেকেই জানেনা ট্রেন কখন ছাড়বে। স্টেশনও সবাই চিনতনা- আনাড়ির মত দিকভ্রান্ত হয়ে এদিক ওদিক ছুটোছুটি করত আর একে তাকে ধরে জিজ্ঞেস করত ট্রেন কখন আসবে? সেই সযোগে কুলিরা ট্রেন এখুনি ছাড়বে বলে তাড়াহুড়ো করে মুটে নিয়ে কয়েকগুন পয়সা কামিয়ে নিত। সামনে কুলির মাথায় মাল দিয়ে যখন মিয়া বিবি পরিজন নিয়ে উর্ধশ্বাসে ছুটছে তখনি পথ রোধ করে দাড়াত হোটেলের দালালরা। কুলির সাথে কথা হত সেই সাঙ্কতিক ভাষায়-যত্রীর পথ আটকে বলত কই দৌড়ায় যান ছার- টেরেনতো এহনো আসে নাই। যাত্রীরা থমকে গিয়ে হতভম্ব হয়ে জিজ্ঞস করত ‘তার মানে?’মানে ওইটা হইল মাল গাড়ির ইঞ্জিনের হুইসেল! ওই ব্যাটা ভাবছিল আপনার টেরেনের!কুলি তখন কাচুমাচু হয়ে দুঃখ প্রকাশ করত। কিন্তু ভাড়ায় ছাড় দিতনা এক পয়সা।হোটেলের সেই দালাল তাদের হোটেলের গুন কীর্তন করে কোনক্রমে ভিতরে সেধিয়ে বেয়ারার হাতে বুঝিয়ে দিয়েই আরেকজন ধুর পোক ধরার উদ্দশ্যে বেরিয়ে পড়ত। ট্রেনের হুইসেলেরও রকমফের আছে। ইঞ্জিন সানটিঙ(ট্রেনের বগি পরিবর্তন কিংবা ইঞ্জিনের দিক পরিবর্তন)এর হুইসেল একরকম ট্রেন ছাড়ার হুইসেল অন্যরকম। ট্রেন ছাড়ার আগে ফলস্ হুইসেল বাজে যা যাত্রীদের সতর্ক করে বা সংকেত দেয় ট্রেন ছাড়ার সময় হয়ে এসেছে।ওদিকে সিগন্যালে আটকে গেলে( স্থানীয় লোকদের মুখে এই শব্দটা কখনো আমি শুদ্ধ ভাষায় শুনিনি-কেউ বলে সিনগেল কেউবা সিংগ্যাল বলে। ছোট বেলায় এই ধরনের অশুদ্ধ শব্দ শুনতে শুনতে আমারও ধারনা হয়েছিল এইটে সিনগেলই হবে)হুইসেলের ধ্বনি পাল্টে যায়অনেকটা টেলিগ্রামের টরে টক্কা টক টক টক্কার মত যা আমাদের মত অজ্ঞদের কানে একই রকম ধ্বনি মনে হলেও অভিজ্ঞরা এ ধ্বনির মর্ম বোঝেন।আবার চলন্ত পথে চালক বিপদের আভাস পেলে অন্যস্বরে হুইসেল বাজায়-ট্রেন লাইনচ্যুত হলেও হুইসেল বাজে আর্ত কন্ঠে , আমাকে বাচাও বাচাও বলে!রেল স্টেশনের অদুরে আমার বাড়ি থাকায় ছোট বেলা থেকেই এমন ধারার ভিন্ন ভিন্ন ধারায় হুইসেলের শব্দ শুনেই চোখ বুজে বলে দিতে পারতাম রেল গাড়ির হাল হকিকত।কোথাও যেতে হলে ট্রেনের সেই সানটিঙ এর হুইসেল শুনে বাড়ি থেকে বের হতাম।ক্লান্ত ক্ষুধার্ত যাত্রী যখন ট্রেন ছাড়তে দেরী হবে ভেবে আয়েস করে হাত মুখ ধুয়ে বহুদিন বাদে পদ্মার টাটকা ইলিশের স্বাদ নেবে বলে খেতে বসে গরম গরম ঝোল সবে পাতে ঢেলেছে ঠিক তখুনি বেজে উঠল হুইসেল- আর বেয়ারার তখুনি তারস্বরে চিৎকার ছার টেরেন ছাইড়া গেল! হায় হায় একি অলুক্ষনে কথা? শালার ট্রেন ছাড়ার আর সময় পেলনা। টাটকা ইলিশের গরম ঝোলের স্বাদ ভুলে যাত্রীরা তখন লাফিয়ে উঠে হুমড়ি খেয়ে এদিক ওদিক ছোটাছুটি করত। হাত ধুবে না ব্যাগ গোছাবে নাকি সব ফেলে ট্রেন ধরতে ছুটবে এই নিয়ে দিশেহারা!কিন্তু বিপত্তি বাধত অন্যখানে- বেরুনোর মুখেই বেয়ারা গিয়ে পথ আগলে দাড়াত।ছার খাওনের টাকা?যাত্রী তখন ভুলে গেছে কি খেয়েছে কি খায়নি!বড় নোট দিলে ভাংতি নাই ছোট নোট গুনতে গেলে ট্রেন হারানোর ভয়।বিলের টাকা কোন মতে তার হাতে গুজে দিয়ে পড়ি মড়ি করে স্টেশনে গিয়ে দেখে ট্রেন নেই।হায় হায় এখন কি হবে? হতাশ ক্লান্ত দিশেহারা যাত্রীরা তখন হাতের কাছে যাকে পায় তাকেই ধরে বলে ভাইজান ট্রেন কি চলে গেছে। পুংটা কেউ হলে তাকে আরো ঘাবড়ে দেয়। কিন্তু সহৃদজন হাসতে হাসতে বলে, নারে ভাই ট্রেন ছাড়তে এখনো অনেক দেরি- কেবল সানটিঙ করতেছে।যাত্রীদের তখন ঘাম দিয়ে জ্বর ছাড়ত-ভাবত বেয়ারা হয়তো ভুল করেছে।এমনি কত ধরনের জোচ্চুরি বাটপারি জালিয়াতি হত প্রতি দিন।সব হোটেল মালিক আর সব বয় বেয়ারা দালালরা যে খারাপ ছিল তা কিন্তু নয়। দু-চারজনতো অবশ্যই ভাল ছিল।বলছিলাম এদের ভাষা নিয়ে। সেই ভাগ্যান্বষনে বের হওয়া মুখ্য সুখ্য পোড় খাওয়া মানুষগুলো নিজেদের মধ্যে তথ্য আদান প্রদান করার জন্য উদ্ভাবন করেছিল নতুন এক আঞ্চলিক ভাষার। এমন কিছু শব্দ তারা ব্যাবহার করত যা বোঝার সাধ্যি বাইরের কারো ছিলনা- শুধু তাইনা এর পরিবর্তন হত দ্রুত। একই শব্দ বেশীদিন ব্যাবহারের ফলে এর গুঢ় অর্থ বুঝে ফেলা ধুর্তদের অসম্ভব নয়। অনেকেই যাত্রীদের কৃপাদৃষ্টি লাভের আশায় কিংবা হৃদ্যতা গড়ে তোলার বাসনায় গোমড় ফাঁস করে দিত।ছোটবেলায় শোনা সেই ভাষার অনেকটাই ভুলে গেছি আজ। মনে আছে অল্প কিছু শব্দ।ভুলভ্রান্তি হতেই পারে-তাই ত্রুটি মাজনীয়। আম দালালেরা ব্যাবহার করত প্রচলিত কিছু শব্দ! যেমন ‘পুরুষ যাত্রী’কে বলত-পোক, মেয়ে যাত্রীকে-ভাতি, টাকাকে-ফুটি। কেউ সর্বস্বান্ত হলে বলত- ‘মালে হুপড়ি খাইছে’ এমনি আরো কত-শত শব্দ ছিল তাদের অভিধানে। দুই টাকাকে বলত দয়লা ফুটি, চারকে আইরচ্য, পাচকে হাইত্যা।তবে বুদ্ধিমান বা চাল্লু ভাষাবিদ দালালেরা ছিল এক কাঠি সরেস। তারা কথা বলত কখনো ভাষাকে উল্টে পাল্টে আন্ধা কুন্দা ব্যাবচ্ছেদ করে, যেমন ‘উইতু ওইকো এছিল্যগ্যা?’ এমন কথা শুনে মনে হত বিজাতীয় ভাষা। প্রথমে খটকা লাগলেও একটু বুদ্ধি খাটালে মর্মদ্ধার করা সম্ভব-মুল শব্দ গুলোকে উল্টে ফেলে স্বর বর্ণের কিছু অতিরিক্ত ব্যাবহার হয়েছে! উইতু-তুই –বাকি শব্দ গুলো আলাদা করে কয়েকবার উচ্চারন করলেই আসল কথা বেরিয়ে আসবে! কিন্তু মুল ব্যাপার হচ্ছে এর অতিদ্রুত ব্যাবহার আর বোঝার ক্ষমতা। সেইখানেই ছিল ওদের এক্সট্রা অর্ডিনারি বুদ্ধিমত্বা!এত দ্রুত ওরা এই ভাষায় কথা গুলো বলত যে অতি বুদ্ধিমানরাও হকচকিয়ে যেত! পাঠক তুমি এইটে বুঝে ফেললে কি হবে ওদের ঝুলিতে আরো অনেক কারিশমা ছিল। একই সাথে দুজনের কথপোকথন হত এই ভাবে,‘আলেরমা আথেসা আতিভাডা ওসজো’এর উত্তরে ‘স্লেইরম, ইলামার ল্লোল প্লড়তেছে।‘‘শব্দার্থ শোভন নয় তাই পাঠকের হাতে ছেড়ে দিলাম এর মর্ম উদ্ধারের ভার।সেই আগের দিন আর নেই।ঘাট মরে গেছে। সড়ক যোগাযোগ ব্যাবস্থা হয়েছে অনেক উন্নত- সেই সাথে মান নেমে গেছে আমাদের বি আর বা বাংলাদেশ রেলওয়ের।এখন আর কেউ পঞ্চাশ মাইল পথ পেরুতে দিন কাবার করেনা।নদীগুলো শুকিয়ে গেছে-কিংবা এর দু পারের দৈর্ঘ্য কমে গেছে। ব্রিজ হয়ে গেছে অনেকখানেই বাকিগুলো হবে হবে করছে। ব্যাবসার এই আকালে দালারেরা ভিন্ন পেশায় চলে গেছে।তবু প্রমত্ত পদ্মা পাড়ের ক্লান্ত বিধ্বস্ত রুগ্ন সেই ঘাটের বাতাসে এখনো ভেসে বেড়ায় দেশের সুদুর প্রান্ত থেকে ভাগ্যান্বেষনে আসা ঘর পালানো একগুয়ে চতুর চঞ্চল সদাহাস্য একদল তরুনদের উদ্ভাবিত ভাষার টুকরো শব্দগুলি।
আমার জন্মদিনে!(একটি করুন রস কাহিনী)
২৪ শে জুলাই, ২০০৯ দুপুর ১২:২৯
‘এ্যাই তোমার জন্মদিন কবে?’ আহ্লাদী কন্ঠে আমার নব্য প্রেমিকার প্রশ্ন।‘কেন? জন্মদিন জেনে কি হবে?’ আমি অবাক হওয়ার ভান করলাম।‘বা-রে !এমনিতেই। প্লিজ বলোনা?’ ‘তোমারটা কবে?’ প্রতিউত্তরে নিজেরটা না বলে উল্টো তাকেই সে প্রশ্ন করলাম।‘আমি তোমাকে প্রথম জিজ্ঞেস করেছি। তোমারটা আগে বল?’ তার কন্ঠে অভিমানের স্পস্ট আভাস।নতুন নতুন প্রেম বেশী প্যাচালে বিপদ হতে পারে! অগত্যা যুদ্ধের ডঙ্কা বাজার আগেই রণে ভঙ্গ দিলাম।‘২৪শে জুলাই। এখন তোমারটা বল?’‘১০ই আগস্ট।-এই জানো আমি না কারো জন্মদিন মনে রাখতে পারি না!’ লাজুক ভঙ্গীতে সে বলল।‘তাই! তাহলে নিজেরটা মনে রেখেছ ক্যামনে?’কৃত্তিম রাগত ভঙ্গীতে আমার বাহুতে মৃদু আঘাত হেনে বলল,‘যাঃ! কিযে বল- নিজের জন্মদিন কেউ ভোলে!’‘সেদিন যে বললে আমি তোমারই অস্তিত্বের ভিন্ন রুপ ! তাহলে নিশ্চয়ই এখন থেকে নিজেরটা না ভুললে আমারটাও ভুলবে না।’ সপ্রশ্ন দৃস্টিতে তার দিকে তাকালাম।সে আরেকটু কাছ ঘেষে মাথাটা আমার কাধের উপর এলিয়ে দিয়ে দারুন রোমান্টিক কন্ঠে বলল,‘কি’যে বলো জা-ন! দেখো তোমারটা আমি ঠিক ঠিক মনে রাখব।’আমিও কম যাই কিসে ডান হাত দিয়ে তার কাধটাকে বেস্টন করে তাকে আরেকটু নিজের দিকে আকর্ষন করে কর্কশ আঙ্গুলগুলোর প্রত্যক্ষ অংশগ্রহনে মৃদু চাপ দিয়ে বুঝিয়ে দিলাম তার কথায় আমি যার পর নাই পুলকিত! এ-আবেগের ভাষা কন্ঠ নিঃসৃত শব্দ দিয়ে বোঝানো সম্ভব নয়! এভাবে কেটে গেল আরো অনেক মুহুর্ত ঘন্টা-দিন-মাস।... আর সপ্তাখানেক পরেই আমার জন্মদিন। শিহরন উত্তেজনায় ঠিকমতো ঘুম আসেনা!দিনে সময় পাইনা তাই রাতে বিছানায় শুয়ে শুয়ে আধো ঘুমে জাগরনে কত কি সপ্নে দেখি! এ সপ্নের মজা হোল যখন তখন নিজের ইচ্ছেমত এগুলো পরিবর্তন করা যায়।তাই সুযোগ পেলেই পুরাতন গুলোর সাথে হয় নতুন কিছু জুড়ে দেই নয়তোবা একদম ভেঙ্গে ফেলে নতুন করে সাজাই!ভোরে উঠে আয়নার সামনে দাড়িয়ে দেখি চোখের নিচে কালচে আভা! সারাদিন ঘুমের ঘোরে ঢলে ঢলে পড়ি!...কি আশ্চর্য!এইপ্রথম আমার সবচেয়ে প্রিয়জন আমার জন্মদিনে স্পেশাল শুভেচ্ছা জানাতে যাচ্ছে, আর আমি এটুকু কল্পনার জাল বুনতে পারব না?সময়টা যত এগিয়ে আসছে আমিও তত অতিকস্টে নিজেকে গুটিয়ে ফেলছি একটা কৃত্তিম খোলসে! এ’কদিন একটু কম অথচ গম্ভীর মুখে কথা বললে, আর দিন ক’তক সাক্ষাৎ পর্বটা এড়িয়ে চলতে পারলেই একটা প্রচ্ছন্ন অভিমান ভাব ফুটে উঠবে-ফলে জন্মদিনে প্রেমটা জমবে ভাল!আমার জন্মদিনের দু’দিন আগে সে ফোন করল। সে তিনটে কথা বললে,-প্রতিউত্তরে আমি বলি একটা। অনেক কথা আটকে গিয়ে গলার কাছে হাঁসফাঁস করে! কিছুক্ষন পরে সে আমায় কোমল কন্ঠে শুধাল;‘তোমার কি হয়েছে, বলোতো?’প্রশ্নটার গভীরে এতটা ভালবাসা আর আবেগে ছিল যে আমার আর্দ্র হৃদয় দ্রবীভুত হয়ে সত্য কথাটা বলেই দিয়েছিল প্রায় ...‘উ-হুম!’ ‘কি ব্যাপার কিছু বলছনা যে?’‘তুমি বল আমি শুনি।’আচমকা ট্র্যাক চেঞ্জ করে অন্য প্রসঙ্গে চলে গেল, একটু লজ্জিত ভঙ্গীতে জিজ্ঞেস করল,‘আচ্ছা তোমার জন্মদিন এ’মাসে না? ক’তারিখে যেন? স্যরি,-ডিয়ার আমি ভুলে গেছি!’লজ্জা ও অপমানে আমার চোখ কান লাল হয়ে গেছে।সামনে কেউ ছিল বিধায় রক্ষে- না হলে, দু-এক ফোটা নুন মিশ্রিত উষ্ণ জল দু’গন্ড বেয়ে গড়িয়ে পরা বিচিত্র ছিল না। কিন্তু প্রচুর জলীয় বাস্পে ভেজা দীর্ঘশ্বাসটা বেরিয়ে এল জোর করে! কোন মতে গম্ভীর কন্ঠে বললাম ,‘২৪শে জুলাই।’’ও-হ্হো ! আমি মনে মনে ভাবছিলাম যে,২৪শে জুলাই-ই হবে। কিন্তু তারপরও একটু ‘কনফিউস’ ছিলাম। আই’ম স্যরি ’সুইট হার্ট’! তুমি রাগ করোনিতো?’শেষের কথাগুলো টেনে টেনে খুব দরদ দিয়ে বলল,-এমন করে বললে আর কেউ রাগ করে থাকতে পারে! এক ধাক্কায় আমার অর্ন্তজ্বালা শুন্যের কোঠায় নেমে এল।নিজের মনে নিজে নিজে বললাম, “ভুলতো হতেই পারে! সেতো আর লিখে রাখেনি! বাসায় যেতে যেতে স্মৃতি শক্তি কিছুটা ঝাপসা হওয়াই স্বাভাবিক।”তবুও আহত কন্ঠে ক্লিস্ট হেসে বললাম,‘নাহ্!রাগ করিনি,এ আর এমন কি!’ এবার সে অনেকটা আবদারের সুরে রোমান্টিকতার ঝুড়ি উপুড় করে দিয়ে বলল, ‘তুমি কিন্তু সে-দিন রাত ঠিক বারোটা এক মিনিটে আমাকে ফোন করবে, আমি তোমাকে জন্মদিনের ‘উইশ’করব!’“অ্যা-বলে কি! আমার জন্মদিনে আমি তাকে ফোন করে শুভেচ্ছা নিব! এমন কথা কখনো শুনিনি বাপ! তাকে কি ফোন করে আমি গানের সুরে সুরে বলব ,‘হ্যাপি বার্থ ডে টু মি!!” তার এই বিস্ময়কর অনুরোধটা হজম করতে আমার একটু সময় লেগেছিল। সে-বার কন্ঠে একটু উষ্মা এনেই জিজ্ঞেস করেছিলাম, ‘কেন-আমি কেন ফোন করব?’প্রতিউত্তরে আমার ফোন করার পক্ষে সে কতগুলো মোক্ষম যুক্তি দিয়েছিলো। যেগুলো শুনে নিজেই নিজেকে ‘গাধা বলে গালি দিয়েছিলাম’। প্রতিজ্ঞা করেছিলাম,“বাকি জীবনের সবগুলো জন্মদিনে আমিই তাকে ফোন করব!” যাহোক-সেবার ঠিক বারোটা এক মিনিটে ফোন করা হয়নি বেরসিক এক বন্ধুর বদান্যতায়। ফোন করতে একটু দেরী করায়,“তার সে-কি অভিমান। শেষে মান ভাঙ্গাতে রাত যায় ...!”প্রায় বছর খানেক পরে তখন আমি দেশ থেকে অনেক অনেক দুরে প্রিয়তমা-প্রিয়জন-শত্র“দের ছেড়ে বরফের দেশে বরফের মাঝে বসে আইসক্রিম খাই আর ঘোর লাগা চোখে তার কথা ভাবি! প্রথম প্রেমের প্রথম বিচ্ছেদ বলে কথা-তাও দুজনের মাঝে হাজার আস্টেক কিলোমিটারের ব্যাবধান- শুধুকি তাই! কবে ফের দেখা হবে তারও কোনও ঠিক নেই। বিচ্ছেদের দাবানলে ভালবাসার উত্তাপ তখন বেড়ে গেছে কয়েকগুন। ফুসরৎ পেলেই টেলিফোনে বাক বা-কুম করি, আর মাস শেষে বিল দেখে ভিমড়ি খাই! প্রতিজ্ঞা করি, “সামনের মাসে গুনে গুনে চারবারের বেশী ফোন করব না।” কোনমতে সপ্তাহের তিনদিন যেতেই ভাবি,“ব্যাস অনেক হয়েছে!” আমার প্রেমিক মন হিসেবি মনকে দর্শন শেখায়,“প্রতিজ্ঞা করাই হয় প্রতিজ্ঞা ভাঙ্গার জন্য- আর তুমিতো করছ মাত্র মিনিট দুয়েকের জন্য ক’পয়সাই বা বিল আসবে! কেমন আছ, ভাল আছি বলেই রেখে দিও। এতে অন্তত মনটা শান্ত হবে-নেক্সট ফোনটা না-হয় দশদিন পরেই কোর!”নিজের সাথে যুদ্ধ করতে করতে এক সময় নিজেকে আবিস্কার করি ফোন সেটটার সামনে! অবাধ্য দু-হাতের একটা ছুটে যায় রিসিভারের দিকে আরেকটা ডায়াল প্যাডের বোতাম লক্ষ্য করে।সেখান থেকে তাদের ফিরিয়ে আনার কোন সাধ্যি আমার নেই! হয়তো দু’বার তাকে পেলাম না। সেকি- টেনশন! আর তৃতিয়বার তাকে পেয়ে দু’মিনিটের মাথায়- হুশ ফিরে লক্ষ্য করি বিশ মিনিট চলে গেছে! লাজ-শরম শিকেয় তুলে বলতেও পারিনা,“এবার তাহলে রাখি!”আবেগের অতিশয্যে কিংবা চক্ষুলজ্জার খাতিরে দু’চারটে ফোন যে সেও করেনি তা কিন্তু নয়।জুলাই মাসের পনের তারিখ থেকে পরবতী সপ্তাখানেক টেলিফোনের বোতাম চাপতে চাপতে আমার অনামিকা আর মধ্যাঙ্গুলির অগ্রভাগে কড়া পড়ে গেছে!টু-টা আওয়াজ শুনতে শুনতে কানের অবস্থাও বেতাল! কিন্তু আমার কাঙ্খিত নাম্বার রিচ্ করছে না! অন্য কাউকে দিয়ে যে খবরটা নেব সে উপায়ও নেই।মনের দুঃখে বিমান অফিসে যখন ফোন করতে মনস্থির করেছি,ফিরতি টিকিট কনফার্ম করার জন্য-ঠিক তখুনি ইনডেক্সের কোনায় খুজে পেলাম তার পাড়াতো বান্ধবীর ফোন নাম্বার ! প্রথমবার সে রাজী হলনা। দ্বীতিয়বার অনেক অনুরোধে ঢেকি গিলল! কিছুক্ষন ঘুরে এসে জানাল ‘তিনি ঘুমুচ্ছেন।’ আর তৃতিয়বার হয়তো কিছুটা মনক্ষুন্ন হয়েই ডেকে নিয়ে এল। সে তাকে ডাকতে যাবার ফাকে আমি ফোন রেখে আবার কল-ব্যাক করার রিস্ক নিইনা। যদি ফের সে ফোন রিসিভ না করে।ফোন লাইন নস্ট থাকাতে আমার প্রেয়সি তার কস্টের কথাগুলো বেশ গুছিয়ে বলল । তার মধ্যে আমার জন্য হয়তো এক ছত্র হবে, বাকি গুলো অন্য কারনে! ধৈর্য্য ধরে তার কস্টের ফিরিস্তি শুনতে হোল। মনকে প্রবোধ দিচ্ছিলাম,তার কন্ঠ যে শুনতে পাচ্ছি এইতো ঢের পাওয়া! কথা প্রায় শেষের দিকে বিদায়ের পর্ব শুরু হল বলে। আমি একটা কথা তার মুখ থেকে শোনার জন্য উদগ্রীব হয়ে আছি।“সেদিন কে ফোন করবে আমি নাকি সে? কোথায়? কখন?” এব্যাপারে কিছুই বলছে না ! শেষমেষ আমার ধৈর্যচ্যুতিই ঘটল! রাগ চেপে হালকা গলায় বললাম,‘২৪ তারিখে কখন কোথায় ফোন করব?’ সে একটু বিস্ময়ের সাথে বলল,‘২৪ তারিখে কেন?’ “আমাকে প্রশ্ন করে হয়তো উত্তরটা নিজের মনে কিছুক্ষন হাতড়ে বেড়াল!” ওহ-হো !২৪ তারিখে তোমার জন্মদিন! দ্যাখো আমি ভুলেই গেছি! জানো জান, আমি এ’কদিন এত টেনশনে আছি যে এ’ব্যাপারটা মনে করারই ফুসরৎ পাইনি। ছিঃ!’ নিজেকে ধিক্কার দিল ,‘ধন্যবাদ তোমাকে মনে করিয়ে দেয়ার জন্য।’রিসিভার রেখে আমি ভাবতে বসলাম। “ঠিকইতো টেলিফোন লাইন নষ্ট থাকা সাংঘাতিক গুরুতর একটা ব্যাপার! এজন্য কত বড়সড় অঘটন ঘটতে পারে! মানুষের মাথা কি তখন ঠিক থাকে! আর আমি আছি আমার জন্মদিন নিয়ে!-এসব ‘সিলি’ ব্যাপার ভুলে যাওয়াটাই স্বাভাবিক- আর মনে রাখা জঘন্যতম অপরাধের একটার মধ্যে পড়ে!”সেবার জন্মদিনে সে বাসায় ছিলনা। প্রবাসী খালার সাথে জরুরী সপিং করতে গিয়েছিল। আর আমি বন্ধুদের উদ্বেলিত ভালোবাসার শ্যাম্পেনের ফেনিল বুদ্বুদ থেকে অনেক দুরে পুলিশের মার খাওয়া ‘বদনে’ রিসিভার কানে ঠেকিয়ে সারাদিন ঘরের কোনে ঠায় বসেছিলাম!পরের বছর বরফে জমে যাওয়া শরীরটাকে মরুভুমির ওভেনে ‘চিল আউট ’ করছিলাম! এর মাঝে পাসপোর্টে কয়েকবার বাংলাদেশ এয়ারপোর্টের ইমিগ্রেশন কতৃক অনেকগুলো ‘এরাইভাল ও ডিপারচার’ সিল পড়েছে। সে কারনে বিরহ আর আগের মত ভোগায় না-আস্থা বেড়েছে কিন্তু রোমান্টিকতা কমেছে!সপ্তাহ বা দশদিন অন্তর মিনিট দশেকের আলাপেই প্রশান্তি। আগের মত সেও আর সুযোগ বুঝে হাত খরচের পয়সা বাঁচিয়ে দু’য়েকমাস অন্তর আমাকে ফোন করেনা। তাতে অবশ্য আমার কোন ক্ষোভ নেই। কি দরকার অযথা পয়সা নস্ট করার!২৪ তারিখ সন্ধ্যেবেলায়ই দুটো প্রিপেইড কার্ড কিনে রেখেছি। পাশের রুমের ভদ্রলোক দেশে বেড়াতে গেছেন! এখানে হাত পা ছুড়ে চিৎকার করে কথা বললেও-কেউ তেড়ে আসবে না।রাত বারোটার ক’মিনিট আগেই ফোন করলাম। কে জানে অন্য কেউ আমার জন্মদিনে ভুল করে তাকেই ’উইশ’ করে কিনা আর এই ফাকে আমি সময় মতো ‘বিজি টোন ’ পাই!কথা বলছি,আর উত্তেজনায় মৃদু কাঁপছি! কিন্তু যে কথা শোনার জন্য আমি ভীষন উদগ্রীব, তার কথায় সেটার আভাস ইঙ্গিতও পাচ্ছি না। প্রথম কার্ড শেষ হওয়ার পরে; আমি কিছুটা হতাশ! কে জানে হয়তোবা সে শেষ মুহুর্তে সারপ্রাইজ দিয়ে আমাকে চমকে দিবে! ...আর মাত্র দুমিনিট আছে। এত রাত্রে কার্ড কেনার হ্যাপাও কম নয়। সেই ভেবে চুপসে গিয়ে করুন কন্ঠে বললাম ,‘আজ আমার জন্মদিন!’ওপাশ থেকে দশ সেকেন্ডের নিরবতা! হঠাৎ সে উত্তেজিত হয়ে বলল,‘আরে তাইতো! আজ ২৪ তারিখ তোমার জন্মদিন আর আমি ভেবেছি ২৬ তারিখে! ইস্ !সেদিন তোমাকে সারপ্রাইজ দিব ভেবেছিলাম। স্যরি...’ আমার এত দিনের প্রিয় সঙ্গী সাধের মোবাইল সেটটা হয়তো তার মনিবের দুঃখের বোঝা আর বাড়াতে চাইল না- কট্ করে লাইনটা কেটে গেল! এবার আমি দেশে। তার বাসা থেকে আমার বাসার দুরুত্বটাও খানিকটা কমেছে। ল্যান্ড ফোন থাকা সত্বেও একখানা সেল ফোন তার সর্বক্ষনের সঙ্গী।হাটে ঘাটে মাঠে সে যেখানেই থাকুক না কেন প্রায় চব্বিশ ঘন্টা সে আমার নাগালের মধ্যে! অবারিত সুযোগ আর অফুরšত সময় থাকা সত্বেও তার ‘পার্সোনাল’ নাম্বারটা এখন আর চাপি না।জন্মদিনের অল্প ক’দিন বাকিসে’দিন আমার সেল ফোনের মনিটরে,তার নাম্বার ভেসে উঠল। অনেকবার রিং হওয়ার পরে বিরক্তিতে চোখ মুখ কুচকে ভারি কন্ঠে বললাম, ‘হ্যালো...!কথা হোল বেশ খানিক্ষন। হালকা সুরে-ছেড়া-ছেড়া!দুজনের কন্ঠেই সেই রোমান্টিকতার পরশ নেই! নেই সেই আবেগ নেই সেই উত্তেজনা!! বলার মত তেমন কথাও নেই-তবুও ফোন রাখতে দ্বীধা হচ্ছিল। হঠাৎ সে একটু উত্তেজিত হয়ে বলল,‘জানো-তোমার নামের সাথে আমার স্বামীর নামের দারুন মিল। ওর নাম...’প্রতিউত্তরে শুস্ক কন্ঠে বললাম শুধু, ‘তাই!’সে আরেকটু উত্তেজিত হয়ে বিগলিত হেসে বলল,‘আর সবচেয়ে আশ্চর্য ব্যাপার কি জানো! তার জন্মদিনও ২৪শে জুলাই !’ তার সেই আশ্চর্যজনক আবিস্কার আমার অভ্যান্তরের অতি কোমল অনুভুতিকে বিন্দুমাত্র নাড়া দিল না- শুধু বৃদ্ধাঙ্গুলিটা চেপে বসল ’এন্ড বাটনে!’'
‘এ্যাই তোমার জন্মদিন কবে?’ আহ্লাদী কন্ঠে আমার নব্য প্রেমিকার প্রশ্ন।‘কেন? জন্মদিন জেনে কি হবে?’ আমি অবাক হওয়ার ভান করলাম।‘বা-রে !এমনিতেই। প্লিজ বলোনা?’ ‘তোমারটা কবে?’ প্রতিউত্তরে নিজেরটা না বলে উল্টো তাকেই সে প্রশ্ন করলাম।‘আমি তোমাকে প্রথম জিজ্ঞেস করেছি। তোমারটা আগে বল?’ তার কন্ঠে অভিমানের স্পস্ট আভাস।নতুন নতুন প্রেম বেশী প্যাচালে বিপদ হতে পারে! অগত্যা যুদ্ধের ডঙ্কা বাজার আগেই রণে ভঙ্গ দিলাম।‘২৪শে জুলাই। এখন তোমারটা বল?’‘১০ই আগস্ট।-এই জানো আমি না কারো জন্মদিন মনে রাখতে পারি না!’ লাজুক ভঙ্গীতে সে বলল।‘তাই! তাহলে নিজেরটা মনে রেখেছ ক্যামনে?’কৃত্তিম রাগত ভঙ্গীতে আমার বাহুতে মৃদু আঘাত হেনে বলল,‘যাঃ! কিযে বল- নিজের জন্মদিন কেউ ভোলে!’‘সেদিন যে বললে আমি তোমারই অস্তিত্বের ভিন্ন রুপ ! তাহলে নিশ্চয়ই এখন থেকে নিজেরটা না ভুললে আমারটাও ভুলবে না।’ সপ্রশ্ন দৃস্টিতে তার দিকে তাকালাম।সে আরেকটু কাছ ঘেষে মাথাটা আমার কাধের উপর এলিয়ে দিয়ে দারুন রোমান্টিক কন্ঠে বলল,‘কি’যে বলো জা-ন! দেখো তোমারটা আমি ঠিক ঠিক মনে রাখব।’আমিও কম যাই কিসে ডান হাত দিয়ে তার কাধটাকে বেস্টন করে তাকে আরেকটু নিজের দিকে আকর্ষন করে কর্কশ আঙ্গুলগুলোর প্রত্যক্ষ অংশগ্রহনে মৃদু চাপ দিয়ে বুঝিয়ে দিলাম তার কথায় আমি যার পর নাই পুলকিত! এ-আবেগের ভাষা কন্ঠ নিঃসৃত শব্দ দিয়ে বোঝানো সম্ভব নয়! এভাবে কেটে গেল আরো অনেক মুহুর্ত ঘন্টা-দিন-মাস।... আর সপ্তাখানেক পরেই আমার জন্মদিন। শিহরন উত্তেজনায় ঠিকমতো ঘুম আসেনা!দিনে সময় পাইনা তাই রাতে বিছানায় শুয়ে শুয়ে আধো ঘুমে জাগরনে কত কি সপ্নে দেখি! এ সপ্নের মজা হোল যখন তখন নিজের ইচ্ছেমত এগুলো পরিবর্তন করা যায়।তাই সুযোগ পেলেই পুরাতন গুলোর সাথে হয় নতুন কিছু জুড়ে দেই নয়তোবা একদম ভেঙ্গে ফেলে নতুন করে সাজাই!ভোরে উঠে আয়নার সামনে দাড়িয়ে দেখি চোখের নিচে কালচে আভা! সারাদিন ঘুমের ঘোরে ঢলে ঢলে পড়ি!...কি আশ্চর্য!এইপ্রথম আমার সবচেয়ে প্রিয়জন আমার জন্মদিনে স্পেশাল শুভেচ্ছা জানাতে যাচ্ছে, আর আমি এটুকু কল্পনার জাল বুনতে পারব না?সময়টা যত এগিয়ে আসছে আমিও তত অতিকস্টে নিজেকে গুটিয়ে ফেলছি একটা কৃত্তিম খোলসে! এ’কদিন একটু কম অথচ গম্ভীর মুখে কথা বললে, আর দিন ক’তক সাক্ষাৎ পর্বটা এড়িয়ে চলতে পারলেই একটা প্রচ্ছন্ন অভিমান ভাব ফুটে উঠবে-ফলে জন্মদিনে প্রেমটা জমবে ভাল!আমার জন্মদিনের দু’দিন আগে সে ফোন করল। সে তিনটে কথা বললে,-প্রতিউত্তরে আমি বলি একটা। অনেক কথা আটকে গিয়ে গলার কাছে হাঁসফাঁস করে! কিছুক্ষন পরে সে আমায় কোমল কন্ঠে শুধাল;‘তোমার কি হয়েছে, বলোতো?’প্রশ্নটার গভীরে এতটা ভালবাসা আর আবেগে ছিল যে আমার আর্দ্র হৃদয় দ্রবীভুত হয়ে সত্য কথাটা বলেই দিয়েছিল প্রায় ...‘উ-হুম!’ ‘কি ব্যাপার কিছু বলছনা যে?’‘তুমি বল আমি শুনি।’আচমকা ট্র্যাক চেঞ্জ করে অন্য প্রসঙ্গে চলে গেল, একটু লজ্জিত ভঙ্গীতে জিজ্ঞেস করল,‘আচ্ছা তোমার জন্মদিন এ’মাসে না? ক’তারিখে যেন? স্যরি,-ডিয়ার আমি ভুলে গেছি!’লজ্জা ও অপমানে আমার চোখ কান লাল হয়ে গেছে।সামনে কেউ ছিল বিধায় রক্ষে- না হলে, দু-এক ফোটা নুন মিশ্রিত উষ্ণ জল দু’গন্ড বেয়ে গড়িয়ে পরা বিচিত্র ছিল না। কিন্তু প্রচুর জলীয় বাস্পে ভেজা দীর্ঘশ্বাসটা বেরিয়ে এল জোর করে! কোন মতে গম্ভীর কন্ঠে বললাম ,‘২৪শে জুলাই।’’ও-হ্হো ! আমি মনে মনে ভাবছিলাম যে,২৪শে জুলাই-ই হবে। কিন্তু তারপরও একটু ‘কনফিউস’ ছিলাম। আই’ম স্যরি ’সুইট হার্ট’! তুমি রাগ করোনিতো?’শেষের কথাগুলো টেনে টেনে খুব দরদ দিয়ে বলল,-এমন করে বললে আর কেউ রাগ করে থাকতে পারে! এক ধাক্কায় আমার অর্ন্তজ্বালা শুন্যের কোঠায় নেমে এল।নিজের মনে নিজে নিজে বললাম, “ভুলতো হতেই পারে! সেতো আর লিখে রাখেনি! বাসায় যেতে যেতে স্মৃতি শক্তি কিছুটা ঝাপসা হওয়াই স্বাভাবিক।”তবুও আহত কন্ঠে ক্লিস্ট হেসে বললাম,‘নাহ্!রাগ করিনি,এ আর এমন কি!’ এবার সে অনেকটা আবদারের সুরে রোমান্টিকতার ঝুড়ি উপুড় করে দিয়ে বলল, ‘তুমি কিন্তু সে-দিন রাত ঠিক বারোটা এক মিনিটে আমাকে ফোন করবে, আমি তোমাকে জন্মদিনের ‘উইশ’করব!’“অ্যা-বলে কি! আমার জন্মদিনে আমি তাকে ফোন করে শুভেচ্ছা নিব! এমন কথা কখনো শুনিনি বাপ! তাকে কি ফোন করে আমি গানের সুরে সুরে বলব ,‘হ্যাপি বার্থ ডে টু মি!!” তার এই বিস্ময়কর অনুরোধটা হজম করতে আমার একটু সময় লেগেছিল। সে-বার কন্ঠে একটু উষ্মা এনেই জিজ্ঞেস করেছিলাম, ‘কেন-আমি কেন ফোন করব?’প্রতিউত্তরে আমার ফোন করার পক্ষে সে কতগুলো মোক্ষম যুক্তি দিয়েছিলো। যেগুলো শুনে নিজেই নিজেকে ‘গাধা বলে গালি দিয়েছিলাম’। প্রতিজ্ঞা করেছিলাম,“বাকি জীবনের সবগুলো জন্মদিনে আমিই তাকে ফোন করব!” যাহোক-সেবার ঠিক বারোটা এক মিনিটে ফোন করা হয়নি বেরসিক এক বন্ধুর বদান্যতায়। ফোন করতে একটু দেরী করায়,“তার সে-কি অভিমান। শেষে মান ভাঙ্গাতে রাত যায় ...!”প্রায় বছর খানেক পরে তখন আমি দেশ থেকে অনেক অনেক দুরে প্রিয়তমা-প্রিয়জন-শত্র“দের ছেড়ে বরফের দেশে বরফের মাঝে বসে আইসক্রিম খাই আর ঘোর লাগা চোখে তার কথা ভাবি! প্রথম প্রেমের প্রথম বিচ্ছেদ বলে কথা-তাও দুজনের মাঝে হাজার আস্টেক কিলোমিটারের ব্যাবধান- শুধুকি তাই! কবে ফের দেখা হবে তারও কোনও ঠিক নেই। বিচ্ছেদের দাবানলে ভালবাসার উত্তাপ তখন বেড়ে গেছে কয়েকগুন। ফুসরৎ পেলেই টেলিফোনে বাক বা-কুম করি, আর মাস শেষে বিল দেখে ভিমড়ি খাই! প্রতিজ্ঞা করি, “সামনের মাসে গুনে গুনে চারবারের বেশী ফোন করব না।” কোনমতে সপ্তাহের তিনদিন যেতেই ভাবি,“ব্যাস অনেক হয়েছে!” আমার প্রেমিক মন হিসেবি মনকে দর্শন শেখায়,“প্রতিজ্ঞা করাই হয় প্রতিজ্ঞা ভাঙ্গার জন্য- আর তুমিতো করছ মাত্র মিনিট দুয়েকের জন্য ক’পয়সাই বা বিল আসবে! কেমন আছ, ভাল আছি বলেই রেখে দিও। এতে অন্তত মনটা শান্ত হবে-নেক্সট ফোনটা না-হয় দশদিন পরেই কোর!”নিজের সাথে যুদ্ধ করতে করতে এক সময় নিজেকে আবিস্কার করি ফোন সেটটার সামনে! অবাধ্য দু-হাতের একটা ছুটে যায় রিসিভারের দিকে আরেকটা ডায়াল প্যাডের বোতাম লক্ষ্য করে।সেখান থেকে তাদের ফিরিয়ে আনার কোন সাধ্যি আমার নেই! হয়তো দু’বার তাকে পেলাম না। সেকি- টেনশন! আর তৃতিয়বার তাকে পেয়ে দু’মিনিটের মাথায়- হুশ ফিরে লক্ষ্য করি বিশ মিনিট চলে গেছে! লাজ-শরম শিকেয় তুলে বলতেও পারিনা,“এবার তাহলে রাখি!”আবেগের অতিশয্যে কিংবা চক্ষুলজ্জার খাতিরে দু’চারটে ফোন যে সেও করেনি তা কিন্তু নয়।জুলাই মাসের পনের তারিখ থেকে পরবতী সপ্তাখানেক টেলিফোনের বোতাম চাপতে চাপতে আমার অনামিকা আর মধ্যাঙ্গুলির অগ্রভাগে কড়া পড়ে গেছে!টু-টা আওয়াজ শুনতে শুনতে কানের অবস্থাও বেতাল! কিন্তু আমার কাঙ্খিত নাম্বার রিচ্ করছে না! অন্য কাউকে দিয়ে যে খবরটা নেব সে উপায়ও নেই।মনের দুঃখে বিমান অফিসে যখন ফোন করতে মনস্থির করেছি,ফিরতি টিকিট কনফার্ম করার জন্য-ঠিক তখুনি ইনডেক্সের কোনায় খুজে পেলাম তার পাড়াতো বান্ধবীর ফোন নাম্বার ! প্রথমবার সে রাজী হলনা। দ্বীতিয়বার অনেক অনুরোধে ঢেকি গিলল! কিছুক্ষন ঘুরে এসে জানাল ‘তিনি ঘুমুচ্ছেন।’ আর তৃতিয়বার হয়তো কিছুটা মনক্ষুন্ন হয়েই ডেকে নিয়ে এল। সে তাকে ডাকতে যাবার ফাকে আমি ফোন রেখে আবার কল-ব্যাক করার রিস্ক নিইনা। যদি ফের সে ফোন রিসিভ না করে।ফোন লাইন নস্ট থাকাতে আমার প্রেয়সি তার কস্টের কথাগুলো বেশ গুছিয়ে বলল । তার মধ্যে আমার জন্য হয়তো এক ছত্র হবে, বাকি গুলো অন্য কারনে! ধৈর্য্য ধরে তার কস্টের ফিরিস্তি শুনতে হোল। মনকে প্রবোধ দিচ্ছিলাম,তার কন্ঠ যে শুনতে পাচ্ছি এইতো ঢের পাওয়া! কথা প্রায় শেষের দিকে বিদায়ের পর্ব শুরু হল বলে। আমি একটা কথা তার মুখ থেকে শোনার জন্য উদগ্রীব হয়ে আছি।“সেদিন কে ফোন করবে আমি নাকি সে? কোথায়? কখন?” এব্যাপারে কিছুই বলছে না ! শেষমেষ আমার ধৈর্যচ্যুতিই ঘটল! রাগ চেপে হালকা গলায় বললাম,‘২৪ তারিখে কখন কোথায় ফোন করব?’ সে একটু বিস্ময়ের সাথে বলল,‘২৪ তারিখে কেন?’ “আমাকে প্রশ্ন করে হয়তো উত্তরটা নিজের মনে কিছুক্ষন হাতড়ে বেড়াল!” ওহ-হো !২৪ তারিখে তোমার জন্মদিন! দ্যাখো আমি ভুলেই গেছি! জানো জান, আমি এ’কদিন এত টেনশনে আছি যে এ’ব্যাপারটা মনে করারই ফুসরৎ পাইনি। ছিঃ!’ নিজেকে ধিক্কার দিল ,‘ধন্যবাদ তোমাকে মনে করিয়ে দেয়ার জন্য।’রিসিভার রেখে আমি ভাবতে বসলাম। “ঠিকইতো টেলিফোন লাইন নষ্ট থাকা সাংঘাতিক গুরুতর একটা ব্যাপার! এজন্য কত বড়সড় অঘটন ঘটতে পারে! মানুষের মাথা কি তখন ঠিক থাকে! আর আমি আছি আমার জন্মদিন নিয়ে!-এসব ‘সিলি’ ব্যাপার ভুলে যাওয়াটাই স্বাভাবিক- আর মনে রাখা জঘন্যতম অপরাধের একটার মধ্যে পড়ে!”সেবার জন্মদিনে সে বাসায় ছিলনা। প্রবাসী খালার সাথে জরুরী সপিং করতে গিয়েছিল। আর আমি বন্ধুদের উদ্বেলিত ভালোবাসার শ্যাম্পেনের ফেনিল বুদ্বুদ থেকে অনেক দুরে পুলিশের মার খাওয়া ‘বদনে’ রিসিভার কানে ঠেকিয়ে সারাদিন ঘরের কোনে ঠায় বসেছিলাম!পরের বছর বরফে জমে যাওয়া শরীরটাকে মরুভুমির ওভেনে ‘চিল আউট ’ করছিলাম! এর মাঝে পাসপোর্টে কয়েকবার বাংলাদেশ এয়ারপোর্টের ইমিগ্রেশন কতৃক অনেকগুলো ‘এরাইভাল ও ডিপারচার’ সিল পড়েছে। সে কারনে বিরহ আর আগের মত ভোগায় না-আস্থা বেড়েছে কিন্তু রোমান্টিকতা কমেছে!সপ্তাহ বা দশদিন অন্তর মিনিট দশেকের আলাপেই প্রশান্তি। আগের মত সেও আর সুযোগ বুঝে হাত খরচের পয়সা বাঁচিয়ে দু’য়েকমাস অন্তর আমাকে ফোন করেনা। তাতে অবশ্য আমার কোন ক্ষোভ নেই। কি দরকার অযথা পয়সা নস্ট করার!২৪ তারিখ সন্ধ্যেবেলায়ই দুটো প্রিপেইড কার্ড কিনে রেখেছি। পাশের রুমের ভদ্রলোক দেশে বেড়াতে গেছেন! এখানে হাত পা ছুড়ে চিৎকার করে কথা বললেও-কেউ তেড়ে আসবে না।রাত বারোটার ক’মিনিট আগেই ফোন করলাম। কে জানে অন্য কেউ আমার জন্মদিনে ভুল করে তাকেই ’উইশ’ করে কিনা আর এই ফাকে আমি সময় মতো ‘বিজি টোন ’ পাই!কথা বলছি,আর উত্তেজনায় মৃদু কাঁপছি! কিন্তু যে কথা শোনার জন্য আমি ভীষন উদগ্রীব, তার কথায় সেটার আভাস ইঙ্গিতও পাচ্ছি না। প্রথম কার্ড শেষ হওয়ার পরে; আমি কিছুটা হতাশ! কে জানে হয়তোবা সে শেষ মুহুর্তে সারপ্রাইজ দিয়ে আমাকে চমকে দিবে! ...আর মাত্র দুমিনিট আছে। এত রাত্রে কার্ড কেনার হ্যাপাও কম নয়। সেই ভেবে চুপসে গিয়ে করুন কন্ঠে বললাম ,‘আজ আমার জন্মদিন!’ওপাশ থেকে দশ সেকেন্ডের নিরবতা! হঠাৎ সে উত্তেজিত হয়ে বলল,‘আরে তাইতো! আজ ২৪ তারিখ তোমার জন্মদিন আর আমি ভেবেছি ২৬ তারিখে! ইস্ !সেদিন তোমাকে সারপ্রাইজ দিব ভেবেছিলাম। স্যরি...’ আমার এত দিনের প্রিয় সঙ্গী সাধের মোবাইল সেটটা হয়তো তার মনিবের দুঃখের বোঝা আর বাড়াতে চাইল না- কট্ করে লাইনটা কেটে গেল! এবার আমি দেশে। তার বাসা থেকে আমার বাসার দুরুত্বটাও খানিকটা কমেছে। ল্যান্ড ফোন থাকা সত্বেও একখানা সেল ফোন তার সর্বক্ষনের সঙ্গী।হাটে ঘাটে মাঠে সে যেখানেই থাকুক না কেন প্রায় চব্বিশ ঘন্টা সে আমার নাগালের মধ্যে! অবারিত সুযোগ আর অফুরšত সময় থাকা সত্বেও তার ‘পার্সোনাল’ নাম্বারটা এখন আর চাপি না।জন্মদিনের অল্প ক’দিন বাকিসে’দিন আমার সেল ফোনের মনিটরে,তার নাম্বার ভেসে উঠল। অনেকবার রিং হওয়ার পরে বিরক্তিতে চোখ মুখ কুচকে ভারি কন্ঠে বললাম, ‘হ্যালো...!কথা হোল বেশ খানিক্ষন। হালকা সুরে-ছেড়া-ছেড়া!দুজনের কন্ঠেই সেই রোমান্টিকতার পরশ নেই! নেই সেই আবেগ নেই সেই উত্তেজনা!! বলার মত তেমন কথাও নেই-তবুও ফোন রাখতে দ্বীধা হচ্ছিল। হঠাৎ সে একটু উত্তেজিত হয়ে বলল,‘জানো-তোমার নামের সাথে আমার স্বামীর নামের দারুন মিল। ওর নাম...’প্রতিউত্তরে শুস্ক কন্ঠে বললাম শুধু, ‘তাই!’সে আরেকটু উত্তেজিত হয়ে বিগলিত হেসে বলল,‘আর সবচেয়ে আশ্চর্য ব্যাপার কি জানো! তার জন্মদিনও ২৪শে জুলাই !’ তার সেই আশ্চর্যজনক আবিস্কার আমার অভ্যান্তরের অতি কোমল অনুভুতিকে বিন্দুমাত্র নাড়া দিল না- শুধু বৃদ্ধাঙ্গুলিটা চেপে বসল ’এন্ড বাটনে!’'
কাহিনীর শিরোনাম 'মা' হবার কথা ছিল
২৭ শে সেপ্টেম্বর, ২০০৯ দুপুর ২:৩৫
অফিসের কাজের ছেলেটা আচমকা চলে যাওয়ায় ভারী বিপদে ছিলাম!নীচতলা থেকে তিন তলা পর্যন্ত দৌড়াদৌড়ি করা। বার বার গেট খোলা,ফুট ফরমায়েশ খাটা, অতিথি বা বন্ধু এলে তাদের যৎসামান্য আপ্যায়ন করার জন্য একটা অল্প বয়েসী ছেলে খুব জরুরী ছিল।আমার বাসায় গ্রাম থেকে নিয়ে আসা ষোল সতের বয়সের যে মেয়েটা কাজ করে সে-ই একদিন অনুরোধ করল দেশ থেকে তার ছোট ভাইকে এনে যেন আমার কাছে রাখি।বয়স কত রে?বার তের হবি।এর আগে আর কাজ টাজ করেছে কোথাও?হ্যা করছিল- এক এমব্রুডাইরি ফ্যাকটোরিতে ছিল আঠার মাস।ওরা ওরে আটকায় রাখছিল। মা ম্যালা খুইজ্যা ওরে বাইর কইরছে। মাস খানিক হইল বাইত্তে আইছে। মা এহন ভাল কাওরে ছাড়া ওরে দিব না।ঠিক আছে তোর মারে জিগেস করিস আমার এখানে পাঠাবে কিনা?জে আচ্ছা জিগাবোনে।ক’দিন পরে আমিই ফের জিজ্ঞেস করলাম-কিরে তোর ছোট ভাইয়ের খবর কি?মা-রে কইছি। মা পাঠাবি। ওর কুনো ভাল জামা কাপড় ন্যাইতো হের লিগা আমি বেতন পাঠাইলে জামা কিন্যা পাঠাবি।তোর মাকে বল জামা কাপড় কাপড় কেনা লাগবে না। আসলে আমি কিনে দেব।ঠিক আছে কোবোনে। আসার ভাড়াও নাই নিশ্চই। ওকে বললাম, ওর ভাইকে যেন অমুকের কাছে পাঠিয়ে দেয়-আমি আনানোর ব্যাবস্থা করব।দুদিন বাদেই ছেলেটা এসে হাজির। প্রথম দেখায় আমি বেশ হতাশই হয়েছিলাম। এত ছোট!সাস্থ্যের গড়ন ওর বোনেরই মতন মোটার ধাত।খাটো,বোতাম ছেড়া একটা শার্ট গায়ে-পেটটা বেঢপ ভাবে ফুলে আছে। পরনে একটা নেভী ব্লু রঙ জ্বলা হাফ প্যান্ট। পিছনের পকেট দুটো মনে হচ্ছে সামনে এনে তাপ্পি মেরে জোড়া লাগানে।মনে হয় প্যান্টখানা উল্টো পরেছে। পায়ে বেশ উচু হিলের রেক্সিনের তেমনই জীর্ন সেন্ডেল।তবে গায়ের রঙ কালো হলেও চেহারাটা বেশ মায়াবী।জড়তা নেই এক্কেবারে।বুঝলাম বয়সের তুলনায় বেশ পেকে গেছে!হালকা বাদামী একজোড়া জীবন্ত চোখ দৃস্টি আকর্ষন করে।নাম জিজ্ঞেস করতেই হেসে ফেলল, বলল ‘শরিফ’।হাসিতে ওকে খুব ভাল লাগল-কিন্তু একটু শংকিত হলাম। ওর বোনের মত নাতো?ওই মেয়ের সারাক্ষন নাকি হাসি পায়!তাকে ভুলের জন্য বকা বকি করলেও রান্না ঘরে বসে মুখে আচল দিয়ে ফুলে ফুলে হাসে।আর কমিউনিকেশন সহজলভ্য হওয়ায়- মেজাজ একটু খারাপ থাকলে ওর মাকে ফোন করে ঝগড়া করে। কথা বলা শেষে কি ভাবে তাকে অপদস্থ করেছে সেইটে ভেবে আবার অনবরত হাসতে থাকে! যাহোক শরিফকে নিয়ে আসলাম আমার ফ্যাক্টরি কাম অফিসে।ফ্যাক্টিরির পোলাপান ওকে দেখে আমার মতই একটু শকট্ হল। এই পিচ্চি কি কাজ করবে?কিন্তু দু চার ঘন্টাতেই সবাই বুঝে গেল, সাইজে খাট হলে কি হবে- বেশ ঝানু মাল সে।এখানেই ওর থাকা খাওয়ার ব্যাবস্থা হল।পরদিন-ই সে আমার কাছে এসে হাজির।‘বস একখান প্যান কিনা নাগবো।আমার একখানই প্যান।‘ খাটি গোয়ালন্দী একসেন্টে।আর কি লাগবে?‘আর একখান গুঞ্জি আর সেন্ডেল।‘ঠিক আছে তুই যা কালকে কিনে দিব।পরদিন আরেকজনকে দিয়ে পাঠালাম নান্নু মার্কেটে ওর জামা কাপড় কেনার জন্য। ফিরে আসল ওর সা্ইজ থেকে একফুট লম্বা একটা জিন্সের ফুল প্যান্ট আর দু-ইঞ্চি বড় একটা স্যান্ডেল নিয়ে।প্যান্টা নিচেতো গুটিয়েছে হাত খানেক কোমরের কাছে ঢিলার জন্য সবসময় ধরে রাখতে হচ্ছে। সেই প্যান্ট পরে সিড়ি দিয়ে নামতে গিয়ে মাঝে মধ্যেই হোচট খাচ্ছে।যাকে ওর সাথে সপিং এ পাঠিয়ে ছিলাম তাকে গিয়ে ঝাড়লাম।ওকে কেন ফুল প্যান্ট কিনে দিয়েছে এই জন্য।ও বলল উপায় ছিলনা।ও জীবনে ফুল প্যান্ট পরে নাই। গোঁ ধরেছিল নাকি ফুল প্যান্ট ছাড়া অন্য কিছু কিনবে না।এই নিয়ে আমি রাগ করলে সে আবার ফিক ফিক করে হাসে। পিচ্চি বুঝে গেছে এই লোকরে ভয় পাওয়ার কিছু নাই!পরদিন আসল ফের অন্য এক আবেদন নিয়ে, বস আপনের ফোন থিক্যা একখান ফোন দিবেন?’আমি কপাল কুচকে জিগেস করলাম’কাকে?আমার মারে। আইস্যা কথা হয় নাইক্যা।মার মনে হয় মনডা খারাপ। এট্টু কথা কইতাম।‘তোর মা ফোন পাইল কোথায়? এই না শুনলাম সারা বছরই নাকি সে প্রায় না খেয়ে থাকে?সে ফের হেসে ফেলল, আরে না মায় ফোন পাবি কই। পাশের গেরামে একজন আছে হেই ডাইক্যা দিবে।‘ও ঠিক আছে। কিন্তু আমার ফোন থেকেতো ফোন করা যাবেনা। তুই এই দশ টাকা নিয়ে যা বাইরে থেকে ফোন করিস।মার সাথে কি কথা হয় সে আবার সুযোগ পেলে আমার কাছে এসে বলে।‘মায় জিগাইল খাওন দাওন ঠিক আছে কিন্যা।মারে টারে নাকি? কামকাজ হিগতিছি কিন্যা?এই গুল্যা। আমি কইলাম, তুমি চিন্তা কইরনা-আমি ভাল আছি। এইহানকার সবাই খুব ভাল।‘ফ্যাক্টরিতে ওর অবস্থা এতদিনে বেশ পোক্ত হয়ে গেছে। ফ্যাক্টিরর হেড কারিগর সায়েম বিয়ে করেছিল অল্প বয়সে। বছুর দুয়েক আগে বনিবনা না হওয়ায় বউ চলে গেছে। সাথে করে তার ছেলে মেয়ে দুটোকেও নিয়ে গেছে। তার ছেলের বয়স শরিফের মতই হবে। সেজন্য শরিফকে সে খুব আদর করে।আর মেসের বুড়ি বুয়ার চার কুলে কেউ নাই। সেও তাকে বেশ আদর প্রশ্রয় দেয়।খাটি গ্রাম্য ভাষায় কথা বলায়, ওকে নিয়ে সারাক্ষনই সবাই হাসাহাসি করে। সেও রেসপন্স করে সমান তালে।এভাবে মাস দুয়েক চলে গেল।সপ্তায় দু-চারদিন মার সাথে ও কথা বলবেই। আর সুযোগ পেলেই সবার কাছে মায়ের গল্প করে। ব্রাক থেকে লোন নিয়ে মা একটা ছাগল আর গরু কিনেছে নাকি। সেই ছাগল আর গরুরে খাওয়াতে গিয়েই নাকি ওর মার না খেয়ে থাকার অবস্থা! সেই ছাগলের নাকি বাচ্চা হয়েছে- দুধ দেয় এখন। সপ্ন দেখে সে গ্রামে গিয়ে সেই ছাগলের দুধ খাবে আর বাচ্চাদের নিয়ে খেলবে। ওদিকে গরুটাও নাকি গর্ভবতী।বলতে গিয়ে খুশীতে ওর চোখ জ্বল জ্বল করে। কাজের মাঝে মাঝে ফাকি যে দেয় না তানা। আচমকা না বলে কয়ে উধাও হয়ে যায়।নীচ তলার কোন এক কোনে গিয়ে বসে থাকে।কখনো না ডাকলেও চার-পাচবার দৌড়ে আসে। আমারে ডাইকসেন?আবার কখনো ডাকাডাকি করলেও টু-শব্দ করে না।ফ্যাক্টিরির সবাই বলে, মাঝে মধ্যেই নাকি ও মাইর খাওয়ার কাম করে। কিন্তু কেউ মারতে পারেনা ওর হাসির জন্য। এত প্রানবন্ত আর নিস্পাপ এর হাসি!মাঝে মধ্যে সুযোগ পেল- বসের খোলস ছেড়ে ওদের সাথে একই ফ্লোরে কাজ করি। তখন সবার সাথে ঘনিষ্ঠ ভাবে মেশার সুযোগ পাই।একদিন শরিফকে কথায় কথায় জিজ্ঞেস করলাম ওর আগের কাজের ব্যাপারে।কাজ করত সে সাভারের কাছে এক এ্যমব্রোডোয়ারী ফ্যাক্টরিতে।ওর সাথে সম বয়সী আর আট দশটা ছেলে ছিল।মালিক নিজেই তার ফ্যাক্টরির হেড কারিগর ছিল। ওরা ছিল তার চ্যালা চামুন্ডে।সেখানে নিয়ে আসার পর আঠারো মাস নাকি ওদের কাউকে বাড়িতে যেতে দেয়নি।এমনকি ফোনে যোগাযোগও করতে দেয়নি।প্রতিদিন সকাল নয়টা থেকে রাত তিনটে পর্যন্ত কাজ হত।এর মধ্যে খাওয়ার সময় টুকু ছাড়া ওদের কোন বিশ্রাম ছিলনা।শ্রান্তিতে ক্লান্তিতে ওরা একটু তন্দ্রাচ্ছন্ন হলেও বেদম মার খেতে হত।হাতের কাজ একটু এদিক ওদিক হলেই মার।ঘুম থেকে একটু দেরী করে উঠলেও শাস্তি। প্রতিদিন নাকি নিদেন পক্ষে দু-বার মার খেত সে।সেই ভয়ঙ্কর পিশাচ মানুষটা নাকি ওদের পেটানোর সুযোগ না পেলে তার বউ আর তিন বছরের বাচ্চাকে ধরে পেটাত।কি ভয়ঙ্কর পারভার্ট!গোসল করার জন্য কয়দিন আগে বুকিং দিতে হয়। সরা গা নাকি খোস পাচড়ায় ভরে গিয়েছিল তার।সেখানকার সেই জঘন্য পরিবেশে কাজ করতে গিয়ে চিরস্থায়ী ভাবে নাকি শ্বাস কষ্ট হয়েছে তার।আঠার মাসে কোন বেতন দেয়নি-তিন মাস ছ’মাস পর পর নাকি দশ টাকা করে দিত। সুখের মধ্যে ছিল শুক্রবারের ছুটি-বিকেলে একটু ঘুরতে বেরুতে দিত।পালাস নাই ক্যান?‘কি কন বস। হের বিরাট একখান রাম দাও ছিল। আগে নাকি মানুষ খুন কইরত।পালালি যদি মাইরা ফ্যালায়!’একবার কেন যেন ওদেরকে নিয়ে অন্য এক শহরে যাচ্ছিল সে। পথের মাঝেই শরিফের গেরাম পড়ে।শরিফ নাকি মাকে এক নজর দেখার জন্য খুব কান্নাকাটি করেছিল। সে নাকি চলন্ত গাড়ি থেকে নেমে দৌড় দিয়েছিল ওর বাড়ির উদ্দেশ্যে। কিন্তু সেই পাষন্ড তাকে যেতে দেয়নি। ধরে নিয়ে এসেছে ফের।রোজার মাস চলে এসেছে শরিফ আর তার বোন দিন গুনতে শুরু করেছে। ঈদের ছুটিতে বাড়ি যাবে বলে। বাড়ি বলতে ওদের বিরান চড়ের ঢিবির উপরে শন আর বাশ দিয়ে দাড় করানো দেড় খানা ঘর।শরিফের বড় আরেক বোন আছে। সে নাকি অনেকদিন বেকার থেকে কিছুদিন আগে ঢাকায় এসে গার্মেন্টস এ চাকরি নিয়েছে।ওর মার এখন দারুন সু সময়! তিন ছেলে মেয়েই ঢাকায় চাকরি করে। খড় কুটো কুড়িয়ে হাতে দু-চার টাকা যা সে পায়- নিজে না খেয়ে সেই টাকা দিয়ে ছেলে মেয়েকে ফোন করে নয়তো জমিয়ে রাখে ঈদে ওদের ভাল মন্দ খাওয়াবে বলে।এর মধ্যে সায়েম ওর মাকে একটা শাড়ি দিয়েছে। আমিও দিয়েছি। সেই শাড়িগুলোর বার বার ভাজ খুলে দেখে সে- কিভাবে মাকে ঈদের আগে পাঠাবে এই নিয়ে তার বিরাট টেনশন! হাতে তার দু চার টাকা আসলেই এখন আর চানাচুর ক্যান্ডি না খেয়ে মায়ের জন্য চুড়ি টিপ কেনে।সেদিন কে একজন লুকিয়ে আমাকে দেখাল তার মায়ের জন্য কেনা লাল চুড়ি গোছা।আর শরিফ এসে বলল, বস মায় ছাব্বিশ রোজায় আমারে আর বুনি রে যাইতে কইছে।আমি কপাল কুঁচকে বললাম, ক্যান- এত আগে ক্যন?‘আমি রাজি হই নাই। আমি গেলি-ফ্যাক্টরির সমস্যা হবেনে। মায় কইল, সাতাইশ এ রোজায় নিকি মোল্লা খাওয়াবি।‘কি বলিস- মোল্লা খাওয়াবে মানে? তোর মাতো নিজেই খাইতে পায়না আবার মোল্লা খাওয়াবে কি?মুখটা সে একটু ম্লান করে বলল,‘ওই দিন বাপে মইরছেতো।‘তোর বাপে কিভাবে মরেছে?‘খারাপ বাতাস নাইগ্যা।‘তখন মোল্লারা কই ছিল-ঝাঁড় ফুক দিয়ে তোর বাপেরে বাচাইতে পারে নাই?আমার কথা তার মনে ধরল।‘ এক ফাকে সে বাসায় গিয়ে বোনের সাথেও ঝগড়া করে আসল’ যেই মোল্লারা ওর বাপেরে বাচাইতে পারে নাই তাগেরে খাওয়াবে ক্যান।‘ওর বোন আবার এই সব ব্যাপারে ভীষন উৎসাহী মনে হল। সে উল্টো ওকে বলল’ মা কইছে তোরে দশ বার জনের রান্ধার জন্য একখান হাড়ি কিনব্যার।‘এইসব কথা শরিফ সুযোগ পেলে আমাকে এসে বলে-ভাবসাবে মনে হল,’এরকম একটা হাড়ি কিনলে খারাপ হয়না।‘বিশ রোজা থেকে শুরু হল ওর আরেক টেনশন। বাড়ি যাবে কার সাথে? ওর বোনতো ছাব্বিশে রোজায় চলে যাবে, ও যাবে ক্যামনে কার সাথে।ফ্যাক্টরিতে ওর আশে পাশের এলাকার অনেক ছেলে থাকলেও, সবাই ওকে নিয়ে মজা করছে। জনে জনে যাকেই জিজ্ঞেস করে সেই বলে,এবার ঈদে বাড়ি যাবে না। আর সে সব অনুযোগ অভিযোগ নিয়ে আমার কাছে আসে। কাজের সময় বিরক্ত করে বলে ধমক-ধামকও খায়। আমি ওকে বার বার নিশ্চিন্ত করলেও ও কেন যেন ভরসা পায় না।ছাব্বিশে রোজায় বিকেলের পর থেকে আকাশ মেঘলা। গুড়ুম গাড়ুম আওয়াজের সাথে বৃষ্টিও হয়েছে কয়েক পশলা।শরিফের বোন সকালে চলে গেছে। গত সন্ধ্যেয় দুই ভাইবোন ইফতারের পরে অনেক্ষন গল্প করেছে- হয়তো ঈদে গিয়ে দেশে কি ভাবে মজা করবে এইটেই ছিল মুখ্য আলোচনার বিষয়।আমি রাত এগারটার দিকে অফিস থেকে বের হতে গিয়ে দেখি মুল ফটকের কাছে চাবি হাতে মেঝের উপর শরিফ বসে আছে। মাথার চুল এলোমেলো –চোখটা টক টকে লাল।‘কিরে কি হয়েছে তোর?’ বলে ওর মাথায় হাত দিতেই ও ঝড় ঝড় করে কেদে ফেলল। পিছন থেকে আরেকজন বলল, বস সন্ধ্যার পর থিকাই ওর ওর শরিরটা খুব খারাপ। একবার মাথা ঘূইরা সিড়ি থেকে পইড়া গেছিল।তার মানে? আমি রাগারাগি করলাম আমাকে কেন জানানো হয়নি। ওকে কেন ডাক্তারের কাছে নিয়ে যাওয়া হয়নি বলে।এখুনি ডাক্তারের কাছে নিতে বলে টাকা দিলাম।পরে ফোন করে জেনে নিলাম তেমন গুরুতর কিছু নয়। রেস্ট নিলে ঠিক হয়ে যাবে।ওদিন সারা রাত নাকি শরিফ ঘুমায়নি অব্যাক্ত যন্ত্রনায় সে কেদেছে।‘পরদিন সেই বুড়ি বুয়া বলেছিল আমায়।ভোর আটটায় সেলফোন খানা সুরেলা শব্দে বেজে উঠল। এত সকালে আমার সাধারনত ফোন আসেনা। ঘুম চোখে বিরক্তি ভরে ‘হ্যালো’ বলতেই শুনলাম এক মর্মবিদারক এক সংবাদ!গত রাতে শরিফের মা মারা গেছে!কি ভয়ঙ্কর কথা, ওর মার নাকি কোন অসুখ বিসুখ ছিল না। বেশ শক্ত পোক্ত মহিলা ছিল সে!তবে কিভাবে?এ খবর আমি শরিফকে ক্যামনে দিব?ফ্যাক্টিরর কয়েকজনকে ফোন করলাম।ওরা কেউ ফোন ধরল না।কোন মতে মুখে পানি ছিটিয়ে আমি নিজেই চলে আসলাম ফ্যাক্টিরতে। রাস্তা থেকেই শুনলাম চিৎকার করে শরিফের কান্নার শব্দ! বুকের ভেতরটা মুচড়ে উঠল। ‘কোন পাষন্ড যেন এতক্ষনে ওকে বলে দিয়েছে’।ভিতরে ঢুকে দেখলাম সেই উল্টো হাফ প্যান্ট খানা পরে খালি গায়ে চেয়ারে বসে হাউমাউ করে কাদছে।তার চারিদিকে ছোট খাট একটা জটলা। সবাই সান্তনা দিতে ব্যাস্ত। বুড়ি বুয়া তার গায়ে হাত বুলিয়ে দিতে দিতে বলছে,’তুই কাদিস না। আমরা মোবাইল কইরার খবর নিছি। তোর মা মরে নাই- মেডিকেলে আছে। তোর মা মইরবার পারে না। তুই গিয়া দেখবি সে ঠিক হইয়া গ্যাছে।‘সবার সান্তনা ও আশ্বাসে সে কি বুঝল কে জানে কিন্তু কান্না থামল। কিন্তু ভিতরে তার রক্তক্ষরন- টলমল জলভরা অসহায় উদাস নয়নে তাকিয়ে রইল জানালা দিয়ে আকাশ পানে- সৃস্টিকর্তার প্রতি ভয়ঙ্কর আক্রোশে যেন বুকটা দমকে দমকে কেঁপে উঠছে।(শরিফের মারা ছোট্ট সেই ঘরটাতে একাই থাকতে। ওর কোন আত্মীয় পরিজন নেই। ওদের বাড়ি থেকে কয়েকশ হাত দুরে গ্রামের শুরু। ওর মা সেদিন ঘর লেপে ছেলে মেয়েদের জন্য পিঠার চাল কুটে-পরদিন মোল্লা খাওয়ানোর যোগার-যন্ত করে,সন্ধ্যের দিকে ঝড়ো বাতাস আর বৃষ্টির মুখে রান্নাঘরে গিয়েছিল খড়ি রাখতে। ঠিক সেই সময়ে আকস্মাৎ বজ্রপাতে তার মৃত্যু হয়। সারারাত সেইভাবে সে দাড়িয়ে ছিল। সকালে পাশের গ্রামের কেউ একজন তাকে ডাকতে এসে সাড়া না পেয়ে রান্না ঘরে গিয়ে তাকে মৃত আবিস্কার করে।শরিফকে তখুনি পাঠিয়ে দিয়েছিলাম ওর গ্রামের বাড়িতে।সে গিয়ে ঠিক জানাজার মুখে লাশ পেয়েছিল। কতিথ আছে বজ্রপাতে মৃত মানুষের হাড় গোড় দিয়ে নাকি অনেক দুরারোগ্য রোগের অব্যার্থ পথ্য হয়(নেহায়েৎ গাজাখুরি গপ্পো) তাই ওর মায়ের লাশ তুলে নিয়ে যাবে ভেবে বাড়ির উঠোনেই কবর দিয়েছে। তবুও শান্তি নেই। কিছু মতলববাজ ফেরেব্বাজ লোক সারাদিন রাত পায়তাড়া করছে সেই লাশ তুলে নেবার। কখনো টাকার লোভ কিংবা ভয় দেখিয়ে সেই লাশ নেয়ার ফন্দি আটছে তারা।তিন ভাইবোন এখন দিন রাত সেই কবরখানা আকড়ে ধরে পড়ে আছে মায়ের লাশখানা চুরি হওয়ার ভয়ে। সাথে অবশ্য সঙ্গ দিচ্ছে এলাকার দু-চারজন সাহসী যুবক।– কি ভয়ঙ্কর নিষ্ঠুর এই পৃথিবীর কিছু কিছু মfনুষ…)বি.দ্র. লেখাটার কোন শিরোনাম খুজে পাইনি।
অফিসের কাজের ছেলেটা আচমকা চলে যাওয়ায় ভারী বিপদে ছিলাম!নীচতলা থেকে তিন তলা পর্যন্ত দৌড়াদৌড়ি করা। বার বার গেট খোলা,ফুট ফরমায়েশ খাটা, অতিথি বা বন্ধু এলে তাদের যৎসামান্য আপ্যায়ন করার জন্য একটা অল্প বয়েসী ছেলে খুব জরুরী ছিল।আমার বাসায় গ্রাম থেকে নিয়ে আসা ষোল সতের বয়সের যে মেয়েটা কাজ করে সে-ই একদিন অনুরোধ করল দেশ থেকে তার ছোট ভাইকে এনে যেন আমার কাছে রাখি।বয়স কত রে?বার তের হবি।এর আগে আর কাজ টাজ করেছে কোথাও?হ্যা করছিল- এক এমব্রুডাইরি ফ্যাকটোরিতে ছিল আঠার মাস।ওরা ওরে আটকায় রাখছিল। মা ম্যালা খুইজ্যা ওরে বাইর কইরছে। মাস খানিক হইল বাইত্তে আইছে। মা এহন ভাল কাওরে ছাড়া ওরে দিব না।ঠিক আছে তোর মারে জিগেস করিস আমার এখানে পাঠাবে কিনা?জে আচ্ছা জিগাবোনে।ক’দিন পরে আমিই ফের জিজ্ঞেস করলাম-কিরে তোর ছোট ভাইয়ের খবর কি?মা-রে কইছি। মা পাঠাবি। ওর কুনো ভাল জামা কাপড় ন্যাইতো হের লিগা আমি বেতন পাঠাইলে জামা কিন্যা পাঠাবি।তোর মাকে বল জামা কাপড় কাপড় কেনা লাগবে না। আসলে আমি কিনে দেব।ঠিক আছে কোবোনে। আসার ভাড়াও নাই নিশ্চই। ওকে বললাম, ওর ভাইকে যেন অমুকের কাছে পাঠিয়ে দেয়-আমি আনানোর ব্যাবস্থা করব।দুদিন বাদেই ছেলেটা এসে হাজির। প্রথম দেখায় আমি বেশ হতাশই হয়েছিলাম। এত ছোট!সাস্থ্যের গড়ন ওর বোনেরই মতন মোটার ধাত।খাটো,বোতাম ছেড়া একটা শার্ট গায়ে-পেটটা বেঢপ ভাবে ফুলে আছে। পরনে একটা নেভী ব্লু রঙ জ্বলা হাফ প্যান্ট। পিছনের পকেট দুটো মনে হচ্ছে সামনে এনে তাপ্পি মেরে জোড়া লাগানে।মনে হয় প্যান্টখানা উল্টো পরেছে। পায়ে বেশ উচু হিলের রেক্সিনের তেমনই জীর্ন সেন্ডেল।তবে গায়ের রঙ কালো হলেও চেহারাটা বেশ মায়াবী।জড়তা নেই এক্কেবারে।বুঝলাম বয়সের তুলনায় বেশ পেকে গেছে!হালকা বাদামী একজোড়া জীবন্ত চোখ দৃস্টি আকর্ষন করে।নাম জিজ্ঞেস করতেই হেসে ফেলল, বলল ‘শরিফ’।হাসিতে ওকে খুব ভাল লাগল-কিন্তু একটু শংকিত হলাম। ওর বোনের মত নাতো?ওই মেয়ের সারাক্ষন নাকি হাসি পায়!তাকে ভুলের জন্য বকা বকি করলেও রান্না ঘরে বসে মুখে আচল দিয়ে ফুলে ফুলে হাসে।আর কমিউনিকেশন সহজলভ্য হওয়ায়- মেজাজ একটু খারাপ থাকলে ওর মাকে ফোন করে ঝগড়া করে। কথা বলা শেষে কি ভাবে তাকে অপদস্থ করেছে সেইটে ভেবে আবার অনবরত হাসতে থাকে! যাহোক শরিফকে নিয়ে আসলাম আমার ফ্যাক্টরি কাম অফিসে।ফ্যাক্টিরির পোলাপান ওকে দেখে আমার মতই একটু শকট্ হল। এই পিচ্চি কি কাজ করবে?কিন্তু দু চার ঘন্টাতেই সবাই বুঝে গেল, সাইজে খাট হলে কি হবে- বেশ ঝানু মাল সে।এখানেই ওর থাকা খাওয়ার ব্যাবস্থা হল।পরদিন-ই সে আমার কাছে এসে হাজির।‘বস একখান প্যান কিনা নাগবো।আমার একখানই প্যান।‘ খাটি গোয়ালন্দী একসেন্টে।আর কি লাগবে?‘আর একখান গুঞ্জি আর সেন্ডেল।‘ঠিক আছে তুই যা কালকে কিনে দিব।পরদিন আরেকজনকে দিয়ে পাঠালাম নান্নু মার্কেটে ওর জামা কাপড় কেনার জন্য। ফিরে আসল ওর সা্ইজ থেকে একফুট লম্বা একটা জিন্সের ফুল প্যান্ট আর দু-ইঞ্চি বড় একটা স্যান্ডেল নিয়ে।প্যান্টা নিচেতো গুটিয়েছে হাত খানেক কোমরের কাছে ঢিলার জন্য সবসময় ধরে রাখতে হচ্ছে। সেই প্যান্ট পরে সিড়ি দিয়ে নামতে গিয়ে মাঝে মধ্যেই হোচট খাচ্ছে।যাকে ওর সাথে সপিং এ পাঠিয়ে ছিলাম তাকে গিয়ে ঝাড়লাম।ওকে কেন ফুল প্যান্ট কিনে দিয়েছে এই জন্য।ও বলল উপায় ছিলনা।ও জীবনে ফুল প্যান্ট পরে নাই। গোঁ ধরেছিল নাকি ফুল প্যান্ট ছাড়া অন্য কিছু কিনবে না।এই নিয়ে আমি রাগ করলে সে আবার ফিক ফিক করে হাসে। পিচ্চি বুঝে গেছে এই লোকরে ভয় পাওয়ার কিছু নাই!পরদিন আসল ফের অন্য এক আবেদন নিয়ে, বস আপনের ফোন থিক্যা একখান ফোন দিবেন?’আমি কপাল কুচকে জিগেস করলাম’কাকে?আমার মারে। আইস্যা কথা হয় নাইক্যা।মার মনে হয় মনডা খারাপ। এট্টু কথা কইতাম।‘তোর মা ফোন পাইল কোথায়? এই না শুনলাম সারা বছরই নাকি সে প্রায় না খেয়ে থাকে?সে ফের হেসে ফেলল, আরে না মায় ফোন পাবি কই। পাশের গেরামে একজন আছে হেই ডাইক্যা দিবে।‘ও ঠিক আছে। কিন্তু আমার ফোন থেকেতো ফোন করা যাবেনা। তুই এই দশ টাকা নিয়ে যা বাইরে থেকে ফোন করিস।মার সাথে কি কথা হয় সে আবার সুযোগ পেলে আমার কাছে এসে বলে।‘মায় জিগাইল খাওন দাওন ঠিক আছে কিন্যা।মারে টারে নাকি? কামকাজ হিগতিছি কিন্যা?এই গুল্যা। আমি কইলাম, তুমি চিন্তা কইরনা-আমি ভাল আছি। এইহানকার সবাই খুব ভাল।‘ফ্যাক্টরিতে ওর অবস্থা এতদিনে বেশ পোক্ত হয়ে গেছে। ফ্যাক্টিরর হেড কারিগর সায়েম বিয়ে করেছিল অল্প বয়সে। বছুর দুয়েক আগে বনিবনা না হওয়ায় বউ চলে গেছে। সাথে করে তার ছেলে মেয়ে দুটোকেও নিয়ে গেছে। তার ছেলের বয়স শরিফের মতই হবে। সেজন্য শরিফকে সে খুব আদর করে।আর মেসের বুড়ি বুয়ার চার কুলে কেউ নাই। সেও তাকে বেশ আদর প্রশ্রয় দেয়।খাটি গ্রাম্য ভাষায় কথা বলায়, ওকে নিয়ে সারাক্ষনই সবাই হাসাহাসি করে। সেও রেসপন্স করে সমান তালে।এভাবে মাস দুয়েক চলে গেল।সপ্তায় দু-চারদিন মার সাথে ও কথা বলবেই। আর সুযোগ পেলেই সবার কাছে মায়ের গল্প করে। ব্রাক থেকে লোন নিয়ে মা একটা ছাগল আর গরু কিনেছে নাকি। সেই ছাগল আর গরুরে খাওয়াতে গিয়েই নাকি ওর মার না খেয়ে থাকার অবস্থা! সেই ছাগলের নাকি বাচ্চা হয়েছে- দুধ দেয় এখন। সপ্ন দেখে সে গ্রামে গিয়ে সেই ছাগলের দুধ খাবে আর বাচ্চাদের নিয়ে খেলবে। ওদিকে গরুটাও নাকি গর্ভবতী।বলতে গিয়ে খুশীতে ওর চোখ জ্বল জ্বল করে। কাজের মাঝে মাঝে ফাকি যে দেয় না তানা। আচমকা না বলে কয়ে উধাও হয়ে যায়।নীচ তলার কোন এক কোনে গিয়ে বসে থাকে।কখনো না ডাকলেও চার-পাচবার দৌড়ে আসে। আমারে ডাইকসেন?আবার কখনো ডাকাডাকি করলেও টু-শব্দ করে না।ফ্যাক্টিরির সবাই বলে, মাঝে মধ্যেই নাকি ও মাইর খাওয়ার কাম করে। কিন্তু কেউ মারতে পারেনা ওর হাসির জন্য। এত প্রানবন্ত আর নিস্পাপ এর হাসি!মাঝে মধ্যে সুযোগ পেল- বসের খোলস ছেড়ে ওদের সাথে একই ফ্লোরে কাজ করি। তখন সবার সাথে ঘনিষ্ঠ ভাবে মেশার সুযোগ পাই।একদিন শরিফকে কথায় কথায় জিজ্ঞেস করলাম ওর আগের কাজের ব্যাপারে।কাজ করত সে সাভারের কাছে এক এ্যমব্রোডোয়ারী ফ্যাক্টরিতে।ওর সাথে সম বয়সী আর আট দশটা ছেলে ছিল।মালিক নিজেই তার ফ্যাক্টরির হেড কারিগর ছিল। ওরা ছিল তার চ্যালা চামুন্ডে।সেখানে নিয়ে আসার পর আঠারো মাস নাকি ওদের কাউকে বাড়িতে যেতে দেয়নি।এমনকি ফোনে যোগাযোগও করতে দেয়নি।প্রতিদিন সকাল নয়টা থেকে রাত তিনটে পর্যন্ত কাজ হত।এর মধ্যে খাওয়ার সময় টুকু ছাড়া ওদের কোন বিশ্রাম ছিলনা।শ্রান্তিতে ক্লান্তিতে ওরা একটু তন্দ্রাচ্ছন্ন হলেও বেদম মার খেতে হত।হাতের কাজ একটু এদিক ওদিক হলেই মার।ঘুম থেকে একটু দেরী করে উঠলেও শাস্তি। প্রতিদিন নাকি নিদেন পক্ষে দু-বার মার খেত সে।সেই ভয়ঙ্কর পিশাচ মানুষটা নাকি ওদের পেটানোর সুযোগ না পেলে তার বউ আর তিন বছরের বাচ্চাকে ধরে পেটাত।কি ভয়ঙ্কর পারভার্ট!গোসল করার জন্য কয়দিন আগে বুকিং দিতে হয়। সরা গা নাকি খোস পাচড়ায় ভরে গিয়েছিল তার।সেখানকার সেই জঘন্য পরিবেশে কাজ করতে গিয়ে চিরস্থায়ী ভাবে নাকি শ্বাস কষ্ট হয়েছে তার।আঠার মাসে কোন বেতন দেয়নি-তিন মাস ছ’মাস পর পর নাকি দশ টাকা করে দিত। সুখের মধ্যে ছিল শুক্রবারের ছুটি-বিকেলে একটু ঘুরতে বেরুতে দিত।পালাস নাই ক্যান?‘কি কন বস। হের বিরাট একখান রাম দাও ছিল। আগে নাকি মানুষ খুন কইরত।পালালি যদি মাইরা ফ্যালায়!’একবার কেন যেন ওদেরকে নিয়ে অন্য এক শহরে যাচ্ছিল সে। পথের মাঝেই শরিফের গেরাম পড়ে।শরিফ নাকি মাকে এক নজর দেখার জন্য খুব কান্নাকাটি করেছিল। সে নাকি চলন্ত গাড়ি থেকে নেমে দৌড় দিয়েছিল ওর বাড়ির উদ্দেশ্যে। কিন্তু সেই পাষন্ড তাকে যেতে দেয়নি। ধরে নিয়ে এসেছে ফের।রোজার মাস চলে এসেছে শরিফ আর তার বোন দিন গুনতে শুরু করেছে। ঈদের ছুটিতে বাড়ি যাবে বলে। বাড়ি বলতে ওদের বিরান চড়ের ঢিবির উপরে শন আর বাশ দিয়ে দাড় করানো দেড় খানা ঘর।শরিফের বড় আরেক বোন আছে। সে নাকি অনেকদিন বেকার থেকে কিছুদিন আগে ঢাকায় এসে গার্মেন্টস এ চাকরি নিয়েছে।ওর মার এখন দারুন সু সময়! তিন ছেলে মেয়েই ঢাকায় চাকরি করে। খড় কুটো কুড়িয়ে হাতে দু-চার টাকা যা সে পায়- নিজে না খেয়ে সেই টাকা দিয়ে ছেলে মেয়েকে ফোন করে নয়তো জমিয়ে রাখে ঈদে ওদের ভাল মন্দ খাওয়াবে বলে।এর মধ্যে সায়েম ওর মাকে একটা শাড়ি দিয়েছে। আমিও দিয়েছি। সেই শাড়িগুলোর বার বার ভাজ খুলে দেখে সে- কিভাবে মাকে ঈদের আগে পাঠাবে এই নিয়ে তার বিরাট টেনশন! হাতে তার দু চার টাকা আসলেই এখন আর চানাচুর ক্যান্ডি না খেয়ে মায়ের জন্য চুড়ি টিপ কেনে।সেদিন কে একজন লুকিয়ে আমাকে দেখাল তার মায়ের জন্য কেনা লাল চুড়ি গোছা।আর শরিফ এসে বলল, বস মায় ছাব্বিশ রোজায় আমারে আর বুনি রে যাইতে কইছে।আমি কপাল কুঁচকে বললাম, ক্যান- এত আগে ক্যন?‘আমি রাজি হই নাই। আমি গেলি-ফ্যাক্টরির সমস্যা হবেনে। মায় কইল, সাতাইশ এ রোজায় নিকি মোল্লা খাওয়াবি।‘কি বলিস- মোল্লা খাওয়াবে মানে? তোর মাতো নিজেই খাইতে পায়না আবার মোল্লা খাওয়াবে কি?মুখটা সে একটু ম্লান করে বলল,‘ওই দিন বাপে মইরছেতো।‘তোর বাপে কিভাবে মরেছে?‘খারাপ বাতাস নাইগ্যা।‘তখন মোল্লারা কই ছিল-ঝাঁড় ফুক দিয়ে তোর বাপেরে বাচাইতে পারে নাই?আমার কথা তার মনে ধরল।‘ এক ফাকে সে বাসায় গিয়ে বোনের সাথেও ঝগড়া করে আসল’ যেই মোল্লারা ওর বাপেরে বাচাইতে পারে নাই তাগেরে খাওয়াবে ক্যান।‘ওর বোন আবার এই সব ব্যাপারে ভীষন উৎসাহী মনে হল। সে উল্টো ওকে বলল’ মা কইছে তোরে দশ বার জনের রান্ধার জন্য একখান হাড়ি কিনব্যার।‘এইসব কথা শরিফ সুযোগ পেলে আমাকে এসে বলে-ভাবসাবে মনে হল,’এরকম একটা হাড়ি কিনলে খারাপ হয়না।‘বিশ রোজা থেকে শুরু হল ওর আরেক টেনশন। বাড়ি যাবে কার সাথে? ওর বোনতো ছাব্বিশে রোজায় চলে যাবে, ও যাবে ক্যামনে কার সাথে।ফ্যাক্টরিতে ওর আশে পাশের এলাকার অনেক ছেলে থাকলেও, সবাই ওকে নিয়ে মজা করছে। জনে জনে যাকেই জিজ্ঞেস করে সেই বলে,এবার ঈদে বাড়ি যাবে না। আর সে সব অনুযোগ অভিযোগ নিয়ে আমার কাছে আসে। কাজের সময় বিরক্ত করে বলে ধমক-ধামকও খায়। আমি ওকে বার বার নিশ্চিন্ত করলেও ও কেন যেন ভরসা পায় না।ছাব্বিশে রোজায় বিকেলের পর থেকে আকাশ মেঘলা। গুড়ুম গাড়ুম আওয়াজের সাথে বৃষ্টিও হয়েছে কয়েক পশলা।শরিফের বোন সকালে চলে গেছে। গত সন্ধ্যেয় দুই ভাইবোন ইফতারের পরে অনেক্ষন গল্প করেছে- হয়তো ঈদে গিয়ে দেশে কি ভাবে মজা করবে এইটেই ছিল মুখ্য আলোচনার বিষয়।আমি রাত এগারটার দিকে অফিস থেকে বের হতে গিয়ে দেখি মুল ফটকের কাছে চাবি হাতে মেঝের উপর শরিফ বসে আছে। মাথার চুল এলোমেলো –চোখটা টক টকে লাল।‘কিরে কি হয়েছে তোর?’ বলে ওর মাথায় হাত দিতেই ও ঝড় ঝড় করে কেদে ফেলল। পিছন থেকে আরেকজন বলল, বস সন্ধ্যার পর থিকাই ওর ওর শরিরটা খুব খারাপ। একবার মাথা ঘূইরা সিড়ি থেকে পইড়া গেছিল।তার মানে? আমি রাগারাগি করলাম আমাকে কেন জানানো হয়নি। ওকে কেন ডাক্তারের কাছে নিয়ে যাওয়া হয়নি বলে।এখুনি ডাক্তারের কাছে নিতে বলে টাকা দিলাম।পরে ফোন করে জেনে নিলাম তেমন গুরুতর কিছু নয়। রেস্ট নিলে ঠিক হয়ে যাবে।ওদিন সারা রাত নাকি শরিফ ঘুমায়নি অব্যাক্ত যন্ত্রনায় সে কেদেছে।‘পরদিন সেই বুড়ি বুয়া বলেছিল আমায়।ভোর আটটায় সেলফোন খানা সুরেলা শব্দে বেজে উঠল। এত সকালে আমার সাধারনত ফোন আসেনা। ঘুম চোখে বিরক্তি ভরে ‘হ্যালো’ বলতেই শুনলাম এক মর্মবিদারক এক সংবাদ!গত রাতে শরিফের মা মারা গেছে!কি ভয়ঙ্কর কথা, ওর মার নাকি কোন অসুখ বিসুখ ছিল না। বেশ শক্ত পোক্ত মহিলা ছিল সে!তবে কিভাবে?এ খবর আমি শরিফকে ক্যামনে দিব?ফ্যাক্টিরর কয়েকজনকে ফোন করলাম।ওরা কেউ ফোন ধরল না।কোন মতে মুখে পানি ছিটিয়ে আমি নিজেই চলে আসলাম ফ্যাক্টিরতে। রাস্তা থেকেই শুনলাম চিৎকার করে শরিফের কান্নার শব্দ! বুকের ভেতরটা মুচড়ে উঠল। ‘কোন পাষন্ড যেন এতক্ষনে ওকে বলে দিয়েছে’।ভিতরে ঢুকে দেখলাম সেই উল্টো হাফ প্যান্ট খানা পরে খালি গায়ে চেয়ারে বসে হাউমাউ করে কাদছে।তার চারিদিকে ছোট খাট একটা জটলা। সবাই সান্তনা দিতে ব্যাস্ত। বুড়ি বুয়া তার গায়ে হাত বুলিয়ে দিতে দিতে বলছে,’তুই কাদিস না। আমরা মোবাইল কইরার খবর নিছি। তোর মা মরে নাই- মেডিকেলে আছে। তোর মা মইরবার পারে না। তুই গিয়া দেখবি সে ঠিক হইয়া গ্যাছে।‘সবার সান্তনা ও আশ্বাসে সে কি বুঝল কে জানে কিন্তু কান্না থামল। কিন্তু ভিতরে তার রক্তক্ষরন- টলমল জলভরা অসহায় উদাস নয়নে তাকিয়ে রইল জানালা দিয়ে আকাশ পানে- সৃস্টিকর্তার প্রতি ভয়ঙ্কর আক্রোশে যেন বুকটা দমকে দমকে কেঁপে উঠছে।(শরিফের মারা ছোট্ট সেই ঘরটাতে একাই থাকতে। ওর কোন আত্মীয় পরিজন নেই। ওদের বাড়ি থেকে কয়েকশ হাত দুরে গ্রামের শুরু। ওর মা সেদিন ঘর লেপে ছেলে মেয়েদের জন্য পিঠার চাল কুটে-পরদিন মোল্লা খাওয়ানোর যোগার-যন্ত করে,সন্ধ্যের দিকে ঝড়ো বাতাস আর বৃষ্টির মুখে রান্নাঘরে গিয়েছিল খড়ি রাখতে। ঠিক সেই সময়ে আকস্মাৎ বজ্রপাতে তার মৃত্যু হয়। সারারাত সেইভাবে সে দাড়িয়ে ছিল। সকালে পাশের গ্রামের কেউ একজন তাকে ডাকতে এসে সাড়া না পেয়ে রান্না ঘরে গিয়ে তাকে মৃত আবিস্কার করে।শরিফকে তখুনি পাঠিয়ে দিয়েছিলাম ওর গ্রামের বাড়িতে।সে গিয়ে ঠিক জানাজার মুখে লাশ পেয়েছিল। কতিথ আছে বজ্রপাতে মৃত মানুষের হাড় গোড় দিয়ে নাকি অনেক দুরারোগ্য রোগের অব্যার্থ পথ্য হয়(নেহায়েৎ গাজাখুরি গপ্পো) তাই ওর মায়ের লাশ তুলে নিয়ে যাবে ভেবে বাড়ির উঠোনেই কবর দিয়েছে। তবুও শান্তি নেই। কিছু মতলববাজ ফেরেব্বাজ লোক সারাদিন রাত পায়তাড়া করছে সেই লাশ তুলে নেবার। কখনো টাকার লোভ কিংবা ভয় দেখিয়ে সেই লাশ নেয়ার ফন্দি আটছে তারা।তিন ভাইবোন এখন দিন রাত সেই কবরখানা আকড়ে ধরে পড়ে আছে মায়ের লাশখানা চুরি হওয়ার ভয়ে। সাথে অবশ্য সঙ্গ দিচ্ছে এলাকার দু-চারজন সাহসী যুবক।– কি ভয়ঙ্কর নিষ্ঠুর এই পৃথিবীর কিছু কিছু মfনুষ…)বি.দ্র. লেখাটার কোন শিরোনাম খুজে পাইনি।
এতে সদস্যতা:
মন্তব্যসমূহ (Atom)